মাদ্রাসা শিক্ষক নিয়োগে অধিদফতরের আদেশে তোলপাড় ও অসন্তোষ

মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে আমলা বিশেষ করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রতিনিধি করার এক আদেশ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মাদ্রাসা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) পদে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারকে বাদ দেয়ায় সৃষ্ট অসন্তোষের মধ্যেই গতকাল অধিদফতরের জারি করা আদেশ নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পরেছে শিক্ষকদের মাঝে। মাদ্রাসা ও সাধারণ শিক্ষক সংগঠনগুলো অবিলম্বে ওই আদেশ প্রত্যাহার করে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনের ক্ষমতা পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় লাগাতার কর্মসূচির ডাক দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।

মাদ্রাসা অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ আদেশ জারি হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। সূত্র জানায়, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের ডিজির পদে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের বাইরে গিয়ে নিয়োগ দেয়ার পর থেকেই অসন্তোষ বেড়েছে। অধিদফতর প্রতিষ্ঠার আগে মাদ্রাসা শিক্ষা ছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) একটি শাখা। মাউশি মহাপরিচালক পদে সব সময় আছেন বিসিএস ক্যাডারের শিক্ষকরাই। ফলে নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধিও রাখা হয় সরকারি কলেজের শিক্ষক কিংবা শিক্ষা প্রশাসনের মাঠ পযায়ের কর্মকর্তাদের। কিন্তু মাদ্রাসা অধিদফতর প্রতিষ্ঠার পরই এ পদে নিয়োগ পান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য। এখন ডিজি হিসেবে আছেন অতিরিক্ত সচিব সফিউদ্দিন আহমদ।

ডিজি সফিউদ্দিন আহমদ স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, ‘মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি হিসেবে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসককে মনোনয়ন দেয়া হবে বা তারা অন্য প্রতিনিধি দেবেন। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষক কর্মচারীসহ সব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা প্রযোজ্য বলে গণ্য হবে।’ এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মহাপরিচালক সফিউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, মাদ্রাসায় নিয়োগের ক্ষেত্রে ডিজি প্রতিনিধি নির্বাচনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অবিলম্বে এটি কার্যকর করা হবে। এর বেশি কিছুৃ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানাতে রাজি হচ্ছেন না।

মাদ্রাসা অধিদফতরের এক উপপরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত সারাদেশে শিক্ষক কর্মচারীদের মাঝে আরও অসন্তোষ সৃষ্টি করবে। কিন্তু আমাদের আপত্তিতে কোন কাজ হচ্ছে না।’

অধিদফতরের আদেশের পরপরই এ ঘটনায় অসন্তোষ বেড়েছে শিক্ষক ও শিক্ষক সংগঠনগুলোর মাঝে। সরকার সমর্থক শিক্ষক সংগঠনগুলোও এ ধরনের সিদ্ধান্তে বড় ধরনের অসন্তোষের আশঙ্কা করছে।

স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেছেন, ‘আমরা মনে করি তড়িঘড়ি করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। এতে অসন্তোষের সুযোগ নেবে সরকার বিরোধীরা। তাই সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা জরুরি। অন্যথায় সমস্যা বাড়তে পারে। তাছাড়া এতে নিয়োগে যে অনিয়ম দুর্নীতি বাড়বে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে। তাই হুট করে এটা করা কোনভাবেই উচিত নয়।’

মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেসীনের মহাসচিব সাব্বির আহমেদ মমতাজী আদেশের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘সারাদেশের শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনকে মর্যাদা ও কর্তৃত্ব শূন্য করার এটা একটা উদ্যোগ। আমরা এ সিদ্ধান্ত কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য মনে করি না। মাউশি অধিফতরের ডিজি শিক্ষক তাই সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনকে মর্যাদা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মাদ্রাসার ডিজি শিক্ষা ক্যাডারের নয় বলেই এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত এসেছে। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা বহুবার দেখা করে বলেছি শিক্ষা প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে নিয়োগ কমিটি করার জন্য। কিন্তু তা না করে এখন উল্টো যে কাজটা অধিদফতর করেছে তাতে সারাদেশে অসন্তোষ হবে। শিক্ষার ক্ষতি হবে। তাই এটা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিৎ।’

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৮ ফল্গুন ১৪২৬, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪১

মাদ্রাসা শিক্ষক নিয়োগে অধিদফতরের আদেশে তোলপাড় ও অসন্তোষ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে আমলা বিশেষ করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রতিনিধি করার এক আদেশ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মাদ্রাসা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) পদে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারকে বাদ দেয়ায় সৃষ্ট অসন্তোষের মধ্যেই গতকাল অধিদফতরের জারি করা আদেশ নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পরেছে শিক্ষকদের মাঝে। মাদ্রাসা ও সাধারণ শিক্ষক সংগঠনগুলো অবিলম্বে ওই আদেশ প্রত্যাহার করে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনের ক্ষমতা পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় লাগাতার কর্মসূচির ডাক দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।

মাদ্রাসা অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ আদেশ জারি হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। সূত্র জানায়, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের ডিজির পদে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের বাইরে গিয়ে নিয়োগ দেয়ার পর থেকেই অসন্তোষ বেড়েছে। অধিদফতর প্রতিষ্ঠার আগে মাদ্রাসা শিক্ষা ছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) একটি শাখা। মাউশি মহাপরিচালক পদে সব সময় আছেন বিসিএস ক্যাডারের শিক্ষকরাই। ফলে নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধিও রাখা হয় সরকারি কলেজের শিক্ষক কিংবা শিক্ষা প্রশাসনের মাঠ পযায়ের কর্মকর্তাদের। কিন্তু মাদ্রাসা অধিদফতর প্রতিষ্ঠার পরই এ পদে নিয়োগ পান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য। এখন ডিজি হিসেবে আছেন অতিরিক্ত সচিব সফিউদ্দিন আহমদ।

ডিজি সফিউদ্দিন আহমদ স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, ‘মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি হিসেবে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসককে মনোনয়ন দেয়া হবে বা তারা অন্য প্রতিনিধি দেবেন। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষক কর্মচারীসহ সব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা প্রযোজ্য বলে গণ্য হবে।’ এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মহাপরিচালক সফিউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, মাদ্রাসায় নিয়োগের ক্ষেত্রে ডিজি প্রতিনিধি নির্বাচনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অবিলম্বে এটি কার্যকর করা হবে। এর বেশি কিছুৃ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানাতে রাজি হচ্ছেন না।

মাদ্রাসা অধিদফতরের এক উপপরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত সারাদেশে শিক্ষক কর্মচারীদের মাঝে আরও অসন্তোষ সৃষ্টি করবে। কিন্তু আমাদের আপত্তিতে কোন কাজ হচ্ছে না।’

অধিদফতরের আদেশের পরপরই এ ঘটনায় অসন্তোষ বেড়েছে শিক্ষক ও শিক্ষক সংগঠনগুলোর মাঝে। সরকার সমর্থক শিক্ষক সংগঠনগুলোও এ ধরনের সিদ্ধান্তে বড় ধরনের অসন্তোষের আশঙ্কা করছে।

স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেছেন, ‘আমরা মনে করি তড়িঘড়ি করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। এতে অসন্তোষের সুযোগ নেবে সরকার বিরোধীরা। তাই সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা জরুরি। অন্যথায় সমস্যা বাড়তে পারে। তাছাড়া এতে নিয়োগে যে অনিয়ম দুর্নীতি বাড়বে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে। তাই হুট করে এটা করা কোনভাবেই উচিত নয়।’

মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেসীনের মহাসচিব সাব্বির আহমেদ মমতাজী আদেশের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘সারাদেশের শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনকে মর্যাদা ও কর্তৃত্ব শূন্য করার এটা একটা উদ্যোগ। আমরা এ সিদ্ধান্ত কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য মনে করি না। মাউশি অধিফতরের ডিজি শিক্ষক তাই সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনকে মর্যাদা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মাদ্রাসার ডিজি শিক্ষা ক্যাডারের নয় বলেই এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত এসেছে। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা বহুবার দেখা করে বলেছি শিক্ষা প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে নিয়োগ কমিটি করার জন্য। কিন্তু তা না করে এখন উল্টো যে কাজটা অধিদফতর করেছে তাতে সারাদেশে অসন্তোষ হবে। শিক্ষার ক্ষতি হবে। তাই এটা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিৎ।’