সামসুজ্জামান
গত ১১ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ‘সংবাদ’-এ একটি সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যে সংবাদটি পড়লে যে কোন দেশপ্রেমিক বাঙালির মন দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠবে। ছবিতে অশীতিপর এক বৃদ্ধ, মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা পাকা দাড়ি, চুল একটিও কালো নেই, উদাস দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন যেন কারো প্রতীক্ষায়। আজকের এই বৃদ্ধই ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের লড়াকু সৈনিক ছিলেন। ভাষার জন্যে বুকের তাজা রক্ত দিতে সব সময় থেকেছেন মিছিলের অগ্রভাগে। জেল খেটেছেন অনেক বছর। ভাষা আন্দোলনের ফেরারি আসামি হয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন। ’৬৬-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণআন্দোলনের তুখোড় এই নেতা ’৭০-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সবার জামানত বাতিল করে পাকিস্তান জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমএনএ নির্বাচিত হন।
ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার এই লড়াকু সৈনিক খন্দকার আবদুল মালেক খন্দকার (৮৬) রণাঙ্গনে পরাজিত না হলেও জীবন সংগ্রামে আজ তিনি পরাস্ত। গত ১৩ ডিসেম্বর স্ট্রোক করার পর থেকে তিনি শয্যাশায়ী। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। সারা জীবন সততা আর আদর্শ ধরে রেখে মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে যাওয়া এই তারকা রাজনৈতিক নেতার জীবন কাটছে আজ নিঃসঙ্গভাবে। চরম অসুস্থতা নিয়ে অনেকটাই একাকিত্বে বিছানায় শুয়ে। কেউ তার খবর নেন না। আবার অনেকে সাহায্য দেয়ার ভয়ে খবর রাখার চেষ্টাও করেন না। তিনি এখন স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারেন না, কানেও শুনতে পান না। কাউকে দেখলে কিছু সময় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গোপন তালিকার ভিত্তিতে তাকে সংগঠকের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি সঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করেন। সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে তিনি সবার কাছে মিষ্টভাষী এবং অত্যান্ত প্রিয় ছিলেন। আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুর খুব আদরের ছিলেন। তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহের জেলা আওয়ামী লীগের সৈয়দ নজরুল ইসলামের কমিটিতে তিনি সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তান পার্লামেন্টে তিনি কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিল তার নিবিড় সম্পর্ক। তার বাসায় অবাধ যাতায়াত ছিল খন্দকার সাহেবের। বঙ্গবন্ধুর এতটাই কাছের মানুষ ছিলেন তিনি যে, বঙ্গবন্ধু তাকে আদর করে ‘আমার প্রিয় মালেক’ বলে ডাকতেন। তার অসংখ্য রাজনৈতিক শিষ্য রয়েছে। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাকে জেলে পাঠানো হয়। রাজনৈতিক জীবনে তাকে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। তিনি মুক্তাগাছা পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন।
সারাজীবন নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কল্যাণের জন্যে রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি পৈতৃক অনেক সহায়-সম্পত্তি হারিয়েছেন। সংসারের কথা কখনও ভাবেননি এই মানুষটি। তার স্ত্রী সুরাইয়া মালেক জানান, ব্যাংক ব্যালান্স বলে তার কোনো আমানত নেই। তাইতো জীবনের শেষপ্রান্তে অসুস্থ অবস্থায় তিনি আজ বড় অসহায়। মুক্তিযোদ্ধা কোটার সামান্য টাকায় কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে চলছে তার সংসার। চিকিৎসা করবার মতো ন্যূনতম অবস্থাও নেই তার। অথচ হয়ত তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারলে বাকি জীবনটুকু সুস্থ অবস্থায় কাটাতে পারতেন।
মুক্তাগাছা সদরের নন্দীপাড়ার ঐতিহ্যবাহী খন্দকার বাড়িটি মালেক সাহেবের আবাসস্থল। কিন্তু টিনের বাড়িটি এতটাই জরাজীর্ণ হয়েছে যে, বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে গেছে। তার দুই পুত্রের একজন একটি বেসরকারি সংস্থায় স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। ছোট ছেলে ছোটখাটো ব্যবসা করেন। বাড়ি মেরামত করবার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। মালেক সাহেব মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ছেলেদের চাকরির ব্যাপারে কোনোদিন কিছু বলেননি। কেউ তার খবরও নেয়নি। বর্তমানে তিনি পার্শ্ববর্তী তার বোনের বাসায় রয়েছেন।
আমরা কত অকৃতজ্ঞ এমন একজন দেশপ্রেমিক, ভাষাপ্রেমিক লড়াকু সৈনিকের এমন দুঃসময়েও তার পাশে দাঁড়াচ্ছি না। সরকার হয়ত এ শয্যাশায়ী সূর্যসন্তানের খবরও রাখেন না। অথচ তার হাতের গর্জে উঠা অস্ত্রের আঘাত এনেছে আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সমর ক্ষেত্রের যোদ্ধা।
সরকারের মুক্তিবিষয়ক একটি হাতিসম মন্ত্রণালয় আছে। যাদের মূল কাজ মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর সুবিধা-অসুবিধার কথা সরকারকে অবহিত করা। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নে আমরা তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে আরো বেশি অবহিত হয়েছি। তারা যে কোন জেলায় বা কোন থানায় কতজন মুক্তিযোদ্ধা আছে- হয়ত সে তালিকাও দেখাতে ব্যর্থ হবেন।
যাই হোক, খন্দকার আবদুল মালেক আমাদের সম্পদ নিঃসন্দেহে। সেই আলোকে তাকে বাঁচানো খুবই জরুরি। মুক্তগাছা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদনসহ তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি চলছে। এই মাসেরই একজন লড়াকু সৈনিক আজ মৃত্যুর প্রহর গুনছেন; যা ভাবতে আমাদের অবাক লাগে। ২১ ফেব্রুয়ারি আগত। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, এই মুমূর্ষু সৈনিককে এই মাসেই বাঁচানোর চেষ্টা করা হোক। আশা করি এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্বাধীনতা আজ প্রায় অর্ধশতক হলো বাস্তবায়িত হয়েছে। তার প্রাণপ্রিয় সংগঠন আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। অথচ তার হাতে গড়া একজন সৈনিক যিনি ভাষা আন্দোলন থেকে দেশ স্বধীন হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনে লড়াকু ভূমিকা রেখেছেন; তার আজ এ কী করুণ পরিণতি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতার সামান্য টাকায় যেখানে তার সংসার চালানো দায়, সেখানে তার চিকিৎসা চালানো আকাশ-কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা নয়ছয় হয়ে যাচ্ছে বিভিন্নভাবে। আর তা ধরা পড়েও ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে অদৃশ্য কারণে। অথচ জাতির জনকের দেয়া উপাধি ‘জাতির সূর্যসৈনিক’ আজ বিনা চিকিৎসায় উদাস চোখে চেয়ে আছেন আর মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। রাষ্ট্রের কি তার জন্যে কিছু করার নেই? না তা সরকারি নিয়ম নীতির বহির্ভূত।
বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান জাতির জনকের কন্যা অত্যন্ত দয়াশীল। তিনি মানুষের দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়ান। এটা তার রক্তের ধারা। যেমনটি বঙ্গবন্ধুর ছিল। আমরা আশা করব, বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সহচর খন্দকার আবদুল মালেক তার সহানুভূতি পাবেন।
[লেখক : কলামিস্ট]
shamsuzzaman07@gmail.com
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৫ ফল্গুন ১৪২৬, ২৩ জমাদিউল সানি ১৪৪১
সামসুজ্জামান
গত ১১ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ‘সংবাদ’-এ একটি সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যে সংবাদটি পড়লে যে কোন দেশপ্রেমিক বাঙালির মন দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠবে। ছবিতে অশীতিপর এক বৃদ্ধ, মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা পাকা দাড়ি, চুল একটিও কালো নেই, উদাস দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন যেন কারো প্রতীক্ষায়। আজকের এই বৃদ্ধই ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের লড়াকু সৈনিক ছিলেন। ভাষার জন্যে বুকের তাজা রক্ত দিতে সব সময় থেকেছেন মিছিলের অগ্রভাগে। জেল খেটেছেন অনেক বছর। ভাষা আন্দোলনের ফেরারি আসামি হয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন। ’৬৬-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণআন্দোলনের তুখোড় এই নেতা ’৭০-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সবার জামানত বাতিল করে পাকিস্তান জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমএনএ নির্বাচিত হন।
ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার এই লড়াকু সৈনিক খন্দকার আবদুল মালেক খন্দকার (৮৬) রণাঙ্গনে পরাজিত না হলেও জীবন সংগ্রামে আজ তিনি পরাস্ত। গত ১৩ ডিসেম্বর স্ট্রোক করার পর থেকে তিনি শয্যাশায়ী। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। সারা জীবন সততা আর আদর্শ ধরে রেখে মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে যাওয়া এই তারকা রাজনৈতিক নেতার জীবন কাটছে আজ নিঃসঙ্গভাবে। চরম অসুস্থতা নিয়ে অনেকটাই একাকিত্বে বিছানায় শুয়ে। কেউ তার খবর নেন না। আবার অনেকে সাহায্য দেয়ার ভয়ে খবর রাখার চেষ্টাও করেন না। তিনি এখন স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারেন না, কানেও শুনতে পান না। কাউকে দেখলে কিছু সময় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গোপন তালিকার ভিত্তিতে তাকে সংগঠকের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি সঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করেন। সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে তিনি সবার কাছে মিষ্টভাষী এবং অত্যান্ত প্রিয় ছিলেন। আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুর খুব আদরের ছিলেন। তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহের জেলা আওয়ামী লীগের সৈয়দ নজরুল ইসলামের কমিটিতে তিনি সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তান পার্লামেন্টে তিনি কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিল তার নিবিড় সম্পর্ক। তার বাসায় অবাধ যাতায়াত ছিল খন্দকার সাহেবের। বঙ্গবন্ধুর এতটাই কাছের মানুষ ছিলেন তিনি যে, বঙ্গবন্ধু তাকে আদর করে ‘আমার প্রিয় মালেক’ বলে ডাকতেন। তার অসংখ্য রাজনৈতিক শিষ্য রয়েছে। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাকে জেলে পাঠানো হয়। রাজনৈতিক জীবনে তাকে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। তিনি মুক্তাগাছা পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন।
সারাজীবন নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কল্যাণের জন্যে রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি পৈতৃক অনেক সহায়-সম্পত্তি হারিয়েছেন। সংসারের কথা কখনও ভাবেননি এই মানুষটি। তার স্ত্রী সুরাইয়া মালেক জানান, ব্যাংক ব্যালান্স বলে তার কোনো আমানত নেই। তাইতো জীবনের শেষপ্রান্তে অসুস্থ অবস্থায় তিনি আজ বড় অসহায়। মুক্তিযোদ্ধা কোটার সামান্য টাকায় কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে চলছে তার সংসার। চিকিৎসা করবার মতো ন্যূনতম অবস্থাও নেই তার। অথচ হয়ত তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারলে বাকি জীবনটুকু সুস্থ অবস্থায় কাটাতে পারতেন।
মুক্তাগাছা সদরের নন্দীপাড়ার ঐতিহ্যবাহী খন্দকার বাড়িটি মালেক সাহেবের আবাসস্থল। কিন্তু টিনের বাড়িটি এতটাই জরাজীর্ণ হয়েছে যে, বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে গেছে। তার দুই পুত্রের একজন একটি বেসরকারি সংস্থায় স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। ছোট ছেলে ছোটখাটো ব্যবসা করেন। বাড়ি মেরামত করবার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। মালেক সাহেব মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ছেলেদের চাকরির ব্যাপারে কোনোদিন কিছু বলেননি। কেউ তার খবরও নেয়নি। বর্তমানে তিনি পার্শ্ববর্তী তার বোনের বাসায় রয়েছেন।
আমরা কত অকৃতজ্ঞ এমন একজন দেশপ্রেমিক, ভাষাপ্রেমিক লড়াকু সৈনিকের এমন দুঃসময়েও তার পাশে দাঁড়াচ্ছি না। সরকার হয়ত এ শয্যাশায়ী সূর্যসন্তানের খবরও রাখেন না। অথচ তার হাতের গর্জে উঠা অস্ত্রের আঘাত এনেছে আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সমর ক্ষেত্রের যোদ্ধা।
সরকারের মুক্তিবিষয়ক একটি হাতিসম মন্ত্রণালয় আছে। যাদের মূল কাজ মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর সুবিধা-অসুবিধার কথা সরকারকে অবহিত করা। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নে আমরা তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে আরো বেশি অবহিত হয়েছি। তারা যে কোন জেলায় বা কোন থানায় কতজন মুক্তিযোদ্ধা আছে- হয়ত সে তালিকাও দেখাতে ব্যর্থ হবেন।
যাই হোক, খন্দকার আবদুল মালেক আমাদের সম্পদ নিঃসন্দেহে। সেই আলোকে তাকে বাঁচানো খুবই জরুরি। মুক্তগাছা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদনসহ তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি চলছে। এই মাসেরই একজন লড়াকু সৈনিক আজ মৃত্যুর প্রহর গুনছেন; যা ভাবতে আমাদের অবাক লাগে। ২১ ফেব্রুয়ারি আগত। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, এই মুমূর্ষু সৈনিককে এই মাসেই বাঁচানোর চেষ্টা করা হোক। আশা করি এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্বাধীনতা আজ প্রায় অর্ধশতক হলো বাস্তবায়িত হয়েছে। তার প্রাণপ্রিয় সংগঠন আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। অথচ তার হাতে গড়া একজন সৈনিক যিনি ভাষা আন্দোলন থেকে দেশ স্বধীন হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনে লড়াকু ভূমিকা রেখেছেন; তার আজ এ কী করুণ পরিণতি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতার সামান্য টাকায় যেখানে তার সংসার চালানো দায়, সেখানে তার চিকিৎসা চালানো আকাশ-কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা নয়ছয় হয়ে যাচ্ছে বিভিন্নভাবে। আর তা ধরা পড়েও ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে অদৃশ্য কারণে। অথচ জাতির জনকের দেয়া উপাধি ‘জাতির সূর্যসৈনিক’ আজ বিনা চিকিৎসায় উদাস চোখে চেয়ে আছেন আর মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। রাষ্ট্রের কি তার জন্যে কিছু করার নেই? না তা সরকারি নিয়ম নীতির বহির্ভূত।
বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান জাতির জনকের কন্যা অত্যন্ত দয়াশীল। তিনি মানুষের দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়ান। এটা তার রক্তের ধারা। যেমনটি বঙ্গবন্ধুর ছিল। আমরা আশা করব, বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সহচর খন্দকার আবদুল মালেক তার সহানুভূতি পাবেন।
[লেখক : কলামিস্ট]
shamsuzzaman07@gmail.com