ক্রাইম পেট্রোল দেখে এখন ভিআইপি চোর

টিভি সিরিয়ালে ক্রাইম পেট্রোল দেখে উৎসাহী হয়ে চুরি করতে নামেন মোহাম্মদ সোহান। টার্গেট করে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে নানা কৌশলও শিখতে হয়েছে তাকে। নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কারসহ দামি মালামাল চুরির টার্গেট থাকে তার। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে এমন বিদেশি পিস্তলও সংগ্রহ করেন সোহান নামের ওই চোর। ক্যান্টনমেন্ট থানার একটি চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে ভিআইপি এ চোরের সন্ধান পায় পুলিশ। পরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় পিস্তলটিও উদ্ধার করে পুলিশ। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সোহানের চুরির ঘটনা তুলে ধরেন গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ্ত কুমার চক্রবর্তী।

সংবাদ সম্মেলনে ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে অজ্ঞাতনামা চোর ক্যান্টনমেন্ট থানার মানিকদি এলাকার আমিনুল ইসলামের দরজার তালা ভেঙে বাসায় চুরি করে। তার বাসা থেকে ৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, এক জোড়া স্বর্ণের বালা, দুইটি স্বর্ণের ব্রেসলেট, তিনটি স্বর্ণের গলার চেইন, দুইটি গলার হার, তিন জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, ৮টি স্বর্ণের হাতের আংটিসহ বিপুল পরিমাণ মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করে আমিনুল ইসলাম। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চুরির সঙ্গে সোহানের যোগসাজশ খুঁজে পায় পুলিশ। পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ অভিযান চালানো হয় সোহানকে গ্রেফতার করতে। এ সময় সোহানের রুমে ৭ দশমিক ৬ বোরের একটি বিদেশি পিস্তল ও এক রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়। বাসায় তল্লাশি চালিয়ে জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ চোরাই মালামাল।

ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, চোর সোহানের বাসায় যে বিদেশি পিস্তলটি পাওয়া গেছে এ ধরনের পিস্তল সাধারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ব্যবহার করেন। কোন সাধারণ মানুষ বা অপরাধীদের কাছে এ ধরনের পিস্তল থাকার কথা নয়। ওই পিস্তল সে চুরি করেছে নাকি অন্যকোনভাবে সংগ্রহ করেছে তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। চুরির সময় তিনি পিস্তল সঙ্গে রাখতেন যাতে ধরা পড়লে ব্যবহার করে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।

পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহান জানান, সে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে নিয়মিত ক্রাইম পেট্রল দেখে সখের বসে চুরি করেন। কিভাবে মানুষের বাসা বাড়িতে চুরি করতে হয় তা রপ্ত করতে চুরির বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। শখের বসে চুরি করতে করতে তার পেশা হয়ে যায় চুরি। এক পর্যায়ে চুরি করাই তিনি পেশা হিসেবে নেন। তবে রাতের বেলার চেয়ে দিনের বেলায় তিনি চুরি করতেন। বিভিন্ন বাসা বাড়িতে তিনি বিভিন্ন পরিচয়ে ঢুকতেন। এরপর দিনের বেলায় যারা বাসা বাড়িতে তালা মেরে ব্যক্তিগত কাজ বা বেড়াতে যান এমন বাসায় তিনি তালা ভেঙে প্রবেশ করতেন। প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে আবার নিরাপদে বেরিয়ে যেতেন।

ক্যান্টনমেন্ট জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামান জানান, সোহান ২০১৫ সাল থেকে চুরি, ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িত। সে মাদক সেবনসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। মিরপুরের পল্লবী থানায় তার বসবাস। সে মূলত মিরপুর, পল্লবী থানা ও তার আশপাশের এলাকায় চুরি করে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় ছিল তার চুরি। এর আগে চুরি করলেও কখনও ধরা পড়েনি। পিস্তলটি সে ৫০ হাজার টাকায় একজনের কাছ থেকে কিনেছে।

তিনি আরও জানান, দিনের বেলায় সোহান চুরি করে। পাশাপাশি সে একটি রিকশার গ্যারেজ দিয়ে রেখেছে। অনেকেই তাকে রিকশা মেকার হিসেবে চিনে। চোর হিসেবে তাকে যাতে কেউ সন্দেহ না করে এজন্য সে রিকশা গ্যারেজ দিয়েছে। গ্রেফতারের সময় সোহানের বাসা থেকে পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, এক রাউন্ড গুলি ছাড়াও ৩০০ গ্রাম গাঁজা, নগদ ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, তিনটি চাকু, একটি ক্ষুর, ২টি স্ক্রু ড্রাইভার, লোহার তৈরি ৬টি র‌্যাত, ২টি রেঞ্চ, ৫টি ঘড়ি, ২২টি চাবি, তিনটি মানিব্যাগ, টর্চলাইট, স্বর্ণালঙ্কার, ইমিটেশন ও বেশ কয়েকটি হাতলযুক্ত ব্যাগ পাওয়া গেছে।

পুলিশ জানায়, সোহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে পল্লবী মিরপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

আরও খবর
উন্নয়ন পরিকল্পনা একে অপরের পরিপূরক হবে না প্রধানমন্ত্রী
শিক্ষার্থীদের কোচিং-এ বাধ্য করবেন না
বিএনপি জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে না তথ্যমন্ত্রী
ঋণখেলাপির দায়ে বিএনপি ও জাপার প্রার্থিতা বাতিল আ’লীগের বৈধ ঘোষণা
প্রবাসীদের জন্য দুদকের হটলাইন
খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাননি ফখরুল
পাপিয়ার ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার ব্যবসায়ী আমলা ও রাজনৈতিক নেতা
আরও দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিমানা
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় না যাওয়ার আহ্বান ঢাবি শিক্ষার্থীদের
তালিকা হাতে স্টলে স্টলে ক্রেতারা
পাবনায় লালন স্মরণোৎসব
রাজবাড়ীতে কবিতা উৎসব
শিল্পকলায় জাতীয় পিঠা উৎসব শুরু

সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ১০ ফল্গুন ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল সানি ১৪৪১

ক্রাইম পেট্রোল দেখে এখন ভিআইপি চোর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

টিভি সিরিয়ালে ক্রাইম পেট্রোল দেখে উৎসাহী হয়ে চুরি করতে নামেন মোহাম্মদ সোহান। টার্গেট করে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে নানা কৌশলও শিখতে হয়েছে তাকে। নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কারসহ দামি মালামাল চুরির টার্গেট থাকে তার। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে এমন বিদেশি পিস্তলও সংগ্রহ করেন সোহান নামের ওই চোর। ক্যান্টনমেন্ট থানার একটি চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে ভিআইপি এ চোরের সন্ধান পায় পুলিশ। পরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় পিস্তলটিও উদ্ধার করে পুলিশ। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সোহানের চুরির ঘটনা তুলে ধরেন গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ্ত কুমার চক্রবর্তী।

সংবাদ সম্মেলনে ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে অজ্ঞাতনামা চোর ক্যান্টনমেন্ট থানার মানিকদি এলাকার আমিনুল ইসলামের দরজার তালা ভেঙে বাসায় চুরি করে। তার বাসা থেকে ৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, এক জোড়া স্বর্ণের বালা, দুইটি স্বর্ণের ব্রেসলেট, তিনটি স্বর্ণের গলার চেইন, দুইটি গলার হার, তিন জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, ৮টি স্বর্ণের হাতের আংটিসহ বিপুল পরিমাণ মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করে আমিনুল ইসলাম। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চুরির সঙ্গে সোহানের যোগসাজশ খুঁজে পায় পুলিশ। পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ অভিযান চালানো হয় সোহানকে গ্রেফতার করতে। এ সময় সোহানের রুমে ৭ দশমিক ৬ বোরের একটি বিদেশি পিস্তল ও এক রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়। বাসায় তল্লাশি চালিয়ে জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ চোরাই মালামাল।

ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, চোর সোহানের বাসায় যে বিদেশি পিস্তলটি পাওয়া গেছে এ ধরনের পিস্তল সাধারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ব্যবহার করেন। কোন সাধারণ মানুষ বা অপরাধীদের কাছে এ ধরনের পিস্তল থাকার কথা নয়। ওই পিস্তল সে চুরি করেছে নাকি অন্যকোনভাবে সংগ্রহ করেছে তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। চুরির সময় তিনি পিস্তল সঙ্গে রাখতেন যাতে ধরা পড়লে ব্যবহার করে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।

পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহান জানান, সে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে নিয়মিত ক্রাইম পেট্রল দেখে সখের বসে চুরি করেন। কিভাবে মানুষের বাসা বাড়িতে চুরি করতে হয় তা রপ্ত করতে চুরির বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। শখের বসে চুরি করতে করতে তার পেশা হয়ে যায় চুরি। এক পর্যায়ে চুরি করাই তিনি পেশা হিসেবে নেন। তবে রাতের বেলার চেয়ে দিনের বেলায় তিনি চুরি করতেন। বিভিন্ন বাসা বাড়িতে তিনি বিভিন্ন পরিচয়ে ঢুকতেন। এরপর দিনের বেলায় যারা বাসা বাড়িতে তালা মেরে ব্যক্তিগত কাজ বা বেড়াতে যান এমন বাসায় তিনি তালা ভেঙে প্রবেশ করতেন। প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে আবার নিরাপদে বেরিয়ে যেতেন।

ক্যান্টনমেন্ট জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামান জানান, সোহান ২০১৫ সাল থেকে চুরি, ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িত। সে মাদক সেবনসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। মিরপুরের পল্লবী থানায় তার বসবাস। সে মূলত মিরপুর, পল্লবী থানা ও তার আশপাশের এলাকায় চুরি করে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় ছিল তার চুরি। এর আগে চুরি করলেও কখনও ধরা পড়েনি। পিস্তলটি সে ৫০ হাজার টাকায় একজনের কাছ থেকে কিনেছে।

তিনি আরও জানান, দিনের বেলায় সোহান চুরি করে। পাশাপাশি সে একটি রিকশার গ্যারেজ দিয়ে রেখেছে। অনেকেই তাকে রিকশা মেকার হিসেবে চিনে। চোর হিসেবে তাকে যাতে কেউ সন্দেহ না করে এজন্য সে রিকশা গ্যারেজ দিয়েছে। গ্রেফতারের সময় সোহানের বাসা থেকে পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, এক রাউন্ড গুলি ছাড়াও ৩০০ গ্রাম গাঁজা, নগদ ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, তিনটি চাকু, একটি ক্ষুর, ২টি স্ক্রু ড্রাইভার, লোহার তৈরি ৬টি র‌্যাত, ২টি রেঞ্চ, ৫টি ঘড়ি, ২২টি চাবি, তিনটি মানিব্যাগ, টর্চলাইট, স্বর্ণালঙ্কার, ইমিটেশন ও বেশ কয়েকটি হাতলযুক্ত ব্যাগ পাওয়া গেছে।

পুলিশ জানায়, সোহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে পল্লবী মিরপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।