খবরের আড়ালে আরও কত কী ঘটছে!

মোহাম্মদ আবু নোমান

পুলিশ খারাপ, প্রশাসন খারাপ, সরকারি ডাক্তার খারাপ, শুধু সরকারি চাকরি ভালো! একটি সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য দেশের তরুণরা রাজপথে রক্ত দেয়াসহ লাখ-লাখ টাকা দিতেও প্রস্তুত। নিজের জন্য বা নিজের পরিবারের জন্য বা নিজে বড় হওয়ার জন্য কতিপয় মানুষ অন্ধ হয়ে, অন্য মানুষকে এমনকি নিজের দেশকে ঠকিয়ে থাকে। স্ত্রী-সন্তানদের চাই লাক্সারিয়াস জীবন। টাকা কোথা থেকে এলো, সেটা কোন বিবেচ্য বিষয় নয়! কিন্তু এই ঠকানোর পরিণাম এক সময় ভাইবোন, মা-বাবা, স্ত্রী-স্বামী, ছেলেমেয়ে, এমনকি নিজের ওপর চেপে বসে।

ইতিপূর্বে খবর হয়েছে, ইকোনমিক ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা কাজ করতেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার সিনিয়র শাখাপ্রধান হিসেবে। তিন বছরে ব্যাংকে জমা হওয়া বেতন-ভাতার টাকা একবারও তোলেননি তিনি। বেতনের টাকা তুলে কী করবেন। তার ‘উপরির’ টাকার বন্যায় ভাসছে স্ত্রীসহ নামে-বেনামে নিকটাত্মীয়জন। তার আর্থিক অবস্থা এতই পরিবর্তন হয়ে যায়, চাকরির বেতনে হাতই দিতেন না তিনি। অথচ এদের বেতনই বারবার বাড়ানো হচ্ছে যাতে ঘুষ না খায়! অন্যদিকে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবি ছাড়াও বকেয়া বেতনের দাবিতে অনশন করতে করতে পাটকল, চিনিকল শ্রমিকদের মৃত্যুর খবর পত্রিকার পাতায় দেখা যায়।

কিছু লোক স্রেফ লুটপাট ও জনগণের টাকায় বিদেশে পিকনিক করতে যাওয়ার নির্লজ্জ ও কদর্য অভিলাষে মেতে থাকছে। মাত্র আড়াই কিলোমিটার সড়ক বানানোর মোট ব্যয় যেখানে ৭৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সে প্রকল্প বাস্তবায়নে জনপ্রতি ১৫ লাখ টাকা খরচ করে ১৩ জন কর্মকর্তাকে আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপে কথিত ‘প্রশিক্ষণ’ নিতে যাওয়ার যে খুবই দরকার, তা বুঝতে বড় কোনো বিদ্যান হতে হয় না। প্রকল্পের একটি এলইডি বাতির ব্যায় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ‘নর্থ-সাউথ সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পের অধীন চট্টগ্রাম মহানগরীর জাকির হোসেন সড়কের ওয়্যারলেস মোড় থেকে নির্মাণাধীন বায়েজিদ বোস্তামী-ফৌজদারহাট সড়ক পর্যন্ত নতুন সড়ক নির্মাণ করা হবে। যদিও একই সংস্থার আরেকটি প্রকল্পে সড়কবাতি কেনা হয়েছিলো সাড়ে ১১ হাজার টাকা করে।

মাঝে মাঝে এমন খবর দেখে অনুমান করতে বাকি থাকে না, খবরের আড়ালে আরও কত কী ঘটে চলেছে! পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে- তাতে কোন অলৌকিকতা বাদে আমাদের মুক্তির সম্ভাবনা কতটুকু ভাবনার বিষয়। বলা হচ্ছে দেশ ‘উন্নয়নের মহাসড়কে’। তাহলে বলতে হয়, ‘উন্নয়ন’ ও ‘দুর্নীতি’ সমানতালেই এগোচ্ছে! যে কোনোভাবেই হোক, তা বাংলাদেশেই সম্ভব! এ কারণে বালিশকাণ্ড, বাতিকাণ্ড, পর্দাকাণ্ড ইত্যাকার লঙ্কাকাণ্ড একের পর এক ঘটছে।

উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবে বাংলাদেশ। রূপকল্প ২০২১-২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য যে ধরনের মানুষ দরকার, বর্তমান প্রশাসনে তেমন মানুষ আছে কী? উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যারা সনদ নিয়ে ‘শিক্ষিত’ হয়ে বের হয়ে চাকরি নিচ্ছেন, তাদের জাতিকে কিছু দেয়ার যোগ্যতা, দক্ষতা, মানসিকতা না থাকলেও নিজেরা ধনকুবের বনে যাওয়ার বিদ্যাটা রপ্ত করেছেন খুব ভালো করেই। সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসেব নিলেই তা বেরিয়ে আসবে।

দেশে বায়ুর মান আরও খারাপ থেকে খারাপ হয়েছে। অথচ গত ১০ বছরে পরিবেশ অধিদপ্তর দেশে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ২২১ কোটি টাকা খরচ করেছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণের অর্থে ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ’ নামের এ প্রকল্পের (কেইস) মাধ্যমে এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। তবে অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ১২৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে প্রশিক্ষণের নামে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর, পরামর্শক ফি, গাড়ি কেনা ও ভবন নির্মাণে। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয়ে গত জুনে প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। প্রকল্পের অধীনে ১০ বছরে ২৯৬ জন কর্মকর্তা বিদেশে প্রশিক্ষণে গেছেন। একজন কর্মকর্তা ১০ বারও বিদেশে গেছেন।

রাষ্ট্রের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যারা বাস্তবায়ন করেন, তারা নিজেরাই কতটুকু জেনে-বুঝে থাকেন? এতদিন সমাজকে কী বুঝিয়ে এসেছেন? যোগ্যতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার কোন বালাই আছে কী? যে কোনো প্রকল্পের শুরুতেই অডিট বিভাগের রুটিন অডিটে এসব ধরা পড়ে না? না চোরে চোরে মাসতুতো ভাই বনে যায়? যদিও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্পে সর্বশেষ অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে গেলে প্রশিক্ষণের নামে কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর ও সড়কবাতির অতিরিক্ত দাম নিয়ে আপত্তি উঠে। ইতিপূর্বে যেমন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বালিশ-পর্দাসহ বিভিন্ন কেনাকাটায় মেগা দুর্নীতি হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হয়নি। এ ধরনের ডিপিপি যারা প্রস্তুত করেছেন, এখন বলাই যায় লাভের গুড়ের বড় ভাগ তারাই ভোগ করার বাসনা করেছেন। উন্নয়নের নামে দুর্নীতির আশ্রয়-প্রশ্রয়কারী কতিপয় কর্মকর্তারা বরাবরই কাগজে-কলমে কোটি কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়ে প্রকল্পগুলো থেকে অর্থ লুটপাটের নানা টালবাহানা করে থাকেন, সিডিএ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

এখন বাংলাদেশে উন্নয়নের বয়ান অহরহ প্রচারিত হচ্ছে। প্রশ্নটি হল, উন্নয়নের জন্য ব্যয় এবং উন্নয়ন থেকে প্রাপ্ত সুফল কতটুকু সর্বসাধারণ ভোগ করতে পারছে তার যৌক্তিক দিক পর্যালোচনা করা জরুরি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সেরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে, মাথাপিছু আয় ১ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে, উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় ভালো করছে ইত্যাদি কথা বলে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, আরও দাবি করা হচ্ছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। উন্নয়ন প্রকল্পের অকল্পনীয় অর্থ বরাদ্দেই প্রমাণ করে, বড়লোক দেশ, বড়লোক সরকার। অন্যদিকে সোনার চামিচ মুখে গোজা সরকারি চাকরি আর জনগণের কষ্টের টাকা বিনা বাধায় হাতের নাগালে!

বাংলাদেশে উন্নয়নের পথপরিক্রমায় অনর্থক অপচয় ও অপব্যয় নতুন কিছু নয়। উন্নয়ন প্রকল্প সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের নামে আমলাদের বিদেশ সফর, বারবার বিভিন্ন সড়কের আইল্যান্ড ও ফুটপাত ভাঙা এবং তা পুর্ননির্মাণ করা, হাসপাতালগুলোর জন্য চড়া দামে যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং তা ব্যবহার করতে না পারা। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা মেরামত, বাঁধ, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ। কয়েক মাস না যেতেই সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরা। বাঁধগুলো আগাম বর্ষার এক ধাক্কায় উবে যাওয়া। এসব অপচয় ও অপব্যয় এড়ানো গেলে দেশ আরও অনেক বেশি উন্নয়ন অর্জন করতে পারত। কিন্তু সর্বগ্রাসী দুর্নীতি সব উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

দুর্নীতি কমানোর কথা ও খবর শুনলে কর্মকর্তাদের মেজাজ গরম হয়ে যায়। তাদের মনোভাব অনেকটা এ রকম, কেনাকাটায় টাকা মারবার না দিলে কামই করুম না। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- ‘দুর্নীতির ওপর গণমাধ্যমে বারবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচনা-সমালোচনার কারণে ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একধরনের ভীতির সঞ্চার করেছে। অনেকেই এ ধরনের পদে থাকতে চাইছেন না। আবার অনেকে ক্রয় প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকছেন কিংবা ক্রয় প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন। এতে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন বিঘ্নিত ও সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।’ সরকারের চাকরদের ভাবসাবটা এরকম, বালিশ কেনা হোক, পর্দা কেনা হোক, সোফা কেনা হোক, গ্লাভস কেনা হোক, বাতি কেনা হোক- কোটি কোটি টাকা চুরি করুম দুদক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না, সংবাদপত্রও কোন খবর প্রকাশ করবে না!

প্রবৃদ্ধি বাড়ার ওপর সরকার জোর দিচ্ছে। কিন্তু দূরদর্শী নেতৃত্ব ও দক্ষ প্রশাসন ছাড়া আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। কোনো দেশ দুর্নীতি, অশান্তি লালন করে টেকসই উন্নয়ন আশা করতে পারে না। এটা সত্য, বৈশ্বিক অনেক সূচকেই বাংলাদেশ এগিয়েছে। তবে পরিবেশ দূষণ, যানজট, দুর্নীতি সমস্যার সমাধানে সরকার কাজ করলেও আমরা এগুলোতে বেশ পিছিয়েই আছি। দেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে, তার ভিত্তি বা শেকড় যদি দৃঢ় না হয়, তবে একটা সময় তা ধসে পড়তে পারে। এ শঙ্কার কথা আবারও ব্যক্ত করেছে সিপিডি। গত বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক প্রতিবেদনে বলেছে, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সঠিক পথে নেই বাংলাদেশ। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচার-বিশ্লেষণ করার মতো তথ্য-উপাত্ত পর্যন্ত নেই। ‘চার বছরে বাংলাদেশের এসডিজি বাস্তবায়ন মূল্যায়ন : বেসরকারি খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সিপিডি বলেছে, বৈষম্য দূরীকরণ, শান্তি ও ন্যায়বিচার, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা, কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের এখনো কার্যকর অগ্রগতি হয়নি। তবে সবার জন্য শিক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রাথমিকভাবে সাফল্য এসেছে। এসডিজি অর্জনে সফল হতে হলে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে জবাবদিহি এবং সুশাসন নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের একটি প্রধান ঝোঁক হল কেনাকাটায় অতি উৎসাহ। এতে কমিশন পাওয়া যায় এবং প্রকৃত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দাম জায়েজ করে লুটপাটও করা যায়। এগুলো দেখভালো করার জন্য ন্যায়-নিষ্ঠ সৎ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি ‘অর্থব্যয় কমিশন’ গঠন করা জরুরি। বর্তমান সরকার দুর্নীতিতে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণ করেছে। এ নীতিকে শুধু কাগজে-কলমে গ্রহণই সব নয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বারবার কঠোর হুঁশিয়ারি এবং আন্তরিক সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নানা দুর্নীতির খবর হচ্ছে। দুর্নীতির মাত্রার আশানুরূপ অগ্রগতি কেন হচ্ছে না- এমন প্রশ্ন মাথায় আসাটা অস্বাভাবিক নয়। অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ থাকে, সরষের ভেতরেই ভূত; যারা দুর্নীতি করেন আর যারা দুর্নীতি ধরেন, তাদের মধ্যে বহু বছর ধরে একটা আঁতাত ও দুর্নীতির বিষবৃক্ষ গড়ে উঠেছে। ডিআইজি মিজান ও দুদকের পরিচালক এনামুল বাছিরই এর একমাত্র উদাহরণ নন। এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার গবেষণা ও পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে দেশের প্রশাসনিক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়ে থাকে। এর মধ্যে নানা সেবা খাতের দুর্নীতির মাত্রা ছাড়িয়েছে। এ খাতের দুর্নীতির কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

আমাদের আশা রূপকল্প ২০২১-২০৪১ সফল হোক। বাংলাদেশের নাম উন্নত দেশের তালিকায় স্থান পাক। এ যেমন অশেষ খুশির কথা, তেমনি তার জন্য এখন থেকেই কঠোর প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে উন্নত দেশ হওয়ার ‘রূপকল্প’ রূপকথা বা কল্পকথা হয়েই থাকবে।

abunoman1972@gmail.com

সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ১০ ফল্গুন ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল সানি ১৪৪১

খবরের আড়ালে আরও কত কী ঘটছে!

মোহাম্মদ আবু নোমান

পুলিশ খারাপ, প্রশাসন খারাপ, সরকারি ডাক্তার খারাপ, শুধু সরকারি চাকরি ভালো! একটি সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য দেশের তরুণরা রাজপথে রক্ত দেয়াসহ লাখ-লাখ টাকা দিতেও প্রস্তুত। নিজের জন্য বা নিজের পরিবারের জন্য বা নিজে বড় হওয়ার জন্য কতিপয় মানুষ অন্ধ হয়ে, অন্য মানুষকে এমনকি নিজের দেশকে ঠকিয়ে থাকে। স্ত্রী-সন্তানদের চাই লাক্সারিয়াস জীবন। টাকা কোথা থেকে এলো, সেটা কোন বিবেচ্য বিষয় নয়! কিন্তু এই ঠকানোর পরিণাম এক সময় ভাইবোন, মা-বাবা, স্ত্রী-স্বামী, ছেলেমেয়ে, এমনকি নিজের ওপর চেপে বসে।

ইতিপূর্বে খবর হয়েছে, ইকোনমিক ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা কাজ করতেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার সিনিয়র শাখাপ্রধান হিসেবে। তিন বছরে ব্যাংকে জমা হওয়া বেতন-ভাতার টাকা একবারও তোলেননি তিনি। বেতনের টাকা তুলে কী করবেন। তার ‘উপরির’ টাকার বন্যায় ভাসছে স্ত্রীসহ নামে-বেনামে নিকটাত্মীয়জন। তার আর্থিক অবস্থা এতই পরিবর্তন হয়ে যায়, চাকরির বেতনে হাতই দিতেন না তিনি। অথচ এদের বেতনই বারবার বাড়ানো হচ্ছে যাতে ঘুষ না খায়! অন্যদিকে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবি ছাড়াও বকেয়া বেতনের দাবিতে অনশন করতে করতে পাটকল, চিনিকল শ্রমিকদের মৃত্যুর খবর পত্রিকার পাতায় দেখা যায়।

কিছু লোক স্রেফ লুটপাট ও জনগণের টাকায় বিদেশে পিকনিক করতে যাওয়ার নির্লজ্জ ও কদর্য অভিলাষে মেতে থাকছে। মাত্র আড়াই কিলোমিটার সড়ক বানানোর মোট ব্যয় যেখানে ৭৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সে প্রকল্প বাস্তবায়নে জনপ্রতি ১৫ লাখ টাকা খরচ করে ১৩ জন কর্মকর্তাকে আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপে কথিত ‘প্রশিক্ষণ’ নিতে যাওয়ার যে খুবই দরকার, তা বুঝতে বড় কোনো বিদ্যান হতে হয় না। প্রকল্পের একটি এলইডি বাতির ব্যায় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ‘নর্থ-সাউথ সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পের অধীন চট্টগ্রাম মহানগরীর জাকির হোসেন সড়কের ওয়্যারলেস মোড় থেকে নির্মাণাধীন বায়েজিদ বোস্তামী-ফৌজদারহাট সড়ক পর্যন্ত নতুন সড়ক নির্মাণ করা হবে। যদিও একই সংস্থার আরেকটি প্রকল্পে সড়কবাতি কেনা হয়েছিলো সাড়ে ১১ হাজার টাকা করে।

মাঝে মাঝে এমন খবর দেখে অনুমান করতে বাকি থাকে না, খবরের আড়ালে আরও কত কী ঘটে চলেছে! পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে- তাতে কোন অলৌকিকতা বাদে আমাদের মুক্তির সম্ভাবনা কতটুকু ভাবনার বিষয়। বলা হচ্ছে দেশ ‘উন্নয়নের মহাসড়কে’। তাহলে বলতে হয়, ‘উন্নয়ন’ ও ‘দুর্নীতি’ সমানতালেই এগোচ্ছে! যে কোনোভাবেই হোক, তা বাংলাদেশেই সম্ভব! এ কারণে বালিশকাণ্ড, বাতিকাণ্ড, পর্দাকাণ্ড ইত্যাকার লঙ্কাকাণ্ড একের পর এক ঘটছে।

উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবে বাংলাদেশ। রূপকল্প ২০২১-২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য যে ধরনের মানুষ দরকার, বর্তমান প্রশাসনে তেমন মানুষ আছে কী? উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যারা সনদ নিয়ে ‘শিক্ষিত’ হয়ে বের হয়ে চাকরি নিচ্ছেন, তাদের জাতিকে কিছু দেয়ার যোগ্যতা, দক্ষতা, মানসিকতা না থাকলেও নিজেরা ধনকুবের বনে যাওয়ার বিদ্যাটা রপ্ত করেছেন খুব ভালো করেই। সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসেব নিলেই তা বেরিয়ে আসবে।

দেশে বায়ুর মান আরও খারাপ থেকে খারাপ হয়েছে। অথচ গত ১০ বছরে পরিবেশ অধিদপ্তর দেশে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ২২১ কোটি টাকা খরচ করেছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণের অর্থে ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ’ নামের এ প্রকল্পের (কেইস) মাধ্যমে এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। তবে অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ১২৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে প্রশিক্ষণের নামে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর, পরামর্শক ফি, গাড়ি কেনা ও ভবন নির্মাণে। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয়ে গত জুনে প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। প্রকল্পের অধীনে ১০ বছরে ২৯৬ জন কর্মকর্তা বিদেশে প্রশিক্ষণে গেছেন। একজন কর্মকর্তা ১০ বারও বিদেশে গেছেন।

রাষ্ট্রের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যারা বাস্তবায়ন করেন, তারা নিজেরাই কতটুকু জেনে-বুঝে থাকেন? এতদিন সমাজকে কী বুঝিয়ে এসেছেন? যোগ্যতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার কোন বালাই আছে কী? যে কোনো প্রকল্পের শুরুতেই অডিট বিভাগের রুটিন অডিটে এসব ধরা পড়ে না? না চোরে চোরে মাসতুতো ভাই বনে যায়? যদিও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্পে সর্বশেষ অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে গেলে প্রশিক্ষণের নামে কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর ও সড়কবাতির অতিরিক্ত দাম নিয়ে আপত্তি উঠে। ইতিপূর্বে যেমন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বালিশ-পর্দাসহ বিভিন্ন কেনাকাটায় মেগা দুর্নীতি হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হয়নি। এ ধরনের ডিপিপি যারা প্রস্তুত করেছেন, এখন বলাই যায় লাভের গুড়ের বড় ভাগ তারাই ভোগ করার বাসনা করেছেন। উন্নয়নের নামে দুর্নীতির আশ্রয়-প্রশ্রয়কারী কতিপয় কর্মকর্তারা বরাবরই কাগজে-কলমে কোটি কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়ে প্রকল্পগুলো থেকে অর্থ লুটপাটের নানা টালবাহানা করে থাকেন, সিডিএ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

এখন বাংলাদেশে উন্নয়নের বয়ান অহরহ প্রচারিত হচ্ছে। প্রশ্নটি হল, উন্নয়নের জন্য ব্যয় এবং উন্নয়ন থেকে প্রাপ্ত সুফল কতটুকু সর্বসাধারণ ভোগ করতে পারছে তার যৌক্তিক দিক পর্যালোচনা করা জরুরি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সেরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে, মাথাপিছু আয় ১ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে, উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় ভালো করছে ইত্যাদি কথা বলে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, আরও দাবি করা হচ্ছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। উন্নয়ন প্রকল্পের অকল্পনীয় অর্থ বরাদ্দেই প্রমাণ করে, বড়লোক দেশ, বড়লোক সরকার। অন্যদিকে সোনার চামিচ মুখে গোজা সরকারি চাকরি আর জনগণের কষ্টের টাকা বিনা বাধায় হাতের নাগালে!

বাংলাদেশে উন্নয়নের পথপরিক্রমায় অনর্থক অপচয় ও অপব্যয় নতুন কিছু নয়। উন্নয়ন প্রকল্প সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের নামে আমলাদের বিদেশ সফর, বারবার বিভিন্ন সড়কের আইল্যান্ড ও ফুটপাত ভাঙা এবং তা পুর্ননির্মাণ করা, হাসপাতালগুলোর জন্য চড়া দামে যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং তা ব্যবহার করতে না পারা। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা মেরামত, বাঁধ, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ। কয়েক মাস না যেতেই সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরা। বাঁধগুলো আগাম বর্ষার এক ধাক্কায় উবে যাওয়া। এসব অপচয় ও অপব্যয় এড়ানো গেলে দেশ আরও অনেক বেশি উন্নয়ন অর্জন করতে পারত। কিন্তু সর্বগ্রাসী দুর্নীতি সব উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

দুর্নীতি কমানোর কথা ও খবর শুনলে কর্মকর্তাদের মেজাজ গরম হয়ে যায়। তাদের মনোভাব অনেকটা এ রকম, কেনাকাটায় টাকা মারবার না দিলে কামই করুম না। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- ‘দুর্নীতির ওপর গণমাধ্যমে বারবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচনা-সমালোচনার কারণে ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একধরনের ভীতির সঞ্চার করেছে। অনেকেই এ ধরনের পদে থাকতে চাইছেন না। আবার অনেকে ক্রয় প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকছেন কিংবা ক্রয় প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন। এতে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন বিঘ্নিত ও সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।’ সরকারের চাকরদের ভাবসাবটা এরকম, বালিশ কেনা হোক, পর্দা কেনা হোক, সোফা কেনা হোক, গ্লাভস কেনা হোক, বাতি কেনা হোক- কোটি কোটি টাকা চুরি করুম দুদক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না, সংবাদপত্রও কোন খবর প্রকাশ করবে না!

প্রবৃদ্ধি বাড়ার ওপর সরকার জোর দিচ্ছে। কিন্তু দূরদর্শী নেতৃত্ব ও দক্ষ প্রশাসন ছাড়া আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। কোনো দেশ দুর্নীতি, অশান্তি লালন করে টেকসই উন্নয়ন আশা করতে পারে না। এটা সত্য, বৈশ্বিক অনেক সূচকেই বাংলাদেশ এগিয়েছে। তবে পরিবেশ দূষণ, যানজট, দুর্নীতি সমস্যার সমাধানে সরকার কাজ করলেও আমরা এগুলোতে বেশ পিছিয়েই আছি। দেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে, তার ভিত্তি বা শেকড় যদি দৃঢ় না হয়, তবে একটা সময় তা ধসে পড়তে পারে। এ শঙ্কার কথা আবারও ব্যক্ত করেছে সিপিডি। গত বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক প্রতিবেদনে বলেছে, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সঠিক পথে নেই বাংলাদেশ। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচার-বিশ্লেষণ করার মতো তথ্য-উপাত্ত পর্যন্ত নেই। ‘চার বছরে বাংলাদেশের এসডিজি বাস্তবায়ন মূল্যায়ন : বেসরকারি খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সিপিডি বলেছে, বৈষম্য দূরীকরণ, শান্তি ও ন্যায়বিচার, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা, কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের এখনো কার্যকর অগ্রগতি হয়নি। তবে সবার জন্য শিক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রাথমিকভাবে সাফল্য এসেছে। এসডিজি অর্জনে সফল হতে হলে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে জবাবদিহি এবং সুশাসন নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের একটি প্রধান ঝোঁক হল কেনাকাটায় অতি উৎসাহ। এতে কমিশন পাওয়া যায় এবং প্রকৃত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দাম জায়েজ করে লুটপাটও করা যায়। এগুলো দেখভালো করার জন্য ন্যায়-নিষ্ঠ সৎ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি ‘অর্থব্যয় কমিশন’ গঠন করা জরুরি। বর্তমান সরকার দুর্নীতিতে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণ করেছে। এ নীতিকে শুধু কাগজে-কলমে গ্রহণই সব নয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বারবার কঠোর হুঁশিয়ারি এবং আন্তরিক সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নানা দুর্নীতির খবর হচ্ছে। দুর্নীতির মাত্রার আশানুরূপ অগ্রগতি কেন হচ্ছে না- এমন প্রশ্ন মাথায় আসাটা অস্বাভাবিক নয়। অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ থাকে, সরষের ভেতরেই ভূত; যারা দুর্নীতি করেন আর যারা দুর্নীতি ধরেন, তাদের মধ্যে বহু বছর ধরে একটা আঁতাত ও দুর্নীতির বিষবৃক্ষ গড়ে উঠেছে। ডিআইজি মিজান ও দুদকের পরিচালক এনামুল বাছিরই এর একমাত্র উদাহরণ নন। এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার গবেষণা ও পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে দেশের প্রশাসনিক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়ে থাকে। এর মধ্যে নানা সেবা খাতের দুর্নীতির মাত্রা ছাড়িয়েছে। এ খাতের দুর্নীতির কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

আমাদের আশা রূপকল্প ২০২১-২০৪১ সফল হোক। বাংলাদেশের নাম উন্নত দেশের তালিকায় স্থান পাক। এ যেমন অশেষ খুশির কথা, তেমনি তার জন্য এখন থেকেই কঠোর প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে উন্নত দেশ হওয়ার ‘রূপকল্প’ রূপকথা বা কল্পকথা হয়েই থাকবে।

abunoman1972@gmail.com