মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিনিয়োগকারীরা

আস্থার সংকটের কারণে শেয়ারবাজার থেকে দিন দিন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। আর নতুন ভালো কোন কোম্পানিও বাজারে আসছে না। তাই পতনেই ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। সরকারিভাবে নানামুখী পদক্ষেপের পরেও বাজারে একই চিত্র বিরাজ করছে। চলতি বছরকে শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক আশ্বস্ত করার পর দেখা গেছে, জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট কার্যদিবসের অর্ধেকের বেশিই পতনের মুখে পড়েছে বাজার। এদিকে রাষ্ট্রীয় ৪ ব্যাংককে শেয়ারবাজারে আনতে অর্থমন্ত্রীর গত রোববারের বৈঠকের পর গতকাল বাজারে ফের পতন হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে রীতিমতো খেলা শুরু হয়েছে। বাজারকে স্বাভাবিক করার নামে যে সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তার কোনটাই কাজে দিচ্ছে না। আসল কথা হচ্ছে, বাজার সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে পরিষ্কার। তাই এসব পদক্ষেপের নামে বাজার থেকে ভিন্ন উপায়ে অর্থ লুটপাট হবে কি-না সে শঙ্কায় রয়েছেন বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী। টানা পতনের বৃত্তে আটকে রয়েছে শেয়ারবাজার। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গতকালও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ কার্যদিবস দরপতন হলো শেয়ারবাজারে। মূল্যসূচকের পতনের সঙ্গে এদিন ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। অবশ্য লেনদেনের শুরুর চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

শুরুতে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। এতে ১০ মিনিটেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৩৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপরই ঘটে ছন্দপতন। দাম বাড়ার পরও কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম আবার কমতে থাকে। তারপরও লেনদেনের প্রথম তিন ঘণ্টা ঊর্ধ্বমুখী থাকে সূচক। কিন্তু শেষ ঘণ্টার লেনদেনে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরপতন হয়। ফলে ঋণাত্মক হয়ে পড়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১২৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় স্থান পায়। বিপরীতে দাম কমে ১৬৬টির।

দাম অপরিবর্তিত ৬৩টির। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের এই দরপতনের ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৩৮৫ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক দশমিক ৮৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৯১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসই শরিয়াহ্ ৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রধান মূল্যসূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৪০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৩৬১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ২১ কোটি ৮ লাখ টাকা। টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে লাফার্জহোলসিমের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এসকে ট্রিমসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ২২ লাখ টাকার। ১১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।

এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- বিকন ফার্মাসিউটিক্যাল, এডিএন টেলিকম, এসএস স্টিল, ওয়াইম্যাক্স, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৩৮১ পয়েন্টে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৪০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৭টির, কমেছে ১১৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৫টির।

মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৮ মাঘ ১৪২৬, ১৬ জমাদিউল সানি ১৪৪১

পতন থামছেই না শেয়ারবাজারের

মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিনিয়োগকারীরা

আস্থার সংকটের কারণে শেয়ারবাজার থেকে দিন দিন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। আর নতুন ভালো কোন কোম্পানিও বাজারে আসছে না। তাই পতনেই ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। সরকারিভাবে নানামুখী পদক্ষেপের পরেও বাজারে একই চিত্র বিরাজ করছে। চলতি বছরকে শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক আশ্বস্ত করার পর দেখা গেছে, জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট কার্যদিবসের অর্ধেকের বেশিই পতনের মুখে পড়েছে বাজার। এদিকে রাষ্ট্রীয় ৪ ব্যাংককে শেয়ারবাজারে আনতে অর্থমন্ত্রীর গত রোববারের বৈঠকের পর গতকাল বাজারে ফের পতন হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে রীতিমতো খেলা শুরু হয়েছে। বাজারকে স্বাভাবিক করার নামে যে সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তার কোনটাই কাজে দিচ্ছে না। আসল কথা হচ্ছে, বাজার সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে পরিষ্কার। তাই এসব পদক্ষেপের নামে বাজার থেকে ভিন্ন উপায়ে অর্থ লুটপাট হবে কি-না সে শঙ্কায় রয়েছেন বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী। টানা পতনের বৃত্তে আটকে রয়েছে শেয়ারবাজার। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গতকালও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ কার্যদিবস দরপতন হলো শেয়ারবাজারে। মূল্যসূচকের পতনের সঙ্গে এদিন ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। অবশ্য লেনদেনের শুরুর চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

শুরুতে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। এতে ১০ মিনিটেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৩৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপরই ঘটে ছন্দপতন। দাম বাড়ার পরও কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম আবার কমতে থাকে। তারপরও লেনদেনের প্রথম তিন ঘণ্টা ঊর্ধ্বমুখী থাকে সূচক। কিন্তু শেষ ঘণ্টার লেনদেনে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরপতন হয়। ফলে ঋণাত্মক হয়ে পড়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১২৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় স্থান পায়। বিপরীতে দাম কমে ১৬৬টির।

দাম অপরিবর্তিত ৬৩টির। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের এই দরপতনের ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৩৮৫ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক দশমিক ৮৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৯১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসই শরিয়াহ্ ৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রধান মূল্যসূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৪০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৩৬১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ২১ কোটি ৮ লাখ টাকা। টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে লাফার্জহোলসিমের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এসকে ট্রিমসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ২২ লাখ টাকার। ১১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।

এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- বিকন ফার্মাসিউটিক্যাল, এডিএন টেলিকম, এসএস স্টিল, ওয়াইম্যাক্স, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৩৮১ পয়েন্টে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৪০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৭টির, কমেছে ১১৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৫টির।