নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত

সুজন সম্মেলনে বক্তারা

আইন কার্যকর না হলে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। বর্তমানে নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি রাজনীতি থেকে সুশীল সমাজকে দূরে থাকতে হবে বলে মনে করেন বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ।

গতকাল ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে অনুষ্ঠিত সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র সপ্তম জাতীয় সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আবু হেনা বলেন, গণতন্ত্র চলতে পারে যখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত হন। আর এই প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন নির্বাচনের মাধমে। তাই যোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচিত করা গেলে গণতন্ত্র কাজ করতে পারে এবং সুশাসন বিরাজ করতে পারে। বিগত সময়ে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও সুজনসহ অন্যদের ধারাবাহিক অ্যাডভোকেসির ফলে দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় বিভিন্ন সংস্কার সাধন করা সম্ভব হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সচিবালয়, আরপিও এবং আচরণবিধির সংশোধন, প্রার্থীদের তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের বিবরণ দেয়ার বিধান ইত্যাদি। কিন্তু এতসব সংস্কারের পরও আজ আমরা কেন গণতন্ত্র ও সুশাসন নিয়ে চিন্তিত? আমি মনে করি, যতই আইন করা হোক না কেন, যদি সেগুলো কার্যকর করা না হয় এবং সমভাবে সবার জন্য বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ড. আকবর আলী খান বলেন, সিভিল সমাজকে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। যদিও তারা সবসময় রাজনীতি এড়াতে পারে না। তবে স্বতন্ত্র থাকাই ভালো। বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যা রাতারাতি দূর হতে হবে না। কারণ রাজনৈতিকরা এই সমস্যা সৃষ্টি করেছেন, তারা এটি সহজে দূর করবেন বলে মনে হয় না। আমি মনে করি, ২০ দফার পরিবর্তে এখন একদফা দাবি তোলা দরকার, সেটা হলো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা।

এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, আজকে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অথচ গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের জন্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতেও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন সম্ভাবনা দেখি না। তাই দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণকে সোচ্চার করে তুলতে হবে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদলের হাতিয়ার হলো নির্বাচন। কিন্তু আজকে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এজন্য আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সঠিক পথে আনা ও গণতন্ত্রকে কার্যকর করার জন্য আমাদের কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে হবে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুজন যেসব কাজ করছে তার মধ্যে অন্যতম হলো : ১. নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের নির্বাচিত করা; ২. রাজনৈতিক সংস্কার সংক্রান্ত কার্যক্রম; ৩. বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী ও জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জনমত সৃষ্টি; ৪. নাগরিক অধিকার আদায়ে সোচ্চার করা; ইত্যাদি।

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পরিচ্ছন্ন করার লক্ষ্যে সুজন নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো প্রার্থীদের হলফনামা জনগণের সামনে তুলে ধরা। সুজনের এই প্রচেষ্টাকে আমি স্বাগত জানাই।

জোনায়েদ সাকি বলেন, নাগরিকদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য নাগরিকদের সক্রিয় থাকতে হয়। এক্ষেত্রে সুজন অসাধারণ কাজ করছে। দেশ আজ শুধু গণতন্ত্রহীনই নয়, বরং দেশে আজ এক নতুন রাষ্ট্র কাঠামো দাঁড় হয়েছে, যা কোন তুলনা হয় না। আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে প্রতিনিয়ত নাগরিকদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। তাই আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হতে হবে। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমেই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, তিনজোটের রূপরেখার মাধ্যমে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন হয়। তখন রাজনৈতিক দলগুলো থেকে স্লোগান তোলা হয়, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’। কিন্তু সুজন স্লোগান তুলে, ‘আমার ভোট আমি দেব, জেনে, শুনে বুঝে দেব’। স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ঘটার পরও আজও আমাদেরকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন পরিচালনা করছে এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। আমি মনে করি, একটি সংস্কার প্রস্তাব পাস হওয়া দরকার। কারণ আমরা গণতন্ত্রহীনতা, ভোটাধিকারহীনতা চাই না।

আরও খবর
কর্মকর্তাদের বেপরোয়া গাড়িবিলাস
আ’লীগ সরকার সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বাসী : প্রধানমন্ত্রী
কোয়ারেন্টাইন শেষে বাড়ি ফিরছেন ৩১৬ জন
৭৯২ জন নাগরিকের নিরাপত্তায় একজন পুলিশ
অবৈধ আড়াইশ’ ইটভাটা
খালেদার মুক্তি দাবি করেও কোন সাড়া পাইনি ফখরুল
স্বামী ও বন্ধুর হাতে বর্বরোচিত নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ
ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে শিক্ষক রমজান আলী বহিষ্কার
‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’ কমাবে খরচ বাঁচাবে কৃষি
মাকে হাতুড়ির আঘাতে দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা
শামীমাকে গ্রহণ করবে না বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ২২৬০টি কলেজে আনন্দ র‌্যালি হবে
ক্ষণগণনা : আর ২৯ দিন
আ-মরি বাংলা ভাষা
চলচ্চিত্র তারকাসহ ২০ হাজার আইডি হ্যাক
আগামী মাসেই তীব্র গরমের পূর্বাভাস

রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৩ ফল্গুন ১৪২৬, ২১ জমাদিউল সানি ১৪৪১

নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত

সুজন সম্মেলনে বক্তারা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

আইন কার্যকর না হলে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। বর্তমানে নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি রাজনীতি থেকে সুশীল সমাজকে দূরে থাকতে হবে বলে মনে করেন বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ।

গতকাল ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে অনুষ্ঠিত সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র সপ্তম জাতীয় সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আবু হেনা বলেন, গণতন্ত্র চলতে পারে যখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত হন। আর এই প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন নির্বাচনের মাধমে। তাই যোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচিত করা গেলে গণতন্ত্র কাজ করতে পারে এবং সুশাসন বিরাজ করতে পারে। বিগত সময়ে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও সুজনসহ অন্যদের ধারাবাহিক অ্যাডভোকেসির ফলে দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় বিভিন্ন সংস্কার সাধন করা সম্ভব হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সচিবালয়, আরপিও এবং আচরণবিধির সংশোধন, প্রার্থীদের তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের বিবরণ দেয়ার বিধান ইত্যাদি। কিন্তু এতসব সংস্কারের পরও আজ আমরা কেন গণতন্ত্র ও সুশাসন নিয়ে চিন্তিত? আমি মনে করি, যতই আইন করা হোক না কেন, যদি সেগুলো কার্যকর করা না হয় এবং সমভাবে সবার জন্য বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ড. আকবর আলী খান বলেন, সিভিল সমাজকে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। যদিও তারা সবসময় রাজনীতি এড়াতে পারে না। তবে স্বতন্ত্র থাকাই ভালো। বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যা রাতারাতি দূর হতে হবে না। কারণ রাজনৈতিকরা এই সমস্যা সৃষ্টি করেছেন, তারা এটি সহজে দূর করবেন বলে মনে হয় না। আমি মনে করি, ২০ দফার পরিবর্তে এখন একদফা দাবি তোলা দরকার, সেটা হলো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা।

এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, আজকে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অথচ গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের জন্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতেও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন সম্ভাবনা দেখি না। তাই দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণকে সোচ্চার করে তুলতে হবে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদলের হাতিয়ার হলো নির্বাচন। কিন্তু আজকে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এজন্য আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সঠিক পথে আনা ও গণতন্ত্রকে কার্যকর করার জন্য আমাদের কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে হবে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুজন যেসব কাজ করছে তার মধ্যে অন্যতম হলো : ১. নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের নির্বাচিত করা; ২. রাজনৈতিক সংস্কার সংক্রান্ত কার্যক্রম; ৩. বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী ও জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জনমত সৃষ্টি; ৪. নাগরিক অধিকার আদায়ে সোচ্চার করা; ইত্যাদি।

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পরিচ্ছন্ন করার লক্ষ্যে সুজন নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো প্রার্থীদের হলফনামা জনগণের সামনে তুলে ধরা। সুজনের এই প্রচেষ্টাকে আমি স্বাগত জানাই।

জোনায়েদ সাকি বলেন, নাগরিকদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য নাগরিকদের সক্রিয় থাকতে হয়। এক্ষেত্রে সুজন অসাধারণ কাজ করছে। দেশ আজ শুধু গণতন্ত্রহীনই নয়, বরং দেশে আজ এক নতুন রাষ্ট্র কাঠামো দাঁড় হয়েছে, যা কোন তুলনা হয় না। আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে প্রতিনিয়ত নাগরিকদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। তাই আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হতে হবে। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমেই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, তিনজোটের রূপরেখার মাধ্যমে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন হয়। তখন রাজনৈতিক দলগুলো থেকে স্লোগান তোলা হয়, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’। কিন্তু সুজন স্লোগান তুলে, ‘আমার ভোট আমি দেব, জেনে, শুনে বুঝে দেব’। স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ঘটার পরও আজও আমাদেরকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন পরিচালনা করছে এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। আমি মনে করি, একটি সংস্কার প্রস্তাব পাস হওয়া দরকার। কারণ আমরা গণতন্ত্রহীনতা, ভোটাধিকারহীনতা চাই না।