মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীর তথ্য দিতে হবে দুদককে

দেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীদের তথ্য দুদককে দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফএস) কাছে থাকা গ্রাহকের তথ্য, তদন্তের স্বার্থে দুদকের কাছে সরবরাহ করতে হবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অর্থ আদান-প্রদান হচ্ছে-এমন আশঙ্কার কারণে এই নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অর্থ আদান-প্রদান হচ্ছে। এসব দুর্নীতির তদন্ত করতে তথ্য প্রয়োজন। দুদকের অনুসন্ধান/তদন্তের স্বার্থে এমএফএসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এমএফএস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘গত ২১ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব এমএফএস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এমএফএস অ্যাকাউন্টের সব ধরনের ক্যাশ ইন/ক্যাশ আউটের ডিজিটাল মানি রশিদের বিস্তারিত তথ্য দুদকের অনুসন্ধান/তদন্তের প্রয়োজনে সরবরাহ করতে হবে। এমএফএস গ্রাহক এবং লেনদেনের তথ্যভাণ্ডার থেকে দুদকের কর্মকর্তাকে রিয়েল টাইম তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।’ এছাড়া একাধিক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অস্বাভাবিক লেনদেন রোধে জনসচেতনতা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত ২১ নভেম্বর মোবাইল আর্থিক সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে এক বৈঠকে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে অপরাধীরা যাতে ঘুষ লেনদেন কিংবা জঙ্গি অর্থায়ন করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন দুদক। ওইদিন তিনি বলেছিলেন, অপরাধীরা এ জাতীয় চ্যানেল ব্যবহার করে ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অপরাধ করে বলে কমিশনে অভিযোগ আছে।

উল্লেখ্য, দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মোবাইল ব্যাংকিং। প্রতিদিনই গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ। গত ডিসেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক লেনদেন করেছে ৪০ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। একক মাস হিসাবে এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড লেনদেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত কোটি ৯৬ লাখ ৪৯ হাজার যা নভেম্বরে ছিল সাত কোটি ৮৫ লাখ ৯৪ হাজার। অর্থাৎ এক মাসে গ্রাহক বেড়েছে ১০ লাখ ৫৫ হাজার। টানা তিন মাসে একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় গণ্য করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন ও গ্রহক সংখ্যা বাড়লেও সেবায় সক্রিয় গ্রাহকসংখ্যা কমেছে। ডিসেম্বর শেষে এমএফএস সক্রিয় গ্রহণ এক মাসের ব্যবধানে দশমিক ৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৪৭ লাখ ৬৩ হাজার যা আগের মাস নভেম্বরে ছিল তিন কোটি ৫০ লাখ ৯২ হাজার। আর আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৭১ হাজার ৬২০। এমএফএস গত ডিসেম্বরে মোট ২২ কোটি ৭৪ লাখ ২২ হাজার ৯৩৮টি লেনদেনের মাধ্যমে ৪০ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা ৬৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৩১১ কোটি ২১ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৮ মাঘ ১৪২৬, ১৬ জমাদিউল সানি ১৪৪১

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীর তথ্য দিতে হবে দুদককে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

দেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীদের তথ্য দুদককে দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফএস) কাছে থাকা গ্রাহকের তথ্য, তদন্তের স্বার্থে দুদকের কাছে সরবরাহ করতে হবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অর্থ আদান-প্রদান হচ্ছে-এমন আশঙ্কার কারণে এই নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অর্থ আদান-প্রদান হচ্ছে। এসব দুর্নীতির তদন্ত করতে তথ্য প্রয়োজন। দুদকের অনুসন্ধান/তদন্তের স্বার্থে এমএফএসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এমএফএস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘গত ২১ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব এমএফএস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এমএফএস অ্যাকাউন্টের সব ধরনের ক্যাশ ইন/ক্যাশ আউটের ডিজিটাল মানি রশিদের বিস্তারিত তথ্য দুদকের অনুসন্ধান/তদন্তের প্রয়োজনে সরবরাহ করতে হবে। এমএফএস গ্রাহক এবং লেনদেনের তথ্যভাণ্ডার থেকে দুদকের কর্মকর্তাকে রিয়েল টাইম তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।’ এছাড়া একাধিক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অস্বাভাবিক লেনদেন রোধে জনসচেতনতা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত ২১ নভেম্বর মোবাইল আর্থিক সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে এক বৈঠকে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে অপরাধীরা যাতে ঘুষ লেনদেন কিংবা জঙ্গি অর্থায়ন করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন দুদক। ওইদিন তিনি বলেছিলেন, অপরাধীরা এ জাতীয় চ্যানেল ব্যবহার করে ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অপরাধ করে বলে কমিশনে অভিযোগ আছে।

উল্লেখ্য, দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মোবাইল ব্যাংকিং। প্রতিদিনই গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ। গত ডিসেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক লেনদেন করেছে ৪০ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। একক মাস হিসাবে এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড লেনদেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত কোটি ৯৬ লাখ ৪৯ হাজার যা নভেম্বরে ছিল সাত কোটি ৮৫ লাখ ৯৪ হাজার। অর্থাৎ এক মাসে গ্রাহক বেড়েছে ১০ লাখ ৫৫ হাজার। টানা তিন মাসে একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় গণ্য করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন ও গ্রহক সংখ্যা বাড়লেও সেবায় সক্রিয় গ্রাহকসংখ্যা কমেছে। ডিসেম্বর শেষে এমএফএস সক্রিয় গ্রহণ এক মাসের ব্যবধানে দশমিক ৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৪৭ লাখ ৬৩ হাজার যা আগের মাস নভেম্বরে ছিল তিন কোটি ৫০ লাখ ৯২ হাজার। আর আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৭১ হাজার ৬২০। এমএফএস গত ডিসেম্বরে মোট ২২ কোটি ৭৪ লাখ ২২ হাজার ৯৩৮টি লেনদেনের মাধ্যমে ৪০ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা ৬৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৩১১ কোটি ২১ লাখ টাকা।