বরগুনায় রিফাত হত্যা

ঘনিয়ে আসছে মামলার রায়ের দিন

রাষ্ট্রপক্ষের আঙ্গুল মিন্নির দিকেই

রিফাত হত্যা মামলার রায়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। সাক্ষী-সবুত প্রায় শেষ রায় হতে পারে আগামী মাসের ১ম সপ্তাহেই। তবে সাক্ষীদের দৃষ্টি নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নির দিকেই। অপর পক্ষের আইনজীবীরা লড়ছেন ২৪ জন আসামি নিয়ে।

বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সর্বত্র আলোড়ন সৃষ্টিকারী বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যার বিচার চলছে গত ৮ জানুয়ারি থেকে। মামলায় মোট ৭৫ জন সাক্ষীর স্থলে ৭৬ জনের সাক্ষ্য শেষের পথে। কোন আসামি সাফাই সাক্ষী না মানলে বিচার কাজ আরও দ্রত শেষ হতে পারে বলে মনে করেন বরগুনার অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মজিবুল হক কিসলু। তিনি জানান, সাক্ষীর পর প্রচলিত নিয়মানুযায়ী আসামিদের পর্যবেক্ষণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হবে। তারপর অপেক্ষা করতে হবে রায়ের জন্য। আইনজীবীরা জানান, সাধারণত সাক্ষী-সবুত গ্রহণে বেশ সময় লাগে। কিন্তু রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে। গত ১ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। সাক্ষ্য শুরু হয় ৮ জানুয়ারি থেকে। বিদেশে থাকার কারণে নির্ধারিত ৭৫ জন সাক্ষীর একজন কাঠগড়ায় দাঁড়ায়নি। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের অনুরোধে ২ জন সাক্ষী বাড়ানো হয়েছে। এদিকে আদালতে মিন্নির জামিন বাতিলের আবেদনের ফয়সালা হয়নি।

সাক্ষীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাক্ষী মামলার বাদী আ. হালিম দুলাল শরীফ, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গাজী সিরাজুল ইসলাম, ৪ জন চিকিৎসক ডা. সোহেলী মঞ্জুর, ডা. মো. হোসাইন, ডা. জামিল হোসেন ডা. এসএম সাইদুল ইসলাম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির, বরগুনা সদর থানার ওসি আবির মাহামুদ হোসেন, নয়নবন্ডের বিয়ের কাজী আনিসুর রহমান এবং ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের সাক্ষ্য এখনও চলছে। আসামিদের জেরার মুখে এখনও পড়েননি।

বরগুনা জেলা ও দায়ারা জজ আদালত থেকে প্রাপ্ত সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, বেশিরভাগ সাক্ষী রিফাত শরীফ হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে সরাসরি হত্যাকারীদের কাতারে মিন্নিকে নিয়ে এসেছে। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা নিজ নিজ মোয়াক্কেলদের নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করছে। মামলার অভিযোগ প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ যেমন সাক্ষীদের যথাযথভাবে প্রস্তুত করেছেন। তেমনি বিভিন্ন আলামত, ভিডিও ডকুমেন্ট, ফরেনসিক পরীক্ষার প্রমাণ আদালতে দাখিল এবং বিচারকের কাছে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষ সাক্ষীদের জেরা ও পাল্টা ভিডিও ডকুমেন্ট আদালতে উপস্থাপন করছেন। রাষ্ট্রপক্ষ যেমন এই মামলায় হাইকোর্ট নির্দেশিত জামিনে থাকা আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন বাতিলের জন্য বিচারিক আদালতে আবেদন করেছেন। তেমনি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির পক্ষেও বর্তমান বিচারিক কোর্ট নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন হাইকোর্টে।

বিগত ২৬.০৬.২০১৯ তারিখ বরগুনা সরকারি কলেজের গেটের অদূরে এবং ক্যালিক্স একাডেমি সংলগ্ন গেটের কাছে রিফাত শরীফ, নয়নবন্ড ও রিফাত ফরাজীদের হাতে নিহত হলে হত্যা মামলায় মোট আসামি ছিল ২৫ জন। এরমধ্যে প্রধান আসামি নয়নবন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। আসামিদের মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক, বাকি ১৪ জন কিশোর। এর মধ্যে অধিকাংশ আসামি ধরা পরলেও মো. মুসা এখনও নিখোঁজ রয়েছে। মামলায় বর্তমানে সাক্ষী দাঁড়িয়েছে ৭৬ জনে ।

মামলার বাদী নিহত রিফাত শরীফের বাবার বক্তব্য অনুযায়ী, সে মামলায় প্রত্যক্ষ সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। তবে রিফাতের মৃত্যুকালীন বক্তব্যের বাইরে কি কারণে সেই মিন্নিকে আসামি করা হলো তা বোধগম্য নয়। এ বিষয় আ. হালিম দুলাল শরীফ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, বিভিন্ন মিডিয়ার প্রতিবেদন, ভিডিও ও বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি করে মিন্নিকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে, পুলিশ শুধু ভিডিও নয়, মিন্নির আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ এ সংক্রান্ত ফোন কল ও বিভিন্ন নমুনার ফরেনসিক পরীক্ষা আদালতে উপস্থাপন করেছে।

image
আরও খবর
উৎপাদনে এগিয়ে সঞ্চালনে পিছিয়ে
নদীতীরের ১১৩ ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করা হবে নৌপ্রতিমন্ত্রী
সিঙ্গাপুরে এক বাংলাদেশির অবস্থা আশঙ্কাজনক
ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদহার পুনর্বিবেচনার আশ্বাস অর্থমন্ত্রীর
গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে
দুর্বৃত্তের গুলিতে ইউপিডিএফ কর্মী নিহত
বনায়নের নামে চলছে হরিলুট
খালেদার জামিন প্রধানমন্ত্রীর হাতে নয় : কাদের
কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে আগের মতোই
নিহত ৬৭ জনের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত
চাকরি ৯৭৭ দিন, ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ৭৫০ দিন
গাজীপুরে পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যু
অমর একুশ উদযাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন
ক্ষণগণনা : আর ২৫ দিন
আ-মরি বাংলা ভাষা

বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৭ ফল্গুন ১৪২৬, ২৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

বরগুনায় রিফাত হত্যা

ঘনিয়ে আসছে মামলার রায়ের দিন

রাষ্ট্রপক্ষের আঙ্গুল মিন্নির দিকেই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরগুনা

image

রিফাত হত্যা মামলার রায়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। সাক্ষী-সবুত প্রায় শেষ রায় হতে পারে আগামী মাসের ১ম সপ্তাহেই। তবে সাক্ষীদের দৃষ্টি নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নির দিকেই। অপর পক্ষের আইনজীবীরা লড়ছেন ২৪ জন আসামি নিয়ে।

বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সর্বত্র আলোড়ন সৃষ্টিকারী বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যার বিচার চলছে গত ৮ জানুয়ারি থেকে। মামলায় মোট ৭৫ জন সাক্ষীর স্থলে ৭৬ জনের সাক্ষ্য শেষের পথে। কোন আসামি সাফাই সাক্ষী না মানলে বিচার কাজ আরও দ্রত শেষ হতে পারে বলে মনে করেন বরগুনার অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মজিবুল হক কিসলু। তিনি জানান, সাক্ষীর পর প্রচলিত নিয়মানুযায়ী আসামিদের পর্যবেক্ষণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হবে। তারপর অপেক্ষা করতে হবে রায়ের জন্য। আইনজীবীরা জানান, সাধারণত সাক্ষী-সবুত গ্রহণে বেশ সময় লাগে। কিন্তু রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে। গত ১ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। সাক্ষ্য শুরু হয় ৮ জানুয়ারি থেকে। বিদেশে থাকার কারণে নির্ধারিত ৭৫ জন সাক্ষীর একজন কাঠগড়ায় দাঁড়ায়নি। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের অনুরোধে ২ জন সাক্ষী বাড়ানো হয়েছে। এদিকে আদালতে মিন্নির জামিন বাতিলের আবেদনের ফয়সালা হয়নি।

সাক্ষীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাক্ষী মামলার বাদী আ. হালিম দুলাল শরীফ, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গাজী সিরাজুল ইসলাম, ৪ জন চিকিৎসক ডা. সোহেলী মঞ্জুর, ডা. মো. হোসাইন, ডা. জামিল হোসেন ডা. এসএম সাইদুল ইসলাম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির, বরগুনা সদর থানার ওসি আবির মাহামুদ হোসেন, নয়নবন্ডের বিয়ের কাজী আনিসুর রহমান এবং ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের সাক্ষ্য এখনও চলছে। আসামিদের জেরার মুখে এখনও পড়েননি।

বরগুনা জেলা ও দায়ারা জজ আদালত থেকে প্রাপ্ত সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, বেশিরভাগ সাক্ষী রিফাত শরীফ হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে সরাসরি হত্যাকারীদের কাতারে মিন্নিকে নিয়ে এসেছে। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা নিজ নিজ মোয়াক্কেলদের নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করছে। মামলার অভিযোগ প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ যেমন সাক্ষীদের যথাযথভাবে প্রস্তুত করেছেন। তেমনি বিভিন্ন আলামত, ভিডিও ডকুমেন্ট, ফরেনসিক পরীক্ষার প্রমাণ আদালতে দাখিল এবং বিচারকের কাছে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষ সাক্ষীদের জেরা ও পাল্টা ভিডিও ডকুমেন্ট আদালতে উপস্থাপন করছেন। রাষ্ট্রপক্ষ যেমন এই মামলায় হাইকোর্ট নির্দেশিত জামিনে থাকা আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন বাতিলের জন্য বিচারিক আদালতে আবেদন করেছেন। তেমনি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির পক্ষেও বর্তমান বিচারিক কোর্ট নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন হাইকোর্টে।

বিগত ২৬.০৬.২০১৯ তারিখ বরগুনা সরকারি কলেজের গেটের অদূরে এবং ক্যালিক্স একাডেমি সংলগ্ন গেটের কাছে রিফাত শরীফ, নয়নবন্ড ও রিফাত ফরাজীদের হাতে নিহত হলে হত্যা মামলায় মোট আসামি ছিল ২৫ জন। এরমধ্যে প্রধান আসামি নয়নবন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। আসামিদের মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক, বাকি ১৪ জন কিশোর। এর মধ্যে অধিকাংশ আসামি ধরা পরলেও মো. মুসা এখনও নিখোঁজ রয়েছে। মামলায় বর্তমানে সাক্ষী দাঁড়িয়েছে ৭৬ জনে ।

মামলার বাদী নিহত রিফাত শরীফের বাবার বক্তব্য অনুযায়ী, সে মামলায় প্রত্যক্ষ সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। তবে রিফাতের মৃত্যুকালীন বক্তব্যের বাইরে কি কারণে সেই মিন্নিকে আসামি করা হলো তা বোধগম্য নয়। এ বিষয় আ. হালিম দুলাল শরীফ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, বিভিন্ন মিডিয়ার প্রতিবেদন, ভিডিও ও বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি করে মিন্নিকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে, পুলিশ শুধু ভিডিও নয়, মিন্নির আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ এ সংক্রান্ত ফোন কল ও বিভিন্ন নমুনার ফরেনসিক পরীক্ষা আদালতে উপস্থাপন করেছে।