নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদকের চিঠি

দেশের ৬৪ জেলায় ১৩৯টি নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে গতকাল দুদক থেকে এ চিঠি পাঠানো হয় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে। দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত স্বাক্ষরিত চিঠিতে দখল হওয়া নদী উদ্ধারের পাশাপাশি দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। নদীদখলের বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

মন্ত্রী পরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে উপযুক্ত বিষয়ে সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, পত্রিকার গত ৭ ফেব্রুয়ারি নদী নিয়ে সেভ রিভার সেভ সোনার বাংলা শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদনটি দুর্নীতি দমন কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ওই বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মহোদয়ের সঙ্গে টেলিফোনিক আলোচনায় সরকারি সম্পদ রক্ষার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচারপতি ওলিভউই ওয়েনডেল হোলমেস- এর বিখ্যাত উক্তি একটি নদী সুবিধার চেয়ে বেশি, এটি একটি ধন এটি জীবনের একটি প্রয়োজনীয়তা সরবরাহ করে প্রাসঙ্গিক।

চিঠিতে বলা হয় নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা আজ সত্যিই হুমকির মুখোমুখি। প্রাকৃতিক, আন্তর্জাতিক এবং কতিপয় সর্বগ্রাসী নদী দখলদারের কারণেই দেশের নদীসমূহ আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল রিভার কনজারভেশন কমিশনের’ রিপোর্ট অনুসারে দেশের ৬৪টি জেলার ১৩৯টি নদী ব্যাপকভাবে দখল করা হয়েছে। কেবল ঢাকার বাইরে ৪৯,১৬২ জন নদী দখলদারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ অথবা আত্মসাতের সহযোগিতা দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ। কমিশন ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি খাস জমি দখলদারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কমিশনের প্রতিরোধমূলক বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি সম্পত্তি স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় দখলমুক্ত করা হচ্ছে।

বর্ণিত প্রেক্ষাপটে প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকগণ স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রে যে সব নদী দখল হয়েছে-তা উচ্ছেদের মাধ্যমে নদীগুলোকে দখলমুক্ত করবেন এবং দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন মর্মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে, যা কমিশন প্রত্যাশা করে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমের মাসিক প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংরক্ষণ করতে পারে এবং প্রয়োজনে প্রতিবেদনের অনুলিপি দুদকে প্রেরণ করতে পারে। সরকারি সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকরা দুর্নীতি প্রতিরোধে তাদের কার্যকর ভূমিকা রাখবেন মর্মে কমিশন দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশা করে।

দুদক সূত্র জানায়, দেশের প্রতিটি জেলায় দখল এবং দূষণের কারণে নদীগুলো বিপন্ন হতে চলেছে। অনেক নদীদখলের কারণে প্রবাহ কমে গেছে অথবা হারিয়ে গেছে। অনেক নদীর অস্তিত্বসংকটে রয়েছে। যেভাবে প্রতিটি জেলায় নদী দখল হচ্ছে তা খুবই উদ্বেগজনক। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযানও চালিয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে নদী দখলের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওইসব প্রতিবেদনে কারা কোথায় কিভাবে নদী দখল করেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত এসেছে। গণমাধ্যমের এসব তথ্য আমলে নিয়ে দুদকের জেলা পর্যায়ের গোয়েন্দা টিমের মাধ্যমে অনুসন্ধান চালিয়ে এসব বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই দখল হওয়া নদী উদ্ধারের পাশাপাশি দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদকের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে দুদক কাজ করবে।

শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ১ ফল্গুন ১৪২৬, ১৯ জমাদিউল সানি ১৪৪১

নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদকের চিঠি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

দেশের ৬৪ জেলায় ১৩৯টি নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে গতকাল দুদক থেকে এ চিঠি পাঠানো হয় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে। দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত স্বাক্ষরিত চিঠিতে দখল হওয়া নদী উদ্ধারের পাশাপাশি দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। নদীদখলের বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

মন্ত্রী পরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে উপযুক্ত বিষয়ে সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, পত্রিকার গত ৭ ফেব্রুয়ারি নদী নিয়ে সেভ রিভার সেভ সোনার বাংলা শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদনটি দুর্নীতি দমন কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ওই বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মহোদয়ের সঙ্গে টেলিফোনিক আলোচনায় সরকারি সম্পদ রক্ষার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচারপতি ওলিভউই ওয়েনডেল হোলমেস- এর বিখ্যাত উক্তি একটি নদী সুবিধার চেয়ে বেশি, এটি একটি ধন এটি জীবনের একটি প্রয়োজনীয়তা সরবরাহ করে প্রাসঙ্গিক।

চিঠিতে বলা হয় নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা আজ সত্যিই হুমকির মুখোমুখি। প্রাকৃতিক, আন্তর্জাতিক এবং কতিপয় সর্বগ্রাসী নদী দখলদারের কারণেই দেশের নদীসমূহ আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল রিভার কনজারভেশন কমিশনের’ রিপোর্ট অনুসারে দেশের ৬৪টি জেলার ১৩৯টি নদী ব্যাপকভাবে দখল করা হয়েছে। কেবল ঢাকার বাইরে ৪৯,১৬২ জন নদী দখলদারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ অথবা আত্মসাতের সহযোগিতা দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ। কমিশন ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি খাস জমি দখলদারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কমিশনের প্রতিরোধমূলক বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি সম্পত্তি স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় দখলমুক্ত করা হচ্ছে।

বর্ণিত প্রেক্ষাপটে প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকগণ স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রে যে সব নদী দখল হয়েছে-তা উচ্ছেদের মাধ্যমে নদীগুলোকে দখলমুক্ত করবেন এবং দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন মর্মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে, যা কমিশন প্রত্যাশা করে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমের মাসিক প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংরক্ষণ করতে পারে এবং প্রয়োজনে প্রতিবেদনের অনুলিপি দুদকে প্রেরণ করতে পারে। সরকারি সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকরা দুর্নীতি প্রতিরোধে তাদের কার্যকর ভূমিকা রাখবেন মর্মে কমিশন দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশা করে।

দুদক সূত্র জানায়, দেশের প্রতিটি জেলায় দখল এবং দূষণের কারণে নদীগুলো বিপন্ন হতে চলেছে। অনেক নদীদখলের কারণে প্রবাহ কমে গেছে অথবা হারিয়ে গেছে। অনেক নদীর অস্তিত্বসংকটে রয়েছে। যেভাবে প্রতিটি জেলায় নদী দখল হচ্ছে তা খুবই উদ্বেগজনক। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযানও চালিয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে নদী দখলের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওইসব প্রতিবেদনে কারা কোথায় কিভাবে নদী দখল করেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত এসেছে। গণমাধ্যমের এসব তথ্য আমলে নিয়ে দুদকের জেলা পর্যায়ের গোয়েন্দা টিমের মাধ্যমে অনুসন্ধান চালিয়ে এসব বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই দখল হওয়া নদী উদ্ধারের পাশাপাশি দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদকের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে দুদক কাজ করবে।