আইসোলেশন করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে

জ্বর, হাঁচি, কাশি নিয়ে চীন ও সিঙ্গাপুর ফেরত যাত্রীদের আইসোলেশন করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। অন্যদেরকে যার যার বাসাতে স্বেচ্ছা-কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অপর দিকে চীন-সিঙ্গাপুর ফেরত যাত্রী মানেই সন্দেহজনক করোনাভাইরাস রোগী নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন।

চীন ও সিঙ্গাপুর থেকে প্রতিদিন অনেক যাত্রী বাংলাদেশে আসে। চীনের সব প্রদেশে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেনি। চীনের যে সব অঞ্চলে মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, চীন সরকার সে সব অঞ্চলে গণ-কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা জারি করেছে ও সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে মহামারী উপদ্রুত এলাকা থেকে কারও বাংলাদেশে আসার সুযোগ নেই। অনুরূপভাবে গোটা সিঙ্গাপুর শহর মহামারী আক্রান্ত নয়। যেসব প্রতিষ্ঠানে ও বাসা-বাড়িতে করোনাভাইরাস নিশ্চিত রোগী শনাক্ত হয়েছে সেসব অঞ্চল ও প্রতিষ্ঠানকে সিঙ্গাপুর সরকার শহরের অন্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রোগীদেরকে আইসেলশন ও তাদের সংস্পর্শে আসা সবাইকে কোয়ারেন্টিন করেছে। ফলে সিঙ্গাপুরের করোনা ভাইরাস উপদ্রুত অঞ্চল থেকে কোন যাত্রীর বাংলাদেশে আসার সুযোগ নেই। দেশের ভেতরে সম্ভাব্য করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করার জন্য জনসাধারণের সক্রিয় সহযোগীতা খুবই জরুরি। কিন্তু চীন ও সিঙ্গাপুর ফেরত যাত্রীরা যদি কারও আচরণের কারণে ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, তাহলে তারা জ্বর-হাঁচি-কাশিতে ভুগলেও সরকারি স্বাস্থ্য সেবা নিতে নিরুৎসাহিত বোধ করবেন, স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে কুণ্ঠা বোধ করবে না। এর ফলে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জনসাধারণকে ধৈর্য ও শান্তভাবে জনস্বাস্থ্য কার্যক্রমকে সহযোগীতা করার জন্য বলা হয়েছে। যে কোন দরকারে জিজ্ঞাসা থাকলে আইইডিসিআর অথবা নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় অথবা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় হতে জেনে নেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

আইইডিসিআর পরিচালক গতকাল বেলা ১১টায় আইইডিসিআর মিলনায়তনে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সিঙ্গাপুর ও বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরেন আইইডিসিআর-এর পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

চীনের উহান ফেরত ৩১২ জন যাত্রীরা সবাই সুস্থ।

কোয়ারেন্টিনকৃত উহান ফেরত বাংলাদেশের নাগরিকদের কোয়ারেন্টিনের ১৪ দিন পর সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে কারও মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। কোয়ারেন্টিন পরবর্তী আরও ১০ দিন ৩১২ জনকে সীমিত চলাচল ও নিজেদর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অবহিত করতে আইইডিসিআরএর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তাদের প্রতি যে সব নির্দেশনা : কোয়ারেন্টিন থেকে বাসায় যাবার পথে গাড়িতে মাস্ক পরবেন। যে যানবাহনে (বাস, ট্রেন, লঞ্চ, বিমান যোগে বাড়ি যাবেন তার নাম, নম্বর, যাত্রার সময় আইইডিসিআর-এ জানাবেন।

যে বাসায় অবস্থান করবেন, খুব জরুরি না হলে সে বাসা বদল করবেন না। যথাসম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলবেন, বাসার বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করবেন, নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে দুই হাত ধোবেন (অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবৎ), অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না। হাঁচি, কাশির সময় বাহু, টিস্যু, কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। অসুস্থ পশু, পাখির সংস্পর্শে পরিহার করবেন, মাছ-মাংস-ডিম ভালোভাবে রান্না করে খাবেন, শারীরিক অসুস্থতা (জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি) দেখা দিলে, আইইডিসিআর হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মৃদু অসুস্থতার ক্ষেত্রে নিজ ঘরে অবস্থান করবেন, নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করবেন, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একজন রোগীর সেবা করবেন। তিনি মাস্ক ব্যবহার করবেন ও প্রতিবার রোগীর সংস্পর্শে আসার পর মাস্কটি ঢাকনা যুক্ত বিনে ফেলবেন এবং সাবান-পানি দিয়ে দুই হাত ধুয়ে ফেলবেন (অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবৎ)।

সিঙ্গাপুর পরিস্থিতি :

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রেরিত সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, মোট ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে একজন আইসিইউ-তে আছেন। কোয়ারান্টাইনে আছেন ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক। সিঙ্গাপুরে সর্বমোট ৭২ জন করোনাভাইরাসে রোগী চিকিৎসাধীন। পরীক্ষায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ পাওয়া যায়নি ৮১২ জনের, পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছে ১০৭ জন রোগী, এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরত গেছে ১৮ জন। বাংলাদেশে সিঙ্গাপুরের দূতাবাস থেকেও আমাদেরকে সিঙ্গাপুর পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে।

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৪ ফল্গুন ১৪২৬, ২২ জমাদিউল সানি ১৪৪১

জ্বর-কাশি নিয়ে চীন-সিঙ্গাপুর ফেরতদের

আইসোলেশন করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে

বাকিবিল্লাহ |

জ্বর, হাঁচি, কাশি নিয়ে চীন ও সিঙ্গাপুর ফেরত যাত্রীদের আইসোলেশন করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। অন্যদেরকে যার যার বাসাতে স্বেচ্ছা-কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অপর দিকে চীন-সিঙ্গাপুর ফেরত যাত্রী মানেই সন্দেহজনক করোনাভাইরাস রোগী নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন।

চীন ও সিঙ্গাপুর থেকে প্রতিদিন অনেক যাত্রী বাংলাদেশে আসে। চীনের সব প্রদেশে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেনি। চীনের যে সব অঞ্চলে মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, চীন সরকার সে সব অঞ্চলে গণ-কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা জারি করেছে ও সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে মহামারী উপদ্রুত এলাকা থেকে কারও বাংলাদেশে আসার সুযোগ নেই। অনুরূপভাবে গোটা সিঙ্গাপুর শহর মহামারী আক্রান্ত নয়। যেসব প্রতিষ্ঠানে ও বাসা-বাড়িতে করোনাভাইরাস নিশ্চিত রোগী শনাক্ত হয়েছে সেসব অঞ্চল ও প্রতিষ্ঠানকে সিঙ্গাপুর সরকার শহরের অন্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রোগীদেরকে আইসেলশন ও তাদের সংস্পর্শে আসা সবাইকে কোয়ারেন্টিন করেছে। ফলে সিঙ্গাপুরের করোনা ভাইরাস উপদ্রুত অঞ্চল থেকে কোন যাত্রীর বাংলাদেশে আসার সুযোগ নেই। দেশের ভেতরে সম্ভাব্য করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করার জন্য জনসাধারণের সক্রিয় সহযোগীতা খুবই জরুরি। কিন্তু চীন ও সিঙ্গাপুর ফেরত যাত্রীরা যদি কারও আচরণের কারণে ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, তাহলে তারা জ্বর-হাঁচি-কাশিতে ভুগলেও সরকারি স্বাস্থ্য সেবা নিতে নিরুৎসাহিত বোধ করবেন, স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে কুণ্ঠা বোধ করবে না। এর ফলে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জনসাধারণকে ধৈর্য ও শান্তভাবে জনস্বাস্থ্য কার্যক্রমকে সহযোগীতা করার জন্য বলা হয়েছে। যে কোন দরকারে জিজ্ঞাসা থাকলে আইইডিসিআর অথবা নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় অথবা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় হতে জেনে নেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

আইইডিসিআর পরিচালক গতকাল বেলা ১১টায় আইইডিসিআর মিলনায়তনে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সিঙ্গাপুর ও বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরেন আইইডিসিআর-এর পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

চীনের উহান ফেরত ৩১২ জন যাত্রীরা সবাই সুস্থ।

কোয়ারেন্টিনকৃত উহান ফেরত বাংলাদেশের নাগরিকদের কোয়ারেন্টিনের ১৪ দিন পর সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে কারও মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। কোয়ারেন্টিন পরবর্তী আরও ১০ দিন ৩১২ জনকে সীমিত চলাচল ও নিজেদর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অবহিত করতে আইইডিসিআরএর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তাদের প্রতি যে সব নির্দেশনা : কোয়ারেন্টিন থেকে বাসায় যাবার পথে গাড়িতে মাস্ক পরবেন। যে যানবাহনে (বাস, ট্রেন, লঞ্চ, বিমান যোগে বাড়ি যাবেন তার নাম, নম্বর, যাত্রার সময় আইইডিসিআর-এ জানাবেন।

যে বাসায় অবস্থান করবেন, খুব জরুরি না হলে সে বাসা বদল করবেন না। যথাসম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলবেন, বাসার বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করবেন, নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে দুই হাত ধোবেন (অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবৎ), অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না। হাঁচি, কাশির সময় বাহু, টিস্যু, কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। অসুস্থ পশু, পাখির সংস্পর্শে পরিহার করবেন, মাছ-মাংস-ডিম ভালোভাবে রান্না করে খাবেন, শারীরিক অসুস্থতা (জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি) দেখা দিলে, আইইডিসিআর হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মৃদু অসুস্থতার ক্ষেত্রে নিজ ঘরে অবস্থান করবেন, নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করবেন, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একজন রোগীর সেবা করবেন। তিনি মাস্ক ব্যবহার করবেন ও প্রতিবার রোগীর সংস্পর্শে আসার পর মাস্কটি ঢাকনা যুক্ত বিনে ফেলবেন এবং সাবান-পানি দিয়ে দুই হাত ধুয়ে ফেলবেন (অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবৎ)।

সিঙ্গাপুর পরিস্থিতি :

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রেরিত সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, মোট ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে একজন আইসিইউ-তে আছেন। কোয়ারান্টাইনে আছেন ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক। সিঙ্গাপুরে সর্বমোট ৭২ জন করোনাভাইরাসে রোগী চিকিৎসাধীন। পরীক্ষায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ পাওয়া যায়নি ৮১২ জনের, পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছে ১০৭ জন রোগী, এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরত গেছে ১৮ জন। বাংলাদেশে সিঙ্গাপুরের দূতাবাস থেকেও আমাদেরকে সিঙ্গাপুর পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে।