উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব

শিক্ষা জাতির মানদণ্ড। যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি তত সমৃদ্ধ। যেকোন জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটে উচ্চশিক্ষার হাত ধরে। উচ্চশিক্ষাই নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করে জাতিকে। একজন মানুষ, সমাজ এবং সর্বোপরি একটি রাষ্ট্রের ভিত গড়ে দেয় উচ্চশিক্ষা। বর্তমান বিশ্বে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব এবং চাহিদা আকাশচুম্বী। তাই একজন শিক্ষার্থী কাঠখড় পুড়িয়ে হলেও জায়গা করে নিতে চায় উচ্চশিক্ষার সিঁড়িতে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়- প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষে শিক্ষা বিস্তার বা শিক্ষা সম্প্রসারণের বিষয়ে খুব একটা মনোযোগী ছিল না। কিন্তু উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরে তারা উচ্চশিক্ষার প্রতি মনোযোগ দেয়। ১৮২৩ সালে গণশিক্ষা বিষয়ে কলকাতাতে একটি কমিটি গঠন করে এরপরই খ্রিস্টান মিশনারিদের তত্ত্বাবধানে তারা অনেকগুলো নতুন নতুন স্কুল ও ভারতীয় ভাষায় অনেকগুলো বই ছাপানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং এর সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলনও শুরু করে। পরবর্তীতে লর্ড হার্ডিঞ্জ রেজুলেশনের (অক্টোবর ১০, ১৮৪৪) মাধ্যমে সকল সরকারি নিয়োগে ইংরেজি জ্ঞানের অগ্রাধিকার প্রদানের বিষয়টি প্রচলন করা হয়। ১৯৫৪ সালের চার্লস উডের শিক্ষানীতির মাধ্যমে প্রত্যেক প্রদেশে আলাদা শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়।

১৮৫৭ সালে কলকাতা, বোম্বে ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই অঞ্চলে উচ্চশিক্ষার এক নতুন যুগের দ্বার উন্মোচন করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এই ধারণা থেকেই গৃহীত হয় সরকারের ভবিষ্যৎ শিক্ষানীতি। প্রাথমিকভাবে এই তিনিটি বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কলেজ ও ইনস্টিটিউট এর অধিভূক্তি, পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রকাশ, সনদ প্রদান এবং নানা আয়োজনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯০২ সালে লর্ড কার্জন ইন্ডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠনের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতিও উন্নত হয় ১৯১৭ সালে স্যার মাইকেল স্যাডলার এর নেতৃত্বে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠনের মাধ্যমে। যদিও কমিশনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো শুধুমাত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক তথাপিও এর প্রস্তবনাসমূহ পুরো ভারতবর্ষের উচ্চশিক্ষা পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কমিশন তিন বছর মেয়াদি অনার্স কোর্স চালু, বিজ্ঞান শিক্ষা চালুকরণ, টিউটোরিয়াল পদ্ধতি ও গবেষণা কাজের উপর গুরুত্ব প্রদান করে সুপরিশমালা পেশ করেন। ব্রিটিশ শাসনের শেষভাগে এসে প্রায় ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষা আরো বিস্তৃত হয় এবং এর অব্যবহতি পরেই ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এভাবে পালাক্রমে উচ্চশিক্ষা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।

আমরা তরুণরা কেন উচ্চশিক্ষাকে প্রাধান্য দিচ্ছি। কী কারণে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় উচ্চশিক্ষাকে কেন গ্রহণ করেছি। প্রধান প্রধান কারণগুলো উদঘাটন করতে গিয়ে দেখা যায়- আমরা উচ্চশিক্ষার অংশ নিচ্ছি দেশে ও দেশের বাইরে ভালো জব পাওয়ার জন্য, দেশের বাইরে লাইফ লিড করার জন্য, জীবনমান উন্নত করার জন্য, সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের জন্য, স্ট্যাটাস বাড়ানোর জন্য, ভালো পাত্রী বিবাহ করার জন্য ইত্যাদি। হ্যাঁ, বর্তমান বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী উপরোক্ত কারণগুলো উচ্চশিক্ষাকে সমর্থন করে।

দেশে এবং দেশের বাইরে ভালোমানের জব করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই উচ্চশিক্ষা শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। একটি পরিসংখ্যান দিলে স্পষ্ঠ হবে, দেশে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব। আসন্ন ৪১ তম বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন পড়েছে রেকর্ডসংখ্যক ৪ লাখ ৭৫ হাজার। এর আগে ৪০ তম বিসিএসে আবেদন করেছিল ৪ লাখ ১২ হাজার শিক্ষার্থী। দেশে জবের প্রধান ক্যাটাগরিগুলোতে যেতে পাড়ি দিতে হয় বিসিএস পরীক্ষা। আর তার জন্যও প্রয়োজন উচ্চশিক্ষার ধাপ অতিক্রম করা। বিদেশে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে বা সেখানে ভালো জব করতে আপনার উচ্চশিক্ষা প্রয়োজন। জীবনমান উন্নত করতে অর্থাৎ সমাজ বা দেশে আপনার গুরুত্ব বাড়াতে ও সবার চেয়ে উন্নত জীবন গড়তে হলে আপনাকে অবশ্যই উচ্চশিক্ষার শিক্ষিত হতে হবে। উচ্চশিক্ষায় পারে আপনার জীবনমান বদলে দিতে। তাছাড়াও উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি লাভের মাধ্যমে সমাজে আপনার স্ট্যাটাস থাকবে সবার চেয়ে ভিন্ন। আপনি একটি সমাজ ও দেশকে লিড দিতে পারবেন যখন আপনার নেতৃত্ব গুণের সঙ্গে উচ্চশিক্ষার ডিগ্রিও থাকবে। বর্তমানে জীবনের সকল ক্যাটাগরিতে উচ্চশিক্ষা প্রয়োজন এবং উচ্চশিক্ষা আপনাকে এগিয়ে রাখবে।

যদিও বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত বেকার প্রতিনিয়ত বাড়ছে কিন্তু উচ্চশিক্ষার গুরুত্বও বাড়ছে। দেশে এবং দেশের বাইরেও উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য বিদেশ পাড়ি দিচ্চে শিক্ষার্থীরা। নিজেকে তৈরি করতে, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে উচ্চশিক্ষার বিকল্প নেই। কঠিন ধাপগুলো পাড়ি দিয়ে হলেও উচ্চশিক্ষার সিঁড়িতে পা রাখা আবশ্যকীয়।

আমজাদ হোসেন হৃদয়

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও খবর

বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৭ ফল্গুন ১৪২৬, ২৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব

শিক্ষা জাতির মানদণ্ড। যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি তত সমৃদ্ধ। যেকোন জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটে উচ্চশিক্ষার হাত ধরে। উচ্চশিক্ষাই নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করে জাতিকে। একজন মানুষ, সমাজ এবং সর্বোপরি একটি রাষ্ট্রের ভিত গড়ে দেয় উচ্চশিক্ষা। বর্তমান বিশ্বে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব এবং চাহিদা আকাশচুম্বী। তাই একজন শিক্ষার্থী কাঠখড় পুড়িয়ে হলেও জায়গা করে নিতে চায় উচ্চশিক্ষার সিঁড়িতে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়- প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষে শিক্ষা বিস্তার বা শিক্ষা সম্প্রসারণের বিষয়ে খুব একটা মনোযোগী ছিল না। কিন্তু উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরে তারা উচ্চশিক্ষার প্রতি মনোযোগ দেয়। ১৮২৩ সালে গণশিক্ষা বিষয়ে কলকাতাতে একটি কমিটি গঠন করে এরপরই খ্রিস্টান মিশনারিদের তত্ত্বাবধানে তারা অনেকগুলো নতুন নতুন স্কুল ও ভারতীয় ভাষায় অনেকগুলো বই ছাপানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং এর সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলনও শুরু করে। পরবর্তীতে লর্ড হার্ডিঞ্জ রেজুলেশনের (অক্টোবর ১০, ১৮৪৪) মাধ্যমে সকল সরকারি নিয়োগে ইংরেজি জ্ঞানের অগ্রাধিকার প্রদানের বিষয়টি প্রচলন করা হয়। ১৯৫৪ সালের চার্লস উডের শিক্ষানীতির মাধ্যমে প্রত্যেক প্রদেশে আলাদা শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়।

১৮৫৭ সালে কলকাতা, বোম্বে ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই অঞ্চলে উচ্চশিক্ষার এক নতুন যুগের দ্বার উন্মোচন করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এই ধারণা থেকেই গৃহীত হয় সরকারের ভবিষ্যৎ শিক্ষানীতি। প্রাথমিকভাবে এই তিনিটি বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কলেজ ও ইনস্টিটিউট এর অধিভূক্তি, পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রকাশ, সনদ প্রদান এবং নানা আয়োজনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯০২ সালে লর্ড কার্জন ইন্ডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠনের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতিও উন্নত হয় ১৯১৭ সালে স্যার মাইকেল স্যাডলার এর নেতৃত্বে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠনের মাধ্যমে। যদিও কমিশনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো শুধুমাত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক তথাপিও এর প্রস্তবনাসমূহ পুরো ভারতবর্ষের উচ্চশিক্ষা পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কমিশন তিন বছর মেয়াদি অনার্স কোর্স চালু, বিজ্ঞান শিক্ষা চালুকরণ, টিউটোরিয়াল পদ্ধতি ও গবেষণা কাজের উপর গুরুত্ব প্রদান করে সুপরিশমালা পেশ করেন। ব্রিটিশ শাসনের শেষভাগে এসে প্রায় ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষা আরো বিস্তৃত হয় এবং এর অব্যবহতি পরেই ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এভাবে পালাক্রমে উচ্চশিক্ষা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।

আমরা তরুণরা কেন উচ্চশিক্ষাকে প্রাধান্য দিচ্ছি। কী কারণে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় উচ্চশিক্ষাকে কেন গ্রহণ করেছি। প্রধান প্রধান কারণগুলো উদঘাটন করতে গিয়ে দেখা যায়- আমরা উচ্চশিক্ষার অংশ নিচ্ছি দেশে ও দেশের বাইরে ভালো জব পাওয়ার জন্য, দেশের বাইরে লাইফ লিড করার জন্য, জীবনমান উন্নত করার জন্য, সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের জন্য, স্ট্যাটাস বাড়ানোর জন্য, ভালো পাত্রী বিবাহ করার জন্য ইত্যাদি। হ্যাঁ, বর্তমান বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী উপরোক্ত কারণগুলো উচ্চশিক্ষাকে সমর্থন করে।

দেশে এবং দেশের বাইরে ভালোমানের জব করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই উচ্চশিক্ষা শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। একটি পরিসংখ্যান দিলে স্পষ্ঠ হবে, দেশে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব। আসন্ন ৪১ তম বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন পড়েছে রেকর্ডসংখ্যক ৪ লাখ ৭৫ হাজার। এর আগে ৪০ তম বিসিএসে আবেদন করেছিল ৪ লাখ ১২ হাজার শিক্ষার্থী। দেশে জবের প্রধান ক্যাটাগরিগুলোতে যেতে পাড়ি দিতে হয় বিসিএস পরীক্ষা। আর তার জন্যও প্রয়োজন উচ্চশিক্ষার ধাপ অতিক্রম করা। বিদেশে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে বা সেখানে ভালো জব করতে আপনার উচ্চশিক্ষা প্রয়োজন। জীবনমান উন্নত করতে অর্থাৎ সমাজ বা দেশে আপনার গুরুত্ব বাড়াতে ও সবার চেয়ে উন্নত জীবন গড়তে হলে আপনাকে অবশ্যই উচ্চশিক্ষার শিক্ষিত হতে হবে। উচ্চশিক্ষায় পারে আপনার জীবনমান বদলে দিতে। তাছাড়াও উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি লাভের মাধ্যমে সমাজে আপনার স্ট্যাটাস থাকবে সবার চেয়ে ভিন্ন। আপনি একটি সমাজ ও দেশকে লিড দিতে পারবেন যখন আপনার নেতৃত্ব গুণের সঙ্গে উচ্চশিক্ষার ডিগ্রিও থাকবে। বর্তমানে জীবনের সকল ক্যাটাগরিতে উচ্চশিক্ষা প্রয়োজন এবং উচ্চশিক্ষা আপনাকে এগিয়ে রাখবে।

যদিও বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত বেকার প্রতিনিয়ত বাড়ছে কিন্তু উচ্চশিক্ষার গুরুত্বও বাড়ছে। দেশে এবং দেশের বাইরেও উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য বিদেশ পাড়ি দিচ্চে শিক্ষার্থীরা। নিজেকে তৈরি করতে, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে উচ্চশিক্ষার বিকল্প নেই। কঠিন ধাপগুলো পাড়ি দিয়ে হলেও উচ্চশিক্ষার সিঁড়িতে পা রাখা আবশ্যকীয়।

আমজাদ হোসেন হৃদয়

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।