পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের এক বছর আজ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তদন্ত প্রতিবেদনে আগুনের সূত্রপাত কেমিক্যাল গোডাউনে উল্লেখ করা হয়। তবে এটা পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা মানতে নারাজ। আগুনের পর পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু, তাতে খুব একটা সুফল আসেনি। কিছু গোডাউন কেরানীগঞ্জের কেমিক্যাল পল্লিতে স্থানান্তর করা হলেও অধিকাংশ গোডাউন এখনও পুরান ঢাকায় রয়ে গেছে। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পরও ওই ভবনে যারা কেমিক্যাল গোডাউন করেছিল তাদের এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের দাবি, আগুন লেগেছিল সিলিন্ডার বিস্ফোরণে। আগুনের জন্য কেমিক্যাল দায়ী নয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চকবাজার, মিডফোর্ডের বিভিন্ন মার্কেট, আরমানিটোলা, বাবুবাজার, বেগম বাজার, চানখারপুল এলাকায় রয়েছে পারফিউম বডি-স্প্রেসহ বিভিন্ন কসমেটিকস আইটেমের কেমিক্যাল গোডাউন। কসমেটিকসের গোডাউন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালের গোডাউনও রয়েছে এসব এলাকায়।
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পরও ওই ভবনে যারা কেমিক্যাল গোডাউন করেছিল তাদের এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ওই কেমিক্যাল গোডাউনটির নাম ছিল পার্ল ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল। এর মালিক ও নির্বাহী পরিচালক কাশিফ। আশির দশক থেকে বাংলাদেশে কসমেটিক্স ও সুগন্ধি সামগ্রী আমদানি করা এই প্রতিষ্ঠানটিতে আরও মালিকানা রয়েছে ইমতিয়াজ আহমেদ ও মুজাম্মেল ইকবাল নামে দুই ব্যক্তি ও তাদের পরিবার সদস্যদের। তবে গত এক বছরেও এই মালিকদেরও কোন সন্ধান পায়নি পুলিশ।
গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টায় পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। মুহূর্তে ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আশপাশের পাঁচটি ভবনে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় নারী ও শিশুসহ মোট ৭১ জন প্রাণ হারায়। নিহতদের মধ্যে জুম্মন নামে এক ব্যক্তির ছেলে আসিফ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে ভবন মালিক হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদকে আসামি করা হয়। আসামির তালিকায় রয়েছে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনও। ওয়াহিদ ম্যানশনের মালিক হাসান ও সোহেলকে গ্রেফতার করা হলেও বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন হাওলাদার বলেন, মামলায় আমরা ভবন মালিকদের অবহেলা, গোডাউন মালিকদের অবহেলা পেয়েছি। ভবন মালিক দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বর্তমানে তারা জামিনে আছেন। আর গোডাউন মালিকের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর আগুনের সূত্রপাত ও অন্য কারণ অনুসন্ধান করতে ফায়ার সার্ভিস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিস্ফোরক পরিদফতর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পক্ষ থেকে পাঁচটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলার কেমিক্যাল গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। পারফিউম, বডি স্প্রে বা এয়ার ফ্রেশনারের ক্যানে সুগন্ধি বিউটেন, আইসো বিউটেন, আইসো প্রোপাইল অ্যালকোহল, রেকটিফাইড স্পিরিট বিভিন্ন অনুপাতে মেশানো থাকে। এগুলো বাতাসে মিশেই ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় গ্যাস চেম্বার তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথমত আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউন হিসেবে ফ্লোর ভাড়া দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদের বিরুদ্ধে। মামলার আসামিও করা হয়েছে তাদের। অগ্নিকাণ্ডের জন্য তাদের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। দ্বিতীয়ত, যারা গোডাউন করেছিল সেই পার্ল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালেরও দায় রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চকবাজার জোনের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ভবন মালিক ও গোডাউন মালিকদের শুধু দায়ী করলে হবে না। এসব বিষয় তদারকির জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। তারা ঠিকভাবে তদারকি করেননি। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা উচিত। ভবন ও গোডাউন মালিক নিঃসন্দেহে দায়ী। তাদের বাইরে যারা তদারকির দায়িত্বে ছিলেন তাদেরও দায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৭ ফল্গুন ১৪২৬, ২৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের এক বছর আজ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তদন্ত প্রতিবেদনে আগুনের সূত্রপাত কেমিক্যাল গোডাউনে উল্লেখ করা হয়। তবে এটা পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা মানতে নারাজ। আগুনের পর পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু, তাতে খুব একটা সুফল আসেনি। কিছু গোডাউন কেরানীগঞ্জের কেমিক্যাল পল্লিতে স্থানান্তর করা হলেও অধিকাংশ গোডাউন এখনও পুরান ঢাকায় রয়ে গেছে। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পরও ওই ভবনে যারা কেমিক্যাল গোডাউন করেছিল তাদের এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের দাবি, আগুন লেগেছিল সিলিন্ডার বিস্ফোরণে। আগুনের জন্য কেমিক্যাল দায়ী নয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চকবাজার, মিডফোর্ডের বিভিন্ন মার্কেট, আরমানিটোলা, বাবুবাজার, বেগম বাজার, চানখারপুল এলাকায় রয়েছে পারফিউম বডি-স্প্রেসহ বিভিন্ন কসমেটিকস আইটেমের কেমিক্যাল গোডাউন। কসমেটিকসের গোডাউন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালের গোডাউনও রয়েছে এসব এলাকায়।
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পরও ওই ভবনে যারা কেমিক্যাল গোডাউন করেছিল তাদের এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ওই কেমিক্যাল গোডাউনটির নাম ছিল পার্ল ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল। এর মালিক ও নির্বাহী পরিচালক কাশিফ। আশির দশক থেকে বাংলাদেশে কসমেটিক্স ও সুগন্ধি সামগ্রী আমদানি করা এই প্রতিষ্ঠানটিতে আরও মালিকানা রয়েছে ইমতিয়াজ আহমেদ ও মুজাম্মেল ইকবাল নামে দুই ব্যক্তি ও তাদের পরিবার সদস্যদের। তবে গত এক বছরেও এই মালিকদেরও কোন সন্ধান পায়নি পুলিশ।
গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টায় পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। মুহূর্তে ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আশপাশের পাঁচটি ভবনে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় নারী ও শিশুসহ মোট ৭১ জন প্রাণ হারায়। নিহতদের মধ্যে জুম্মন নামে এক ব্যক্তির ছেলে আসিফ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে ভবন মালিক হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদকে আসামি করা হয়। আসামির তালিকায় রয়েছে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনও। ওয়াহিদ ম্যানশনের মালিক হাসান ও সোহেলকে গ্রেফতার করা হলেও বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন হাওলাদার বলেন, মামলায় আমরা ভবন মালিকদের অবহেলা, গোডাউন মালিকদের অবহেলা পেয়েছি। ভবন মালিক দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বর্তমানে তারা জামিনে আছেন। আর গোডাউন মালিকের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর আগুনের সূত্রপাত ও অন্য কারণ অনুসন্ধান করতে ফায়ার সার্ভিস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিস্ফোরক পরিদফতর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পক্ষ থেকে পাঁচটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলার কেমিক্যাল গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। পারফিউম, বডি স্প্রে বা এয়ার ফ্রেশনারের ক্যানে সুগন্ধি বিউটেন, আইসো বিউটেন, আইসো প্রোপাইল অ্যালকোহল, রেকটিফাইড স্পিরিট বিভিন্ন অনুপাতে মেশানো থাকে। এগুলো বাতাসে মিশেই ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় গ্যাস চেম্বার তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথমত আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউন হিসেবে ফ্লোর ভাড়া দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদের বিরুদ্ধে। মামলার আসামিও করা হয়েছে তাদের। অগ্নিকাণ্ডের জন্য তাদের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। দ্বিতীয়ত, যারা গোডাউন করেছিল সেই পার্ল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালেরও দায় রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চকবাজার জোনের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ভবন মালিক ও গোডাউন মালিকদের শুধু দায়ী করলে হবে না। এসব বিষয় তদারকির জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। তারা ঠিকভাবে তদারকি করেননি। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা উচিত। ভবন ও গোডাউন মালিক নিঃসন্দেহে দায়ী। তাদের বাইরে যারা তদারকির দায়িত্বে ছিলেন তাদেরও দায় রয়েছে।