ঢাকার চারপাশে

১১০ কিলোমিটার নৌপথ দশ বছরেও উদ্ধার হয়নি

ময়লা-আবর্জনা ও দখল-দূষণে বিলীন হচ্ছে ঢাকার চারপাশের ১১০ কিলোমিটার সার্কুলার নৌপথ। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু ও ধলেশ^রী এই ৫টি নদীর ১১০ কিলোমিটার নৌপথ। রাজধানীর যানজট কমাতে ঢাকার চারপাশের নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের বৃত্তাকার নৌপথ চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয় ২০০০ সালে। ১০ বছরেও উদ্ধার হয়নি নৌপথটি। ৫টি নদীর তীরে প্রায় ২ শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান ও অর্ধশত বাজারসহ ১০ হাজার অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫ হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া ৫০০ মেট্রিক টন ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে বলে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়। কিন্তু নদীর পানি দূষণমুক্ত করতে ঢাকার চারপাশের ১৮৭টি বর্জ্য উৎসমুখ বন্ধ হয়নি। এছাড়া এই নৌপথের ওপরে নির্মিত ১৩টি নিচু উচ্চতার সড়ক ও রেলসেতু অপসারণ করা হয়নি। ঢাকার চারপাশের নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য ২০০৯ সালে আদালত নির্দেশ দেন। কিন্তু ১১ বছরে ৫ নদী সীমানা নির্ধারণ করতে পারেনি নৌ-মন্ত্রণালয়। অথচ নদীর দুই তীরে ওয়াকওয়ে ও ইকোপার্ক নির্মাণে ব্যয় করা হচ্ছে সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা। কিন্তু নদীর পানি দূষণমুক্ত করার কোন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

আদালতের নির্দেশ : ঢাকার চারদিকের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, ধলেশ^রী ও শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য ২০০৯ সালে আদালত নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনার আলোকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পিডব্লিউডি ২০১১ সাল থেকে নদীর পাড় সীমানা পিলার স্থাপন করা শুরু হয়। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৪৩টি পিলার স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু ৫ বছরে ৪ হাজার ৬৩টি পিলার স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ৩৬টি পিলার স্থাপন করার কথা বলা হলেও তা পাওয়া যায়নি। তাই মোট ৪ হাজার ২৭টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও ধলেশ^রীতে। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে ২১টি মৌজায় ১ হাজার ৮টি, তুরাগ নদের পাড়ে ৩৫টি মৌজায় ২ হাজার ১৪টি, বালু নদীর পাড়ে ১৮টি মৌজায় ৫৮৯টি ও ধলেশ^রী নদীর পাড়ে ৪টি মৌজায় ৪১৬টি পিলার স্থাপন করা হয়। বুঝে নেয়া এসব পিলারের মধ্যে ৮৯৪টি পিলারের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। এতে ২৬৪টি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাঙা পাওয়া গেছে। এছাড়া পিলার স্থাপনের কথা বলা হলেও সরেজমিন দৃশ্যমান পাওয়া যায়নি ২০৮ পিলার। আর ৪২২টি পিলার সঠিক স্থানে স্থাপন করা হয়নি বলে নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)’র সূত্র জানায়।

পরিবেশবিদদের অভিমত :

এ বিষয়ে বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল মতিন সংবাদকে বলেন, ঢাকার চারপাশের নদী দখল ও দূষণ রোধে হাইকোর্টে নির্দেশনা অনুয়াযী কাজ করলেই সম্ভব। আদালত বলেছেন নদী কমিশনকে শক্তিশালী করা। সরকার আন্তরিক হলে অনেক কিছু সম্ভব। নদী রক্ষা টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু টাস্কফোর্সের অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। নদী সিমানা পিলার বসানো নিয়ে অনেক আপত্তি রয়েছে। তা সামাধানে আবার নতুন করে সীমানা পিলার স্থাপন করা হচ্ছে। নদী রক্ষায় এই আগে ২০০৯ হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। সরকার এই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করলে অনেক কিছু সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। নদী রক্ষা কমিশনকে সবাই নিয়ে কাজ করতে হবে।

জানা গেছে, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রতিদিনের গৃহস্থালি ময়লা ও আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা নদীতে। পাশাপাশি নদী ও দূষণের কারণে ঢাকার চারপাশের ৫টি নদীর ১১০ কিলোমিটার সার্কুলার নৌপথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এই নৌপথ উদ্ধারে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও কাজ হচ্ছে না। দূষিত পানি ও ময়লা-আবর্জনায় কালো রঙ ধারণ করেছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু ও ধলেশ^রী নদী। ঢাকার চারপাশে বুড়িগঙ্গা ৮ কিলোমিটার, তুরাগ ৪২ কিলোমিটার, বালু ২৭ কিলোমিটার, ধলেশ^রী ১২ কিলোমিটার ও শীতলক্ষ্যা ২১ কিলোমিটার অতিক্রম করেছে। রাজধানীর যানজট কমাতে ঢাকার চারপাশের নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের বৃত্তকার নৌপথ খননের প্রকল্প নেয়া হয় ২০০০ সালে। দুই দফা খনন কাজ শেষে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয় এই প্রকল্পের কাজ। ৯০ দশমিক ৪৪ কোটি ব্যয়ে ১১০ কিলোমিটার নৌপথ খনন করে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। কিন্তু রাজধানীর চারপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীর অবৈধ দখল ও দূষণের কারণে আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে এই নৌপথটি।

নদীর ওপর নিচু উচ্চতার ১৩ সেতু :

নদীর ওপরে নির্মিত সড়ক ও রেলপথে ১৩টি সেতুর উচ্চতা কম থাকায় এর নিচ দিয়ে পণ্য ও যাত্রীবাহী কোন নৌযান চলাচল করতে পারে না। বৃত্তাকার এই নৌপথের মধ্যে ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ-সদরঘাট পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার হলো দ্বিতীয় শ্রেণীর নৌপথ। এছাড়া সদরঘাট-মিরপুর-টঙ্গী-ডেমরা পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার হলো তৃতীয় শ্রেণীর নৌপথ। এই তৃতীয় শ্রেণীর নৌপথের ওপর বিদ্যমান সড়ক ও রেলপথে মোট ১৫টি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি সেতুর উচ্চতা নদীর পানির স্তর থেকে খুবই কম। এই সেতুগুলোর মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)’র ৪টি, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরের (এলজিইডি) ৪টি ও রেলওয়ে ২টি সেতু রয়েছে বলে অভ্যন্তরীণ নৌ-কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়।

বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত নদীর ওপর সেতু নির্মাণের স্ট্যান্ডার্ড মান অনুযায়ী ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স (স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ) থেকে ২৫ ফুট বা ৭ দশমিক ৬২ মিটার এবং হরাইজন্টাল ক্লিয়ারেন্স ১০০ ফুট বা ৩০ দশমিক ৪৮ মিটার হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু রাজধানীর চারপাশের নদী তুরাগ, টঙ্গী খাল ও বালু নদীর ওপর নির্মিত সেতুগুলো স্ট্যান্ডার্ড হাই ওয়াটার লেভেল (এসএইচডাব্লিউএল) ২৩-২৪ ফুটের বেশি না। কোন কোন সেতুর উচ্চতা এর চেয়ে অনেক কম। এর মধ্যে সওজ’র সেতুগুলো হলো-আবদুল্লাহপুর থেকে ইপিজেড সড়কে নির্মিত আশুলিয়া ব্রিজের ভার্টিক্যাল মাত্র ৩ ফুট এবং হরাইজন্টাল হলো ৩৮ ফুট। যা স্ট্যান্ডার্ড মান থেকে ২২ ফুট কম। একইভাবে তুরাগ নদে নির্মিত কামারপাড়া ব্রিজের ভার্টিক্যাল ৮ ফুট, টঙ্গী সড়কের পশ্চিম পাশের ব্রিজের ভার্টিক্যাল ১০ ফুট ৬ ইঞ্চ, টঙ্গী সড়কের পূর্ব পাশের সেতুর ভার্টিক্যাল ১০ ফুট ৬ ইঞ্চি। রেলওয়ের দুই সেতু হলো- টঙ্গী রেলসেতু-১ ভার্টিক্যাল ৬ ফুট, টঙ্গী রেলসেতু-২ ভার্টিক্যাল ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। এলজিইডি সেতু হলো- টঙ্গী খালের ওপর নির্মিত প্রত্যাশা ব্রিজের উচ্চতা ৮ ফুট, বালু নদীর ওপর নির্মিত ত্রি-মুখী সেতু ভার্টিক্যাল ১৩ ফুট, ইছাপুরা সেতু ভার্টিক্যাল ১১ ফুট ও ডেমরা সেতুর ভার্টিক্যাল ১২ ফুট। এই সেতুগুলো নদীর পানির স্তর থেকে স্ট্যান্ডার্ড মান (হাই ওয়াটার লেভেল) অনেক কম। তাই ২০১০ সালে সেতুগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে পুনর্নির্মাণের সুপারিশক করেন নৌ-মন্ত্রণালয়ের একটি উপ-কমিটি। কিন্তু ১০ বছর অতিক্রম হলেও এই সুপারিশের কোন বাস্তবায়ন নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

আইডিইবি’র নদী দূষণে ১৮৭টি বর্জ্যরে উৎসমুখ চিহ্নিত :

ঢাকার চারদিকে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীর দূষণ রোধে ১৮৭টি বর্জ্যরে উৎসমুখ চিহ্নিত করেছিল ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)। আইডিইবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার চার নদী শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু ও বুড়িগঙ্গার অবস্থা শোচনীয়। নদীর তীরে গড়ে ওঠা প্রভাবশালীদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। নদী ব্যবহৃত হচ্ছে আবর্জনার ভাগাড় হিসেবে। অবাধে বর্জ্য ফেলতে পাকা ড্রেন, পাইপ ও সারফেস ড্রেন পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে। আরও কয়েক হাজার ব্যক্তি চোরা পাইপ ও উন্মুক্তভাবে নদী দূষণ করছে। ফলে পানির রং পরিবর্তন হয়ে কোথাও কালো, কোথাও লাল-নীল আকার ধারণ করেছে। পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। দূষণের মাত্রা এতই ভয়াবহ যে, শুষ্ক মৌসুমে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের অক্সিজেনের মাত্রা শূন্যের কোঠায় পৌঁছায়। চার নদী দূষণের ৩০০টি উৎস চিহ্নিত করেছে আইডিইবি। এতে দূষণের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে ঢাকা ওয়াসা, হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, ট্যানারি, সিমেন্ট কারখানা, ডকইয়ার্ড, গার্মেন্ট কারখানা ও ঢাকার দুই সিটি কপোরেশন।

আইডিইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুড়িগঙ্গা দূষণ করছে দুই তীরে গড়ে ওঠা গার্মেন্ট, ডকইয়ার্ড, হাসপাতাল, লঞ্চ থেকে ফেলা বর্র্জ্য এবং পোড়া জ্বালানি তেল। সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত দূষণের উৎসমুখ ১০৭টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গাবতলী গরুর হাট, আপেল এন্টারপ্রাইজ, বেস টেক লিমিটেড, শাহ সিমেন্ট, এনডিএ, পূর্বাশা কাঁচাবাজার, ট্যানারি, ঢাকা ওয়াসা ও মিটফোর্ড হাসপাতাল। সদরঘাট থেকে ফতুল্লা বিজি মাউথ পর্যন্ত ৫৭ উৎসমুখ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ওয়াসা ২২টি উৎসমুখ থেকে পানি ও বর্জ্য ফেলছে। শীতলক্ষ্যা নদীর সৈয়দপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের মুড়াপাড়া পর্যন্ত ৭০টি উৎসমুখ থেকে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে এসডি ফ্লাওয়ার মিল, সৈয়দপুরে পূবালী সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ, মুুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে প্রিমিয়াম সিমেন্ট, শাহ সিমেন্ট, মেট্রোপলিটন সিমেন্ট, লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিল, র‌্যাক্স নিটওয়্যার, অলরাউন্ড নিটওয়্যার, সোহাগপুর টেক্সটাইল মিলস, প্রীতম ফ্যাশন, ইব্রাহিম টেক্সটাইল, আদমজী ইপিজেড, স্টার পার্টিকেল বোর্ড, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ, কাঁচপুর ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, ডেমরার বেঙ্গল প্যাকেজেস ও মীর সিমেন্ট উল্লেখযোগ্য। এসব প্রতিষ্ঠান ড্রেন ও পাইপের মাধ্যমে শিল্প এবং প্রতিদিনের বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে নদী দূষণ করছে। ৮৭টি উৎসমুখ দিয়ে সারফেস ড্রেন, পাইপ ও অন্যান্য মাধ্যমে তুরাগ নদ দূষণ করছে কামারপাড়ায় কংক্রিট রেডি মিক্স, নিশাদনগরে ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, টঙ্গী বাজার, বেঙ্গল ডাইং অ্যান্ড নিটিং, আইচি হাসপাতাল, আজমিরী গার্মেন্ট, বিসিক, ঢাকা ডাইং, মার্চেন্ট ডাইং, মেহমুদ হোসেন ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড, সার্ফ ফিটিং ওয়াশিং প্ল্যান্ট ও প্যারাডাইস ওয়াশিং প্ল্যান্ট। কিন্তু ঢাকার চারদিকে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীর দূষণ রোধে ১৮৭টি বর্জ্যরে উৎসমুখ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়।

সম্প্রতি তুরাগ নদের তেরমুখ পয়েন্ট ও টঙ্গী হতে ঢাকা উদ্যান পর্যন্ত উচ্ছেদ পরবর্তী চলমান প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে নৌ-মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আবদুস সামাদ সাংবাদিকদের বলেন, ময়রা-আবর্জনা ফেলে নদীকে দূষিত ও দখল করা হচ্ছে। টঙ্গী রেল ব্রিজের নীচে বর্জ্য জমে নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়েছে। তাই দ্রুত বর্জ্য অপসারণসহ বর্জ্য নিক্ষেপকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ। এছাড়া স্থায়ী টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গ্রহণের জন্য তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করেন।

image

আবর্জনা দখলে দূষণে তুরাগ নদী বিলীন হতে চলেছে -সংবাদ

আরও খবর
আ-মরি বাংলা ভাষা
আর ২৬ দিন
করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়াবেন না

বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৬ ফল্গুন ১৪২৬, ২৪ জমাদিউল সানি ১৪৪১

ঢাকার চারপাশে

১১০ কিলোমিটার নৌপথ দশ বছরেও উদ্ধার হয়নি

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

আবর্জনা দখলে দূষণে তুরাগ নদী বিলীন হতে চলেছে -সংবাদ

ময়লা-আবর্জনা ও দখল-দূষণে বিলীন হচ্ছে ঢাকার চারপাশের ১১০ কিলোমিটার সার্কুলার নৌপথ। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু ও ধলেশ^রী এই ৫টি নদীর ১১০ কিলোমিটার নৌপথ। রাজধানীর যানজট কমাতে ঢাকার চারপাশের নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের বৃত্তাকার নৌপথ চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয় ২০০০ সালে। ১০ বছরেও উদ্ধার হয়নি নৌপথটি। ৫টি নদীর তীরে প্রায় ২ শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান ও অর্ধশত বাজারসহ ১০ হাজার অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫ হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া ৫০০ মেট্রিক টন ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে বলে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়। কিন্তু নদীর পানি দূষণমুক্ত করতে ঢাকার চারপাশের ১৮৭টি বর্জ্য উৎসমুখ বন্ধ হয়নি। এছাড়া এই নৌপথের ওপরে নির্মিত ১৩টি নিচু উচ্চতার সড়ক ও রেলসেতু অপসারণ করা হয়নি। ঢাকার চারপাশের নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য ২০০৯ সালে আদালত নির্দেশ দেন। কিন্তু ১১ বছরে ৫ নদী সীমানা নির্ধারণ করতে পারেনি নৌ-মন্ত্রণালয়। অথচ নদীর দুই তীরে ওয়াকওয়ে ও ইকোপার্ক নির্মাণে ব্যয় করা হচ্ছে সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা। কিন্তু নদীর পানি দূষণমুক্ত করার কোন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

আদালতের নির্দেশ : ঢাকার চারদিকের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, ধলেশ^রী ও শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য ২০০৯ সালে আদালত নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনার আলোকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পিডব্লিউডি ২০১১ সাল থেকে নদীর পাড় সীমানা পিলার স্থাপন করা শুরু হয়। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৪৩টি পিলার স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু ৫ বছরে ৪ হাজার ৬৩টি পিলার স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ৩৬টি পিলার স্থাপন করার কথা বলা হলেও তা পাওয়া যায়নি। তাই মোট ৪ হাজার ২৭টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও ধলেশ^রীতে। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে ২১টি মৌজায় ১ হাজার ৮টি, তুরাগ নদের পাড়ে ৩৫টি মৌজায় ২ হাজার ১৪টি, বালু নদীর পাড়ে ১৮টি মৌজায় ৫৮৯টি ও ধলেশ^রী নদীর পাড়ে ৪টি মৌজায় ৪১৬টি পিলার স্থাপন করা হয়। বুঝে নেয়া এসব পিলারের মধ্যে ৮৯৪টি পিলারের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। এতে ২৬৪টি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাঙা পাওয়া গেছে। এছাড়া পিলার স্থাপনের কথা বলা হলেও সরেজমিন দৃশ্যমান পাওয়া যায়নি ২০৮ পিলার। আর ৪২২টি পিলার সঠিক স্থানে স্থাপন করা হয়নি বলে নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)’র সূত্র জানায়।

পরিবেশবিদদের অভিমত :

এ বিষয়ে বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল মতিন সংবাদকে বলেন, ঢাকার চারপাশের নদী দখল ও দূষণ রোধে হাইকোর্টে নির্দেশনা অনুয়াযী কাজ করলেই সম্ভব। আদালত বলেছেন নদী কমিশনকে শক্তিশালী করা। সরকার আন্তরিক হলে অনেক কিছু সম্ভব। নদী রক্ষা টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু টাস্কফোর্সের অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। নদী সিমানা পিলার বসানো নিয়ে অনেক আপত্তি রয়েছে। তা সামাধানে আবার নতুন করে সীমানা পিলার স্থাপন করা হচ্ছে। নদী রক্ষায় এই আগে ২০০৯ হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। সরকার এই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করলে অনেক কিছু সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। নদী রক্ষা কমিশনকে সবাই নিয়ে কাজ করতে হবে।

জানা গেছে, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রতিদিনের গৃহস্থালি ময়লা ও আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা নদীতে। পাশাপাশি নদী ও দূষণের কারণে ঢাকার চারপাশের ৫টি নদীর ১১০ কিলোমিটার সার্কুলার নৌপথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এই নৌপথ উদ্ধারে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও কাজ হচ্ছে না। দূষিত পানি ও ময়লা-আবর্জনায় কালো রঙ ধারণ করেছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু ও ধলেশ^রী নদী। ঢাকার চারপাশে বুড়িগঙ্গা ৮ কিলোমিটার, তুরাগ ৪২ কিলোমিটার, বালু ২৭ কিলোমিটার, ধলেশ^রী ১২ কিলোমিটার ও শীতলক্ষ্যা ২১ কিলোমিটার অতিক্রম করেছে। রাজধানীর যানজট কমাতে ঢাকার চারপাশের নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের বৃত্তকার নৌপথ খননের প্রকল্প নেয়া হয় ২০০০ সালে। দুই দফা খনন কাজ শেষে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয় এই প্রকল্পের কাজ। ৯০ দশমিক ৪৪ কোটি ব্যয়ে ১১০ কিলোমিটার নৌপথ খনন করে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। কিন্তু রাজধানীর চারপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীর অবৈধ দখল ও দূষণের কারণে আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে এই নৌপথটি।

নদীর ওপর নিচু উচ্চতার ১৩ সেতু :

নদীর ওপরে নির্মিত সড়ক ও রেলপথে ১৩টি সেতুর উচ্চতা কম থাকায় এর নিচ দিয়ে পণ্য ও যাত্রীবাহী কোন নৌযান চলাচল করতে পারে না। বৃত্তাকার এই নৌপথের মধ্যে ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ-সদরঘাট পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার হলো দ্বিতীয় শ্রেণীর নৌপথ। এছাড়া সদরঘাট-মিরপুর-টঙ্গী-ডেমরা পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার হলো তৃতীয় শ্রেণীর নৌপথ। এই তৃতীয় শ্রেণীর নৌপথের ওপর বিদ্যমান সড়ক ও রেলপথে মোট ১৫টি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি সেতুর উচ্চতা নদীর পানির স্তর থেকে খুবই কম। এই সেতুগুলোর মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)’র ৪টি, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরের (এলজিইডি) ৪টি ও রেলওয়ে ২টি সেতু রয়েছে বলে অভ্যন্তরীণ নৌ-কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়।

বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত নদীর ওপর সেতু নির্মাণের স্ট্যান্ডার্ড মান অনুযায়ী ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স (স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ) থেকে ২৫ ফুট বা ৭ দশমিক ৬২ মিটার এবং হরাইজন্টাল ক্লিয়ারেন্স ১০০ ফুট বা ৩০ দশমিক ৪৮ মিটার হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু রাজধানীর চারপাশের নদী তুরাগ, টঙ্গী খাল ও বালু নদীর ওপর নির্মিত সেতুগুলো স্ট্যান্ডার্ড হাই ওয়াটার লেভেল (এসএইচডাব্লিউএল) ২৩-২৪ ফুটের বেশি না। কোন কোন সেতুর উচ্চতা এর চেয়ে অনেক কম। এর মধ্যে সওজ’র সেতুগুলো হলো-আবদুল্লাহপুর থেকে ইপিজেড সড়কে নির্মিত আশুলিয়া ব্রিজের ভার্টিক্যাল মাত্র ৩ ফুট এবং হরাইজন্টাল হলো ৩৮ ফুট। যা স্ট্যান্ডার্ড মান থেকে ২২ ফুট কম। একইভাবে তুরাগ নদে নির্মিত কামারপাড়া ব্রিজের ভার্টিক্যাল ৮ ফুট, টঙ্গী সড়কের পশ্চিম পাশের ব্রিজের ভার্টিক্যাল ১০ ফুট ৬ ইঞ্চ, টঙ্গী সড়কের পূর্ব পাশের সেতুর ভার্টিক্যাল ১০ ফুট ৬ ইঞ্চি। রেলওয়ের দুই সেতু হলো- টঙ্গী রেলসেতু-১ ভার্টিক্যাল ৬ ফুট, টঙ্গী রেলসেতু-২ ভার্টিক্যাল ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। এলজিইডি সেতু হলো- টঙ্গী খালের ওপর নির্মিত প্রত্যাশা ব্রিজের উচ্চতা ৮ ফুট, বালু নদীর ওপর নির্মিত ত্রি-মুখী সেতু ভার্টিক্যাল ১৩ ফুট, ইছাপুরা সেতু ভার্টিক্যাল ১১ ফুট ও ডেমরা সেতুর ভার্টিক্যাল ১২ ফুট। এই সেতুগুলো নদীর পানির স্তর থেকে স্ট্যান্ডার্ড মান (হাই ওয়াটার লেভেল) অনেক কম। তাই ২০১০ সালে সেতুগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে পুনর্নির্মাণের সুপারিশক করেন নৌ-মন্ত্রণালয়ের একটি উপ-কমিটি। কিন্তু ১০ বছর অতিক্রম হলেও এই সুপারিশের কোন বাস্তবায়ন নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

আইডিইবি’র নদী দূষণে ১৮৭টি বর্জ্যরে উৎসমুখ চিহ্নিত :

ঢাকার চারদিকে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীর দূষণ রোধে ১৮৭টি বর্জ্যরে উৎসমুখ চিহ্নিত করেছিল ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)। আইডিইবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার চার নদী শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু ও বুড়িগঙ্গার অবস্থা শোচনীয়। নদীর তীরে গড়ে ওঠা প্রভাবশালীদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। নদী ব্যবহৃত হচ্ছে আবর্জনার ভাগাড় হিসেবে। অবাধে বর্জ্য ফেলতে পাকা ড্রেন, পাইপ ও সারফেস ড্রেন পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে। আরও কয়েক হাজার ব্যক্তি চোরা পাইপ ও উন্মুক্তভাবে নদী দূষণ করছে। ফলে পানির রং পরিবর্তন হয়ে কোথাও কালো, কোথাও লাল-নীল আকার ধারণ করেছে। পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। দূষণের মাত্রা এতই ভয়াবহ যে, শুষ্ক মৌসুমে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের অক্সিজেনের মাত্রা শূন্যের কোঠায় পৌঁছায়। চার নদী দূষণের ৩০০টি উৎস চিহ্নিত করেছে আইডিইবি। এতে দূষণের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে ঢাকা ওয়াসা, হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, ট্যানারি, সিমেন্ট কারখানা, ডকইয়ার্ড, গার্মেন্ট কারখানা ও ঢাকার দুই সিটি কপোরেশন।

আইডিইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুড়িগঙ্গা দূষণ করছে দুই তীরে গড়ে ওঠা গার্মেন্ট, ডকইয়ার্ড, হাসপাতাল, লঞ্চ থেকে ফেলা বর্র্জ্য এবং পোড়া জ্বালানি তেল। সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত দূষণের উৎসমুখ ১০৭টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গাবতলী গরুর হাট, আপেল এন্টারপ্রাইজ, বেস টেক লিমিটেড, শাহ সিমেন্ট, এনডিএ, পূর্বাশা কাঁচাবাজার, ট্যানারি, ঢাকা ওয়াসা ও মিটফোর্ড হাসপাতাল। সদরঘাট থেকে ফতুল্লা বিজি মাউথ পর্যন্ত ৫৭ উৎসমুখ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ওয়াসা ২২টি উৎসমুখ থেকে পানি ও বর্জ্য ফেলছে। শীতলক্ষ্যা নদীর সৈয়দপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের মুড়াপাড়া পর্যন্ত ৭০টি উৎসমুখ থেকে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে এসডি ফ্লাওয়ার মিল, সৈয়দপুরে পূবালী সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ, মুুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে প্রিমিয়াম সিমেন্ট, শাহ সিমেন্ট, মেট্রোপলিটন সিমেন্ট, লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিল, র‌্যাক্স নিটওয়্যার, অলরাউন্ড নিটওয়্যার, সোহাগপুর টেক্সটাইল মিলস, প্রীতম ফ্যাশন, ইব্রাহিম টেক্সটাইল, আদমজী ইপিজেড, স্টার পার্টিকেল বোর্ড, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ, কাঁচপুর ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, ডেমরার বেঙ্গল প্যাকেজেস ও মীর সিমেন্ট উল্লেখযোগ্য। এসব প্রতিষ্ঠান ড্রেন ও পাইপের মাধ্যমে শিল্প এবং প্রতিদিনের বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে নদী দূষণ করছে। ৮৭টি উৎসমুখ দিয়ে সারফেস ড্রেন, পাইপ ও অন্যান্য মাধ্যমে তুরাগ নদ দূষণ করছে কামারপাড়ায় কংক্রিট রেডি মিক্স, নিশাদনগরে ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, টঙ্গী বাজার, বেঙ্গল ডাইং অ্যান্ড নিটিং, আইচি হাসপাতাল, আজমিরী গার্মেন্ট, বিসিক, ঢাকা ডাইং, মার্চেন্ট ডাইং, মেহমুদ হোসেন ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড, সার্ফ ফিটিং ওয়াশিং প্ল্যান্ট ও প্যারাডাইস ওয়াশিং প্ল্যান্ট। কিন্তু ঢাকার চারদিকে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীর দূষণ রোধে ১৮৭টি বর্জ্যরে উৎসমুখ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়।

সম্প্রতি তুরাগ নদের তেরমুখ পয়েন্ট ও টঙ্গী হতে ঢাকা উদ্যান পর্যন্ত উচ্ছেদ পরবর্তী চলমান প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে নৌ-মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আবদুস সামাদ সাংবাদিকদের বলেন, ময়রা-আবর্জনা ফেলে নদীকে দূষিত ও দখল করা হচ্ছে। টঙ্গী রেল ব্রিজের নীচে বর্জ্য জমে নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়েছে। তাই দ্রুত বর্জ্য অপসারণসহ বর্জ্য নিক্ষেপকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ। এছাড়া স্থায়ী টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গ্রহণের জন্য তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করেন।