নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিনদিন অবনতি হচ্ছে। এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এখন নিত্যদিনের ঘটনা। চুরি, ডাকাতিরোধে পুলিশি কোন প্রকার তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সূত্র জানায়, গত ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান যোগদানের পর থেকে এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সংখ্যা বেড়েই চলছে। প্রতি রাতেই উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ও বিত্তশালীর বাড়ি এমনকি সাধারণের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বেড়েছে চুরি, ছিনতাই। থানা সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলার তারাব পৌরসভার নোয়াপাড়া এলাকার হায়দার আলী নামে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রেরমুখে জিম্মী করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ ২ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ১৮ জানুয়ারি রাতে তারাব ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আয়াত আলীর বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা হলেও ডাকাতদলে সদস্যরা রয়ে যায় অধরা। একইভাবে ৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে উপজেলার দক্ষিণ রূপসীর দেলোয়ার নামে ব্যক্তির বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা হয়। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা পরিবারের লোকজন মারধর করে স্বর্ণালঙ্কারসহ ১ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নেয়। ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার কেন্দুয়া এলাকায় ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৩০ হাজার টাকা লুটে নিয়ে যায়। ২০১৯ সালের ২ মে উপজেলার হাটাব মধ্যপাড়া এলাকায় শামীম নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী বাড়িতে হানা দিয়ে অস্ত্রের মুখে বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে নগদ টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার এবং একটি প্রাইভেটকার লুটে নিয়ে যায়।

এদিকে গত ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার কেন্দুয়ারটেক এলাকায় ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি হয়। ডাকাত দল পরিবারের সকলকে জিম্মি করে প্রায় ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ টাকা লুটে নেয়। গতবছর ১ এপ্রিল রূপগঞ্জ সদরে অস্ত্রেরমুখে জিম্মী করে নয়ন চন্দ্র দাস নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়। এ সময় নগদ ৯০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল লুটে নেয়। ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ঢাকা বাইপাস সড়কের পূর্বাচলে প্রাইভেটকারে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাত দলের সদস্য নগদ ৪০ হাজার টাকাসহ প্রায় ২ লাখ টাকার মালামাল লুটে নেয়। গত এ বছর ৫ জানুয়ারি রাতে উপজেলার ইছাপুরা বাজারে ৪টি জুয়েলারি দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক রোমান মোল্লা থানার নাম্বারে ফোন দিয়ে সাড়া না পেয়ে ৯৯৯ এ কল দেন। এতক্ষণে ৪টি দোকানের ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ অর্থ লুটে নেয়। একইভাবে উপজেলার বরপা এলাকার মাসুম খানের বাড়িতে, ফকির চাঁন, এস এম শাহাদাত, আসলাম মোল্লাসহ বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এছাড়াও বেড়েছে সাধারণ কৃষক ও খামারির গোয়াল থেকে গরু চুরির ঘটনা। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের বানিয়াদী এলাকায় নবী হোসেন নামে এক কৃষকের দুইটি গরু, ৬ জুলাই উপজেলার গুতিয়াবো এলাকায় আমানাউল্লাহ নামে এক কৃষকের দুধের গাভীসহ ৮টি গরু, গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার গুতিয়াবো এলাকার বাসিন্দা আমানুল্লাহর ৮টি গরু, ১৮ জানুয়ারি মধূখালীর চান মিয়ার ৫টি গরু, একই এলাকার বেলায়াতের ৩টি গাভী, ৩ ফেব্রুয়ারি আলম হোসেনের ৪টি গরু নিয়ে যায় চোরেরা। এসব বিষয়ে থানা পুলিশের কাছে মামলা দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন তারা। ঢাকা বাইপাস মহাসড়কের গোলাকান্দাইল মোড় থেকে কালীগঞ্জের উলুখোলা পর্যন্ত রয়েছে ২৪টি এবং ৩শ ফুট সড়কে রয়েছে আরো ১৭টি চোরাই তেলের দোকান। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশকে ম্যানেজ করে চলছে তেল চুরি । আর নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে ওসির বডিগার্ড রবিউল এবং ভাসমান দালাল ও ওসির ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিতি পিরোজপুরের শাহীন। ফলে রোধ করা যাচ্ছে না চুরির ঘটনা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, ডাকাতি ও চুরির সংখ্যা তেমন নয়। তবে পুলিশ সব সময় অপরাধ দমনে তৎপর আছে। এ সময় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।