চসিক মেয়র ও পাঁচ সংসদীয় আসনে নতুন মুখ

স্বচ্ছতা বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা ব্যক্তিরা মনোনয়ন পেলেন

অভিমত নেতাদের

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পাঁচটি সংসদীয় আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে ছয়টিতেই নতুন মুখ মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বচ্ছতা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা এবং দলের প্রতি ত্যাগ স্বীকারের জন্যই তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। বিতর্কিত কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে সমালোচনা এড়িয়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। এ বিবেচনায় সাঈদ খোকন ও আ জ ম নাসিরের মত কয়েকজন প্রার্থীকেও মনোননয়ন দেয়া হয়নি। পাশাপাশি ত্যাগের ফল হিসেবেই যোগ্যদের মনোনয়ন দেয়ার কথাও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা শেষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, বগুড়া-১ আসনের উপনির্বাচনে প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের স্ত্রী সাহাদারা মান্নান, গাইবান্ধা-৩ আসনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি, যশোর-৬ আসনে শাহীন চাকলাদার ও বাগেরহাট-৪ আসনে আমিরুল আলম মিলনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রার্থী চেইঞ্জ (পরিবর্তন) করেছি। প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করে নতুন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ক্লিন ইমেজ যাদের তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক ত্যাগের ফল হিসেবে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে।’

ঢাকা-১০ আসন

ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ ব্যবসায়ী নেতা শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি ছিলেন। এর আগে তিনি গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ছিলেন। এই আসনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তারা দু’জনই আলোচনায় ছিলেন। কেন সাঈদ খোকনকে মনোনয়ন দেয়া হলো সে প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, তার ইমেজ ক্লিন নয়। তিনি যদি ক্লিন ইমেজের হতেন তাহলে তো মেয়র পদেই মনোনয়ন পেতেন। তিনি কেন যে আবারও এই আসনে মনোনয়ন চাইলেন তা বোধগম্য নয়। প্রকৃতপক্ষে তার এখনও রাজনীতিতে পরিপক্কতা আসেনি। খোকনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ব্যর্থতার দায় ছিল। খোকনের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তিকে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) ডাকছে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে।

মহিউদ্দিনকে মনোনয়ন দেয়া বিষয়ে তারা বলেন, তিনি বিতর্কিত নন। এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেত পেয়েই ফরম কিনেছেন। তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে।

চসিক

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিনের পরিবর্তে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ছিলেন- বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, সহসভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ সালাম, মহানগরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবর রহমান, মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম, ইনসান আলী, মোহাম্মাদ ইউনুস, বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ ও প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য জহুর আহমদ চৌধুরীর সন্তান হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান, প্রাথমিক সদস্য সেলিনা খান, প্রাথমিক সদস্য মোহাম্মদ মনজুর আলম (সাবেক মেয়র), মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেখা আলম চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য একেএম বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহাবুবুল আলম, এরশাদুল আমিন, মনোয়ার হোসন ও দীপক কুমার পালিত। তবে শেষ পর্যন্ত রেজাউলকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম ও ঢাকার একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, মূলত পরিবর্তন ও ত্যাগের মূল্যায়নের জন্যই রেজাউলকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তারা বলছেন, নাছিরবিরোধীদের একটাই দাবি ছিল, যাই হোক, পরিবর্তন চাই। এছাড়া চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সঙ্গে নাছির বৈরী সম্পর্ক এই মনোনয়ন নিশ্চিতের ক্ষেত্রে কাজ করেছে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিপুল ক্ষমতা, নিজস্ব ব্যক্তিত্বের কারণে একাধিক প্রতিষ্ঠানের বৈরিতাকে সামলে নিতেন, যা নাছিরের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই দ্বিতীয় মেয়াদে আর তাকে মনোননয়ন দেয়া হয়নি। কেন রেজাউলকে মনোনয়ন দেয়া হলো সে বিষয়ে তারা বলেন, মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল করিম চৌধুরীর সাংগঠনিক দক্ষতা ভালো। এছাড়া এর আগে তিনি বড় কয়েকটি ত্যাগ স্বীকার করেছেন। যা খোদ দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন। তাই তাকেই আগামীর প্রার্থী হিসেবে শেখ হাসিনা বেছে নিয়েছেন।

বগুড়া-১

এই আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন মোজাহিদুল ইসলাম বিপ্লব, জাহাঙ্গীর আলম, জিয়াউর রহমান শেখ, ড. সিদ্দিকুর রহমান, ডা. মকবুলুর রহমান, সাহাদারা মান্নান, রেজাউল করিম মন্টু (জেলা সদস্য), আবদুর রাজ্জাক, এসএম খাবীরুজ্জামান, জাকির হোসেন, ছালের উদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, রেজাউল করিম মন্টু (উপজেলা সদস্য), অ্যাডভোকেট মোনতাজুর রহমান মন্টু, শাহজাহান আলী, আলমগীর শাহী (পৌর মেয়র), আছালত জামান, আনছার আলী ও অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সবুজ। এখানে প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের স্ত্রী সাহাদারা মান্নান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, আবদুল মান্নানের কোন বিতর্কিত কর্মকা- ছিল না। তিনি ছিলেন স্বচ্ছ প্রকৃতির লোক। তাই তার ওই ইমেজকে কাজে লাগিয়ে এই আসনটি নিজেদেরই করে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। আর এ কারণেই অন্য প্রার্থীর ওপর ভরসা না করে সাহাদারা মান্নাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

যশোর-৬

যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ১৩ জন। এরা হলেন, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, শেখ আব্দুর রফিক, আবদুল মান্নান, এইচএম আমির হোসেন, ওয়াহিদ সাদিক, নওরিন সাদিক, তাপস কুমার দাস, হোসাইন মোহাম্মদ ইসলাম, শ্যামল সরকার, শেখ আবদুল ওহাব, মো. কামরুজ্জামান (আইনজীবী), তানভীর আহম্মেদ বিপু ও জয়দেব নন্দী। এদের মধ্যে থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যশোর-৬ আসনের প্রার্থী হিসেবে শাহীন চাকলাদারকে মনোনয়ন দিয়েছেন। কেন চাকলাদারকে মনোনয়ন দেয়া হলো সে বিষয়ে এক নেতা বলেন, তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য ২০১৮ সালে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু তখন তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে শাহীন চাকলাদার যশোর-৩ (সদর) আসনে মনোনয়ন চেয়েও পাননি। এছাড়া যশোরে তার অবস্থান বেশ ভালো। তাই উপনির্বাচনে নৌকার প্রতীক তার হাতেই তুলে দেয়া হয়েছে।

গাইবান্ধা-৩

এই আসনের উপনির্বাচনে উম্মে কুলসুম স্মৃতি, শাহ মো. ইয়াকুব উল আজাদ, মাহমুদুল হক, একেএম মোকছুদ চৌধুরী, মফিজুল হক সরকার, ফজলুল করিম, ওমর ফারুখ, আজিজার রহমান খান বিএসসি, গোপাল চন্দ্র বর্মন, রেহেনা বেগম, তামান্না শারমিন, তোফাজ্জল হোসেন, এমএস রহমান, আবু বক্কার প্রধান, শাহারিয়া খান, জরিদুল হক, আমিনুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন, মাজেদার রহমান দুলু, নুরুল ইসলাম প্রধান, দিলারা খন্দকার, শাহাদত রাজা, মতিয়ার রহমান ও সাঈদ রেজা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। এদের মধ্যে থেকে কৃষক লীগের সাধারন সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতিকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কেন মনোনয়ন পেলেন স্মৃতি এমন প্রশ্নের উত্তরে জানা গেছে, স্মৃতি বর্তমানে কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তিনি দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্যাপুর) নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। যেহেতু তিনি এই আসনে মনোনয়ন পাননি, তাই তাকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এছাড়া একটি দলের এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য থাকার বাধ্যবাধকতা আছে। সে দিকটিও কাজ করেছে তার মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে।

বাগেরহাট-৪

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য ১১ জন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছিলেন। তারা হলেন, মিজানুর রহমান জনি, মুক্তিযোদ্ধা ড. আবদুর রহিম খান, অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন, প্রবীর রঞ্জন হালদার, নকিব নাজিব, ইসমত আরা শিরিন চৌধুরী, মোশারফ হোসেন, এসএম রাজু, জামিল হোসাইন, বদিউজ্জামান সোহাগ ও এসএম মনিরুল ইসলাম। এদের মধ্যে থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন। কেন আমিরুলকে মনোনয়ন দেয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা বলেন, আমিরুল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনি ১৭ বছর মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ১৫ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ সালে তিনি জীবন বীমা করপোরেশনের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এসব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী এবার তাকে সংসদ সদস্য পদের জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন।

ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ এবং বাগেরহাট-৪ আসনের ভোট আগামী ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনে ভোটগ্রহণ হবে ২৯ মার্চ।

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৪ ফল্গুন ১৪২৬, ২২ জমাদিউল সানি ১৪৪১

চসিক মেয়র ও পাঁচ সংসদীয় আসনে নতুন মুখ

স্বচ্ছতা বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা ব্যক্তিরা মনোনয়ন পেলেন

অভিমত নেতাদের

ইমদাদুল হাসান রাতুল |

image

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পাঁচটি সংসদীয় আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে ছয়টিতেই নতুন মুখ মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বচ্ছতা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা এবং দলের প্রতি ত্যাগ স্বীকারের জন্যই তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। বিতর্কিত কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে সমালোচনা এড়িয়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। এ বিবেচনায় সাঈদ খোকন ও আ জ ম নাসিরের মত কয়েকজন প্রার্থীকেও মনোননয়ন দেয়া হয়নি। পাশাপাশি ত্যাগের ফল হিসেবেই যোগ্যদের মনোনয়ন দেয়ার কথাও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা শেষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, বগুড়া-১ আসনের উপনির্বাচনে প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের স্ত্রী সাহাদারা মান্নান, গাইবান্ধা-৩ আসনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি, যশোর-৬ আসনে শাহীন চাকলাদার ও বাগেরহাট-৪ আসনে আমিরুল আলম মিলনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রার্থী চেইঞ্জ (পরিবর্তন) করেছি। প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করে নতুন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ক্লিন ইমেজ যাদের তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক ত্যাগের ফল হিসেবে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে।’

ঢাকা-১০ আসন

ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ ব্যবসায়ী নেতা শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি ছিলেন। এর আগে তিনি গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ছিলেন। এই আসনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তারা দু’জনই আলোচনায় ছিলেন। কেন সাঈদ খোকনকে মনোনয়ন দেয়া হলো সে প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, তার ইমেজ ক্লিন নয়। তিনি যদি ক্লিন ইমেজের হতেন তাহলে তো মেয়র পদেই মনোনয়ন পেতেন। তিনি কেন যে আবারও এই আসনে মনোনয়ন চাইলেন তা বোধগম্য নয়। প্রকৃতপক্ষে তার এখনও রাজনীতিতে পরিপক্কতা আসেনি। খোকনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ব্যর্থতার দায় ছিল। খোকনের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তিকে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) ডাকছে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে।

মহিউদ্দিনকে মনোনয়ন দেয়া বিষয়ে তারা বলেন, তিনি বিতর্কিত নন। এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেত পেয়েই ফরম কিনেছেন। তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে।

চসিক

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিনের পরিবর্তে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ছিলেন- বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, সহসভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ সালাম, মহানগরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবর রহমান, মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম, ইনসান আলী, মোহাম্মাদ ইউনুস, বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ ও প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য জহুর আহমদ চৌধুরীর সন্তান হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান, প্রাথমিক সদস্য সেলিনা খান, প্রাথমিক সদস্য মোহাম্মদ মনজুর আলম (সাবেক মেয়র), মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেখা আলম চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য একেএম বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহাবুবুল আলম, এরশাদুল আমিন, মনোয়ার হোসন ও দীপক কুমার পালিত। তবে শেষ পর্যন্ত রেজাউলকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম ও ঢাকার একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, মূলত পরিবর্তন ও ত্যাগের মূল্যায়নের জন্যই রেজাউলকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তারা বলছেন, নাছিরবিরোধীদের একটাই দাবি ছিল, যাই হোক, পরিবর্তন চাই। এছাড়া চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সঙ্গে নাছির বৈরী সম্পর্ক এই মনোনয়ন নিশ্চিতের ক্ষেত্রে কাজ করেছে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিপুল ক্ষমতা, নিজস্ব ব্যক্তিত্বের কারণে একাধিক প্রতিষ্ঠানের বৈরিতাকে সামলে নিতেন, যা নাছিরের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই দ্বিতীয় মেয়াদে আর তাকে মনোননয়ন দেয়া হয়নি। কেন রেজাউলকে মনোনয়ন দেয়া হলো সে বিষয়ে তারা বলেন, মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল করিম চৌধুরীর সাংগঠনিক দক্ষতা ভালো। এছাড়া এর আগে তিনি বড় কয়েকটি ত্যাগ স্বীকার করেছেন। যা খোদ দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন। তাই তাকেই আগামীর প্রার্থী হিসেবে শেখ হাসিনা বেছে নিয়েছেন।

বগুড়া-১

এই আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন মোজাহিদুল ইসলাম বিপ্লব, জাহাঙ্গীর আলম, জিয়াউর রহমান শেখ, ড. সিদ্দিকুর রহমান, ডা. মকবুলুর রহমান, সাহাদারা মান্নান, রেজাউল করিম মন্টু (জেলা সদস্য), আবদুর রাজ্জাক, এসএম খাবীরুজ্জামান, জাকির হোসেন, ছালের উদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, রেজাউল করিম মন্টু (উপজেলা সদস্য), অ্যাডভোকেট মোনতাজুর রহমান মন্টু, শাহজাহান আলী, আলমগীর শাহী (পৌর মেয়র), আছালত জামান, আনছার আলী ও অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সবুজ। এখানে প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের স্ত্রী সাহাদারা মান্নান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, আবদুল মান্নানের কোন বিতর্কিত কর্মকা- ছিল না। তিনি ছিলেন স্বচ্ছ প্রকৃতির লোক। তাই তার ওই ইমেজকে কাজে লাগিয়ে এই আসনটি নিজেদেরই করে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। আর এ কারণেই অন্য প্রার্থীর ওপর ভরসা না করে সাহাদারা মান্নাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

যশোর-৬

যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ১৩ জন। এরা হলেন, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, শেখ আব্দুর রফিক, আবদুল মান্নান, এইচএম আমির হোসেন, ওয়াহিদ সাদিক, নওরিন সাদিক, তাপস কুমার দাস, হোসাইন মোহাম্মদ ইসলাম, শ্যামল সরকার, শেখ আবদুল ওহাব, মো. কামরুজ্জামান (আইনজীবী), তানভীর আহম্মেদ বিপু ও জয়দেব নন্দী। এদের মধ্যে থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যশোর-৬ আসনের প্রার্থী হিসেবে শাহীন চাকলাদারকে মনোনয়ন দিয়েছেন। কেন চাকলাদারকে মনোনয়ন দেয়া হলো সে বিষয়ে এক নেতা বলেন, তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য ২০১৮ সালে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু তখন তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে শাহীন চাকলাদার যশোর-৩ (সদর) আসনে মনোনয়ন চেয়েও পাননি। এছাড়া যশোরে তার অবস্থান বেশ ভালো। তাই উপনির্বাচনে নৌকার প্রতীক তার হাতেই তুলে দেয়া হয়েছে।

গাইবান্ধা-৩

এই আসনের উপনির্বাচনে উম্মে কুলসুম স্মৃতি, শাহ মো. ইয়াকুব উল আজাদ, মাহমুদুল হক, একেএম মোকছুদ চৌধুরী, মফিজুল হক সরকার, ফজলুল করিম, ওমর ফারুখ, আজিজার রহমান খান বিএসসি, গোপাল চন্দ্র বর্মন, রেহেনা বেগম, তামান্না শারমিন, তোফাজ্জল হোসেন, এমএস রহমান, আবু বক্কার প্রধান, শাহারিয়া খান, জরিদুল হক, আমিনুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন, মাজেদার রহমান দুলু, নুরুল ইসলাম প্রধান, দিলারা খন্দকার, শাহাদত রাজা, মতিয়ার রহমান ও সাঈদ রেজা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। এদের মধ্যে থেকে কৃষক লীগের সাধারন সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতিকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কেন মনোনয়ন পেলেন স্মৃতি এমন প্রশ্নের উত্তরে জানা গেছে, স্মৃতি বর্তমানে কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তিনি দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্যাপুর) নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। যেহেতু তিনি এই আসনে মনোনয়ন পাননি, তাই তাকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এছাড়া একটি দলের এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য থাকার বাধ্যবাধকতা আছে। সে দিকটিও কাজ করেছে তার মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে।

বাগেরহাট-৪

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য ১১ জন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছিলেন। তারা হলেন, মিজানুর রহমান জনি, মুক্তিযোদ্ধা ড. আবদুর রহিম খান, অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন, প্রবীর রঞ্জন হালদার, নকিব নাজিব, ইসমত আরা শিরিন চৌধুরী, মোশারফ হোসেন, এসএম রাজু, জামিল হোসাইন, বদিউজ্জামান সোহাগ ও এসএম মনিরুল ইসলাম। এদের মধ্যে থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন। কেন আমিরুলকে মনোনয়ন দেয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা বলেন, আমিরুল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনি ১৭ বছর মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ১৫ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ সালে তিনি জীবন বীমা করপোরেশনের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এসব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী এবার তাকে সংসদ সদস্য পদের জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন।

ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ এবং বাগেরহাট-৪ আসনের ভোট আগামী ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনে ভোটগ্রহণ হবে ২৯ মার্চ।