করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি : বাণিজ্যমন্ত্রী

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে যেসব পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন সবগুলোই নিয়েছি। তারপরও কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। কী পরিমাণ চাপ আসতে পারে, সেটা নিয়ে একটা আলোচনা হচ্ছে। গার্মেন্টস সেক্টরে কী প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি একটা রিপোর্ট পাব। পাশাপাশি লক্ষ্য রাখছি, ফ্যাক্টরিগুলোর সাপ্লাইয়ের দিকে। চায়নার মার্কেটগুলো খুলতে শুরু করেছে। দেখা যাক কি হয়। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনের ইন্টারন্যাশনাল ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো-ইফসি শুরু হয়েছে। এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিজিএমইএর পক্ষ থেকে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে ম্যানুফ্যাকচারিং মালামাল, বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট ও কাঁচামাল আমদানি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এ বিষয় সমাধানে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে বলা মুশকিল, এটা অত্যন্ত গভীর সমস্যা। রেডিমেড গার্মেন্ট সেক্টরে হঠাৎ সাপ্লাইটা কোথায় সোর্সিং করব? সেটা তো সময়ের বিষয়। আমরা লক্ষ্য রাখছি, আশা করছি, অল্টারনেটিভ মার্কেট পেয়ে যাব। যদিও এর জন্য সময় দরকার। কারণ, যে স্পেসিফিকেশন কাঁচামাল আনতে হয় সেটা অন্য কোথাও পেতে হলে তো সময় দিতে হবে। বায়ারকে এক্সেপ্ট করতে হবে। এটা নিয়ে আমরা একটু দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি বটে।

দেশে রসুনের দাম অনেক বেড়ে গেছে। চীন থেকে অনেক ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য আসে, অনেক কাঁচামাল আসে- এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রসুন যে পরিমাণ প্রয়োজন তার ৯০ শতাংশ চায়না থেকে আসে। রসুনের বিষয় এক ধরনের। অন্য কাঁচামাল, ইলেক্ট্রনিক্স প্রডাক্টের প্রভাব যদি পড়তে শুরু করে সেটা অন্য রকমের ভাবনা। রসুন নিয়ে আমরা চেষ্টা করব বিকল্প মার্কেট থেকে সোর্সিং করতে। কাঁচামাল আনার ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হবে। আমাদের এখনই বলার সময় আসেনি, দেখি বড় ধরনের বিপদ আসে কি না। ইতোমধ্যে রসুনের দাম বেড়েছে, এ বিষয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে কী না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের বাজার মনিটরিং আছে। আমাদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ সরকারের বিভিন্ন জায়গায় যারা ইমপ্লিমেন্টেশন করবে তাদের বলা হয়েছে আপনারা বাজার যান, বাজার মনিটরিং করেন। পাইকারি ও খুচরা বাজারে কী দামে বিক্রি হচ্ছে, তা মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। বাজারে মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। কেউ যদি মূল্যের অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, করোনাভাইরাস কয়েক মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। ২ মিটারের মধ্যে থাকলে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইমপোর্টেড যে কাপড় বানানো জিনিস তার ওপরে করোনাভাইরাসের প্রভাব নেই। কিন্তু মানুষ কাজ করতে যাবে সেখানেই সমস্যা। মানুষ কাজ না করলে প্রোডাকশন হবে কেমন করে? জিনিসপত্র আনলে সেখানে সমস্যা নেই। কিন্তু ওখান থেকে তো সাপ্লাইটা শুরু হতে হবে। আমরা লক্ষ্য রাখছি, তারা (চীন) সাপ্লাইটা শুরু করে কি না। বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছে চীন। এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের রেস্ট্রিকশন আনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যেসব চীনা নাগরিক বাংলাদেশে আসছে আমরা তাদের দেখছি, তাদের ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত যারা এসেছেন তাদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি।

বাংলাদেশের সবচেয়ে রপ্তানির বড় সেক্টর হচ্ছে চামড়া। এ চামড়া বাজার বড় ধরনের সংকটে রয়েছে। চীন হচ্ছে চামড়া সবচেয়ে বড় আমদানিকারক। তবে অনেক রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে। ডিসেম্বরে একটা টাইমলাইন ছিল, সেটিও পেরিয়ে গেছে। এসব সমাধানে মন্ত্রণালয় কী ভাবছে? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের বড় সমস্যা শিফট করার পর। সমস্যা হচ্ছে কোরবানির সময় একসঙ্গে অনেক চামড়া জমে যায়। গত বুধবার আমরা শিল্প মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদফতরের সঙ্গে বসে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। একটা হাইপাওয়ার কমিটি করে দেয়া হয়েছে, সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধিকে নিয়ে। কমিটির রিপোর্ট পেলে আমরা অ্যাকশন নেব।

শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ১ ফল্গুন ১৪২৬, ১৯ জমাদিউল সানি ১৪৪১

করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি : বাণিজ্যমন্ত্রী

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে যেসব পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন সবগুলোই নিয়েছি। তারপরও কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। কী পরিমাণ চাপ আসতে পারে, সেটা নিয়ে একটা আলোচনা হচ্ছে। গার্মেন্টস সেক্টরে কী প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি একটা রিপোর্ট পাব। পাশাপাশি লক্ষ্য রাখছি, ফ্যাক্টরিগুলোর সাপ্লাইয়ের দিকে। চায়নার মার্কেটগুলো খুলতে শুরু করেছে। দেখা যাক কি হয়। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনের ইন্টারন্যাশনাল ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো-ইফসি শুরু হয়েছে। এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিজিএমইএর পক্ষ থেকে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে ম্যানুফ্যাকচারিং মালামাল, বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট ও কাঁচামাল আমদানি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এ বিষয় সমাধানে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে বলা মুশকিল, এটা অত্যন্ত গভীর সমস্যা। রেডিমেড গার্মেন্ট সেক্টরে হঠাৎ সাপ্লাইটা কোথায় সোর্সিং করব? সেটা তো সময়ের বিষয়। আমরা লক্ষ্য রাখছি, আশা করছি, অল্টারনেটিভ মার্কেট পেয়ে যাব। যদিও এর জন্য সময় দরকার। কারণ, যে স্পেসিফিকেশন কাঁচামাল আনতে হয় সেটা অন্য কোথাও পেতে হলে তো সময় দিতে হবে। বায়ারকে এক্সেপ্ট করতে হবে। এটা নিয়ে আমরা একটু দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি বটে।

দেশে রসুনের দাম অনেক বেড়ে গেছে। চীন থেকে অনেক ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য আসে, অনেক কাঁচামাল আসে- এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রসুন যে পরিমাণ প্রয়োজন তার ৯০ শতাংশ চায়না থেকে আসে। রসুনের বিষয় এক ধরনের। অন্য কাঁচামাল, ইলেক্ট্রনিক্স প্রডাক্টের প্রভাব যদি পড়তে শুরু করে সেটা অন্য রকমের ভাবনা। রসুন নিয়ে আমরা চেষ্টা করব বিকল্প মার্কেট থেকে সোর্সিং করতে। কাঁচামাল আনার ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হবে। আমাদের এখনই বলার সময় আসেনি, দেখি বড় ধরনের বিপদ আসে কি না। ইতোমধ্যে রসুনের দাম বেড়েছে, এ বিষয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে কী না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের বাজার মনিটরিং আছে। আমাদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ সরকারের বিভিন্ন জায়গায় যারা ইমপ্লিমেন্টেশন করবে তাদের বলা হয়েছে আপনারা বাজার যান, বাজার মনিটরিং করেন। পাইকারি ও খুচরা বাজারে কী দামে বিক্রি হচ্ছে, তা মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। বাজারে মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। কেউ যদি মূল্যের অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, করোনাভাইরাস কয়েক মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। ২ মিটারের মধ্যে থাকলে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইমপোর্টেড যে কাপড় বানানো জিনিস তার ওপরে করোনাভাইরাসের প্রভাব নেই। কিন্তু মানুষ কাজ করতে যাবে সেখানেই সমস্যা। মানুষ কাজ না করলে প্রোডাকশন হবে কেমন করে? জিনিসপত্র আনলে সেখানে সমস্যা নেই। কিন্তু ওখান থেকে তো সাপ্লাইটা শুরু হতে হবে। আমরা লক্ষ্য রাখছি, তারা (চীন) সাপ্লাইটা শুরু করে কি না। বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছে চীন। এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের রেস্ট্রিকশন আনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যেসব চীনা নাগরিক বাংলাদেশে আসছে আমরা তাদের দেখছি, তাদের ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত যারা এসেছেন তাদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি।

বাংলাদেশের সবচেয়ে রপ্তানির বড় সেক্টর হচ্ছে চামড়া। এ চামড়া বাজার বড় ধরনের সংকটে রয়েছে। চীন হচ্ছে চামড়া সবচেয়ে বড় আমদানিকারক। তবে অনেক রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে। ডিসেম্বরে একটা টাইমলাইন ছিল, সেটিও পেরিয়ে গেছে। এসব সমাধানে মন্ত্রণালয় কী ভাবছে? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের বড় সমস্যা শিফট করার পর। সমস্যা হচ্ছে কোরবানির সময় একসঙ্গে অনেক চামড়া জমে যায়। গত বুধবার আমরা শিল্প মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদফতরের সঙ্গে বসে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। একটা হাইপাওয়ার কমিটি করে দেয়া হয়েছে, সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধিকে নিয়ে। কমিটির রিপোর্ট পেলে আমরা অ্যাকশন নেব।