ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে তদারকি জোরদার করা হবে : শিল্পমন্ত্রী

অনিরাপদ ও নিম্নমানের খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধে বিএসটিআই-এর তদারকি জোরদার করা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং প্রজ্ঞা-প্রগতির জন্য জ্ঞানের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট, হৃদরোগ ঝুঁকি এবং করণীয় ভোক্তা পরিপ্রেক্ষিতে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী একথা বলেন।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ট্রান্স ফ্যাটের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। খাদ্যপণ্যের লেবেলে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ উল্লেখ করার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হবে। যেসব খাদ্যপণ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে, সেগুলো সম্পর্কে শিল্প মন্ত্রণালয় সজাগ রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত গাইডলাইন অনুসরণ না করে যেসব খাদ্যপণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে, প্রয়োজনে জনস্বার্থে সেগুলো নিষিদ্ধ করা হবে। এছাড়া খাদ্যে অসম্পৃক্ত চর্বি বা ট্রান্স ফ্যাটের ফলে সৃষ্ট হৃদরোগ মোকাবিলায় বর্তমান সরকার পুরনো আইন পর্যালোচনা করে যুগোপযোগী করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ট্রান্স ফ্যাটের প্রভাব, এর বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে তিনটি পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। যথাক্রমে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, প্রজ্ঞার পরিচালক ও কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার এবং ক্যাবের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আহম্মদ একরামুল্লাহ। এছাড়া অন্যদের মধ্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক, বিএসটিআই এর মহাপরিচালক মো. মুয়াজ্জেম হোসাইন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহাবুব কবির, পাবলিক হেল্থ স্পেশালিস্ট মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস আলোচনায় অংশ নেন।

সভায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি মোকাবিলায় ডালডা ও বনস্পতির উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। তারা বলেন, ডালডা ও বনস্পতির মতো আংশিক হাইড্রোজেনেডেট তেলে অতিমাত্রায় ট্রান্স ফ্যাট থাকায় এগুলো দিয়ে তৈরি খাদ্য মানুষের রক্তচাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি টাইপ-২ ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর ৩০ শতাংশই হৃদরোগের কারণে হচ্ছে। এর জন্য ট্রান্স ফ্যাট দায়ী বলে তারা মন্তব্য করেন। সভায় বক্তারা বলেন, ট্রান্স ফ্যাটের ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেই অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার বাড়ছে। পৃথিবীতে প্রতিবছর ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরনের পরিস্থিতিকে ইতোমধ্যে মানব সৃষ্ট মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডব্লিউএইচও সব খাদ্যপণ্যে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ মোট ফ্যাটের সর্বোচ্চ ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা ও কানাডা ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস ডালডা ও বনস্পতির উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে বলে তারা তথ্য তুলে ধরেন। বক্তারা বাংলাদেশে ট্রান্স ফ্যাটজনিত মৃত্যু মোকাবিলায় সকল খাদ্যপণ্যে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ ট্রান্স ফ্যাটের উপস্থিতি নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।

এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। খাদ্যের মোড়কে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ উল্লেখ বাধ্যতামূলক করতে হবে। একই সঙ্গে তারা খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা পরিমাপের জন্য বিএসটিআই’র টেস্টিং সক্ষমতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমে অতিমাত্রায় ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাদ্যের তালিকা প্রকাশ, ট্রান্স ফ্যাটের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে ভোক্তা সাধারণকে সতর্ককরণ এবং এ ধরনের পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প কারখানার মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির সুপারিশ করেন।

শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ১ ফল্গুন ১৪২৬, ১৯ জমাদিউল সানি ১৪৪১

ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে তদারকি জোরদার করা হবে : শিল্পমন্ত্রী

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

অনিরাপদ ও নিম্নমানের খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধে বিএসটিআই-এর তদারকি জোরদার করা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং প্রজ্ঞা-প্রগতির জন্য জ্ঞানের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট, হৃদরোগ ঝুঁকি এবং করণীয় ভোক্তা পরিপ্রেক্ষিতে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী একথা বলেন।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ট্রান্স ফ্যাটের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। খাদ্যপণ্যের লেবেলে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ উল্লেখ করার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হবে। যেসব খাদ্যপণ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে, সেগুলো সম্পর্কে শিল্প মন্ত্রণালয় সজাগ রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত গাইডলাইন অনুসরণ না করে যেসব খাদ্যপণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে, প্রয়োজনে জনস্বার্থে সেগুলো নিষিদ্ধ করা হবে। এছাড়া খাদ্যে অসম্পৃক্ত চর্বি বা ট্রান্স ফ্যাটের ফলে সৃষ্ট হৃদরোগ মোকাবিলায় বর্তমান সরকার পুরনো আইন পর্যালোচনা করে যুগোপযোগী করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ট্রান্স ফ্যাটের প্রভাব, এর বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে তিনটি পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। যথাক্রমে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, প্রজ্ঞার পরিচালক ও কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার এবং ক্যাবের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আহম্মদ একরামুল্লাহ। এছাড়া অন্যদের মধ্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক, বিএসটিআই এর মহাপরিচালক মো. মুয়াজ্জেম হোসাইন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহাবুব কবির, পাবলিক হেল্থ স্পেশালিস্ট মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস আলোচনায় অংশ নেন।

সভায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি মোকাবিলায় ডালডা ও বনস্পতির উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। তারা বলেন, ডালডা ও বনস্পতির মতো আংশিক হাইড্রোজেনেডেট তেলে অতিমাত্রায় ট্রান্স ফ্যাট থাকায় এগুলো দিয়ে তৈরি খাদ্য মানুষের রক্তচাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি টাইপ-২ ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর ৩০ শতাংশই হৃদরোগের কারণে হচ্ছে। এর জন্য ট্রান্স ফ্যাট দায়ী বলে তারা মন্তব্য করেন। সভায় বক্তারা বলেন, ট্রান্স ফ্যাটের ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেই অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার বাড়ছে। পৃথিবীতে প্রতিবছর ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরনের পরিস্থিতিকে ইতোমধ্যে মানব সৃষ্ট মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডব্লিউএইচও সব খাদ্যপণ্যে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ মোট ফ্যাটের সর্বোচ্চ ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা ও কানাডা ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস ডালডা ও বনস্পতির উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে বলে তারা তথ্য তুলে ধরেন। বক্তারা বাংলাদেশে ট্রান্স ফ্যাটজনিত মৃত্যু মোকাবিলায় সকল খাদ্যপণ্যে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ ট্রান্স ফ্যাটের উপস্থিতি নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।

এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। খাদ্যের মোড়কে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ উল্লেখ বাধ্যতামূলক করতে হবে। একই সঙ্গে তারা খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা পরিমাপের জন্য বিএসটিআই’র টেস্টিং সক্ষমতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমে অতিমাত্রায় ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাদ্যের তালিকা প্রকাশ, ট্রান্স ফ্যাটের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে ভোক্তা সাধারণকে সতর্ককরণ এবং এ ধরনের পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প কারখানার মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির সুপারিশ করেন।