করোনাভাইরাস

ছড়িয়ে পড়েছে চীনের চার কারাগারে

মৃত্যু বেড়ে ২২৪৭

দু’দিন কমার পর চীনে আবারও বেড়ে গেছে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্য। সব মিলয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৪৭ জনে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে চীনের চারটি কারাগারেও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার দায়ে চাকরি হারিয়েছেন কারা কর্মকর্তারা। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, চীনের হুবেই প্রদেশে করোনাভাইরাসে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করলেও গত বৃহস্পতিবার আরও ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন দেশটির মূল ভূখণ্ডে ৮৮৯ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ৩৯৪ জন। গতকাল দেশটির স্বাস্থ্য কমিশনের নিয়মিত বার্তায় তথ্য জানানো হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ২২৩৩ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া এদিন নতুন আক্রান্ত হয়েছে ৪১১ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৪৬৫ জনে। আর কমপক্ষে ২৬টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।

এদিকে দেশটির সংবাদ মাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো চীনে এক দিনে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন ধরে নিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া কয়েক জনের মধ্যে নতুন করে ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ায় সতর্ক করেছেন একজন চীনা বিশেষজ্ঞ।

অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ভাইরাসে ইরানে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ- এ তথ্য নিশ্চিত করে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই নাগরিকের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা (আইআরএনএ)। করোনাভাইরাসে দুই ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশের পরপরই তাদের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করে ইরান। তবে নিহত ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।

স্থানীয় সময় বুধবার ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা আলিরেজার বরাতে আইআরএনএ জানিয়েছে, নিহত দুই জনই করোনাভাইরাসের জীবাণু বহন করছিলেন। তারা ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে কোম নামক এলাকার বাসিন্দা। এর বাইরে নিহতদের বিষয়ে আর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এর আগে একইদিন (বুধবার) ইরানের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির আরেক বার্তা সংস্থা আইএসএনএ জানায়, করোনাভাইরাসে ইরানের দুই নাগরিক আক্রান্ত হয়েছেন। পরে কর্মকর্তারা আক্রান্ত দুই জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তারা বয়স্ক ব্যক্তি।

আইএসএনএ’র ওই সংবাদে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কিয়ানুশ জাহানপুরের বরাতে জানানো হয়, গত দুই দিন ধরে করোনাভাইরাসে কিছু রোগীর আক্রান্ত হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসটিতে এর আগে হংকং, ফিলিপাইন, জাপান, তাইওয়ান, ফ্রান্সে রোগী মারা যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন কোরোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দেড়শ’ ছাড়িয়ে যাওয়ায় দুটি শহরকে ‘স্পেশাল কেয়ার জোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার।

প্রসঙ্গত, মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচওকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, উহানের একটি সি ফুড মার্কেটে কোন প্রাণী থেকে এ ভাইরাস প্রথম মানুষের দেহে আসে। তারপর মানুষ থেকে ছড়াতে থাকে মানুষে। সার্স ও মার্স পরিবারের সদস্য নতুন এ করোনাভাইরাসের নাম দেয়া হয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। আর এর সংক্রমণে ফ্লুর মত উপসর্গ নিয়ে যে রোগ হচ্ছে, তাকে বলা হচ্ছে কভিড-১৯।

আক্রান্ত রোগীদের লালা ও শ্লেষ্মা পরীক্ষা করে চীনা বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, নভেল করোনাভাইরাস যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে সার্সের চেয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার সঙ্গেই এর মিল পাওয়া যাচ্ছে বেশি। আগে যেমনটা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়েও সহজে এবং দ্রুত গতিতে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিলের শেষভাগে নতুন করোনাভাইরাসের প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করছে চীন।

দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী শু নানপিং শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই ঘোষণা দেন।

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৯ ফল্গুন ১৪২৬, ২৭ জমাদিউল সানি ১৪৪১

করোনাভাইরাস

ছড়িয়ে পড়েছে চীনের চার কারাগারে

মৃত্যু বেড়ে ২২৪৭

সংবাদ ডেস্ক |

image

দু’দিন কমার পর চীনে আবারও বেড়ে গেছে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্য। সব মিলয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৪৭ জনে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে চীনের চারটি কারাগারেও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার দায়ে চাকরি হারিয়েছেন কারা কর্মকর্তারা। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, চীনের হুবেই প্রদেশে করোনাভাইরাসে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করলেও গত বৃহস্পতিবার আরও ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন দেশটির মূল ভূখণ্ডে ৮৮৯ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ৩৯৪ জন। গতকাল দেশটির স্বাস্থ্য কমিশনের নিয়মিত বার্তায় তথ্য জানানো হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ২২৩৩ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া এদিন নতুন আক্রান্ত হয়েছে ৪১১ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৪৬৫ জনে। আর কমপক্ষে ২৬টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।

এদিকে দেশটির সংবাদ মাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো চীনে এক দিনে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন ধরে নিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া কয়েক জনের মধ্যে নতুন করে ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ায় সতর্ক করেছেন একজন চীনা বিশেষজ্ঞ।

অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ভাইরাসে ইরানে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ- এ তথ্য নিশ্চিত করে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই নাগরিকের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা (আইআরএনএ)। করোনাভাইরাসে দুই ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশের পরপরই তাদের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করে ইরান। তবে নিহত ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।

স্থানীয় সময় বুধবার ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা আলিরেজার বরাতে আইআরএনএ জানিয়েছে, নিহত দুই জনই করোনাভাইরাসের জীবাণু বহন করছিলেন। তারা ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে কোম নামক এলাকার বাসিন্দা। এর বাইরে নিহতদের বিষয়ে আর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এর আগে একইদিন (বুধবার) ইরানের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির আরেক বার্তা সংস্থা আইএসএনএ জানায়, করোনাভাইরাসে ইরানের দুই নাগরিক আক্রান্ত হয়েছেন। পরে কর্মকর্তারা আক্রান্ত দুই জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তারা বয়স্ক ব্যক্তি।

আইএসএনএ’র ওই সংবাদে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কিয়ানুশ জাহানপুরের বরাতে জানানো হয়, গত দুই দিন ধরে করোনাভাইরাসে কিছু রোগীর আক্রান্ত হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসটিতে এর আগে হংকং, ফিলিপাইন, জাপান, তাইওয়ান, ফ্রান্সে রোগী মারা যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন কোরোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দেড়শ’ ছাড়িয়ে যাওয়ায় দুটি শহরকে ‘স্পেশাল কেয়ার জোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার।

প্রসঙ্গত, মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচওকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, উহানের একটি সি ফুড মার্কেটে কোন প্রাণী থেকে এ ভাইরাস প্রথম মানুষের দেহে আসে। তারপর মানুষ থেকে ছড়াতে থাকে মানুষে। সার্স ও মার্স পরিবারের সদস্য নতুন এ করোনাভাইরাসের নাম দেয়া হয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। আর এর সংক্রমণে ফ্লুর মত উপসর্গ নিয়ে যে রোগ হচ্ছে, তাকে বলা হচ্ছে কভিড-১৯।

আক্রান্ত রোগীদের লালা ও শ্লেষ্মা পরীক্ষা করে চীনা বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, নভেল করোনাভাইরাস যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে সার্সের চেয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার সঙ্গেই এর মিল পাওয়া যাচ্ছে বেশি। আগে যেমনটা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়েও সহজে এবং দ্রুত গতিতে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিলের শেষভাগে নতুন করোনাভাইরাসের প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করছে চীন।

দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী শু নানপিং শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই ঘোষণা দেন।