চীনে ১৫০০ ছাড়াল মৃতের সংখ্যা

নতুন করে আরো ১৪৩ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চীনে নভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫২৩ জনে। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মূল ভূখণ্ডে শুক্রবার আরও ২ হাজার ৬৪১ জনের শরীরে নতুন করে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৪২৯ জনে। রয়টার্স।

সংবাদ মাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চীনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে শুক্রবার প্রথমবারের মতো আফ্রিকায় পৌঁছে যায় করোনা। ওই দিন আফ্রিকার দেশ মিসরের এক বিদেশির শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যাকে আগে থেকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। আফ্রিকায় নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম ঘটনা এটা। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে এ পর্যন্ত হংকং, ফিলিপিন্স ও জাপানে তিনজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। তাতে বিশ্বে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৫২৬ জনে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে রীতিমতো সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে চীন, কিন্তু তাতে খুব বেশি সাফল্য আসছে না।

এদিকে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে। সংক্রমণ হঠাৎ হয়েছে এবং চীনসহ পুরো বিশ্বই চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের সর্বাত্মক ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আমার মতে, আর কারও পক্ষে এতটা সম্ভব হতো না, কিন্তু চীন পেরেছে।’

ভাইরাস প্রতিরোধের কারণ দেখিয়ে বাণিজ্য, ভ্রমণ এবং পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত করবে এমন পদক্ষেপ না নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। আক্রান্ত রোগীর ১ শতাংশেরও কম মানুষ যে চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরের, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ওয়াং ই বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলে অত্যন্ত খোলামেলা ও স্বচ্ছতার সাথে তথ্য সরবরাহ করে আসছি।’

এর আগে, গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে নতুন ধরনের এ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ পর্যন্ত মৃত্যু ও আক্রান্তের বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে ওই হুবেই প্রদেশে। শুক্রবার চীনে যে ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৩৯ জনেই ছিলেন হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে ১০৭ জনই উহানের। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীন ও চীনের বাইরে বেশ কিছু ক্রীড়া আয়োজন ও বাণিজ্য সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। জাহাজ ও বিমান চলাচলে কড়াকড়িতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পণ্য পরিবহন।

এদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সর্বপ্রথম উহানের চক্ষু বিশেষজ্ঞ লি ওয়েনল্যাং সতর্ক করেছিলেন। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এক বার্তায় তার সহকর্মীদের বলেছিলেন, নতুন এ করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি। আর সেজন্য চীনা কর্তৃপক্ষ তার মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল মুচলেকা আদায় করে। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই ওই চীনা চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পরপরই কড়া সমালোচনার শুরু হয় চীনকে নিয়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় নিয়ে হুবেই ও অন্যান্য প্রদেশের কয়েকশ উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে চীন। অনেককে সতর্ক করা হয়েছে এবং কারো কারো বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

বেইজিংয়ে ফিরে যাওয়াদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ : ছুটি কাটিয়ে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ফিরে যাওয়া দেশটির প্রত্যেক নাগরিককে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে (অন্য মানুষের কাছ থেকে দূরে অবস্থান) থাকার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রাণঘাতী করোনা মোকাবিলায় গত শুক্রবার সর্বশেষ এ পদক্ষেপ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চীনের বিভিন্ন অংশ থেকে বেইজিং ফেরা প্রত্যেককে হয় নিজস্ব তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে বা কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত কোন স্থানে গিয়ে থাকতে হবে।

এর আগে, চীনা নববর্ষের ছুটিতে বেইজিংয়ের দুই কোটি বাসিন্দার বেশিরভাগই দেশটির অন্যান্য অংশে পরিবারের কাছে চলে যান। ছুটি কাটিয়ে এসব বাসিন্দা যখন ফিরতে শুরু করেছেন তখনই তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার এ নির্দেশ দিলেন কর্তৃপক্ষ। দেশটির বাইরে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে ২৪টি দেশে পাঁচ শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে হংকং, ফিলিপাইন ও জাপানে একজন করে মোট তিনজন। এদিকে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব তদন্তে এই সপ্তাহে চীনে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বাধীন একটি দল। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত দলটি ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া এবং এর তীব্রতা তদন্ত করবে। এছাড়া এক হাজার সাত শতাধিক চিকিৎসাকর্মী কিভাবে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাও খতিয়ে দেখবে দলটি। বিশেষজ্ঞ এ দলটিতে ১২ জন আন্তর্জাতিক সদস্যের পাশাপাশি থাকবেন ১২ জন চীনা বিশেষজ্ঞও।

রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৩ ফল্গুন ১৪২৬, ২১ জমাদিউল সানি ১৪৪১

করোনাভাইরাস

চীনে ১৫০০ ছাড়াল মৃতের সংখ্যা

সংবাদ ডেস্ক |

নতুন করে আরো ১৪৩ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চীনে নভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫২৩ জনে। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মূল ভূখণ্ডে শুক্রবার আরও ২ হাজার ৬৪১ জনের শরীরে নতুন করে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৪২৯ জনে। রয়টার্স।

সংবাদ মাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চীনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে শুক্রবার প্রথমবারের মতো আফ্রিকায় পৌঁছে যায় করোনা। ওই দিন আফ্রিকার দেশ মিসরের এক বিদেশির শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যাকে আগে থেকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। আফ্রিকায় নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম ঘটনা এটা। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে এ পর্যন্ত হংকং, ফিলিপিন্স ও জাপানে তিনজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। তাতে বিশ্বে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৫২৬ জনে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে রীতিমতো সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে চীন, কিন্তু তাতে খুব বেশি সাফল্য আসছে না।

এদিকে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে। সংক্রমণ হঠাৎ হয়েছে এবং চীনসহ পুরো বিশ্বই চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের সর্বাত্মক ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আমার মতে, আর কারও পক্ষে এতটা সম্ভব হতো না, কিন্তু চীন পেরেছে।’

ভাইরাস প্রতিরোধের কারণ দেখিয়ে বাণিজ্য, ভ্রমণ এবং পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত করবে এমন পদক্ষেপ না নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। আক্রান্ত রোগীর ১ শতাংশেরও কম মানুষ যে চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরের, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ওয়াং ই বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলে অত্যন্ত খোলামেলা ও স্বচ্ছতার সাথে তথ্য সরবরাহ করে আসছি।’

এর আগে, গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে নতুন ধরনের এ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ পর্যন্ত মৃত্যু ও আক্রান্তের বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে ওই হুবেই প্রদেশে। শুক্রবার চীনে যে ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৩৯ জনেই ছিলেন হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে ১০৭ জনই উহানের। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীন ও চীনের বাইরে বেশ কিছু ক্রীড়া আয়োজন ও বাণিজ্য সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। জাহাজ ও বিমান চলাচলে কড়াকড়িতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পণ্য পরিবহন।

এদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সর্বপ্রথম উহানের চক্ষু বিশেষজ্ঞ লি ওয়েনল্যাং সতর্ক করেছিলেন। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এক বার্তায় তার সহকর্মীদের বলেছিলেন, নতুন এ করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি। আর সেজন্য চীনা কর্তৃপক্ষ তার মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল মুচলেকা আদায় করে। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই ওই চীনা চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পরপরই কড়া সমালোচনার শুরু হয় চীনকে নিয়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় নিয়ে হুবেই ও অন্যান্য প্রদেশের কয়েকশ উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে চীন। অনেককে সতর্ক করা হয়েছে এবং কারো কারো বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

বেইজিংয়ে ফিরে যাওয়াদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ : ছুটি কাটিয়ে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ফিরে যাওয়া দেশটির প্রত্যেক নাগরিককে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে (অন্য মানুষের কাছ থেকে দূরে অবস্থান) থাকার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রাণঘাতী করোনা মোকাবিলায় গত শুক্রবার সর্বশেষ এ পদক্ষেপ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চীনের বিভিন্ন অংশ থেকে বেইজিং ফেরা প্রত্যেককে হয় নিজস্ব তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে বা কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত কোন স্থানে গিয়ে থাকতে হবে।

এর আগে, চীনা নববর্ষের ছুটিতে বেইজিংয়ের দুই কোটি বাসিন্দার বেশিরভাগই দেশটির অন্যান্য অংশে পরিবারের কাছে চলে যান। ছুটি কাটিয়ে এসব বাসিন্দা যখন ফিরতে শুরু করেছেন তখনই তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার এ নির্দেশ দিলেন কর্তৃপক্ষ। দেশটির বাইরে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে ২৪টি দেশে পাঁচ শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে হংকং, ফিলিপাইন ও জাপানে একজন করে মোট তিনজন। এদিকে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব তদন্তে এই সপ্তাহে চীনে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বাধীন একটি দল। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত দলটি ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া এবং এর তীব্রতা তদন্ত করবে। এছাড়া এক হাজার সাত শতাধিক চিকিৎসাকর্মী কিভাবে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাও খতিয়ে দেখবে দলটি। বিশেষজ্ঞ এ দলটিতে ১২ জন আন্তর্জাতিক সদস্যের পাশাপাশি থাকবেন ১২ জন চীনা বিশেষজ্ঞও।