সড়ক আইন ও আন্দোলন

বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশটির নিত্যদিনের এক অন্যতম সমস্যা সড়ক দুর্ঘটনা। ছোট বড় নানা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নিহতের দুঃসংবাদ আমাদেরকে রীতিমতো ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলছে। একই সঙ্গে করেছে শোকাহত। সুব্যবস্থিত সড়ক, সুশৃঙ্খল গতির গাড়ি, সঠিক আইন ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে সড়ক দুর্ঘটনার আতংক প্রতিটি মুহূর্তে জনসাধারণের মাঝে বিরাজ করছে। ভয়াবহ একটি স্পর্শকাতর সড়ক দুর্ঘটনার পরপরই শুরু হয়ে যায় ন্যায্য বিচারের দাবি ও আন্দোলন। ইতিহাসের পাতায় সাক্ষী হয়ে থাকা এমনই এক আন্দোলনের নাম ‘নিরাপদ সড়ক চাই (২০১৮)’।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যবিহীন এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ও সুশৃঙ্খলতার নমুনা পুরো জাতির সামনে তুলে ধরে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের পাশাপাশি তারা দেখিয়ে দেয় উন্নত বিশ্বের মতো সড়কে পরিবহন শৃঙ্খল, সড়ক আইন ও নিয়মের যথাযথ প্রয়োগ। আমরা সাধারণ যাত্রীরা যে পরিবহনেই যাতায়াত করি, আমরা যদি পরিবহন চালকদের সড়ক আইনে সতর্কতা অবলম্বন, দ্রুত গতির লাইন, ধীর গতির লাইন মেনে চলা, যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে উঠা-নামা, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়িতে পরিবহন করা বর্জনের মাধ্যমে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদেরকে যদি বাধ্যে করতে পারি তাহলে সড়কে ও পরিবহন চালকদের মাঝে সুশৃঙ্খলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

এত কিছুর পরও কতটা নিরাপদ সড়কে চলাচল করছি আমি, আপনি? প্রশ্ন থেকে যায়। শিক্ষার্থীদের নিরপদ সড়ক আন্দোলনের পর গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর এ সড়ক পরিবহন আইন পাস হয় এবং ১ নভেম্বর থেকে এই আইন কার্যকর হয়। নতুন সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর শাস্তির বিধান রয়েছে। “দণ্ডবিধির ৩০৪” ধারায় যাই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারনে সংগঠিত কোন দুর্ঘটনায় কোন ব্যাক্তি গুরুতর আহত বা নিহত হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। একই সঙ্গে ইহা জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এছাড়া নতুন আইনে বেপরোয়া যানবাহন চালনার মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটালে শাস্তির বিধান তিন বছর। নতুন আইনে চালক ও পথচারী উভয়ের জন্যে কঠোর বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

এত আইন এরপরও চালকদের মধ্যে সচেতনতার অভাব। সড়ক আইন মেনে চলার অবহেলা। এখনও চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোতে ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা।

এভাবে আর কত দিন, কত রক্ত ঝরবে? কত মা সন্তান হারা হবে? মা-বাবার কাছে সন্তানের লাশ দাফন করা যে কতোটা কষ্টের তা ভাষায় লিখে প্রকাশের মতো নয়। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় সড়ক আইন মেনে চলা, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং যুগোপযোগী আইনের প্রনয়ণ। চালক, যাত্রি, পথচারী, টাফিক আইন বিভাগ ও সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনতিবিলম্বে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন সম্ভব।

মিসফার বিন হাসান,

ছাদাবা কোরাইশী

হাজারি গলি শাখা, চট্টগ্রাম

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৪ ফল্গুন ১৪২৬, ২২ জমাদিউল সানি ১৪৪১

সড়ক আইন ও আন্দোলন

বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশটির নিত্যদিনের এক অন্যতম সমস্যা সড়ক দুর্ঘটনা। ছোট বড় নানা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নিহতের দুঃসংবাদ আমাদেরকে রীতিমতো ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলছে। একই সঙ্গে করেছে শোকাহত। সুব্যবস্থিত সড়ক, সুশৃঙ্খল গতির গাড়ি, সঠিক আইন ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে সড়ক দুর্ঘটনার আতংক প্রতিটি মুহূর্তে জনসাধারণের মাঝে বিরাজ করছে। ভয়াবহ একটি স্পর্শকাতর সড়ক দুর্ঘটনার পরপরই শুরু হয়ে যায় ন্যায্য বিচারের দাবি ও আন্দোলন। ইতিহাসের পাতায় সাক্ষী হয়ে থাকা এমনই এক আন্দোলনের নাম ‘নিরাপদ সড়ক চাই (২০১৮)’।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যবিহীন এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ও সুশৃঙ্খলতার নমুনা পুরো জাতির সামনে তুলে ধরে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের পাশাপাশি তারা দেখিয়ে দেয় উন্নত বিশ্বের মতো সড়কে পরিবহন শৃঙ্খল, সড়ক আইন ও নিয়মের যথাযথ প্রয়োগ। আমরা সাধারণ যাত্রীরা যে পরিবহনেই যাতায়াত করি, আমরা যদি পরিবহন চালকদের সড়ক আইনে সতর্কতা অবলম্বন, দ্রুত গতির লাইন, ধীর গতির লাইন মেনে চলা, যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে উঠা-নামা, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়িতে পরিবহন করা বর্জনের মাধ্যমে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদেরকে যদি বাধ্যে করতে পারি তাহলে সড়কে ও পরিবহন চালকদের মাঝে সুশৃঙ্খলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

এত কিছুর পরও কতটা নিরাপদ সড়কে চলাচল করছি আমি, আপনি? প্রশ্ন থেকে যায়। শিক্ষার্থীদের নিরপদ সড়ক আন্দোলনের পর গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর এ সড়ক পরিবহন আইন পাস হয় এবং ১ নভেম্বর থেকে এই আইন কার্যকর হয়। নতুন সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর শাস্তির বিধান রয়েছে। “দণ্ডবিধির ৩০৪” ধারায় যাই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারনে সংগঠিত কোন দুর্ঘটনায় কোন ব্যাক্তি গুরুতর আহত বা নিহত হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। একই সঙ্গে ইহা জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এছাড়া নতুন আইনে বেপরোয়া যানবাহন চালনার মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটালে শাস্তির বিধান তিন বছর। নতুন আইনে চালক ও পথচারী উভয়ের জন্যে কঠোর বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

এত আইন এরপরও চালকদের মধ্যে সচেতনতার অভাব। সড়ক আইন মেনে চলার অবহেলা। এখনও চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোতে ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা।

এভাবে আর কত দিন, কত রক্ত ঝরবে? কত মা সন্তান হারা হবে? মা-বাবার কাছে সন্তানের লাশ দাফন করা যে কতোটা কষ্টের তা ভাষায় লিখে প্রকাশের মতো নয়। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় সড়ক আইন মেনে চলা, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং যুগোপযোগী আইনের প্রনয়ণ। চালক, যাত্রি, পথচারী, টাফিক আইন বিভাগ ও সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনতিবিলম্বে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন সম্ভব।

মিসফার বিন হাসান,

ছাদাবা কোরাইশী

হাজারি গলি শাখা, চট্টগ্রাম