সন্দেহের তীর পলাতক স্বামীর দিকে
রাজধানীর দক্ষিণখানে মা মুন্নিকে হাতুড়ির আঘাতে ও দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। এ ঘটনায় সন্দেহের তীর এখন নিহত গৃহবধূর স্বামী রাকিব উদ্দিন ভূঁইয়ার দিকেই। ঘটনার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী হন্যে হয়ে তাকে খুঁজছে।
গতকাল উদ্ধারকৃত ৩টি লাশেরই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক একেএম মাইনুদ্দিন জানান, দুই শিশু ফারহান ও লাইভাকে শ্বাসরোধে এবং মা মুন্নির মাথায় হাতুড়ির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসক আরও জানান, ৩টি লাশের উপরিভাগ বেশি পচে গিয়েছিল। নারীটির মাথার পেছনে আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে। ৩টি লাশ থেকে ভিসেরা ও রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষার পর রিপোর্ট পেলেই আরও তথ্য পাওয়া যাবে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দক্ষিণখানের ৮৩৮ নম্বর প্রেমবাগানের চতুর্থ তলার বাসা থেকে মা মুন্নী বেগম (৩৭) এবং তার দুই সন্তান ফারহান উদ্দিন (১২) ও লাইভা ভূঁইয়ার (৩) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন মা ও মেয়ের লাশ একটি কক্ষের বিছানায় এবং ছেলের লাশ অন্য একটি কক্ষের মেঝেতে পড়ে ছিল। মায়ের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি হাতুড়িও উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিএমপি’র উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল জানান, ধারণা করা হচ্ছে ৩ জনকেই ৩-৪ দিন আগে হত্যা করা হয়েছে। ঘরের ভেতরে ৩টি লাশই ডি-কম্পোস্ট অবস্থায় পাওয়া গেছে। তবে মা ও ছেলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আমরা খুনিকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছি।
পুলিশের দক্ষিণখান জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হাফিজুর রহমান রিয়েল জানান, ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ওই নারীর স্বামী তথা দুই সন্তানের বাবার খোঁজ করা হচ্ছে।
পুলিশ ও প্রতিবেশীরা জানান, বাসা থেকে পচা গন্ধ এলে বাড়িওয়ালার সন্দেহ হয়। এরমধ্যে রাকিব উদ্দিনের ভাই ও ভাবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ওই বাসায় আসেন। বাড়িওয়ালাকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ তলার ডান দিকের ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে ৩ জনের লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেন তিনি। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ ৩টি উদ্ধার করে। পুলিশ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের (বিটিসিএল) উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিব উদ্দিন ভূঁইয়া ১০-১২ বছর ধরে ওই বাসায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি তিনি বিটিসিএল-এর গুলশান কার্যালয় থেকে উত্তরা কার্যালয়ে বদলি হন।
নিহত মুন্নী বেগমের ভাই সোহেল আহমেদ বলেন, গত বুধবার থেকে আমরা বোন ও বোনের স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো কোথাও ঘুরতে গিয়েছে। শুক্রবার খোঁজ নিতে এসে লাশ পাই। তিনি আরও বলেন, আমার বোন ও বোনের স্বামীর সঙ্গে খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল বলেই জানতাম। আমরা এখনও বুঝতে পারছি না কারা এবং কেন তাদের হত্যা করলো। মাস তিনেক আগে বোনের স্বামী রাকিব একবার অপহরণ হয়েছিলেন বলে বাসায় জানিয়েছিলেন, কিন্তু বিষয়টি রহস্যজনক ছিল। কারা, কেন, কোথায় তাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল তা পরিষ্কার করে কিছুই বলতে পারেননি তিনি। পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরাও গোলকধাঁধার মধ্যে রয়েছি। জানা গেছে, স্বামী রাকিব উদ্দিনের পিতার নাম আশরাফ উদ্দিন ভূঁইয়া। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের ভাতশালা এলাকায়। নিহত স্ত্রী মুন্নী রাকিবের খালাতো বোন ছিল। প্রায় এক যুগ আগে তারা প্রেম করে বিয়ে করেন। স্থানীয় মারুফ নামে এক প্রতিবেশী জানান, মাস তিনেক আগে রাকিব উদ্দিন একবার কয়েকদিনের জন্য নিখোঁজ ছিলেন। পরে আবার বাসায় ফিরে আসেন। গত ৩-৪ দিন ধরেও তাকে এলাকায় দেখা যায়নি।
রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৩ ফল্গুন ১৪২৬, ২১ জমাদিউল সানি ১৪৪১
সন্দেহের তীর পলাতক স্বামীর দিকে
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
রাজধানীর দক্ষিণখানে মা মুন্নিকে হাতুড়ির আঘাতে ও দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। এ ঘটনায় সন্দেহের তীর এখন নিহত গৃহবধূর স্বামী রাকিব উদ্দিন ভূঁইয়ার দিকেই। ঘটনার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী হন্যে হয়ে তাকে খুঁজছে।
গতকাল উদ্ধারকৃত ৩টি লাশেরই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক একেএম মাইনুদ্দিন জানান, দুই শিশু ফারহান ও লাইভাকে শ্বাসরোধে এবং মা মুন্নির মাথায় হাতুড়ির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসক আরও জানান, ৩টি লাশের উপরিভাগ বেশি পচে গিয়েছিল। নারীটির মাথার পেছনে আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে। ৩টি লাশ থেকে ভিসেরা ও রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষার পর রিপোর্ট পেলেই আরও তথ্য পাওয়া যাবে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দক্ষিণখানের ৮৩৮ নম্বর প্রেমবাগানের চতুর্থ তলার বাসা থেকে মা মুন্নী বেগম (৩৭) এবং তার দুই সন্তান ফারহান উদ্দিন (১২) ও লাইভা ভূঁইয়ার (৩) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন মা ও মেয়ের লাশ একটি কক্ষের বিছানায় এবং ছেলের লাশ অন্য একটি কক্ষের মেঝেতে পড়ে ছিল। মায়ের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি হাতুড়িও উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিএমপি’র উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল জানান, ধারণা করা হচ্ছে ৩ জনকেই ৩-৪ দিন আগে হত্যা করা হয়েছে। ঘরের ভেতরে ৩টি লাশই ডি-কম্পোস্ট অবস্থায় পাওয়া গেছে। তবে মা ও ছেলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আমরা খুনিকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছি।
পুলিশের দক্ষিণখান জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হাফিজুর রহমান রিয়েল জানান, ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ওই নারীর স্বামী তথা দুই সন্তানের বাবার খোঁজ করা হচ্ছে।
পুলিশ ও প্রতিবেশীরা জানান, বাসা থেকে পচা গন্ধ এলে বাড়িওয়ালার সন্দেহ হয়। এরমধ্যে রাকিব উদ্দিনের ভাই ও ভাবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ওই বাসায় আসেন। বাড়িওয়ালাকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ তলার ডান দিকের ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে ৩ জনের লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেন তিনি। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ ৩টি উদ্ধার করে। পুলিশ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের (বিটিসিএল) উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিব উদ্দিন ভূঁইয়া ১০-১২ বছর ধরে ওই বাসায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি তিনি বিটিসিএল-এর গুলশান কার্যালয় থেকে উত্তরা কার্যালয়ে বদলি হন।
নিহত মুন্নী বেগমের ভাই সোহেল আহমেদ বলেন, গত বুধবার থেকে আমরা বোন ও বোনের স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো কোথাও ঘুরতে গিয়েছে। শুক্রবার খোঁজ নিতে এসে লাশ পাই। তিনি আরও বলেন, আমার বোন ও বোনের স্বামীর সঙ্গে খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল বলেই জানতাম। আমরা এখনও বুঝতে পারছি না কারা এবং কেন তাদের হত্যা করলো। মাস তিনেক আগে বোনের স্বামী রাকিব একবার অপহরণ হয়েছিলেন বলে বাসায় জানিয়েছিলেন, কিন্তু বিষয়টি রহস্যজনক ছিল। কারা, কেন, কোথায় তাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল তা পরিষ্কার করে কিছুই বলতে পারেননি তিনি। পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরাও গোলকধাঁধার মধ্যে রয়েছি। জানা গেছে, স্বামী রাকিব উদ্দিনের পিতার নাম আশরাফ উদ্দিন ভূঁইয়া। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের ভাতশালা এলাকায়। নিহত স্ত্রী মুন্নী রাকিবের খালাতো বোন ছিল। প্রায় এক যুগ আগে তারা প্রেম করে বিয়ে করেন। স্থানীয় মারুফ নামে এক প্রতিবেশী জানান, মাস তিনেক আগে রাকিব উদ্দিন একবার কয়েকদিনের জন্য নিখোঁজ ছিলেন। পরে আবার বাসায় ফিরে আসেন। গত ৩-৪ দিন ধরেও তাকে এলাকায় দেখা যায়নি।