জার্মানিতে আলো জ্বেলে নিহতদের স্মরণ

জার্মানির হানাও শহরের দুটি সিসা বারে হামলার পেছনে ‘উগ্র ডানপন্থি উদ্দেশ্য’ রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। স্থানীয় সময় বুধবার রাতের সংঘটিত ওই হামলায় নিহত ৯ জনের অধিকাংশই বিদেশি বংশোদ্ভূত। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। ডয়েচে ভ্যালে

দেশটির সংবাদমাধ্যম এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, বুধবার রাত দশটার দিকে হানাও শহরের একটি সিসা বার এবং পার্শ্ববর্তী ক্যাফেতে প্রবেশ করে গুলি চালায় ৪৩ বছর বয়সি বন্ধুকধারী। এতে বেশ কয়েকজন হতাহত হন। এরপর হামলাকারী সেই ঘটনাস্থল থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে একটি গাড়ি এবং স্পোর্টস বারেও হামলা চালায়। সেখানেও হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে হামলাকারী এবং তার মাকে মৃত অবস্থায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এ হতাহতের ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গত বৃহস্পতিবার হানাও ও বার্লিনে মোমবাতি ও সাদা ফুল হাতে কয়েক হাজার মানুষকে নীরবতা পালন করতে দেখা যায় বলে বিবিসি জানিয়েছে। উগ্র-ডানপন্থিদের হুমকি মোকাবিলায় দেশটির সরকারকে আরও পদক্ষের নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গত বুধবার রাতে হওয়া এ গুলোর ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জার্মান তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হামলায় নিহতদের সবাই অভিবাসী পরিবারের। তাদের বয়স ২১ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে। গুলিতে এক বসনিয়ান, এক বুলগেরিয়ান ও এক রোমানিয়ান নাগরিকও নিহত হয়েছে বলে দেশগুলোর সরকার নিশ্চিত করেছে। নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচজন তুর্কি নাগরিক বলে জানিয়েছেন জার্মানিতে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত আলী কামাল আয়দিন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ হামলা এটিই প্রমাণ করে , যে ইউরোপে বর্ণবাদ ও ইসলামবিদ্বেষ বাড়ছে।’

সন্দেহভাজন হামলাকারী ৪৩ বছর বয়সী তোবিয়াস। তিনি অনলাইনে ‘বর্ণবাদী একটি ইশতেহার’ও পোস্ট করেছিলেন বলে জানিয়েছেন জার্মানির ফেডারেল প্রসিকিউটর পিটার ফ্র্যাঙ্ক। ওই ইশতেহারে ‘ তীব্র বর্ণবাদী মানসিকতা’ ফুটে উঠেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সন্দেহভাজন এ হামলাকারীর আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল বলে জানিয়েছে বিল্ড ট্যাবলয়েড পত্রিকা। তোবিয়াসের গাড়িতে গোলাবারুদ এবং বন্দুকের ম্যাগাজিনও পাওয়া গেছে। নিহতদের কয়েকজন কুর্দিশ বংশোদ্ভূত বলে জানিয়েছে জার্মান গণমাধ্যমগুলো।

জার্মানির কুর্দিদের সংগঠন কোন-মেড অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে ডানপন্থি সন্ত্রাসবাদ ও তাদের নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান না নেয়ায় কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এদিকে মুসলিমদের সংগঠন কেআরএম জার্মানিতে উগ্র-ডানপন্থার মোকাবিলায় আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ‘ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিতে’ সংগঠনটি গত কয়েক মাস ধরেই অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আসছিল।

এদিকে সিসা বারে হামলাকে ‘বর্ণবাদের বিষ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন মার্কেল। নিহতদের স্মরণে হওয়া এক আলোক প্রজ্বলন কর্মসূচিতে গিয়ে ‘জার্মানি এ ধরনের হামলা বরদাশত’ করবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ার।

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৯ ফল্গুন ১৪২৬, ২৭ জমাদিউল সানি ১৪৪১

বর্ণবাদী হামলা

জার্মানিতে আলো জ্বেলে নিহতদের স্মরণ

সংবাদ ডেস্ক |

জার্মানির হানাও শহরের দুটি সিসা বারে হামলার পেছনে ‘উগ্র ডানপন্থি উদ্দেশ্য’ রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। স্থানীয় সময় বুধবার রাতের সংঘটিত ওই হামলায় নিহত ৯ জনের অধিকাংশই বিদেশি বংশোদ্ভূত। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। ডয়েচে ভ্যালে

দেশটির সংবাদমাধ্যম এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, বুধবার রাত দশটার দিকে হানাও শহরের একটি সিসা বার এবং পার্শ্ববর্তী ক্যাফেতে প্রবেশ করে গুলি চালায় ৪৩ বছর বয়সি বন্ধুকধারী। এতে বেশ কয়েকজন হতাহত হন। এরপর হামলাকারী সেই ঘটনাস্থল থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে একটি গাড়ি এবং স্পোর্টস বারেও হামলা চালায়। সেখানেও হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে হামলাকারী এবং তার মাকে মৃত অবস্থায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এ হতাহতের ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গত বৃহস্পতিবার হানাও ও বার্লিনে মোমবাতি ও সাদা ফুল হাতে কয়েক হাজার মানুষকে নীরবতা পালন করতে দেখা যায় বলে বিবিসি জানিয়েছে। উগ্র-ডানপন্থিদের হুমকি মোকাবিলায় দেশটির সরকারকে আরও পদক্ষের নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গত বুধবার রাতে হওয়া এ গুলোর ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জার্মান তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হামলায় নিহতদের সবাই অভিবাসী পরিবারের। তাদের বয়স ২১ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে। গুলিতে এক বসনিয়ান, এক বুলগেরিয়ান ও এক রোমানিয়ান নাগরিকও নিহত হয়েছে বলে দেশগুলোর সরকার নিশ্চিত করেছে। নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচজন তুর্কি নাগরিক বলে জানিয়েছেন জার্মানিতে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত আলী কামাল আয়দিন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ হামলা এটিই প্রমাণ করে , যে ইউরোপে বর্ণবাদ ও ইসলামবিদ্বেষ বাড়ছে।’

সন্দেহভাজন হামলাকারী ৪৩ বছর বয়সী তোবিয়াস। তিনি অনলাইনে ‘বর্ণবাদী একটি ইশতেহার’ও পোস্ট করেছিলেন বলে জানিয়েছেন জার্মানির ফেডারেল প্রসিকিউটর পিটার ফ্র্যাঙ্ক। ওই ইশতেহারে ‘ তীব্র বর্ণবাদী মানসিকতা’ ফুটে উঠেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সন্দেহভাজন এ হামলাকারীর আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল বলে জানিয়েছে বিল্ড ট্যাবলয়েড পত্রিকা। তোবিয়াসের গাড়িতে গোলাবারুদ এবং বন্দুকের ম্যাগাজিনও পাওয়া গেছে। নিহতদের কয়েকজন কুর্দিশ বংশোদ্ভূত বলে জানিয়েছে জার্মান গণমাধ্যমগুলো।

জার্মানির কুর্দিদের সংগঠন কোন-মেড অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে ডানপন্থি সন্ত্রাসবাদ ও তাদের নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান না নেয়ায় কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এদিকে মুসলিমদের সংগঠন কেআরএম জার্মানিতে উগ্র-ডানপন্থার মোকাবিলায় আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ‘ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিতে’ সংগঠনটি গত কয়েক মাস ধরেই অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আসছিল।

এদিকে সিসা বারে হামলাকে ‘বর্ণবাদের বিষ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন মার্কেল। নিহতদের স্মরণে হওয়া এক আলোক প্রজ্বলন কর্মসূচিতে গিয়ে ‘জার্মানি এ ধরনের হামলা বরদাশত’ করবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ার।