মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতৃভাষার মর্যাদাকে সমুন্নত রাখা এবং দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীতে এখন আর একা একটি দেশ চলতে পারে না, অন্য দেশকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হয় এবং জীবন-জীবিকার জন্য অন্যভাষা শেখারও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু তাই বলে নিজের ভাষাকে ভুলে যাওয়া, নিজের ভাষা বিস্মৃত হওয়া এটা আমাদের জন্য মোটেই ঠিক নয়।’

তিনি বলেন,‘বিভিন্ন কাজে-কর্মে অনেককে ঘটনাক্রমে বিদেশে থাকতে হয়। কিন্তু, এই ভাষার মর্যাদাকে সবসময় আমাদের দিয়ে যেতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে ফেব্রুয়ারি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে ‘একুশে পদক-২০২০’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০ ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানকে এ বছর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসরকারি এ সম্মাননা ‘একুশে পদক’ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘এই একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করা। একুশ শিখিয়েছে আত্মমর্যাদাবোধ। একুশের এই রক্তের অক্ষরেই লিখে রাখা হয়েছিল আগামী দিনে আমাদের স্বাধীনতা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অমর একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। আমরা চাই এই গৌরবের ইতিহাস আমাদের দেশের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জানতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘মাতৃভাষা আন্দোলন শুধু মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন ছিল না, পক্ষান্তরে এটা ছিল স্বাধীকার আদায়ের,স্বাধীনতার আন্দোলন।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতার অংশবিশেষ উল্লেখ করেন। জাতির পিতা বলেন, ‘১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবলমাত্র ভাষা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, এ আন্দোলন ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।’

উল্লেখ্য, ৫ ফেব্রুয়ারি সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের একুশে পদক বিজয়ী হিসেবে ২০ ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানসহ ২১ জনের তালিকা ঘোষণা করেন।

পদকপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- ভাষা আন্দোলনে মরহুম আমিনুল ইসলাম বাদশা (মরণোত্তর), শিল্পকলায় (সংগীত) বেগম ডালিয়া নওশিন, শঙ্কর রায় ও মিতা হক, শিল্পকলায় (নৃত্য) মো. গোলাম মোস্তফা খান, শিল্পকলায় (অভিনয়) এমএম মহসীন, শিল্পকলায় (চারুকলা) অধ্যাপক শিল্পী ড. ফরিদা জামান, মুক্তিযুদ্ধে মরহুম হাজি আক্তার সরদার (মরণোত্তর), মরহুম আবদুল জব্বার (মরণোত্তর), মরহুম ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) (মরণোত্তর), সাংবাদিকতায় জাফর ওয়াজেদ (আলী ওয়াজেদ জাফর), গবেষণায় ড. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ-ক্বারী আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ, শিক্ষায় অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া, অর্থনীতিতে অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, সমাজসেবায় সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ভাষা ও সাহিত্যে ড. নুরুন নবী, মরহুম সিকদার আমিনুল হক (মরণোত্তর) ও কবি, সহিত্যিক, মুক্তিযোদ্ধা বেগম নাজমুন নেসা পিয়ারি এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রসূতি মায়ের জীবন রক্ষায় সায়েবা’স কীটের উদ্ভাবক অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার। পাশাপাশি ‘গবেষণা’য় একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।

পদক বিজয়ীরা প্রত্যেকে নিজে এবং মরণোত্তর পদক বিজয়ীদের পক্ষে তাদের পুত্র ও কন্যারা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষে পদক গ্রহণ করেন এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ।

বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মহান আত্মত্যাগ স্মরণে সরকার প্রতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে।

পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৩ তোলা ওজনের ১৮ ক্যারেট সোনার তৈরি একটি স্বর্ণপদক, পুরস্কারের অর্থের চেক এবং একটি সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয় ।

সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাগত বক্তৃতা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন।

মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিচারপতি, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, সরকারের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট নাগরিক, পূর্ববর্তী একুশে পদক বিজয়ী, বিভিন্ন দেশের কূটনিতিক ও সংস্থার প্রধান এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের ভাষার অধিকার, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের কৃষ্টিকে সমৃদ্ধ করা, চর্চা করা, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদেরই কর্তব্য।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে অর্জন করেছি, তার সুফল যেন আমাদের আগামী প্রজন্ম ভোগ করতে পারে, তারা যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, সেটাই আমরা চাই।’

পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যারা একুশে পদক পেয়েছেন তারা আমাদের গুণীজন। তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে কীর্তিমান। দেশ-জাতি-ভাষায় তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। সেই অবদানের কথা সবসময় আমরা স্মরণ করি।’

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রাক্কালে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি এই সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম যাতে কেউ মুছতে না পারে। সে লক্ষ্য নিয়েই পাকিস্তানি গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ নামে মোট চৌদ্দ খণ্ডের বই প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বইটির ইতোমধ্যে চার খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। পঞ্চম খণ্ড প্রকাশ করা হচ্ছে। কারণ, আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস মানুষের জানা দরকার।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীর সব ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে গবেষণা, সংরক্ষণ ও চর্চার জন্য ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পর পুনরায় উদ্যোগ নিয়ে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেছি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। যাতে আর কোন মাতৃভাষা হারিয়ে যেতে না পারে।’

তিনি নিজেও জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিয়মিত বাংলায় ভাষণ দিয়ে আসছেন বলেও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বছরব্যাপী মুজিববর্ষ উদযাপন এবং আগামী বছর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকালে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৮ ফল্গুন ১৪২৬, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪১

মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

বাসস

image

গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে পদকপ্রাপ্তদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতৃভাষার মর্যাদাকে সমুন্নত রাখা এবং দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীতে এখন আর একা একটি দেশ চলতে পারে না, অন্য দেশকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হয় এবং জীবন-জীবিকার জন্য অন্যভাষা শেখারও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু তাই বলে নিজের ভাষাকে ভুলে যাওয়া, নিজের ভাষা বিস্মৃত হওয়া এটা আমাদের জন্য মোটেই ঠিক নয়।’

তিনি বলেন,‘বিভিন্ন কাজে-কর্মে অনেককে ঘটনাক্রমে বিদেশে থাকতে হয়। কিন্তু, এই ভাষার মর্যাদাকে সবসময় আমাদের দিয়ে যেতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে ফেব্রুয়ারি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে ‘একুশে পদক-২০২০’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০ ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানকে এ বছর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসরকারি এ সম্মাননা ‘একুশে পদক’ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘এই একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করা। একুশ শিখিয়েছে আত্মমর্যাদাবোধ। একুশের এই রক্তের অক্ষরেই লিখে রাখা হয়েছিল আগামী দিনে আমাদের স্বাধীনতা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অমর একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। আমরা চাই এই গৌরবের ইতিহাস আমাদের দেশের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জানতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘মাতৃভাষা আন্দোলন শুধু মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন ছিল না, পক্ষান্তরে এটা ছিল স্বাধীকার আদায়ের,স্বাধীনতার আন্দোলন।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতার অংশবিশেষ উল্লেখ করেন। জাতির পিতা বলেন, ‘১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবলমাত্র ভাষা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, এ আন্দোলন ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।’

উল্লেখ্য, ৫ ফেব্রুয়ারি সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের একুশে পদক বিজয়ী হিসেবে ২০ ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানসহ ২১ জনের তালিকা ঘোষণা করেন।

পদকপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- ভাষা আন্দোলনে মরহুম আমিনুল ইসলাম বাদশা (মরণোত্তর), শিল্পকলায় (সংগীত) বেগম ডালিয়া নওশিন, শঙ্কর রায় ও মিতা হক, শিল্পকলায় (নৃত্য) মো. গোলাম মোস্তফা খান, শিল্পকলায় (অভিনয়) এমএম মহসীন, শিল্পকলায় (চারুকলা) অধ্যাপক শিল্পী ড. ফরিদা জামান, মুক্তিযুদ্ধে মরহুম হাজি আক্তার সরদার (মরণোত্তর), মরহুম আবদুল জব্বার (মরণোত্তর), মরহুম ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) (মরণোত্তর), সাংবাদিকতায় জাফর ওয়াজেদ (আলী ওয়াজেদ জাফর), গবেষণায় ড. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ-ক্বারী আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ, শিক্ষায় অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া, অর্থনীতিতে অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, সমাজসেবায় সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ভাষা ও সাহিত্যে ড. নুরুন নবী, মরহুম সিকদার আমিনুল হক (মরণোত্তর) ও কবি, সহিত্যিক, মুক্তিযোদ্ধা বেগম নাজমুন নেসা পিয়ারি এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রসূতি মায়ের জীবন রক্ষায় সায়েবা’স কীটের উদ্ভাবক অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার। পাশাপাশি ‘গবেষণা’য় একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।

পদক বিজয়ীরা প্রত্যেকে নিজে এবং মরণোত্তর পদক বিজয়ীদের পক্ষে তাদের পুত্র ও কন্যারা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষে পদক গ্রহণ করেন এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ।

বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মহান আত্মত্যাগ স্মরণে সরকার প্রতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে।

পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৩ তোলা ওজনের ১৮ ক্যারেট সোনার তৈরি একটি স্বর্ণপদক, পুরস্কারের অর্থের চেক এবং একটি সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয় ।

সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাগত বক্তৃতা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন।

মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিচারপতি, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, সরকারের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট নাগরিক, পূর্ববর্তী একুশে পদক বিজয়ী, বিভিন্ন দেশের কূটনিতিক ও সংস্থার প্রধান এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের ভাষার অধিকার, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের কৃষ্টিকে সমৃদ্ধ করা, চর্চা করা, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদেরই কর্তব্য।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে অর্জন করেছি, তার সুফল যেন আমাদের আগামী প্রজন্ম ভোগ করতে পারে, তারা যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, সেটাই আমরা চাই।’

পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যারা একুশে পদক পেয়েছেন তারা আমাদের গুণীজন। তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে কীর্তিমান। দেশ-জাতি-ভাষায় তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। সেই অবদানের কথা সবসময় আমরা স্মরণ করি।’

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রাক্কালে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি এই সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম যাতে কেউ মুছতে না পারে। সে লক্ষ্য নিয়েই পাকিস্তানি গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ নামে মোট চৌদ্দ খণ্ডের বই প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বইটির ইতোমধ্যে চার খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। পঞ্চম খণ্ড প্রকাশ করা হচ্ছে। কারণ, আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস মানুষের জানা দরকার।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীর সব ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে গবেষণা, সংরক্ষণ ও চর্চার জন্য ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পর পুনরায় উদ্যোগ নিয়ে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেছি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। যাতে আর কোন মাতৃভাষা হারিয়ে যেতে না পারে।’

তিনি নিজেও জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিয়মিত বাংলায় ভাষণ দিয়ে আসছেন বলেও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বছরব্যাপী মুজিববর্ষ উদযাপন এবং আগামী বছর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকালে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন।