পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রথম দফার ভোট গ্রহণ

ইরানে কট্টরপন্থিদের বিপুল জয়ের আভাস

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম পরাশক্তি ইরানের একাদশ জাতীয় পার্লামেন্ট (দ্য ইসলামিক রিপাবলিক মজলিশ) নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ হয়েছে। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল আটটায় নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক সংকট ও পশ্চিমাদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি উত্তেজনার মধ্যে অনুষ্ঠিত এবারের নির্বাচনে কট্টরপন্থি রাজনীতিবিদদের অংশ বিপুল জয় পেতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ হবে আগামী মে মাসে। পার্সটুডে, রয়টার্স।

সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপ ও দেশের ভেতরকার অসন্তোষ-অস্থিরতার মধ্যে ইরানের পার্লামেন্ট নির্বাচনে এদিন ভোট দিয়েছেন সাধারণ জনগণ। দেশটির এবারের নির্বাচনে মোট সাত হাজার ১৫৭ জন প্রার্থী ২৯০টি আসনের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ৬৬৬ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন। বৈধ ভোটার পাঁচ কোটি ৭৯ লাখ ১৮ হাজার। এদের ভোট দেয়ার জন্য সারাদেশে মোট ৫৫ হাজার নির্বাচনী কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিজয়ী প্রার্থীকে প্রদত্ত ভোটের শতকরা কমপক্ষে ২০ ভাগ ভোট পেতে হবে। তারা চার বছরের জন্য আইনপ্রণেতা হিসেবে কাজ করবেন।

পার্স টুডে জানিয়েছে, দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। টানা চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত (১০ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ চলে)। প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ ভোটার এদিন ২৯০ আসনের পার্লামেন্টে প্রতিনিধি পাঠাতে তাদের রায় জানাতে পারবেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানে পার্লামেন্টের ক্ষমতা অনেক কম হলেও প্রতিবারের মতো এবারও প্রার্থী তালিকা থেকে শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খোমেনির অপছন্দের হাজারও প্রার্থীকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে। পার্লামেন্টে কট্টরপন্থিরা জয় পেলে তা দেশটির আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো উদারপন্থি হিসেবেই বিবেচনা করে আসছে। ইরানের সঙ্গে বহির্বিশ্বের সম্পর্ক বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে রুহানি পরপর দু’বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন।

দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে গতকাল সকাল থেকে হাজারও নাগরিককে ভোটকেন্দ্রের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ইরানে সাধারণত মসজিদগুলোকেই ভোটকেন্দ্র বানানো হয়। এসময় ভোটের লাইনে দাঁড়ানো এক তরুণ বলেছেন, ‘আমি ভোট দিতে এসেছি। শহীদ কাশেম সোলেমানির পথ অনুসরণ করা আমার দায়িত্ব।’

গত ৩ জানুয়ারিতে বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ড্রোন (চালকবিহীন বিমান) দেশটির হামলায় কুদস ফোর্সের তখনকার কমান্ডার সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর থেকে ইরানজুড়ে কট্টরপন্থিদের জনসমর্থন বাড়ছিল বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

বিদেশে বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর শাখা হিসেবে কাজ করা কুদস ফোর্সের এ প্রধানকে ইরানে খামেনির পরে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

প্রসঙ্গত, ইরানের নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, ভোট গ্রহণ শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ করতে হয়। পার্লামেন্ট নির্বাচনের কার্যক্রম আরও আগে শুরু হলেও গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীরা তাদের প্রচারণা শুরু করেন। এবং ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে সে প্রচারণা শেষ হয়। আনুষ্ঠানিক প্রচার ও জনসমর্থন আদায়ের জন্য আট দিন সময় পেয়েছেন প্রার্থীরা।

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৯ ফল্গুন ১৪২৬, ২৭ জমাদিউল সানি ১৪৪১

পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রথম দফার ভোট গ্রহণ

ইরানে কট্টরপন্থিদের বিপুল জয়ের আভাস

সংবাদ ডেস্ক |

image

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম পরাশক্তি ইরানের একাদশ জাতীয় পার্লামেন্ট (দ্য ইসলামিক রিপাবলিক মজলিশ) নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ হয়েছে। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল আটটায় নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক সংকট ও পশ্চিমাদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি উত্তেজনার মধ্যে অনুষ্ঠিত এবারের নির্বাচনে কট্টরপন্থি রাজনীতিবিদদের অংশ বিপুল জয় পেতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ হবে আগামী মে মাসে। পার্সটুডে, রয়টার্স।

সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপ ও দেশের ভেতরকার অসন্তোষ-অস্থিরতার মধ্যে ইরানের পার্লামেন্ট নির্বাচনে এদিন ভোট দিয়েছেন সাধারণ জনগণ। দেশটির এবারের নির্বাচনে মোট সাত হাজার ১৫৭ জন প্রার্থী ২৯০টি আসনের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ৬৬৬ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন। বৈধ ভোটার পাঁচ কোটি ৭৯ লাখ ১৮ হাজার। এদের ভোট দেয়ার জন্য সারাদেশে মোট ৫৫ হাজার নির্বাচনী কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিজয়ী প্রার্থীকে প্রদত্ত ভোটের শতকরা কমপক্ষে ২০ ভাগ ভোট পেতে হবে। তারা চার বছরের জন্য আইনপ্রণেতা হিসেবে কাজ করবেন।

পার্স টুডে জানিয়েছে, দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। টানা চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত (১০ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ চলে)। প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ ভোটার এদিন ২৯০ আসনের পার্লামেন্টে প্রতিনিধি পাঠাতে তাদের রায় জানাতে পারবেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানে পার্লামেন্টের ক্ষমতা অনেক কম হলেও প্রতিবারের মতো এবারও প্রার্থী তালিকা থেকে শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খোমেনির অপছন্দের হাজারও প্রার্থীকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে। পার্লামেন্টে কট্টরপন্থিরা জয় পেলে তা দেশটির আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো উদারপন্থি হিসেবেই বিবেচনা করে আসছে। ইরানের সঙ্গে বহির্বিশ্বের সম্পর্ক বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে রুহানি পরপর দু’বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন।

দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে গতকাল সকাল থেকে হাজারও নাগরিককে ভোটকেন্দ্রের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ইরানে সাধারণত মসজিদগুলোকেই ভোটকেন্দ্র বানানো হয়। এসময় ভোটের লাইনে দাঁড়ানো এক তরুণ বলেছেন, ‘আমি ভোট দিতে এসেছি। শহীদ কাশেম সোলেমানির পথ অনুসরণ করা আমার দায়িত্ব।’

গত ৩ জানুয়ারিতে বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ড্রোন (চালকবিহীন বিমান) দেশটির হামলায় কুদস ফোর্সের তখনকার কমান্ডার সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর থেকে ইরানজুড়ে কট্টরপন্থিদের জনসমর্থন বাড়ছিল বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

বিদেশে বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর শাখা হিসেবে কাজ করা কুদস ফোর্সের এ প্রধানকে ইরানে খামেনির পরে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

প্রসঙ্গত, ইরানের নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, ভোট গ্রহণ শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ করতে হয়। পার্লামেন্ট নির্বাচনের কার্যক্রম আরও আগে শুরু হলেও গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীরা তাদের প্রচারণা শুরু করেন। এবং ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে সে প্রচারণা শেষ হয়। আনুষ্ঠানিক প্রচার ও জনসমর্থন আদায়ের জন্য আট দিন সময় পেয়েছেন প্রার্থীরা।