রাজশাহী শহরের ৬৪ সিসি ক্যামেরার ৪৫টিই নষ্ট
অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও সার্বক্ষণিক নাগরিক নিরাপত্তার কথা ভেবে রাজশাহী মহানগরীতে ৬৪টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা লাগায় সিটি করপোরেশন। শহরের ৩০টি ওয়ার্ড ও ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এসব ক্যমেরা বসানো হয় ৫ বছর আগে। বর্তমানে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ৪৫টি ক্যামেরা। একসঙ্গে এতগুলো ক্যামেরা অকেজো হয়ে পড়ায় নিরাপত্তা নিয়ে উঠেছে সংশয়। অপরাধ সংঘটিত করে অপরাধীরা সহজেই পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। অনেকের মতে, দ্রুত ক্যামেরাগুলো মেরামত এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আরও ক্যামেরা স্থাপন না করা গেলে নগরীতে অপরাধ প্রবণতা কমানো কঠিন। তবে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন আগামী এক মাসের মধ্যেই এগুলো আবার সচল করা হবে। অন্যদিকে, নগরীর এসব ক্যামেরা আরও ঢেলে সাজানোর দাবি পুলিশের।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের দেয়া তথ্যমতে, নগরবাসীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ও মহানগর পুলিশের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৪-২০১৫ সালে নগরীতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। সে অনুযায়ী ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি পয়েন্টে ও ৩০টি ওয়ার্ডে লাগানো হয় সিসি ক্যামেরা। স্থাপিত এসব ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্য দেখার জন্য খোলা হয়েছিল একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এসব ক্যামেরা সরাসরি রাজশাহী মহানগর পুলিশ মনিটরিং করার কথা। এর মাধ্যমে তারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাও মনিটরিং করতেন। তবে, গত বছর রাজশাহী মহানগর পুলিশের প্রধান কার্যালয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় পুলিশ আর সরাসরি এটি মনিটরিং করে না। বর্তমানে মাত্র ১৯টি ক্যামেরা সচল রয়েছে।
সরেজমিন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্যামেরায় ভিডিও আসছে না। অনেক ক্যামেরা বন্ধ পড়ে আছে। নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র থেকে মোট ১৯টি ক্যামেরাতে দেখা মিলছে বিভিন্ন দৃশ্য। দুটি প্যানেলের মাধ্যমে ৬৪টি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর মধ্যে একটি প্যানেলে ৭টি এবং আরেকটিতে ১২টি ক্যামেরা সচল দেখা গেছে। এর মধ্যে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় ৩টি, গনকপাড়া তুলাপট্টি এলাকায় ৩টি, বিনোদপুর এলাকায় ৩টি, ভদ্রা মোড় এলাকায় ২টি, ঢাকা বাস টার্মিনাল এলাকায় একটি, কাশিয়াডাঙা এলাকায় ২টি ও শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় ৫টি ক্যামেরা চালু। বাকিগুলো বন্ধ।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানিয়া খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, এখন ১৯টি ক্যামেরা সচল রয়েছে। এছাড়া বাকিগুলো প্রায় দেড় মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, এগুলোর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন নতুন ভাবে এগুলোকে প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক সময় ঝড় ও বালির কারণে ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যায়।
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চাই এগুলো সচল থাকুক। আগে আমাদের কার্যালয়েই তাদের সার্ভার ছিল। এখন এটি তাদের আওতায় আছে। কোন তথ্যের দরকার হলে আমরা সিটি করপোরেশনে গিয়ে নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, সিটি মেয়রের সঙ্গে পুলিশ কমিশনারের কথা হয়েছে। সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে এগুলোকে আরও ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো থাকলে আমাদের অপরাধী শনাক্ত করতে খুব সহজ হবে। তিনি বলেন সিসি ক্যামেরা মামলা তদন্তে ভূমিকা রাখে। এর আগে অনেক মামলার আসামি গ্রেফতার হয়েছে সিসি ক্যামেরা দেখে। তবে সেগুলোর সব কয়টিই ছিল ব্যক্তিগত ক্যামেরার ছবি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, আমাদের প্রায় ২৩টির মতো ক্যামেরা এখন সচল রয়েছে। আর বাকিগুলো বন্ধ রয়েছে। এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। তারা আগামী দু’বছর এটি দেখভাল করবে। আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যেই এগুলো ঠিক করা হবে।
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৫ ফল্গুন ১৪২৬, ২৩ জমাদিউল সানি ১৪৪১
রাজশাহী শহরের ৬৪ সিসি ক্যামেরার ৪৫টিই নষ্ট
জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী
অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও সার্বক্ষণিক নাগরিক নিরাপত্তার কথা ভেবে রাজশাহী মহানগরীতে ৬৪টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা লাগায় সিটি করপোরেশন। শহরের ৩০টি ওয়ার্ড ও ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এসব ক্যমেরা বসানো হয় ৫ বছর আগে। বর্তমানে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ৪৫টি ক্যামেরা। একসঙ্গে এতগুলো ক্যামেরা অকেজো হয়ে পড়ায় নিরাপত্তা নিয়ে উঠেছে সংশয়। অপরাধ সংঘটিত করে অপরাধীরা সহজেই পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। অনেকের মতে, দ্রুত ক্যামেরাগুলো মেরামত এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আরও ক্যামেরা স্থাপন না করা গেলে নগরীতে অপরাধ প্রবণতা কমানো কঠিন। তবে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন আগামী এক মাসের মধ্যেই এগুলো আবার সচল করা হবে। অন্যদিকে, নগরীর এসব ক্যামেরা আরও ঢেলে সাজানোর দাবি পুলিশের।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের দেয়া তথ্যমতে, নগরবাসীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ও মহানগর পুলিশের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৪-২০১৫ সালে নগরীতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। সে অনুযায়ী ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি পয়েন্টে ও ৩০টি ওয়ার্ডে লাগানো হয় সিসি ক্যামেরা। স্থাপিত এসব ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্য দেখার জন্য খোলা হয়েছিল একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এসব ক্যামেরা সরাসরি রাজশাহী মহানগর পুলিশ মনিটরিং করার কথা। এর মাধ্যমে তারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাও মনিটরিং করতেন। তবে, গত বছর রাজশাহী মহানগর পুলিশের প্রধান কার্যালয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় পুলিশ আর সরাসরি এটি মনিটরিং করে না। বর্তমানে মাত্র ১৯টি ক্যামেরা সচল রয়েছে।
সরেজমিন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্যামেরায় ভিডিও আসছে না। অনেক ক্যামেরা বন্ধ পড়ে আছে। নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র থেকে মোট ১৯টি ক্যামেরাতে দেখা মিলছে বিভিন্ন দৃশ্য। দুটি প্যানেলের মাধ্যমে ৬৪টি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর মধ্যে একটি প্যানেলে ৭টি এবং আরেকটিতে ১২টি ক্যামেরা সচল দেখা গেছে। এর মধ্যে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় ৩টি, গনকপাড়া তুলাপট্টি এলাকায় ৩টি, বিনোদপুর এলাকায় ৩টি, ভদ্রা মোড় এলাকায় ২টি, ঢাকা বাস টার্মিনাল এলাকায় একটি, কাশিয়াডাঙা এলাকায় ২টি ও শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় ৫টি ক্যামেরা চালু। বাকিগুলো বন্ধ।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানিয়া খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, এখন ১৯টি ক্যামেরা সচল রয়েছে। এছাড়া বাকিগুলো প্রায় দেড় মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, এগুলোর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন নতুন ভাবে এগুলোকে প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক সময় ঝড় ও বালির কারণে ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যায়।
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চাই এগুলো সচল থাকুক। আগে আমাদের কার্যালয়েই তাদের সার্ভার ছিল। এখন এটি তাদের আওতায় আছে। কোন তথ্যের দরকার হলে আমরা সিটি করপোরেশনে গিয়ে নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, সিটি মেয়রের সঙ্গে পুলিশ কমিশনারের কথা হয়েছে। সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে এগুলোকে আরও ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো থাকলে আমাদের অপরাধী শনাক্ত করতে খুব সহজ হবে। তিনি বলেন সিসি ক্যামেরা মামলা তদন্তে ভূমিকা রাখে। এর আগে অনেক মামলার আসামি গ্রেফতার হয়েছে সিসি ক্যামেরা দেখে। তবে সেগুলোর সব কয়টিই ছিল ব্যক্তিগত ক্যামেরার ছবি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, আমাদের প্রায় ২৩টির মতো ক্যামেরা এখন সচল রয়েছে। আর বাকিগুলো বন্ধ রয়েছে। এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। তারা আগামী দু’বছর এটি দেখভাল করবে। আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যেই এগুলো ঠিক করা হবে।