ক্ষতিপূরণ চাই ও রাসায়নিক গুদাম সরাও

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে তাদের স্বজনরা। সেসঙ্গে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের গুদাম সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নেয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা। গতকাল ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে পাঁচটি সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘ঐক্যবদ্ধ সকল সামাজিক সংগঠনের’ ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ওয়াহেদ ম্যানশনের আগুনে ঘটনাস্থলে ৬৭ জন মারা যান। পরে আহতদের মধ্যে থেকে আরও চারজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

সংগঠনটির আহ্বায়ক ও নিহতদের দু’জনের স্বজন এমএ রহিম বলেন, চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেল, অথচ নিহত, আহত, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো কীভাবে আছে খোঁজ নেয়ার লোক পাইনি, পাইনি কোন সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা। কিন্তু অসহায় পরিবারগুলো দিন দিন ভিটা-বাড়ি বিক্রি করে নিঃস্ব। আর্থিকসহ অন্যান্য সহায়তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আগুনে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের পরিবারের চিকিৎসা ও পড়াশোনার ব্যয় বহন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান ও ক্ষতিগ্রস্ত ওয়াহেদ ম্যানশন মেরামতের সুযোগ দিয়ে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার ব্যবস্থা করার দাবি সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।

আগের দিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নিহতদের ৩১ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার কথা জানান মেয়র সাঈদ খোকন। এ বিষয়ে রহিম বলেন, ৩১ পরিবারকে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা এবং কোন পরিবারের যোগ্য ব্যক্তিকে চাকরি দেয়ার কথা বলেছেন মেয়র। আমরা মেয়রের এই আশ্বাসে বিশ্বাস করছি। কিন্তু অন্য পরিবারগুলোর সহায়তা পাওয়ার কোন ব্যবস্থা এখনও হয়নি। বাংলাদেশ প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সমিতি নিহতদের পরিবারগুলোকে ৫০ হাজার টাকা করে সহযোগিতা করেছে বলে তিনি জানান।

এমএ রহিম বলেন, চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে যারা আহত হয়েছিলেন তাদের তাৎক্ষণিক যে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল, তারপর আর সরকারি সহায়তায় কোন চিকিৎসা হয়নি। রহিমের দুই ভাতিজা মাসুদ রানা ও মাহবুবুর রহমান রাজু ওয়াহেদ ম্যানশনে এমআর টেলিকম নামে দোকান চালাতেন। দুই ভাইই আগুনে মারা যান। তাদের বাবা সাহেব উল্লাহ বলেন, আমার দুই ছেলে আগুনে মারা গেছে। এখন পরিবারে দুই ছেলের স্ত্রীসহ আমরা সাত সদস্য আছি, ছেলেদের হারিয়েছি, ব্যবসা হারিয়ে এখন যে বেঁচে আছি খুব অসহায় দিন যাপন করতে হচ্ছে। একটি বছর হয়ে গেছে, আর কেউ আমাদর পাশে এসে দাঁড়ায়নি। সুলতানা কামাল বলেন- সরকারের কাছে এই আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩০ কোটি টাকা সহায়তা এসেছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাই, আপনি এই টাকা বিলম্ব না করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে দিয়ে দেন। এছাড়া পুরান ঢাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল দ্রুত সরানোর দাবি জানিয়েছেন দুই সন্তান হারানো এই বাবা। আগুনে নিহত ওয়াসি উদ্দিন মাহিদের চাচাতো ভাই আশিক উদ্দিন সৈনিক বলেন, আমরা যারা এখানে আছি তারা কেউ কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞ না। এই ভবনে ক্ষতিকর কী কেমিক্যাল ছিল তা আমরা জানি না। তবে আমি দেখেছি বিস্ফোরণে এই ভবনের দেয়াল উড়ে আশপাশের ভবনগুলোতে পড়েছে। বেশি টাকার লোভে কেমিক্যালের গুদামের জন্য আর কোন বাড়ি ভাড়া না দিতে এলাকার বাড়িওয়ালাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

ওয়াহেদ ম্যানশনের আগুনে নিহত মো. জুম্মনের ছেলে ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলার বাদী মো. আসিফ বলেন, আমি বাবা হারিয়েছি, এর যে কত ব্যথা কেবল আমিই বুঝি। যে কারণে আমার বাবাসহ অন্যরা মারা গেছেন, সেই কেমিক্যালের কোন মজুদ এখানে যাতে রাখা না হয় সে বিষয়ে সরকার থেকে যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সংবাদ সম্মেলনের পর নিহত-আহতদের পরিবার-স্বজনসহ অন্য ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে একটি মানববন্ধন করা হয়। প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকার বিভিন্ন গুদাম থেকে ক্ষতিকর ৩২ ধরনের কেমিক্যাল সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন যেগুলো আছে সেগুলো ক্ষতিকর না। তারপরও যদি সরকার মনে করে কোন কেমিক্যাল সরানো দরকার তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৯ ফল্গুন ১৪২৬, ২৭ জমাদিউল সানি ১৪৪১

চুড়িহাট্টার আগুনে হতাহতদের স্বজনের দাবি

ক্ষতিপূরণ চাই ও রাসায়নিক গুদাম সরাও

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে তাদের স্বজনরা। সেসঙ্গে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের গুদাম সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নেয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা। গতকাল ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে পাঁচটি সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘ঐক্যবদ্ধ সকল সামাজিক সংগঠনের’ ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ওয়াহেদ ম্যানশনের আগুনে ঘটনাস্থলে ৬৭ জন মারা যান। পরে আহতদের মধ্যে থেকে আরও চারজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

সংগঠনটির আহ্বায়ক ও নিহতদের দু’জনের স্বজন এমএ রহিম বলেন, চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেল, অথচ নিহত, আহত, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো কীভাবে আছে খোঁজ নেয়ার লোক পাইনি, পাইনি কোন সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা। কিন্তু অসহায় পরিবারগুলো দিন দিন ভিটা-বাড়ি বিক্রি করে নিঃস্ব। আর্থিকসহ অন্যান্য সহায়তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আগুনে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের পরিবারের চিকিৎসা ও পড়াশোনার ব্যয় বহন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান ও ক্ষতিগ্রস্ত ওয়াহেদ ম্যানশন মেরামতের সুযোগ দিয়ে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার ব্যবস্থা করার দাবি সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।

আগের দিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নিহতদের ৩১ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার কথা জানান মেয়র সাঈদ খোকন। এ বিষয়ে রহিম বলেন, ৩১ পরিবারকে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা এবং কোন পরিবারের যোগ্য ব্যক্তিকে চাকরি দেয়ার কথা বলেছেন মেয়র। আমরা মেয়রের এই আশ্বাসে বিশ্বাস করছি। কিন্তু অন্য পরিবারগুলোর সহায়তা পাওয়ার কোন ব্যবস্থা এখনও হয়নি। বাংলাদেশ প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সমিতি নিহতদের পরিবারগুলোকে ৫০ হাজার টাকা করে সহযোগিতা করেছে বলে তিনি জানান।

এমএ রহিম বলেন, চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে যারা আহত হয়েছিলেন তাদের তাৎক্ষণিক যে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল, তারপর আর সরকারি সহায়তায় কোন চিকিৎসা হয়নি। রহিমের দুই ভাতিজা মাসুদ রানা ও মাহবুবুর রহমান রাজু ওয়াহেদ ম্যানশনে এমআর টেলিকম নামে দোকান চালাতেন। দুই ভাইই আগুনে মারা যান। তাদের বাবা সাহেব উল্লাহ বলেন, আমার দুই ছেলে আগুনে মারা গেছে। এখন পরিবারে দুই ছেলের স্ত্রীসহ আমরা সাত সদস্য আছি, ছেলেদের হারিয়েছি, ব্যবসা হারিয়ে এখন যে বেঁচে আছি খুব অসহায় দিন যাপন করতে হচ্ছে। একটি বছর হয়ে গেছে, আর কেউ আমাদর পাশে এসে দাঁড়ায়নি। সুলতানা কামাল বলেন- সরকারের কাছে এই আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩০ কোটি টাকা সহায়তা এসেছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাই, আপনি এই টাকা বিলম্ব না করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে দিয়ে দেন। এছাড়া পুরান ঢাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল দ্রুত সরানোর দাবি জানিয়েছেন দুই সন্তান হারানো এই বাবা। আগুনে নিহত ওয়াসি উদ্দিন মাহিদের চাচাতো ভাই আশিক উদ্দিন সৈনিক বলেন, আমরা যারা এখানে আছি তারা কেউ কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞ না। এই ভবনে ক্ষতিকর কী কেমিক্যাল ছিল তা আমরা জানি না। তবে আমি দেখেছি বিস্ফোরণে এই ভবনের দেয়াল উড়ে আশপাশের ভবনগুলোতে পড়েছে। বেশি টাকার লোভে কেমিক্যালের গুদামের জন্য আর কোন বাড়ি ভাড়া না দিতে এলাকার বাড়িওয়ালাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

ওয়াহেদ ম্যানশনের আগুনে নিহত মো. জুম্মনের ছেলে ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলার বাদী মো. আসিফ বলেন, আমি বাবা হারিয়েছি, এর যে কত ব্যথা কেবল আমিই বুঝি। যে কারণে আমার বাবাসহ অন্যরা মারা গেছেন, সেই কেমিক্যালের কোন মজুদ এখানে যাতে রাখা না হয় সে বিষয়ে সরকার থেকে যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সংবাদ সম্মেলনের পর নিহত-আহতদের পরিবার-স্বজনসহ অন্য ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে একটি মানববন্ধন করা হয়। প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকার বিভিন্ন গুদাম থেকে ক্ষতিকর ৩২ ধরনের কেমিক্যাল সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন যেগুলো আছে সেগুলো ক্ষতিকর না। তারপরও যদি সরকার মনে করে কোন কেমিক্যাল সরানো দরকার তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।