দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ও গৃহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের দায়ে অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক মো. রমজান আলীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চূড়ান্ত বহিষ্কার করেছে রিজেন্ট বোর্ড।
প্রকাশ, বায়োকেমিষ্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষক রমজান আলীর স্ত্রী এবং যৌন হয়রানির শিকার এক ছাত্রীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে রমজান আলীর তত্ত্বাবধান থেকে অব্যাহতি চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন এক ছাত্রী। লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেছিলেন, স্ত্রীর অনুপস্থিতে রমজান আলী ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন অজুহাতে বাসায় যেতে বলেন। এমনকি বাইরে গিয়ে হোটেলে এক রুমে থাকার জন্যও প্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হলে ওই ছাত্রীকে নানা রকমের ভয়ভীতি এবং পরীক্ষায় ফেল করে দেয়ারও হুমকি দেন। লিখিত অভিযোগের সঙ্গে রমজান আলীর মুঠোফোনে কথোপোকথনের রেকর্ড জমা দেন ওই ছাত্রী। অপরদিকে ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক এবং যৌতুকের জন্য নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি রমজান আলীর স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ দেন। রমজান আলীর স্ত্রী জানান, আমানা গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হবার জন্য ২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি করেন রমজান আলী। গত বছর ২০ জুন রমজান আলী নির্যাতন করে স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টাও করে। ঘটনায় তিনি থানায় জিডি করেন। যৌতুক না পেয়ে ওই বছর ২৮ সেপ্টেম্বর স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় রমজান আলীর স্ত্রী বাদী হয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী আদালতে রমজান আলীসহ বড় ভাই এবং মা’র বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করেন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হাইকোর্টের নির্দেশনায় গঠিত যৌন নির্যাতন অভিযোগ গ্রহণকারী সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি রমজান আলীর বিরুদ্ধে তার স্ত্রীর দায়ের করা অভিযোগের সত্যতা পায়। সেই সঙ্গে রমজান আলীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবাসস্থলে গৃহকর্মীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রমাণও পায় তদন্ত কমিটি। ছাত্রী যৌন হয়রানি ও গৃহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের সত্যতা পাওয়ায় তদন্ত কমিটি ২০১৮ সালের ২ জুলাই রমজান আলীকে চূড়ান্ত বহিষ্কারের সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের ৪৯তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রমজান আলীকে ৩০ জুলাই সাময়িক বহিষ্কার করে। আন্দোলনের মুখে সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আন্দোলনকারীদের কথা দিয়েছিলেন পরবর্তী রিজেন্ট বোর্ডেই চূড়ান্ত বহিষ্কার করবেন রমজান আলীকে। কিন্তু এর মধ্যে দীর্ঘ ২০ মাস অতিবাহিত এবং ৪টি রিজেন্ট বোর্ডের সভা হলেও চূড়ান্ত বহিষ্কার করা হয়নি রমজান আলীকে। ভিসি ইচ্ছাকৃত কালক্ষেপণ করার প্রতিবাদে মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন মানববন্ধন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে স্মারলিপিসহ, সংবাদ সম্মেলন করে।
এ ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতবছর ৯ জুলাই ইউজিসিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে ইউজিসি ওই বছর ১ সেপ্টেম্বর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে রমজান আলীর বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দ্রুত সে তথ্য প্রেরণ করতে বলে।
ভিসি প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম রমজান আলীকে বহিষ্কারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, যৌন হয়রানির বিষয়ে তিনি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিরো টলারেন্স ছিল, আছে, থাকবে। কোন কোন শিক্ষককে বহিষ্কারের বিষয়টি রিজেন্ট বোর্ডের এখতিয়ার। এটি সম্পন্ন করতে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হওয়ায় সময় লেগেছে। রমজান আলীকে বহিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নজির স্থাপিত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
রমজান আলীকে চূড়ান্ত বহিষ্কারে মহিলা পরিষদের সভাপতি কানিজ রহমান জানান, দেরিতে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। নাগারিক কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইয়াসমিন আন্দোলনের পূণ্যভুমি দিনাজপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো পবিত্র স্থানে কোন যৌন হয়রানিকারী কোন ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে থাকবে তা দিনাজপুরবাসী মেনে নিতে পারেনি।
রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৩ ফল্গুন ১৪২৬, ২১ জমাদিউল সানি ১৪৪১
চিত্ত ঘোষ, দিনাজপুর
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ও গৃহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের দায়ে অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক মো. রমজান আলীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চূড়ান্ত বহিষ্কার করেছে রিজেন্ট বোর্ড।
প্রকাশ, বায়োকেমিষ্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষক রমজান আলীর স্ত্রী এবং যৌন হয়রানির শিকার এক ছাত্রীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে রমজান আলীর তত্ত্বাবধান থেকে অব্যাহতি চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন এক ছাত্রী। লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেছিলেন, স্ত্রীর অনুপস্থিতে রমজান আলী ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন অজুহাতে বাসায় যেতে বলেন। এমনকি বাইরে গিয়ে হোটেলে এক রুমে থাকার জন্যও প্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হলে ওই ছাত্রীকে নানা রকমের ভয়ভীতি এবং পরীক্ষায় ফেল করে দেয়ারও হুমকি দেন। লিখিত অভিযোগের সঙ্গে রমজান আলীর মুঠোফোনে কথোপোকথনের রেকর্ড জমা দেন ওই ছাত্রী। অপরদিকে ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক এবং যৌতুকের জন্য নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি রমজান আলীর স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ দেন। রমজান আলীর স্ত্রী জানান, আমানা গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হবার জন্য ২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি করেন রমজান আলী। গত বছর ২০ জুন রমজান আলী নির্যাতন করে স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টাও করে। ঘটনায় তিনি থানায় জিডি করেন। যৌতুক না পেয়ে ওই বছর ২৮ সেপ্টেম্বর স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় রমজান আলীর স্ত্রী বাদী হয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী আদালতে রমজান আলীসহ বড় ভাই এবং মা’র বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করেন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হাইকোর্টের নির্দেশনায় গঠিত যৌন নির্যাতন অভিযোগ গ্রহণকারী সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি রমজান আলীর বিরুদ্ধে তার স্ত্রীর দায়ের করা অভিযোগের সত্যতা পায়। সেই সঙ্গে রমজান আলীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবাসস্থলে গৃহকর্মীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রমাণও পায় তদন্ত কমিটি। ছাত্রী যৌন হয়রানি ও গৃহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের সত্যতা পাওয়ায় তদন্ত কমিটি ২০১৮ সালের ২ জুলাই রমজান আলীকে চূড়ান্ত বহিষ্কারের সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের ৪৯তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রমজান আলীকে ৩০ জুলাই সাময়িক বহিষ্কার করে। আন্দোলনের মুখে সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আন্দোলনকারীদের কথা দিয়েছিলেন পরবর্তী রিজেন্ট বোর্ডেই চূড়ান্ত বহিষ্কার করবেন রমজান আলীকে। কিন্তু এর মধ্যে দীর্ঘ ২০ মাস অতিবাহিত এবং ৪টি রিজেন্ট বোর্ডের সভা হলেও চূড়ান্ত বহিষ্কার করা হয়নি রমজান আলীকে। ভিসি ইচ্ছাকৃত কালক্ষেপণ করার প্রতিবাদে মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন মানববন্ধন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে স্মারলিপিসহ, সংবাদ সম্মেলন করে।
এ ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতবছর ৯ জুলাই ইউজিসিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে ইউজিসি ওই বছর ১ সেপ্টেম্বর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে রমজান আলীর বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দ্রুত সে তথ্য প্রেরণ করতে বলে।
ভিসি প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম রমজান আলীকে বহিষ্কারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, যৌন হয়রানির বিষয়ে তিনি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিরো টলারেন্স ছিল, আছে, থাকবে। কোন কোন শিক্ষককে বহিষ্কারের বিষয়টি রিজেন্ট বোর্ডের এখতিয়ার। এটি সম্পন্ন করতে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হওয়ায় সময় লেগেছে। রমজান আলীকে বহিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নজির স্থাপিত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
রমজান আলীকে চূড়ান্ত বহিষ্কারে মহিলা পরিষদের সভাপতি কানিজ রহমান জানান, দেরিতে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। নাগারিক কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইয়াসমিন আন্দোলনের পূণ্যভুমি দিনাজপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো পবিত্র স্থানে কোন যৌন হয়রানিকারী কোন ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে থাকবে তা দিনাজপুরবাসী মেনে নিতে পারেনি।