পিছিয়ে যাচ্ছে আ’লীগের ৪৭ জেলা কমিটির সম্মেলন

বাড়ছে স্থানীয় কোন্দল

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ৪৭ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা আবারও পিছিয়ে গেছে। অথচ গত বছর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ এসব জেলায় সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। ২১তম জাতীয় সম্মেলনের ভাষণে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ বিষয়ে নিজেদের (দলের) অপারগতা স্বীকার করে দ্রুত এসব জেলায় সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী অসমাপ্ত এসব জেলাগুলোর সম্মেলন মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন করার কেন্দ্রীয় ঘোষণা আসে। এখন এপ্রিলে এসব জেলায় সম্মেলন কারার চিন্তা করছে ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে, আগামী ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে কেন্দ্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোকে ভেঙে নতুন কমিটির হাতে এ দায়িত্ব দেয়ার পরিকল্পনা ছিল কেন্দ্রের। এখন মুজিববর্ষ উদ্বোধনের পরে এসব জেলায় সম্মেলন হলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিই দায়িত্ব পাবে। সূত্র মতে, দীর্ঘদিন একই বা গুটিকয়েক নেতার নিয়ন্ত্রণে থাকা জেলা কমিটিগুলো ক্রমাগত জৌলুস হারাচ্ছে; বাড়ছে স্থানীয় কোন্দল। তৃণমূল কর্মীরাও তাদের অধীনে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালনে আগ্রহ হারাচ্ছেন। বিষয়টি কেন্দ্রের নজরে এলেও নতুন মুখ দিয়ে জেলা কমিটি গঠনে ভরসা পাচ্ছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কারণ স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের যেমন কেন্দ্রীয় পর্যায়ে লবিং রয়েছে, তেমনি কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতারাও নিজ নিজ বলয়ে ব্যক্তিগত পছন্দকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। ফলে স্থানীয় কোন্দল মীমাংসায় অগ্রগতি হচ্ছে না, যথা সময়ে তৃণমূল সম্মেলন করাও সম্ভব হচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গত বুধবার রাতে এ বিষয়ে সংবাদকে বলেন, এ বছর আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন। আমরা সারাদেশে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বস্তরে জাকজমকপূর্ণভাবে মুজিববর্ষ উদযাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ লক্ষ্যে তৃণমূলকে সংগঠতি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরসরি তত্ত্বাবধানে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে সম্মেলন কিছুটা পিছিয়ে গেছে। এছাড়া, ঢাকা সিটি নির্বাচনের কারণেও একটু জটিলতা তৈরি হয়েছে। আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, জেলা সম্মেলনগুলো একটু পরে হলেও কেন্দ্রীয় তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা হবে, যাতে তৃণমূলের আস্থা অর্জন করা যায়।

আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। জাতীয় কাউন্সিলের আগে সাংগঠনিক ৭৮টি জেলার মধ্যে (২টি জেলা কমিটির মেয়াদ ছিল) ২৯টি জেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এখনও ৪৭টি সাংগঠনিক জেলা চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। মুজিববর্ষের উদ্বোধনের আগেই অসমাপ্ত (মেয়াদোত্তীর্ণ) ৪৭ সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন করতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। সে লক্ষ্যে মার্চের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এসব জেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের পরিকল্পনা ছিল।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের পর বলেছিলেন, অসমাপ্ত জেলা সম্মেলন মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে। লক্ষ্য ছিল, আগামী ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনের আগেই এসব সম্মেলন সম্পন্ন করা। পরবর্তীতে ওবায়দুল কাদের বলেন, অসমাপ্ত জেলা সম্মেলনগুলো দ্রুতই করা হবে। তবে জেলা সম্মেলনের আগে তৃণমূলের (উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড) সম্মেলন হবে। তিনি জানান, ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি কোটালিপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ায় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তা শুরু হবে। ইতোমধ্যে কোটালিপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে। তবে গত বুধবার ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, অসমাপ্ত জেলাগুলোর সম্মেলন আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানায়, ফেব্রুয়রির শুরুতে দলের জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌর শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়কদের কাছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পাঠানো এক চিঠিতে আগামী ৬ মার্চের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও ইউনিটগুলোর সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। চিঠিতে যেসব সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেসব জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় দফতরে জমা দিতে বলা হয়। যেসব সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন হয়নি, দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেসব জেলায় সম্মেলন শেষ করতে বলা হয়। চিঠিতে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি হাতে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া, সারাদেশে ‘সদস্য সংগ্রহ অভিযান’ জোরদার করতে আগামী ১ মার্চ থেকে দলের কেন্দ্রীয় দফতর থেকে সদস্য সংগ্রহ বই, ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংগ্রহ করার কথাও বলা হয়।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, অধিকাংশ সাংগঠনিক জেলায় যথাসময়ে সম্মেলন না হওয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওইসব কমিটির অধীনে কর্মসূচি পালন করতে তৃণমূল কর্মীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। আবার অনেক উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় তৃণমূলে সাংগঠনিকভাবে অনেকটা অগোছালো অবস্থায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত বুধবার রাজধানীতে এক যৌথসভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, দল ক্ষমতায় আছে বলে সাংগঠনিক দুর্বলতা উপলদ্ধি করতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, দল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হলে সরকার কখনই শক্তিশালী হবে না। আমাদের তৃণমূল থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য সংবাদকে বলেন, দলের অনেক কিছুই অগোছালো। অতি জরুরি দেখলে নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) নিজে হস্তক্ষেপ করেন। তখন সমস্যার সমাধান হয়। অন্যথায় তা ঝুলে থাকে। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, গত বছর নভেম্বর জুড়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের জাতীয় সম্মেলন হয়। মাসের শেষ সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরেও আওয়ামী লীগের দুটি কমিটি গঠন করা হয়। এসব সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতাদের পরবর্তি ৭ দিন, কারও ১৫ দিন বা এক মাস সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শেষ করার কথা, যা এখনও সম্পন্ন হয়নি।

কেন্দ্রীয় ওই নেতা বলেন, সম্প্রতি আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার এবং স্বেচ্ছা সেবকলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগসহ অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোকেও দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। নেত্রীর (শেখ হাসিনার) হস্তক্ষেপের পর সহযোগী এসব সংগঠনগুলো কাজ গোছানো শুরু করেছে। তিনি বলেন, অসমাপ্ত জেলাগুলোর সম্মেলনও জাতীয় সম্মেলনের পরপরই করার কথা ছিল। এখন তা বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এ বিষয়েও নেত্রীর (শেখ হাসিনার) কঠোর নির্দেশনা লাগবে।

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৯ ফল্গুন ১৪২৬, ২৭ জমাদিউল সানি ১৪৪১

নানা জটিলতায়

পিছিয়ে যাচ্ছে আ’লীগের ৪৭ জেলা কমিটির সম্মেলন

বাড়ছে স্থানীয় কোন্দল

ফয়েজ আহমেদ তুষার |

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ৪৭ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা আবারও পিছিয়ে গেছে। অথচ গত বছর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ এসব জেলায় সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। ২১তম জাতীয় সম্মেলনের ভাষণে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ বিষয়ে নিজেদের (দলের) অপারগতা স্বীকার করে দ্রুত এসব জেলায় সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী অসমাপ্ত এসব জেলাগুলোর সম্মেলন মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন করার কেন্দ্রীয় ঘোষণা আসে। এখন এপ্রিলে এসব জেলায় সম্মেলন কারার চিন্তা করছে ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে, আগামী ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে কেন্দ্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোকে ভেঙে নতুন কমিটির হাতে এ দায়িত্ব দেয়ার পরিকল্পনা ছিল কেন্দ্রের। এখন মুজিববর্ষ উদ্বোধনের পরে এসব জেলায় সম্মেলন হলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিই দায়িত্ব পাবে। সূত্র মতে, দীর্ঘদিন একই বা গুটিকয়েক নেতার নিয়ন্ত্রণে থাকা জেলা কমিটিগুলো ক্রমাগত জৌলুস হারাচ্ছে; বাড়ছে স্থানীয় কোন্দল। তৃণমূল কর্মীরাও তাদের অধীনে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালনে আগ্রহ হারাচ্ছেন। বিষয়টি কেন্দ্রের নজরে এলেও নতুন মুখ দিয়ে জেলা কমিটি গঠনে ভরসা পাচ্ছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কারণ স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের যেমন কেন্দ্রীয় পর্যায়ে লবিং রয়েছে, তেমনি কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতারাও নিজ নিজ বলয়ে ব্যক্তিগত পছন্দকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। ফলে স্থানীয় কোন্দল মীমাংসায় অগ্রগতি হচ্ছে না, যথা সময়ে তৃণমূল সম্মেলন করাও সম্ভব হচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গত বুধবার রাতে এ বিষয়ে সংবাদকে বলেন, এ বছর আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন। আমরা সারাদেশে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বস্তরে জাকজমকপূর্ণভাবে মুজিববর্ষ উদযাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ লক্ষ্যে তৃণমূলকে সংগঠতি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরসরি তত্ত্বাবধানে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে সম্মেলন কিছুটা পিছিয়ে গেছে। এছাড়া, ঢাকা সিটি নির্বাচনের কারণেও একটু জটিলতা তৈরি হয়েছে। আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, জেলা সম্মেলনগুলো একটু পরে হলেও কেন্দ্রীয় তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা হবে, যাতে তৃণমূলের আস্থা অর্জন করা যায়।

আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। জাতীয় কাউন্সিলের আগে সাংগঠনিক ৭৮টি জেলার মধ্যে (২টি জেলা কমিটির মেয়াদ ছিল) ২৯টি জেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এখনও ৪৭টি সাংগঠনিক জেলা চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। মুজিববর্ষের উদ্বোধনের আগেই অসমাপ্ত (মেয়াদোত্তীর্ণ) ৪৭ সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন করতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। সে লক্ষ্যে মার্চের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এসব জেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের পরিকল্পনা ছিল।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের পর বলেছিলেন, অসমাপ্ত জেলা সম্মেলন মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে। লক্ষ্য ছিল, আগামী ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনের আগেই এসব সম্মেলন সম্পন্ন করা। পরবর্তীতে ওবায়দুল কাদের বলেন, অসমাপ্ত জেলা সম্মেলনগুলো দ্রুতই করা হবে। তবে জেলা সম্মেলনের আগে তৃণমূলের (উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড) সম্মেলন হবে। তিনি জানান, ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি কোটালিপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ায় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তা শুরু হবে। ইতোমধ্যে কোটালিপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে। তবে গত বুধবার ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, অসমাপ্ত জেলাগুলোর সম্মেলন আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানায়, ফেব্রুয়রির শুরুতে দলের জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌর শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়কদের কাছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পাঠানো এক চিঠিতে আগামী ৬ মার্চের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও ইউনিটগুলোর সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। চিঠিতে যেসব সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেসব জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় দফতরে জমা দিতে বলা হয়। যেসব সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন হয়নি, দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেসব জেলায় সম্মেলন শেষ করতে বলা হয়। চিঠিতে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি হাতে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া, সারাদেশে ‘সদস্য সংগ্রহ অভিযান’ জোরদার করতে আগামী ১ মার্চ থেকে দলের কেন্দ্রীয় দফতর থেকে সদস্য সংগ্রহ বই, ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংগ্রহ করার কথাও বলা হয়।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, অধিকাংশ সাংগঠনিক জেলায় যথাসময়ে সম্মেলন না হওয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওইসব কমিটির অধীনে কর্মসূচি পালন করতে তৃণমূল কর্মীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। আবার অনেক উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় তৃণমূলে সাংগঠনিকভাবে অনেকটা অগোছালো অবস্থায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত বুধবার রাজধানীতে এক যৌথসভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, দল ক্ষমতায় আছে বলে সাংগঠনিক দুর্বলতা উপলদ্ধি করতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, দল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হলে সরকার কখনই শক্তিশালী হবে না। আমাদের তৃণমূল থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য সংবাদকে বলেন, দলের অনেক কিছুই অগোছালো। অতি জরুরি দেখলে নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) নিজে হস্তক্ষেপ করেন। তখন সমস্যার সমাধান হয়। অন্যথায় তা ঝুলে থাকে। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, গত বছর নভেম্বর জুড়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের জাতীয় সম্মেলন হয়। মাসের শেষ সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরেও আওয়ামী লীগের দুটি কমিটি গঠন করা হয়। এসব সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতাদের পরবর্তি ৭ দিন, কারও ১৫ দিন বা এক মাস সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শেষ করার কথা, যা এখনও সম্পন্ন হয়নি।

কেন্দ্রীয় ওই নেতা বলেন, সম্প্রতি আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার এবং স্বেচ্ছা সেবকলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগসহ অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোকেও দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। নেত্রীর (শেখ হাসিনার) হস্তক্ষেপের পর সহযোগী এসব সংগঠনগুলো কাজ গোছানো শুরু করেছে। তিনি বলেন, অসমাপ্ত জেলাগুলোর সম্মেলনও জাতীয় সম্মেলনের পরপরই করার কথা ছিল। এখন তা বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এ বিষয়েও নেত্রীর (শেখ হাসিনার) কঠোর নির্দেশনা লাগবে।