‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’ কমাবে খরচ বাঁচাবে কৃষি

কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে

দেশে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে নগরায়ন ও শিল্পায়ন। শ্রমিকরা বেশি উপার্জনের লক্ষ্যে ঝুঁকছে নির্মাণশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানায়। এ কারণে কৃষিখাতে শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে। দিনদিন এ সংকট প্রবল হচ্ছে। বিশেষত ধান রোপণ ও কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। শ্রমিক সংকটে অনেক সময় কৃষকের ধান মাঠেই পড়ে থাকে। এজন্য কৃষিখাত বাঁচাতে সরকার কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আয়োজন করে ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’ নামে যন্ত্রের প্রদর্শনী ও মাঠ দিবসের। এ সময় রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সুফল সম্পর্কে কৃষকদের অবগত করা হয়। প্লান্টার দিয়ে একজন মাত্র শ্রমিক দ্রুত অনেক পরিমাণ ধানের চারা রোপণ করতে পারে। এতে সাশ্রয় হয় সময় ও অর্থের।

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক প্রধান অতিথি হিসেবে ধনবাড়ীতে প্রদশর্নী ও মাঠ দিবসে যন্ত্রটির উদ্বোধন করেন। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এই যন্ত্র দিয়ে একসঙ্গে ৬ লাইনে ধানের চারা রোপণ করা যায়। যন্ত্রটি একসঙ্গে ১২টি ট্রে বহন করে চালাতে পারে। প্রতি ঘণ্টায় ০ দশমিক ৩৫ হেক্টর জমির ধান রোপণ করা যায়। জ্বালানি খরচ ঘণ্টায় সাতশ’ গ্রাম। ধানের চারা রোপনে যন্ত্রটি ব্যবহার করলে রোপণ খরচ ৫০-৭৫ ভাগ কমানো সম্ভব হবে। অর্থাৎ প্রতি হেক্টর জমিতে অন্তত ২০ জন শ্রমিক সাশ্রয় হয়।

সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে কমপক্ষে চারজন শ্রমিককে কাজ করতে হয়। এতে করে কৃষকদের অধিক মজুরি গুণতে হয়।

এছাড়া রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা রোপণ করলে লাইন সোজা হয়। ফলে পরবর্তীতে আগাছা নিংড়ানো, সার ও কীটনাশক ছিটানো ও ধান কাটা সহজ হয়।

স্থানীয় কৃষক গোলাম সরোয়ার বলেন, কম খরচে ধান রোপণ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী এবং লাভবান হবে। জমিতে ধানের চারা রোপণ করলে শ্রমিকের খরচ যদি ৬শ’ টাকা হয়, সেখানে এই মেশিন দিয়ে যদি ধান রোপণ করি তাহলে খরচ হবে দেড়শ’ টাকা। এই মেশিন আমাদের জন্য সুবিধাজনক।

ধনবাড়ীর পাইস্কা গ্রামের কৃষক হযরত আলী বলেন, এ বছর ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিকের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছিল। দুই বিঘা জমির ধান রোপণ থেকে কাটা পর্যন্ত যে খরচ হয়েছিল, ধান বিক্রি করে অনেক লোকসান হয়েছে। এই মেশিনের সাহায্যে চারা রোপণ করে ধান কাটতে পারলে কৃষক অনেক লাভবান হবে।

তবে কৃষকদের অভিযোগ, মেশিনটির দাম অনেক বেশি। সরকার থেকে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ করায় কৃষকদের জন্য খুব সুবিধা হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি বলেন, বর্তমানে ফসল উৎপাদন করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে না। এর মূল কারণ হলো শ্রমিকের মজুরি অনেক বেড়ে গেছে। শ্রমিক দিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে ধান কেটে কৃষকের লাভ হয় না। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ধান লাগানো ও কাটা দুটোই মেশিনে করা হবে। সরকার ওইসব যন্ত্রে অর্ধেক ভর্তুকি দিবে। এছাড়াও উপকুল ও হাওড় অঞ্চলে তিনভাগের দুই ভাগ ভর্তুকি দেয়া হবে। এই বছর যন্ত্র কেনার জন্য কৃষকদের চার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হবে।

একাধিক রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে চালক বলেন, এই মেশিন নিয়ে ৫০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা। আর এতে প্রতি শতাংশে তেল খরচ হয় ১০ থেকে ১২ মিলিলিটার। অল্প সময়েই মধ্যে ধানের চারা রোপণ করা যাবে। এতে কৃষকদের ৮০ ভাগ খরচ কমে যাবে। ৩৩ শতাংশে শ্রমিক দিয়ে ধানের চারা রোপণ করতে প্রায় ১ হাজার টাকা খরচ হবে। আর যদি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ করা হয়, তাহলে মাত্র ২শ’ টাকা খরচ হবে।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, শ্রমিক সংকটসহ বিভিন্ন কারণে ধান আবাদ করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে সরকার কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। মেশিনের মাধ্যমে ধান রোপণ ও মাড়াই হলে কৃষকরা অনেক লাভবান হবে। মেশিন ক্রয়ে সরকার কৃষকদের আর্থিক সহায়তা করছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের দাম কয়েক লাখ টাকা। প্রান্তিক সব কৃষকের পক্ষে তা ক্রয় করা সম্ভব না। তবে সচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে সামর্থ্যবান কৃষকরা তা ক্রয় করতে আগ্রহী হবেন। এতে অন্য কৃষকরা তা ভাড়া নিয়ে তাদের ক্ষেতের ধানের চারা রোপণ করতে পারবেন।

মূলত, পরীক্ষামূলকভাবে এটির কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রজেক্ট আকারে এর কার্যক্রম শুরু হবে। আধা ঘণ্টার মধ্যেই ১ বিঘা জমির ধান রোপণ করা যাবে।

image

টাঙ্গাইল : ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে’ ধানের চারা রোপণ -সংবাদ

আরও খবর
কর্মকর্তাদের বেপরোয়া গাড়িবিলাস
আ’লীগ সরকার সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বাসী : প্রধানমন্ত্রী
কোয়ারেন্টাইন শেষে বাড়ি ফিরছেন ৩১৬ জন
৭৯২ জন নাগরিকের নিরাপত্তায় একজন পুলিশ
নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত
অবৈধ আড়াইশ’ ইটভাটা
খালেদার মুক্তি দাবি করেও কোন সাড়া পাইনি ফখরুল
স্বামী ও বন্ধুর হাতে বর্বরোচিত নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ
ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে শিক্ষক রমজান আলী বহিষ্কার
মাকে হাতুড়ির আঘাতে দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা
শামীমাকে গ্রহণ করবে না বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ২২৬০টি কলেজে আনন্দ র‌্যালি হবে
ক্ষণগণনা : আর ২৯ দিন
আ-মরি বাংলা ভাষা
চলচ্চিত্র তারকাসহ ২০ হাজার আইডি হ্যাক
আগামী মাসেই তীব্র গরমের পূর্বাভাস

রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৩ ফল্গুন ১৪২৬, ২১ জমাদিউল সানি ১৪৪১

‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’ কমাবে খরচ বাঁচাবে কৃষি

কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে

জেলা বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

image

টাঙ্গাইল : ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে’ ধানের চারা রোপণ -সংবাদ

দেশে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে নগরায়ন ও শিল্পায়ন। শ্রমিকরা বেশি উপার্জনের লক্ষ্যে ঝুঁকছে নির্মাণশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানায়। এ কারণে কৃষিখাতে শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে। দিনদিন এ সংকট প্রবল হচ্ছে। বিশেষত ধান রোপণ ও কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। শ্রমিক সংকটে অনেক সময় কৃষকের ধান মাঠেই পড়ে থাকে। এজন্য কৃষিখাত বাঁচাতে সরকার কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আয়োজন করে ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’ নামে যন্ত্রের প্রদর্শনী ও মাঠ দিবসের। এ সময় রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সুফল সম্পর্কে কৃষকদের অবগত করা হয়। প্লান্টার দিয়ে একজন মাত্র শ্রমিক দ্রুত অনেক পরিমাণ ধানের চারা রোপণ করতে পারে। এতে সাশ্রয় হয় সময় ও অর্থের।

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক প্রধান অতিথি হিসেবে ধনবাড়ীতে প্রদশর্নী ও মাঠ দিবসে যন্ত্রটির উদ্বোধন করেন। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এই যন্ত্র দিয়ে একসঙ্গে ৬ লাইনে ধানের চারা রোপণ করা যায়। যন্ত্রটি একসঙ্গে ১২টি ট্রে বহন করে চালাতে পারে। প্রতি ঘণ্টায় ০ দশমিক ৩৫ হেক্টর জমির ধান রোপণ করা যায়। জ্বালানি খরচ ঘণ্টায় সাতশ’ গ্রাম। ধানের চারা রোপনে যন্ত্রটি ব্যবহার করলে রোপণ খরচ ৫০-৭৫ ভাগ কমানো সম্ভব হবে। অর্থাৎ প্রতি হেক্টর জমিতে অন্তত ২০ জন শ্রমিক সাশ্রয় হয়।

সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে কমপক্ষে চারজন শ্রমিককে কাজ করতে হয়। এতে করে কৃষকদের অধিক মজুরি গুণতে হয়।

এছাড়া রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা রোপণ করলে লাইন সোজা হয়। ফলে পরবর্তীতে আগাছা নিংড়ানো, সার ও কীটনাশক ছিটানো ও ধান কাটা সহজ হয়।

স্থানীয় কৃষক গোলাম সরোয়ার বলেন, কম খরচে ধান রোপণ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী এবং লাভবান হবে। জমিতে ধানের চারা রোপণ করলে শ্রমিকের খরচ যদি ৬শ’ টাকা হয়, সেখানে এই মেশিন দিয়ে যদি ধান রোপণ করি তাহলে খরচ হবে দেড়শ’ টাকা। এই মেশিন আমাদের জন্য সুবিধাজনক।

ধনবাড়ীর পাইস্কা গ্রামের কৃষক হযরত আলী বলেন, এ বছর ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিকের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছিল। দুই বিঘা জমির ধান রোপণ থেকে কাটা পর্যন্ত যে খরচ হয়েছিল, ধান বিক্রি করে অনেক লোকসান হয়েছে। এই মেশিনের সাহায্যে চারা রোপণ করে ধান কাটতে পারলে কৃষক অনেক লাভবান হবে।

তবে কৃষকদের অভিযোগ, মেশিনটির দাম অনেক বেশি। সরকার থেকে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ করায় কৃষকদের জন্য খুব সুবিধা হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি বলেন, বর্তমানে ফসল উৎপাদন করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে না। এর মূল কারণ হলো শ্রমিকের মজুরি অনেক বেড়ে গেছে। শ্রমিক দিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে ধান কেটে কৃষকের লাভ হয় না। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ধান লাগানো ও কাটা দুটোই মেশিনে করা হবে। সরকার ওইসব যন্ত্রে অর্ধেক ভর্তুকি দিবে। এছাড়াও উপকুল ও হাওড় অঞ্চলে তিনভাগের দুই ভাগ ভর্তুকি দেয়া হবে। এই বছর যন্ত্র কেনার জন্য কৃষকদের চার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হবে।

একাধিক রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে চালক বলেন, এই মেশিন নিয়ে ৫০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা। আর এতে প্রতি শতাংশে তেল খরচ হয় ১০ থেকে ১২ মিলিলিটার। অল্প সময়েই মধ্যে ধানের চারা রোপণ করা যাবে। এতে কৃষকদের ৮০ ভাগ খরচ কমে যাবে। ৩৩ শতাংশে শ্রমিক দিয়ে ধানের চারা রোপণ করতে প্রায় ১ হাজার টাকা খরচ হবে। আর যদি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ করা হয়, তাহলে মাত্র ২শ’ টাকা খরচ হবে।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, শ্রমিক সংকটসহ বিভিন্ন কারণে ধান আবাদ করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে সরকার কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। মেশিনের মাধ্যমে ধান রোপণ ও মাড়াই হলে কৃষকরা অনেক লাভবান হবে। মেশিন ক্রয়ে সরকার কৃষকদের আর্থিক সহায়তা করছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের দাম কয়েক লাখ টাকা। প্রান্তিক সব কৃষকের পক্ষে তা ক্রয় করা সম্ভব না। তবে সচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে সামর্থ্যবান কৃষকরা তা ক্রয় করতে আগ্রহী হবেন। এতে অন্য কৃষকরা তা ভাড়া নিয়ে তাদের ক্ষেতের ধানের চারা রোপণ করতে পারবেন।

মূলত, পরীক্ষামূলকভাবে এটির কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রজেক্ট আকারে এর কার্যক্রম শুরু হবে। আধা ঘণ্টার মধ্যেই ১ বিঘা জমির ধান রোপণ করা যাবে।