পাওনা টাকা নিয়ে ফার্মাসিস্ট মোবারক খুন

মামলার তদন্তে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

রাজধানীর মাতুয়াইলে ডা. মোবরক হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। গত শুক্রবার সকালে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে মোবারকের লাশ উদ্ধারের পর শরীরে (পিঠজুড়ে) নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেলেও পুলিশ ময়নাতদন্তে উল্লেখ করেছে শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। গতকাল এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হলেও পুলিশ আসামি গ্রেফতারে নানা টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ নিহতের স্বজনদের।

স্বজনরা জানায়, মোবারকের লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য যখন মিডফোর্ট হাসপাতালে পাঠানো হয় তখন তার শরীরজুড়ে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে। রুমের ফ্লোরে পা লেগে থাকা অবস্থায় জানালার গ্রিলে ঝুলে ছিল ডা. মোবারক হোসেন। কিন্তু পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তে উল্লেখ করেছে শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। পায়ে আঘাতের চিহ্ন। এভাবে সুরতহাল তৈরি করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মিডফোর্ডে) পাঠায় পুলিশ। মোবারককে পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে হত্যার অভিযোগ শুরু থেকে থাকলেও কোন অভিযোগেই কর্ণপাত করেনি ডেমরা থানা পুলিশ। এমনকি হত্যা মামলা দায়ের হলেও মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে তৎপর হচ্ছে না পুলিশ। পুলিশ মোবারক হত্যাকে আত্মহত্যা বলে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে।

নিহতের স্ত্রী সাবিকুন্নাহার রিতু বলেন, ৩/৪ বছর আগে বারডেম-২ হাসপাতালের এনেস্থেশিয়া বিভাগে কাজ করতেন মোবারক হোসেন। ওই হাসপাতালের একই বিভাগে কাজ করতেন জামান। চাকরির সুবাদে জামানের সঙ্গে পরিচয় হয় মোবারকের। এরপর মোবারক মাতুয়াইলে প্রো-একটিভ হাসপাতালের ফার্মাসিস্টে আর জামান ফ্রন্ডশিপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে চাকরি নেয়। এর আগে জামান মোবারককে একটি হাসপাতালের সদস্যপদ দেয়ার কথা বলে চার লাখ টাকা ধার নেয়। কিন্তু কিছু দিন পর বলে, হাসপাতালের সদস্যপদ পাব না। এই টাকা দিয়ে আমরা ওষুধের ব্যবসা করব। কিন্তু দিন অতিবাহিত হতে থাকে, ব্যবসার কোন খবর নেই। একপর্যায়ে চার লাখ টাকা ফেরত চান মোবারক। জামান টাকা ফিরত দিব, দিচ্ছি বলে আর দেয় না। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব বাধে। একদিন জামান মোবারককে হুমকিও দেয়। কিন্তু সেই হুমকিকে পাত্তা না দিলেও সেটাই যে তার জীবনের কাল হবে কে জানতো। রিতু বলেন, তাদের মাত্র সাত মাস আগে বিয়ে হয়েছে। এখনও কেউ কাউকে ভালো করে বুঝে উঠতে পারিনি। মোবারকও তেমন কিছু শেয়ার করত না। তবে একদিন টাকা পাওয়ার এবং পাওনা টাকা চাওয়ায় হুমকির বিষয়টি তাকে জানায়। তার ধারণা, এই কারণেই তার স্বামী হত্যার শিকার হতে পারেন। এ ঘটনার পর ডেমরা থানা পুলিশ থেকে ওয়ারী বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের।

নিহতের শ্যালক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মোবারক বাসা থেকে বের হন। দুপুরের দিকে তার বোনের সঙ্গে মোবারকের শেষ কথা হয়। এরপর থেকে তাকে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ হয়নি। রাত ১২টার দিকে মোবারকের নম্বর দুই বার ওয়েটিং পাওয়া যায়। রাত ২টার দিকে মোবাইল পুরোপুরি বন্ধ পাওয়া যায়। পরের দিন অর্থাৎ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ডেমরা থানার এসআই শাহ আলম কল করে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে মোবারকের লাশ পাওয়ার কথা জানান। এই খবরে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখি, মোবারকের লাশ প্যাকেট করা অবস্থা, মর্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। পাশে তার মানিব্যাগসহ যাবতীয় কাগজপত্র পরে আছে। তখন এসআই শাহআলম জানায়, রুমের দরজা ভেঙে মোবারকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু দরজার তালা বা ছিটকানি ভাঙার কোন লক্ষণই ছিল না। মোবারক পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্জি লম্বা ছিলেন। অথচ যেই জানালার সঙ্গে তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়, সেই জানালার উচ্চতা পাঁচ ফুট ৮-৯ ইঞ্চি হবে। পরে ছবিতে দেখতে পাই, মোবারকের পা ভাজ করা ছিল। তারপর জুম্মার নামাজের পর মোবারকের বড় ভাই রুহুল আমিন থানায় মামলা করতে গেলে ডেমরা থানার ওসি সিদ্দিকুর রহমান ও এসআই শাহআলম বলেন, আপনারা হত্যা মামলা করতে চাচ্ছেন কেন, এটা তো আত্মহত্যাও হতে পারে! এভাবে মামলা না নিয়েও কালক্ষেপণ করতে থাকে পুলিশ। পরে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ হত্যা মামলা নেয়।

নিহত মোবারকের ঝুলন্ত অবস্থার মরদেহ ও পিঠে প্রচণ্ড আঘাতের চিহ্নের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, মোবারকের মরদেহ যেই জানালার সঙ্গে ঝুলে আছে, তা মোবারকের সমান। তার পা দুটি ফ্লোরের সঙ্গে ভাজ করা। তার পিঠে ও পেটে ব্যাপক আঘাতের চিহ্ন। চিহ্নগুলো লালচে ও কালো রক্তের জমাট বাধা। অথচ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে এসআই শাহআলম উল্লেখ করেন, নিহতের ডান হাঁটুর নিচে একটি এবং বাম হাঁটুর নিচে ৩-৪টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের কোন চিহ্ন নেই।

জানতে চাইলে এসআই শাহআলম বলেন, আসলে কেউ মারা গেলে কয়েক ঘণ্টা পর শরীর এমন লালচে হয়ে যায়! এ ছাড়া তেমন কোন আঘাত পাইনি। এ ক্ষেত্রে আমার সুরতহাল প্রতিবেদন ভুল মনে হলে কর্তৃপক্ষ চাইলে জবাবদিহি করব।

নিহতের চাচাতো ভাই রাসেল বলেন, আমরা (নিহতের ভাই, বাদী) তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছি। তারা হলো- ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের পরিচালক জামান, তার সহযোগী মামুন ও দারোয়ান। এ ঘটনায় দারোয়ানকে আটক করে রাখা হলেও পুলিশ গ্রেফতার দেখাচ্ছে না। মোবারককে যে হত্যা করা হয়েছে, তা বিভিন্ন আলামতেই প্রমাণিত। অথচ পুলিশ বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলছে।

জানতে চাইলে ডেমরা থানার ওসি সিদিকুর রহমান বলেন, এটি হত্যাও হতে পারে, আবার আত্মহত্যাও হতে পারে। শরীরে আঘাতের এতো চিহ্নসহ অন্য আলামতের পরও এটা আত্মহত্যা হতে পারে কি? এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, এটা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ভালো বলতে পারবেন। মামলার বিষয়ে তিনি কোন কালক্ষেপণ করেননি বলে তার দাবি। তবে এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রেফতার বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোন আটক নেই বলেও ওসি দাবি করেন।

অন্যদিকে ওয়ারি বিভাগের উপকমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) শাহ ইফতেখার আহমেদ বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, এ ঘটনায় ওই হাসপাতালের কাস্টমার রিলেশন অফিসারসহ দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে এটিকে হত্যা নাকি আত্মহত্যা মনে হয়েছে- এমন প্রশ্নে ডিসি বলেন, এটি এখনও নিশ্চিত নয়। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকা সত্ত্বেও সুরতহালে তা উল্লেখ না করা এবং ডেমরা থানা পুলিশ বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলার বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে নিহত ব্যক্তির শরীর লাল হয়ে যায়। হয়তো সে রকম কোন কারণে নিহতের শরীর লাল হয়েছে, এটা আঘাতের চিহ্ন নয়। কিন্তু ছবিতে দেখা যায়, নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। প্রতিবেদকের এরূপ মন্তব্যের পর তার মন্তব্য উল্লেখ না করার অনুরোধ করেন ডিসি। আবার বলেন, মামলা যখনই নেয়া হোক না কেন, মামলা তো নেয়া হয়েছে?

রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৩ ফল্গুন ১৪২৬, ২১ জমাদিউল সানি ১৪৪১

ফলোআপ

পাওনা টাকা নিয়ে ফার্মাসিস্ট মোবারক খুন

মামলার তদন্তে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

রাজধানীর মাতুয়াইলে ডা. মোবরক হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। গত শুক্রবার সকালে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে মোবারকের লাশ উদ্ধারের পর শরীরে (পিঠজুড়ে) নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেলেও পুলিশ ময়নাতদন্তে উল্লেখ করেছে শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। গতকাল এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হলেও পুলিশ আসামি গ্রেফতারে নানা টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ নিহতের স্বজনদের।

স্বজনরা জানায়, মোবারকের লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য যখন মিডফোর্ট হাসপাতালে পাঠানো হয় তখন তার শরীরজুড়ে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে। রুমের ফ্লোরে পা লেগে থাকা অবস্থায় জানালার গ্রিলে ঝুলে ছিল ডা. মোবারক হোসেন। কিন্তু পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তে উল্লেখ করেছে শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। পায়ে আঘাতের চিহ্ন। এভাবে সুরতহাল তৈরি করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মিডফোর্ডে) পাঠায় পুলিশ। মোবারককে পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে হত্যার অভিযোগ শুরু থেকে থাকলেও কোন অভিযোগেই কর্ণপাত করেনি ডেমরা থানা পুলিশ। এমনকি হত্যা মামলা দায়ের হলেও মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে তৎপর হচ্ছে না পুলিশ। পুলিশ মোবারক হত্যাকে আত্মহত্যা বলে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে।

নিহতের স্ত্রী সাবিকুন্নাহার রিতু বলেন, ৩/৪ বছর আগে বারডেম-২ হাসপাতালের এনেস্থেশিয়া বিভাগে কাজ করতেন মোবারক হোসেন। ওই হাসপাতালের একই বিভাগে কাজ করতেন জামান। চাকরির সুবাদে জামানের সঙ্গে পরিচয় হয় মোবারকের। এরপর মোবারক মাতুয়াইলে প্রো-একটিভ হাসপাতালের ফার্মাসিস্টে আর জামান ফ্রন্ডশিপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে চাকরি নেয়। এর আগে জামান মোবারককে একটি হাসপাতালের সদস্যপদ দেয়ার কথা বলে চার লাখ টাকা ধার নেয়। কিন্তু কিছু দিন পর বলে, হাসপাতালের সদস্যপদ পাব না। এই টাকা দিয়ে আমরা ওষুধের ব্যবসা করব। কিন্তু দিন অতিবাহিত হতে থাকে, ব্যবসার কোন খবর নেই। একপর্যায়ে চার লাখ টাকা ফেরত চান মোবারক। জামান টাকা ফিরত দিব, দিচ্ছি বলে আর দেয় না। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব বাধে। একদিন জামান মোবারককে হুমকিও দেয়। কিন্তু সেই হুমকিকে পাত্তা না দিলেও সেটাই যে তার জীবনের কাল হবে কে জানতো। রিতু বলেন, তাদের মাত্র সাত মাস আগে বিয়ে হয়েছে। এখনও কেউ কাউকে ভালো করে বুঝে উঠতে পারিনি। মোবারকও তেমন কিছু শেয়ার করত না। তবে একদিন টাকা পাওয়ার এবং পাওনা টাকা চাওয়ায় হুমকির বিষয়টি তাকে জানায়। তার ধারণা, এই কারণেই তার স্বামী হত্যার শিকার হতে পারেন। এ ঘটনার পর ডেমরা থানা পুলিশ থেকে ওয়ারী বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের।

নিহতের শ্যালক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মোবারক বাসা থেকে বের হন। দুপুরের দিকে তার বোনের সঙ্গে মোবারকের শেষ কথা হয়। এরপর থেকে তাকে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ হয়নি। রাত ১২টার দিকে মোবারকের নম্বর দুই বার ওয়েটিং পাওয়া যায়। রাত ২টার দিকে মোবাইল পুরোপুরি বন্ধ পাওয়া যায়। পরের দিন অর্থাৎ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ডেমরা থানার এসআই শাহ আলম কল করে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে মোবারকের লাশ পাওয়ার কথা জানান। এই খবরে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখি, মোবারকের লাশ প্যাকেট করা অবস্থা, মর্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। পাশে তার মানিব্যাগসহ যাবতীয় কাগজপত্র পরে আছে। তখন এসআই শাহআলম জানায়, রুমের দরজা ভেঙে মোবারকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু দরজার তালা বা ছিটকানি ভাঙার কোন লক্ষণই ছিল না। মোবারক পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্জি লম্বা ছিলেন। অথচ যেই জানালার সঙ্গে তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়, সেই জানালার উচ্চতা পাঁচ ফুট ৮-৯ ইঞ্চি হবে। পরে ছবিতে দেখতে পাই, মোবারকের পা ভাজ করা ছিল। তারপর জুম্মার নামাজের পর মোবারকের বড় ভাই রুহুল আমিন থানায় মামলা করতে গেলে ডেমরা থানার ওসি সিদ্দিকুর রহমান ও এসআই শাহআলম বলেন, আপনারা হত্যা মামলা করতে চাচ্ছেন কেন, এটা তো আত্মহত্যাও হতে পারে! এভাবে মামলা না নিয়েও কালক্ষেপণ করতে থাকে পুলিশ। পরে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ হত্যা মামলা নেয়।

নিহত মোবারকের ঝুলন্ত অবস্থার মরদেহ ও পিঠে প্রচণ্ড আঘাতের চিহ্নের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, মোবারকের মরদেহ যেই জানালার সঙ্গে ঝুলে আছে, তা মোবারকের সমান। তার পা দুটি ফ্লোরের সঙ্গে ভাজ করা। তার পিঠে ও পেটে ব্যাপক আঘাতের চিহ্ন। চিহ্নগুলো লালচে ও কালো রক্তের জমাট বাধা। অথচ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে এসআই শাহআলম উল্লেখ করেন, নিহতের ডান হাঁটুর নিচে একটি এবং বাম হাঁটুর নিচে ৩-৪টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের কোন চিহ্ন নেই।

জানতে চাইলে এসআই শাহআলম বলেন, আসলে কেউ মারা গেলে কয়েক ঘণ্টা পর শরীর এমন লালচে হয়ে যায়! এ ছাড়া তেমন কোন আঘাত পাইনি। এ ক্ষেত্রে আমার সুরতহাল প্রতিবেদন ভুল মনে হলে কর্তৃপক্ষ চাইলে জবাবদিহি করব।

নিহতের চাচাতো ভাই রাসেল বলেন, আমরা (নিহতের ভাই, বাদী) তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছি। তারা হলো- ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের পরিচালক জামান, তার সহযোগী মামুন ও দারোয়ান। এ ঘটনায় দারোয়ানকে আটক করে রাখা হলেও পুলিশ গ্রেফতার দেখাচ্ছে না। মোবারককে যে হত্যা করা হয়েছে, তা বিভিন্ন আলামতেই প্রমাণিত। অথচ পুলিশ বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলছে।

জানতে চাইলে ডেমরা থানার ওসি সিদিকুর রহমান বলেন, এটি হত্যাও হতে পারে, আবার আত্মহত্যাও হতে পারে। শরীরে আঘাতের এতো চিহ্নসহ অন্য আলামতের পরও এটা আত্মহত্যা হতে পারে কি? এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, এটা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ভালো বলতে পারবেন। মামলার বিষয়ে তিনি কোন কালক্ষেপণ করেননি বলে তার দাবি। তবে এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রেফতার বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোন আটক নেই বলেও ওসি দাবি করেন।

অন্যদিকে ওয়ারি বিভাগের উপকমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) শাহ ইফতেখার আহমেদ বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, এ ঘটনায় ওই হাসপাতালের কাস্টমার রিলেশন অফিসারসহ দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে এটিকে হত্যা নাকি আত্মহত্যা মনে হয়েছে- এমন প্রশ্নে ডিসি বলেন, এটি এখনও নিশ্চিত নয়। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকা সত্ত্বেও সুরতহালে তা উল্লেখ না করা এবং ডেমরা থানা পুলিশ বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলার বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে নিহত ব্যক্তির শরীর লাল হয়ে যায়। হয়তো সে রকম কোন কারণে নিহতের শরীর লাল হয়েছে, এটা আঘাতের চিহ্ন নয়। কিন্তু ছবিতে দেখা যায়, নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। প্রতিবেদকের এরূপ মন্তব্যের পর তার মন্তব্য উল্লেখ না করার অনুরোধ করেন ডিসি। আবার বলেন, মামলা যখনই নেয়া হোক না কেন, মামলা তো নেয়া হয়েছে?