নারায়ণগঞ্জে বদ্ধ ঘরে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে ১ জন নিহত ও ৭ জন দগ্ধ হয়েছেন। গতকাল ভোর পাঁচটার দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের সাহেবপাড়ায় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ফারুক মিয়ার ৫তলা বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দগ্ধ হন ওই ফ্লাটের ভাড়াটিয়া কিরণ (৪৩), তার মা নুরজাহান (৬০), ভাই হীরণ (২৫) ও তার স্ত্রী মুক্তা (২০), মেয়ে লিমা (৩), আবুল হোসেন (২২), কাওসার (১৬) এবং আপন (১০)। এদের মধ্যে নূরজাহান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১১টার দিকে মারা যান।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, দগ্ধদের মধ্যে ইমনের শরীরের ৪৫ শতাংশ, কিরণের ৭০ শতাংশ, হিরনের ২২ শতাংশ, কাওসারের ২৫ শতাংশ, মুক্তার ১৫ শতাংশ, লিমার ১৪ শতাংশ, আপনের শরীরের ২০ শতাংশ এবং নুরজাহানের ১০০ শতাংশ দগ্ধ হয়। কিরণ ও তার ছেলে ইমনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের ২ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউটের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
আদমজী ইপিজেডের ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহজাহান জানান, ওই বাসায় গ্যাসের চুলা সারা রাত চালু থাকায় পুরো বাসায় গ্যাস জমে ছিল। সকালে চুলা জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে বাসায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পরিবারের শিশুসহ আটজন দগ্ধ হন।
দগ্ধ পরিবারের স্বজন ইলিয়াস হোসেন জানান, আক্রান্তদের দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
দগ্ধ নুরজাহান বেগমের মেয়ের জামাই মো. ইলিয়াস জানান, ইমনদের বাড়ি নরসিংদী শিবপুর উপজেলার কুমড়াদি গ্রামে। সাইনবোর্ডে ‘নরসিংদী গার্মেন্টস’ নামে একটি গেঞ্জির কারখানা আছে তাদের। আর ওই কারখানারই শো-রুম রাজধানীর গুলিস্তানের ‘ঢাকা ট্রেড সেন্টারের’ আন্ডারগ্রাউন্ডে। ইমন, তার বাবা কিরণ ও চাচা হিরন একই সঙ্গে ব্যবসা করে। সাহেবপাড়ায় থাকেও একই বাসায়।
হাসপাতালে তাদের সঙ্গে থাকা তাদেরই কারখানার কর্মচারী রাহেলা বেগম বলেন, আমি ওনাদের কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করি। থাকি ওই এলাকাতেই। ৬/৭ বছর ধরেই দেখছি ওই এলাকার কোন বাসাতেই দিনের বেলায় লাইনে গ্যাস থাকে না। রাত ১২টার পর গ্যাস আসে, আবার ভোর হলেই গ্যাস শেষ হয়ে যায়। শীতের দিন গরমের দিন একই রকম গ্যাসের সমস্যা। আর রাতে গ্যাসের চুলা চালু দিলেও চালু দেয়ার আধা ঘণ্টা পর্যন্ত গ্যাসের পাইপ দিয়ে শুধু পানি আসে। এরপর গ্যাস আসে। এজন্য ওই এলাকার সবাই রাতে ঘুমানোর আগে চুলার সুইচ চালু করে রাখে। তিনি জানান, ইমনদের বাসায়ও চুলা চালু দিয়ে রেখেছিলা আর রান্নাঘরের দরজা জানালাও ছিল বন্ধ। ভোরে ইমনের দাদী নুরজাহান ঘুম থেকে উঠে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গিয়ে ম্যাচ জ্বালাতেই জমে থাকা গ্যাসে আগুন ধরে বিস্ফোরণ হয়।
তিনি আরও বলেন, রুমে ইমনের মা লিপী বেগম ও দেড় বছরের ছোট বোন ইকরাও ছিল। ঘরে আগুন লেগে যাওয়ায় ইমন তাদের দরজা দিয়ে না বের করে শাবল দিয়ে বারান্দার গ্রিল ভেঙে তার নিচ দিয়ে বের করেন। এজন্য তারা ২ জন দগ্ধ হয়নি। তবে তাদের বের করতে গিয়ে ইমন দগ্ধ হয়।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় পিক আওয়ারে গ্যাস না থাকায় অনেকে রাতে চুলার সুইচ চালু করে রাখে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটে আগুন লেগেছে। তবে অন্য কোন কারণ ছিল কিনা, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৫ ফল্গুন ১৪২৬, ২৩ জমাদিউল সানি ১৪৪১
প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জে বদ্ধ ঘরে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে ১ জন নিহত ও ৭ জন দগ্ধ হয়েছেন। গতকাল ভোর পাঁচটার দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের সাহেবপাড়ায় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ফারুক মিয়ার ৫তলা বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দগ্ধ হন ওই ফ্লাটের ভাড়াটিয়া কিরণ (৪৩), তার মা নুরজাহান (৬০), ভাই হীরণ (২৫) ও তার স্ত্রী মুক্তা (২০), মেয়ে লিমা (৩), আবুল হোসেন (২২), কাওসার (১৬) এবং আপন (১০)। এদের মধ্যে নূরজাহান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১১টার দিকে মারা যান।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, দগ্ধদের মধ্যে ইমনের শরীরের ৪৫ শতাংশ, কিরণের ৭০ শতাংশ, হিরনের ২২ শতাংশ, কাওসারের ২৫ শতাংশ, মুক্তার ১৫ শতাংশ, লিমার ১৪ শতাংশ, আপনের শরীরের ২০ শতাংশ এবং নুরজাহানের ১০০ শতাংশ দগ্ধ হয়। কিরণ ও তার ছেলে ইমনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের ২ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউটের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
আদমজী ইপিজেডের ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহজাহান জানান, ওই বাসায় গ্যাসের চুলা সারা রাত চালু থাকায় পুরো বাসায় গ্যাস জমে ছিল। সকালে চুলা জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে বাসায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পরিবারের শিশুসহ আটজন দগ্ধ হন।
দগ্ধ পরিবারের স্বজন ইলিয়াস হোসেন জানান, আক্রান্তদের দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
দগ্ধ নুরজাহান বেগমের মেয়ের জামাই মো. ইলিয়াস জানান, ইমনদের বাড়ি নরসিংদী শিবপুর উপজেলার কুমড়াদি গ্রামে। সাইনবোর্ডে ‘নরসিংদী গার্মেন্টস’ নামে একটি গেঞ্জির কারখানা আছে তাদের। আর ওই কারখানারই শো-রুম রাজধানীর গুলিস্তানের ‘ঢাকা ট্রেড সেন্টারের’ আন্ডারগ্রাউন্ডে। ইমন, তার বাবা কিরণ ও চাচা হিরন একই সঙ্গে ব্যবসা করে। সাহেবপাড়ায় থাকেও একই বাসায়।
হাসপাতালে তাদের সঙ্গে থাকা তাদেরই কারখানার কর্মচারী রাহেলা বেগম বলেন, আমি ওনাদের কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করি। থাকি ওই এলাকাতেই। ৬/৭ বছর ধরেই দেখছি ওই এলাকার কোন বাসাতেই দিনের বেলায় লাইনে গ্যাস থাকে না। রাত ১২টার পর গ্যাস আসে, আবার ভোর হলেই গ্যাস শেষ হয়ে যায়। শীতের দিন গরমের দিন একই রকম গ্যাসের সমস্যা। আর রাতে গ্যাসের চুলা চালু দিলেও চালু দেয়ার আধা ঘণ্টা পর্যন্ত গ্যাসের পাইপ দিয়ে শুধু পানি আসে। এরপর গ্যাস আসে। এজন্য ওই এলাকার সবাই রাতে ঘুমানোর আগে চুলার সুইচ চালু করে রাখে। তিনি জানান, ইমনদের বাসায়ও চুলা চালু দিয়ে রেখেছিলা আর রান্নাঘরের দরজা জানালাও ছিল বন্ধ। ভোরে ইমনের দাদী নুরজাহান ঘুম থেকে উঠে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গিয়ে ম্যাচ জ্বালাতেই জমে থাকা গ্যাসে আগুন ধরে বিস্ফোরণ হয়।
তিনি আরও বলেন, রুমে ইমনের মা লিপী বেগম ও দেড় বছরের ছোট বোন ইকরাও ছিল। ঘরে আগুন লেগে যাওয়ায় ইমন তাদের দরজা দিয়ে না বের করে শাবল দিয়ে বারান্দার গ্রিল ভেঙে তার নিচ দিয়ে বের করেন। এজন্য তারা ২ জন দগ্ধ হয়নি। তবে তাদের বের করতে গিয়ে ইমন দগ্ধ হয়।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় পিক আওয়ারে গ্যাস না থাকায় অনেকে রাতে চুলার সুইচ চালু করে রাখে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটে আগুন লেগেছে। তবে অন্য কোন কারণ ছিল কিনা, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।