অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক রংপুরের কৃতি সন্তান আকবর আলীর ব্যাটিং নৈপুণ্যে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করেছে। নিজের বড় বোনের শোককে শক্তিতে পরিণত করে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে দিয়েছে তার নেতৃত্ব দলটি। আকবর প্রতিটি খেলায় দায়িত্বশীল ব্যাটিং এবং অধিনায়কের দ্বায়িত্ব পালন করেছে। বাবা, মা, বড় ভাইসহ স্বজনরা না জানালেও আকবর ঠিকই জানতে পেরেছিল তার বড় বোন খাদিজা বেগম রানীর অকাল মৃত্যুর খবরটি।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে রংপুরের কৃতি সন্তান আকবরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হবার গৌরব অর্জন করায় পুরো পরিবার প্রশংসায় ভাসছে। দলে দলে মানুষ আসছে শুভেচ্ছা জানাতে। সোমবার রাতে রংপুর নগরীর জুম্মাপাড়া মহল্লার পৈত্রিক বাসায় দৈনিক সংবাদকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অনেক অজানা কথা বললেন তার গর্বিত বাবা মোস্তফা বড় ভাই মুরাদ হোসেন। আকবরের বাবা জানান সে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে যখন দক্ষিণ অফ্রিকায় অবস্থান করছিল সে সময় ২২ জানুয়ারি তার বড় বোন খাদিজা বেগম মারা যায়। আকবরের বাবা জানান তার মেয়ে গর্ভবতী ছিল দুটি জমজ সন্তান প্রসব করলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। তখনও পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা হয়নি। আমরা পরিবারের সবাই বসে সিদ্ধান্ত এমনি পরিস্থিতিতে বোনের মৃত্যুর খবর তাকে জানালে তার খেলার প্রতি মনোযোগ ব্যাহত হতে পারে। আমাদের একটাই স্বপ্ন ছিল দেশের জন্য খেলতে গেছে এবার হয়তো বিশ্বকাপ জয় করে বাসায় ফিরবে। সে কারণে বুকে পাথর বেঁধে নিজেদের সামলানোর চেষ্টা করেছি আমরা। পাকিস্তানকে পরাজিত করার পর আমরা ভাবলাম বোনের মৃত্যুর খবরটি তাকে জানানো কী ঠিক হবে? শেষ পর্যন্ত আমরা তাকে বিষয়টি জানানোর সিদ্ধান্ত নেই। ফোন করে তাকে বোনের মৃত্যুর খবর জানালে সে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। অশ্রুভরা চোখে মো. মোস্তফা জানান আকবর আমাকে জানায় বোনের মৃত্যুর খবরটি আমি জেনেছি তোমরা আমাকে খবরটি আগেই জানালে পারতা। সে দিন সে বলেছিল আমার বোনের মৃত্যুর শোককে শক্তিতে পরিণত করে আমি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে যাব। তোমরা দোয়া কর যেন বাংলাদেশ দল এবার বিশ্বকাপ জয় করে দেশে ফিরতে পারে।
আকবরের গর্বিত মা শাহিদা বেগম জানান আমার মেয়ে মারা গেছে কিন্তু তার দুটো জমজ সন্তান আমাদের মেয়ের মৃত্যুর যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমিয়ে দিয়েছে। আমাদের একটাই ইচ্ছা দুই জমজ সন্তানকে বড় করা তাদের মানুষের মতো মানুষ বানানো।
আকবরের বড় ভাই মুরাদ হোসেন জানান সে নিজেও ক্রিকেট খেলেছে ঢাকায় একটি দলের হয়ে ক্রিকেট খেলেছে ইচ্ছে ছিল বড় ক্রিকেটার হবার কিন্তু সেই বাসনা পূরণ না হলেও ছোট ভাই ক্রিকেট খেলে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দলের নেতৃত্ব দিয়েছে। তার অসাধারণ নৈপুণ্যে দল বিশ্বকাপ জয় করেছে। আশা করি একদিন বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ান হবে সেই দলের নেতৃত্ব সে দেবে এটাই আমার কামনা। মহান আল্লাহ তায়ালা এই আশা পূরণ করবে এই আমাদের প্রার্থনা।
আকবরের মা শাহিদা বেগম জানান তার ছেলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপ জয় করেছে এজন্য আল্লাহর দরবারে লাখো শুকরিয়া দেশবাসীর কাছে তার জন্য দেয়া চাইলেন তিনি বললেন সে যেন আরও ভালো করতে পারে সে দোয়া কামনা করেন তিনি।
আকবর ছোট বেলা থেকে ক্রিকেট খেলার প্রতি অসম্ভব ঝোঁক ছিল রংপুর জিলা স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন সেখানে অসীম মেমোরিয়াল ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হয়ে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নেন। তার গুরু ছিলেন রংপুরের কৃতিমান কিকেট কোচ মিনানের কাছে। বিকেএসপিতে ২শ’ জন আবেদনকারীর মধ্যে সে নির্বাচিত হয়ে সেখানে ভর্তি হয়। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেটে ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করে সবার নজর কাড়ে। সেই খেলায় অধিনায়কত্ব সে করছে। এরপর অনূর্ধ্ব-১৮ বিশ্বকাপে সহ-অধিনায়ক ছিল। লেখাপড়ায় অত্যান্ত মেধাবী ছিল আকবর। এসএসসিতে জিপিএ-৫ এইচএসসিতে ৪ দশমিক ৪২ পেয়েছে। বর্তমানে আমেরিকান প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে লেখাপড়া করছে সে।
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৮ মাঘ ১৪২৬, ১৬ জমাদিউল সানি ১৪৪১
লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক রংপুরের কৃতি সন্তান আকবর আলীর ব্যাটিং নৈপুণ্যে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করেছে। নিজের বড় বোনের শোককে শক্তিতে পরিণত করে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে দিয়েছে তার নেতৃত্ব দলটি। আকবর প্রতিটি খেলায় দায়িত্বশীল ব্যাটিং এবং অধিনায়কের দ্বায়িত্ব পালন করেছে। বাবা, মা, বড় ভাইসহ স্বজনরা না জানালেও আকবর ঠিকই জানতে পেরেছিল তার বড় বোন খাদিজা বেগম রানীর অকাল মৃত্যুর খবরটি।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে রংপুরের কৃতি সন্তান আকবরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হবার গৌরব অর্জন করায় পুরো পরিবার প্রশংসায় ভাসছে। দলে দলে মানুষ আসছে শুভেচ্ছা জানাতে। সোমবার রাতে রংপুর নগরীর জুম্মাপাড়া মহল্লার পৈত্রিক বাসায় দৈনিক সংবাদকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অনেক অজানা কথা বললেন তার গর্বিত বাবা মোস্তফা বড় ভাই মুরাদ হোসেন। আকবরের বাবা জানান সে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে যখন দক্ষিণ অফ্রিকায় অবস্থান করছিল সে সময় ২২ জানুয়ারি তার বড় বোন খাদিজা বেগম মারা যায়। আকবরের বাবা জানান তার মেয়ে গর্ভবতী ছিল দুটি জমজ সন্তান প্রসব করলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। তখনও পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা হয়নি। আমরা পরিবারের সবাই বসে সিদ্ধান্ত এমনি পরিস্থিতিতে বোনের মৃত্যুর খবর তাকে জানালে তার খেলার প্রতি মনোযোগ ব্যাহত হতে পারে। আমাদের একটাই স্বপ্ন ছিল দেশের জন্য খেলতে গেছে এবার হয়তো বিশ্বকাপ জয় করে বাসায় ফিরবে। সে কারণে বুকে পাথর বেঁধে নিজেদের সামলানোর চেষ্টা করেছি আমরা। পাকিস্তানকে পরাজিত করার পর আমরা ভাবলাম বোনের মৃত্যুর খবরটি তাকে জানানো কী ঠিক হবে? শেষ পর্যন্ত আমরা তাকে বিষয়টি জানানোর সিদ্ধান্ত নেই। ফোন করে তাকে বোনের মৃত্যুর খবর জানালে সে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। অশ্রুভরা চোখে মো. মোস্তফা জানান আকবর আমাকে জানায় বোনের মৃত্যুর খবরটি আমি জেনেছি তোমরা আমাকে খবরটি আগেই জানালে পারতা। সে দিন সে বলেছিল আমার বোনের মৃত্যুর শোককে শক্তিতে পরিণত করে আমি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে যাব। তোমরা দোয়া কর যেন বাংলাদেশ দল এবার বিশ্বকাপ জয় করে দেশে ফিরতে পারে।
আকবরের গর্বিত মা শাহিদা বেগম জানান আমার মেয়ে মারা গেছে কিন্তু তার দুটো জমজ সন্তান আমাদের মেয়ের মৃত্যুর যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমিয়ে দিয়েছে। আমাদের একটাই ইচ্ছা দুই জমজ সন্তানকে বড় করা তাদের মানুষের মতো মানুষ বানানো।
আকবরের বড় ভাই মুরাদ হোসেন জানান সে নিজেও ক্রিকেট খেলেছে ঢাকায় একটি দলের হয়ে ক্রিকেট খেলেছে ইচ্ছে ছিল বড় ক্রিকেটার হবার কিন্তু সেই বাসনা পূরণ না হলেও ছোট ভাই ক্রিকেট খেলে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দলের নেতৃত্ব দিয়েছে। তার অসাধারণ নৈপুণ্যে দল বিশ্বকাপ জয় করেছে। আশা করি একদিন বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ান হবে সেই দলের নেতৃত্ব সে দেবে এটাই আমার কামনা। মহান আল্লাহ তায়ালা এই আশা পূরণ করবে এই আমাদের প্রার্থনা।
আকবরের মা শাহিদা বেগম জানান তার ছেলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপ জয় করেছে এজন্য আল্লাহর দরবারে লাখো শুকরিয়া দেশবাসীর কাছে তার জন্য দেয়া চাইলেন তিনি বললেন সে যেন আরও ভালো করতে পারে সে দোয়া কামনা করেন তিনি।
আকবর ছোট বেলা থেকে ক্রিকেট খেলার প্রতি অসম্ভব ঝোঁক ছিল রংপুর জিলা স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন সেখানে অসীম মেমোরিয়াল ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হয়ে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নেন। তার গুরু ছিলেন রংপুরের কৃতিমান কিকেট কোচ মিনানের কাছে। বিকেএসপিতে ২শ’ জন আবেদনকারীর মধ্যে সে নির্বাচিত হয়ে সেখানে ভর্তি হয়। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেটে ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করে সবার নজর কাড়ে। সেই খেলায় অধিনায়কত্ব সে করছে। এরপর অনূর্ধ্ব-১৮ বিশ্বকাপে সহ-অধিনায়ক ছিল। লেখাপড়ায় অত্যান্ত মেধাবী ছিল আকবর। এসএসসিতে জিপিএ-৫ এইচএসসিতে ৪ দশমিক ৪২ পেয়েছে। বর্তমানে আমেরিকান প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে লেখাপড়া করছে সে।