শিথিল হচ্ছে ন্যূনতম মূলধনের শর্ত

দেশে বীমা কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে শিথিল করা হচ্ছে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের শর্ত। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য কোন বীমা কোম্পানির ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা থাকার বাধ্যতামূলক। আর এই শর্ত কোম্পানিগুলো পূরণ করতে না পারায় পিছিয়ে যাচ্ছে আইপিও’র জন্য আবেদনের মেয়াদ। তবে এ সমস্যার সমাধান ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। বাধ্যতামূলক শর্ত বাতিল করতে উদ্যোগ নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

জানা যায়, দেশের ২৭টি বীমা কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসতে ‘পাবলিক ইস্যু রুলস’ থেকে নূ্যূনতম মূলধনের ধারা প্রত্যাহারে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এছাড়া পুঁজিবাজারে আসতে আবেদনের মেয়াদ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। আইনের বিধান বাতিল করার জন্য আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, আইডিআরএ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে তা সুরাহা করার প্রস্তাব ওই চিঠিতে আছে। তবে এখন পর্যন্ত বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আইডিআরএ’র চিঠিতে বলা হয়, ‘পাবলিক ইস্যু রুলস’ বিধান অনুযায়ী, আইপিও’র জন্য আবেদন করতে হলে বীমা কোম্পানিগুলোকে মুনাফা বা সারপ্লাস থাকতে হবে। কিন্তু অনেক জীবন বীমা কোম্পানির একচ্যুয়াল ভেলুয়েশনে দেখা গেছে, সারপ্লাস বা মুনাফা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি কোম্পানিগুলো। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা থাকার বাধ্যতামূলক শর্ত বাতিলের সুপারিশ করেছে আইডিআরএ। বৈঠকে এটি ছাড়া আরও ৮টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- পুঁজিবাজারে আসতে আবেদনের মেয়াদ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি, জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানে দ্রুত ইস্যু ম্যানেজার নিয়োগ ও একচ্যুয়াল ভেলুয়েশন শেষ করার নির্দেশ।

আইডিআরএ’র চিঠি সূত্রে আরও জানা গেছে, দুটি নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য ‘পাবলিক ইস্যু রুলস’র বিধান মোতাবেক আবেদন করেছে যা বর্তমান কমিশনের বিবেচনাধীন আছে। কোম্পানি দুটি হচ্ছে- এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স ও ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে আইডিআরএ’র এক বৈঠকে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে এই ২৭টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট ওই সময়ের মধ্যে এসব বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে পারেনি। এর কারণ খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছে আইডিআরএ। বৈঠকে উঠে আসে, পুঁজিবাজারে কোন বীমা কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত হতে হলে ন্যূনতম ৭৫ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের ৪৫ কোটি টাকা এবং জনগণের অংশ ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু ওই ২৭টি কোম্পানির অধিকাংশের ক্ষেত্রেই পরিশোধিত মূলধনের উদ্যোক্তাদের অংশে ঘাটতি আছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকের সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে ২৭টি বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসার জন্য গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদন দিয়ে আবেদন করতে হবে। এর মধ্যে গোল্ডেন লাইফ, স্বদেশ লাইফ, বায়রা লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, বেস্ট লাইফ, যমুনা লাইফ, জেনীথ ইসলামি, আলফা ইসলামি, এনআরবি গ্লোবাল, ডায়মন্ড লাইফ ও সাউথ এশিয়াকে রোডম্যাপ দ্রুত কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করতে বলা হয়। এছাড়া মার্কেন্টাইল ইসলামি লাইফ, সানফ্লাওয়ার, প্রোটেকটিভ ইসলামি লাইফ, দেশ জেনারেল, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স ও ইসলামি কর্মাশিয়ালকে পুঁজিবাজারের আইপিও অনুমোদনের জন্য তাদের কাজের অগ্রগতি তলব করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ওই বৈঠকে। এছাড়া বিদ্যমান আইনে যেসব বীমা কোম্পানির আইপিও অনুমোদনের জন্য আবেদন করার সক্ষমতা আছে, সেসব কোম্পানির ক্ষেত্রে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কোন আপত্তি থাকবে না। সর্বশেষ সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫-এর আগে আইপিও’র অনুমোদনের জন্য আবেদনকারী বীমা কোম্পানিগুলোর আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিএসইসিকে চিঠি দেয়া হবে।

মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৮ মাঘ ১৪২৬, ১৬ জমাদিউল সানি ১৪৪১

বীমা কোম্পানি তালিকাভুক্তকরণ

শিথিল হচ্ছে ন্যূনতম মূলধনের শর্ত

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

দেশে বীমা কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে শিথিল করা হচ্ছে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের শর্ত। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য কোন বীমা কোম্পানির ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা থাকার বাধ্যতামূলক। আর এই শর্ত কোম্পানিগুলো পূরণ করতে না পারায় পিছিয়ে যাচ্ছে আইপিও’র জন্য আবেদনের মেয়াদ। তবে এ সমস্যার সমাধান ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। বাধ্যতামূলক শর্ত বাতিল করতে উদ্যোগ নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

জানা যায়, দেশের ২৭টি বীমা কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসতে ‘পাবলিক ইস্যু রুলস’ থেকে নূ্যূনতম মূলধনের ধারা প্রত্যাহারে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এছাড়া পুঁজিবাজারে আসতে আবেদনের মেয়াদ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। আইনের বিধান বাতিল করার জন্য আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, আইডিআরএ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে তা সুরাহা করার প্রস্তাব ওই চিঠিতে আছে। তবে এখন পর্যন্ত বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আইডিআরএ’র চিঠিতে বলা হয়, ‘পাবলিক ইস্যু রুলস’ বিধান অনুযায়ী, আইপিও’র জন্য আবেদন করতে হলে বীমা কোম্পানিগুলোকে মুনাফা বা সারপ্লাস থাকতে হবে। কিন্তু অনেক জীবন বীমা কোম্পানির একচ্যুয়াল ভেলুয়েশনে দেখা গেছে, সারপ্লাস বা মুনাফা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি কোম্পানিগুলো। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা থাকার বাধ্যতামূলক শর্ত বাতিলের সুপারিশ করেছে আইডিআরএ। বৈঠকে এটি ছাড়া আরও ৮টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- পুঁজিবাজারে আসতে আবেদনের মেয়াদ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি, জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানে দ্রুত ইস্যু ম্যানেজার নিয়োগ ও একচ্যুয়াল ভেলুয়েশন শেষ করার নির্দেশ।

আইডিআরএ’র চিঠি সূত্রে আরও জানা গেছে, দুটি নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য ‘পাবলিক ইস্যু রুলস’র বিধান মোতাবেক আবেদন করেছে যা বর্তমান কমিশনের বিবেচনাধীন আছে। কোম্পানি দুটি হচ্ছে- এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স ও ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে আইডিআরএ’র এক বৈঠকে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে এই ২৭টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট ওই সময়ের মধ্যে এসব বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে পারেনি। এর কারণ খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছে আইডিআরএ। বৈঠকে উঠে আসে, পুঁজিবাজারে কোন বীমা কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত হতে হলে ন্যূনতম ৭৫ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের ৪৫ কোটি টাকা এবং জনগণের অংশ ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু ওই ২৭টি কোম্পানির অধিকাংশের ক্ষেত্রেই পরিশোধিত মূলধনের উদ্যোক্তাদের অংশে ঘাটতি আছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকের সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে ২৭টি বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসার জন্য গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদন দিয়ে আবেদন করতে হবে। এর মধ্যে গোল্ডেন লাইফ, স্বদেশ লাইফ, বায়রা লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, বেস্ট লাইফ, যমুনা লাইফ, জেনীথ ইসলামি, আলফা ইসলামি, এনআরবি গ্লোবাল, ডায়মন্ড লাইফ ও সাউথ এশিয়াকে রোডম্যাপ দ্রুত কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করতে বলা হয়। এছাড়া মার্কেন্টাইল ইসলামি লাইফ, সানফ্লাওয়ার, প্রোটেকটিভ ইসলামি লাইফ, দেশ জেনারেল, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স ও ইসলামি কর্মাশিয়ালকে পুঁজিবাজারের আইপিও অনুমোদনের জন্য তাদের কাজের অগ্রগতি তলব করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ওই বৈঠকে। এছাড়া বিদ্যমান আইনে যেসব বীমা কোম্পানির আইপিও অনুমোদনের জন্য আবেদন করার সক্ষমতা আছে, সেসব কোম্পানির ক্ষেত্রে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কোন আপত্তি থাকবে না। সর্বশেষ সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫-এর আগে আইপিও’র অনুমোদনের জন্য আবেদনকারী বীমা কোম্পানিগুলোর আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিএসইসিকে চিঠি দেয়া হবে।