চাকরি ৯৭৭ দিন, ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ৭৫০ দিন

ভেঙে পড়েছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ নিয়োগ পেয়েছেন ৯৭৭ দিন। এর মধ্যে ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন ৭৫০ দিন। উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২২৭ দিন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে চরম স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অনুপস্থিত ছিলেন ১৭ দিন। ফ্রেব্রুয়ারি মাসে গতকাল পর্যন্ত ১৬ দিন। অর্থাৎ ৪০ দিনের মধ্যে ৩৩ দিনই ক্যাম্পাসে ছিলেন না। তিনি ঢাকায় ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুন মাসে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তিনটি শর্তে অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেন। তার প্রধান শর্ত ছিল তাকে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকতে হবে। রাষ্ট্রপতির দেয়া শর্তে লিখিতভাবে সম্মতি দিয়ে যোগদান করলেও ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকছেন তিনি। আর যে সময় উপস্থিত থাকেন সেদিন ঢাকা থেকে বিমানে ক্যাম্পাসে আসেন বিকেলের বিমানে আবারও ফিরে যান। মাঝে মাঝে ২/৩ দিন অবস্থান করেন। শিক্ষকদের অভিযোগ অনেকবার তাকে বলেও কাজ হয়নি। ফলে অকার্যকর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে বেরোবি। এ ছাড়াও দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ইতোমধ্যেই শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন মিলে অধিকার সুরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতা ড. তুহিন ওয়াদুদ।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে ২০১৭ সালে উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর ওই বছর অনুপস্থিত ছিলেন ১৩১ দিন, ২০১৮ সালে ২৯৫ দিন, ২০১৯ সালে ২৯১ দিন এবং ২০২০ সালের ৪৮ দিনের মধ্যে ৩৩ দিন। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা থেকে বিমানযোগে ক্যাম্পাসে আসেন। গত রোববার ঢাকায় ফিরে যান। এরপর তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি নেপালে থাকবেন বলে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তার কার্যালয় থেকে সেখানে বলা হয়েছে নেপাল সরকারের আমন্ত্রণে তিনি নেপালে যাবেন। এ সময় তার পরিবর্তে শিক্ষক হাফিজুর রহমান সেলিম শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু ৯৭৭ দিন চাকরির ৭৫০ দিন অনুপস্থিত থাকলেও তিনি কাউকে তার দায়িত্ব প্রদান করেননি বলে উপাচার্যের দফতর সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত উপাচার্যের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসা যাবার একটি তথ্য পাওয়া গেছে। তা হলো গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা থেকে বিমানে আসেন ১ জানুয়ারি বিকেলের বিমানে ঢাকায় ফিরে যান। এরপর ৪ জানুয়ারি আসেন ৬ দিন অবস্থান করে ১০ জানুয়ারি ঢাকায় চলে যান। এরপর ১৪ জানুয়ারি সকালে আসেন ৩ দিন অবস্থান করে ১৭ জানুয়ারি সকালে বিমানে ঢাকায় চলে যান। ওইদিন রাতে ঢাকা থেকে বিমানে রংপুরে এসে পরের দিন ১৮ জানুয়ারি ঢাকায় চলে যান। এরপর ১৯ জানুয়ারি রাতে আসেন ২০ জানুয়ারি রাতে ঢাকায় ফিরে যান। ২৩ জানুয়ারি আসেন ২৫ জানুয়ারি সকালে ঢাকায় যান। ২৭ জানুয়ারি সকালে এসে ওইদিন রাতেই ঢাকায় ফিরে যান। এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা থেকে এসে বগুড়া যান ৭ তারিখে। সেখান থেকে ফিরে দুপুরেই আবার ঢাকায় চলে যান।

উপাচার্যের দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, উপাচার্য রাষ্ট্রের টাকা ব্যয় করে বিমানে আসা-যাওয়া করেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন।

শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষকদের সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব খায়রুল আলম সুমন জানান, উপাচার্যের লাগাতার অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ক্যাম্পাস এখন অরক্ষিত। তিনি না থাকা মানে দু’জন ডিন না থাকা। একজন বিভাগীয় চেয়ারম্যান না থাকা। ট্রেজারার উপ-উপাচার্য না থাকা। অর্থাৎ এসব পদ তিনি একাই দখল করে আছেন। উপাচার্য না থাকার মানে রেজিস্ট্রার না থাকা। কারণ উপাচার্য যেভাবে ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকেন রেজিস্ট্রারও একই কায়দায় অনুপস্থিত থাকছেন।

শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, উপাচার্য দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থেকে কলঙ্কের রেকর্ড করেছেন। যা ইতোপূর্বে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেনি। একাডেমিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। উপরোক্ত অনেকগুলো পদ আকড়ে রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অর্গান অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আরও খবর
উৎপাদনে এগিয়ে সঞ্চালনে পিছিয়ে
নদীতীরের ১১৩ ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করা হবে নৌপ্রতিমন্ত্রী
সিঙ্গাপুরে এক বাংলাদেশির অবস্থা আশঙ্কাজনক
ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদহার পুনর্বিবেচনার আশ্বাস অর্থমন্ত্রীর
গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে
দুর্বৃত্তের গুলিতে ইউপিডিএফ কর্মী নিহত
বনায়নের নামে চলছে হরিলুট
ঘনিয়ে আসছে মামলার রায়ের দিন
খালেদার জামিন প্রধানমন্ত্রীর হাতে নয় : কাদের
কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে আগের মতোই
নিহত ৬৭ জনের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত
গাজীপুরে পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যু
অমর একুশ উদযাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন
ক্ষণগণনা : আর ২৫ দিন
আ-মরি বাংলা ভাষা

বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৭ ফল্গুন ১৪২৬, ২৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

বেরোবির উপাচার্য

চাকরি ৯৭৭ দিন, ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ৭৫০ দিন

ভেঙে পড়েছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ নিয়োগ পেয়েছেন ৯৭৭ দিন। এর মধ্যে ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন ৭৫০ দিন। উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২২৭ দিন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে চরম স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অনুপস্থিত ছিলেন ১৭ দিন। ফ্রেব্রুয়ারি মাসে গতকাল পর্যন্ত ১৬ দিন। অর্থাৎ ৪০ দিনের মধ্যে ৩৩ দিনই ক্যাম্পাসে ছিলেন না। তিনি ঢাকায় ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুন মাসে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তিনটি শর্তে অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেন। তার প্রধান শর্ত ছিল তাকে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকতে হবে। রাষ্ট্রপতির দেয়া শর্তে লিখিতভাবে সম্মতি দিয়ে যোগদান করলেও ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকছেন তিনি। আর যে সময় উপস্থিত থাকেন সেদিন ঢাকা থেকে বিমানে ক্যাম্পাসে আসেন বিকেলের বিমানে আবারও ফিরে যান। মাঝে মাঝে ২/৩ দিন অবস্থান করেন। শিক্ষকদের অভিযোগ অনেকবার তাকে বলেও কাজ হয়নি। ফলে অকার্যকর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে বেরোবি। এ ছাড়াও দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ইতোমধ্যেই শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন মিলে অধিকার সুরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতা ড. তুহিন ওয়াদুদ।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে ২০১৭ সালে উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর ওই বছর অনুপস্থিত ছিলেন ১৩১ দিন, ২০১৮ সালে ২৯৫ দিন, ২০১৯ সালে ২৯১ দিন এবং ২০২০ সালের ৪৮ দিনের মধ্যে ৩৩ দিন। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা থেকে বিমানযোগে ক্যাম্পাসে আসেন। গত রোববার ঢাকায় ফিরে যান। এরপর তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি নেপালে থাকবেন বলে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তার কার্যালয় থেকে সেখানে বলা হয়েছে নেপাল সরকারের আমন্ত্রণে তিনি নেপালে যাবেন। এ সময় তার পরিবর্তে শিক্ষক হাফিজুর রহমান সেলিম শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু ৯৭৭ দিন চাকরির ৭৫০ দিন অনুপস্থিত থাকলেও তিনি কাউকে তার দায়িত্ব প্রদান করেননি বলে উপাচার্যের দফতর সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত উপাচার্যের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসা যাবার একটি তথ্য পাওয়া গেছে। তা হলো গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা থেকে বিমানে আসেন ১ জানুয়ারি বিকেলের বিমানে ঢাকায় ফিরে যান। এরপর ৪ জানুয়ারি আসেন ৬ দিন অবস্থান করে ১০ জানুয়ারি ঢাকায় চলে যান। এরপর ১৪ জানুয়ারি সকালে আসেন ৩ দিন অবস্থান করে ১৭ জানুয়ারি সকালে বিমানে ঢাকায় চলে যান। ওইদিন রাতে ঢাকা থেকে বিমানে রংপুরে এসে পরের দিন ১৮ জানুয়ারি ঢাকায় চলে যান। এরপর ১৯ জানুয়ারি রাতে আসেন ২০ জানুয়ারি রাতে ঢাকায় ফিরে যান। ২৩ জানুয়ারি আসেন ২৫ জানুয়ারি সকালে ঢাকায় যান। ২৭ জানুয়ারি সকালে এসে ওইদিন রাতেই ঢাকায় ফিরে যান। এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা থেকে এসে বগুড়া যান ৭ তারিখে। সেখান থেকে ফিরে দুপুরেই আবার ঢাকায় চলে যান।

উপাচার্যের দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, উপাচার্য রাষ্ট্রের টাকা ব্যয় করে বিমানে আসা-যাওয়া করেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন।

শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষকদের সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব খায়রুল আলম সুমন জানান, উপাচার্যের লাগাতার অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ক্যাম্পাস এখন অরক্ষিত। তিনি না থাকা মানে দু’জন ডিন না থাকা। একজন বিভাগীয় চেয়ারম্যান না থাকা। ট্রেজারার উপ-উপাচার্য না থাকা। অর্থাৎ এসব পদ তিনি একাই দখল করে আছেন। উপাচার্য না থাকার মানে রেজিস্ট্রার না থাকা। কারণ উপাচার্য যেভাবে ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকেন রেজিস্ট্রারও একই কায়দায় অনুপস্থিত থাকছেন।

শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, উপাচার্য দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থেকে কলঙ্কের রেকর্ড করেছেন। যা ইতোপূর্বে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেনি। একাডেমিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। উপরোক্ত অনেকগুলো পদ আকড়ে রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অর্গান অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।