যে সূর্য অস্ত যাওয়ার নয়

পৃথিবীর বিবর্তনের এ যাত্রায় ৬ হাজার এর অধিক ভাষার পদচারনার সাক্ষী হয়েছে এ গোটা বিশ্ব ব্রহ্মান্ড। এর ভিতর আবার অনেকে অস্তিত্বের সংকটে আছে বা আবার অনেকে আপন আলোয় আলোকিত। বাংলা ভাষা সারা বিশ্বের মাতৃভাষাগুলোর মধ্যে ৪র্থ স্থান অধিকার করে আপন মহিমাময় উদ্ভাসিত গৌরবের নৌকায় চলমান এক সত্তা। এ বাংলা ভাষায় কোটি কোটি মানুষের যক্ষের ধন। যাকে হারালে অসাড় হয় আমার চিত্তের জগত, স্তব্ধতায় বাকরুদ্ধ হয় বুদ্ধি, জীবন ডুবে অনিঃশেষ নিষ্পেষণের অর্ণবে। তবে হ্যাঁ, সহায় সম্পদে ভরপুর সৌন্দর্যের রাণী ‘বাংলা’ তার সন্তান ‘বাংলা ভাষাকে’ রাখতে পারেনি আপন ডেরায়। সে মিশে গেছে গ্রহণ, বর্জন, মিশ্রণের খেলায়। এটাই পৃথিবীর নিয়ম, এটাই বির্বতনের লীলাখেলা। কিন্তু এটি চিন্তার কপালে ভাজ ফেলে না বরং সমৃদ্ধশালী হয় আপন ধনভাণ্ডার। এরপর আসে চিন্তার অভিব্যক্তি।অতিউৎসাহী বাঙালির ‘ভিনদেশী শব্দ চুরির অপচেষ্টা’ তথাকথিত সভ্য সমাজের জাতে উঠার মোহনায় আপন স্বত্বার বলি দেয়ার গল্প! আপন ‘বাংলায়’ বা ‘ভাষায়’ হয় যে ভাবতরঙ্গের স্বাধীন সাবলীল চলাফেরা ঠিক সে জায়গাতে বর্ণচোরার মতো আমরা জোর করে ব্যবহার করছি হিন্দী ইংরেজির মতো ভিনদেশী ভাষা। আবার মুদ্রার অপর পিঠে বাস করে আরেকটি গল্প, নিজেকে বাঙালি দাবি করে ঠিকই কিন্তু বাংলা বলতে হয় কণ্ঠরোধ!

ঠিক এ কারণগুলোতেই আমাদের মনে রাখা উচিত, এই বাংলা ভাষাকে বাদ দিলে আমরা হব অস্তিত্বের উদ্বাস্তু। শুধুমাত্র এই অস্তিত্বের কারণেই একটি ৮ ফাল্গুন রঞ্জিত বুকের কৃষ্ণচূড়ার অবারিত ধারায়। এই অস্তিত্বের প্রশ্নে প্রথমবারের মত বাঙালি সমস্ত দূরত্বকে দূরে ঠেলে দিয়ে মিলে যায় আত্মপরিচয়ের মোহনায়। যার ফলশ্রুতিতে একটি তর্জনী উঁচু হয় রেসকোর্স ময়দানে। আসে ১৬ ডিসেম্বরের সোনালি বিকেল। বীরের রক্তের ছোঁয়াই জাগ্রত বাঙালি ইউনেস্কো হাত ধরে স্বীকৃত হয়ে বিশ্বের দরবারে। আজ ‘বাংলা ও বাঙালির’ নামে জয়ধ্বনি দেয় সারা বিশ্ব। বাঙালির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এই আন্দোলন প্রমাণ করে বাঙালি নামক সূর্য অস্ত যেতে আসেনি বরং চাপিয়ে দেয়া অন্ধকারে আলোর মশাল হাতে জাগ্রত তারুণ্যের প্রতিচ্ছবি হতে এসেছে। বাংলা ভাষা স্বীকৃত হয়েছে, বাঙালি জাতি স্বাধীন হয়েছে কিন্তু পরিতাপের বিষয় বাংলা আজও হাঁটতে পারে না আভিজাত্যের ডেরায়; এখনো প্রাচীন আমলের মতো বাংলা বাস করে প্রান্তিক জনপদে। যেদিন পর্যন্ত না আমরা আমাদের জীবনের সর্বস্তরে বাংলাকে নিশ্চিত করতে পারব ততদিন পর্যন্ত সম্ভবত বীরের জন্ম হবে না এ বাংলায়। আসুন আমরা আমাদের সংকীর্ণতাকে দূরে সরিয়ে রেখে শপথ করি আমি আমার জায়গা হতে সঠিক বাংলা ভাষার চর্চা করি ও বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করি। আজকের এই একুশে এটাই হবে ভাষা শহীদদের প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ নিবেদন।

শরীফাইন আশরাফ

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৮ ফল্গুন ১৪২৬, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪১

যে সূর্য অস্ত যাওয়ার নয়

পৃথিবীর বিবর্তনের এ যাত্রায় ৬ হাজার এর অধিক ভাষার পদচারনার সাক্ষী হয়েছে এ গোটা বিশ্ব ব্রহ্মান্ড। এর ভিতর আবার অনেকে অস্তিত্বের সংকটে আছে বা আবার অনেকে আপন আলোয় আলোকিত। বাংলা ভাষা সারা বিশ্বের মাতৃভাষাগুলোর মধ্যে ৪র্থ স্থান অধিকার করে আপন মহিমাময় উদ্ভাসিত গৌরবের নৌকায় চলমান এক সত্তা। এ বাংলা ভাষায় কোটি কোটি মানুষের যক্ষের ধন। যাকে হারালে অসাড় হয় আমার চিত্তের জগত, স্তব্ধতায় বাকরুদ্ধ হয় বুদ্ধি, জীবন ডুবে অনিঃশেষ নিষ্পেষণের অর্ণবে। তবে হ্যাঁ, সহায় সম্পদে ভরপুর সৌন্দর্যের রাণী ‘বাংলা’ তার সন্তান ‘বাংলা ভাষাকে’ রাখতে পারেনি আপন ডেরায়। সে মিশে গেছে গ্রহণ, বর্জন, মিশ্রণের খেলায়। এটাই পৃথিবীর নিয়ম, এটাই বির্বতনের লীলাখেলা। কিন্তু এটি চিন্তার কপালে ভাজ ফেলে না বরং সমৃদ্ধশালী হয় আপন ধনভাণ্ডার। এরপর আসে চিন্তার অভিব্যক্তি।অতিউৎসাহী বাঙালির ‘ভিনদেশী শব্দ চুরির অপচেষ্টা’ তথাকথিত সভ্য সমাজের জাতে উঠার মোহনায় আপন স্বত্বার বলি দেয়ার গল্প! আপন ‘বাংলায়’ বা ‘ভাষায়’ হয় যে ভাবতরঙ্গের স্বাধীন সাবলীল চলাফেরা ঠিক সে জায়গাতে বর্ণচোরার মতো আমরা জোর করে ব্যবহার করছি হিন্দী ইংরেজির মতো ভিনদেশী ভাষা। আবার মুদ্রার অপর পিঠে বাস করে আরেকটি গল্প, নিজেকে বাঙালি দাবি করে ঠিকই কিন্তু বাংলা বলতে হয় কণ্ঠরোধ!

ঠিক এ কারণগুলোতেই আমাদের মনে রাখা উচিত, এই বাংলা ভাষাকে বাদ দিলে আমরা হব অস্তিত্বের উদ্বাস্তু। শুধুমাত্র এই অস্তিত্বের কারণেই একটি ৮ ফাল্গুন রঞ্জিত বুকের কৃষ্ণচূড়ার অবারিত ধারায়। এই অস্তিত্বের প্রশ্নে প্রথমবারের মত বাঙালি সমস্ত দূরত্বকে দূরে ঠেলে দিয়ে মিলে যায় আত্মপরিচয়ের মোহনায়। যার ফলশ্রুতিতে একটি তর্জনী উঁচু হয় রেসকোর্স ময়দানে। আসে ১৬ ডিসেম্বরের সোনালি বিকেল। বীরের রক্তের ছোঁয়াই জাগ্রত বাঙালি ইউনেস্কো হাত ধরে স্বীকৃত হয়ে বিশ্বের দরবারে। আজ ‘বাংলা ও বাঙালির’ নামে জয়ধ্বনি দেয় সারা বিশ্ব। বাঙালির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এই আন্দোলন প্রমাণ করে বাঙালি নামক সূর্য অস্ত যেতে আসেনি বরং চাপিয়ে দেয়া অন্ধকারে আলোর মশাল হাতে জাগ্রত তারুণ্যের প্রতিচ্ছবি হতে এসেছে। বাংলা ভাষা স্বীকৃত হয়েছে, বাঙালি জাতি স্বাধীন হয়েছে কিন্তু পরিতাপের বিষয় বাংলা আজও হাঁটতে পারে না আভিজাত্যের ডেরায়; এখনো প্রাচীন আমলের মতো বাংলা বাস করে প্রান্তিক জনপদে। যেদিন পর্যন্ত না আমরা আমাদের জীবনের সর্বস্তরে বাংলাকে নিশ্চিত করতে পারব ততদিন পর্যন্ত সম্ভবত বীরের জন্ম হবে না এ বাংলায়। আসুন আমরা আমাদের সংকীর্ণতাকে দূরে সরিয়ে রেখে শপথ করি আমি আমার জায়গা হতে সঠিক বাংলা ভাষার চর্চা করি ও বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করি। আজকের এই একুশে এটাই হবে ভাষা শহীদদের প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ নিবেদন।

শরীফাইন আশরাফ