করোনাভাইরাস : ফিরে দেখা উত্তাল মার্চ

চিত্ত ঘোষ

স্বাধীনতার ৪৯তম বার্ষিকী পালন করলাম আমরা একেবারে অনাড়ম্বর পরিবেশের মধ্য দিয়ে। বাঙালি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে (৫০তম বর্ষ) পদার্পণ করল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জন করা যেমন কষ্টের, স্বাধীনতা রক্ষা করা আরও কষ্টের” আমাদের এই স্বাধীনতার মসেই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস গোটা পৃথিবীকে উলোট পালোট করে দিয়েছে। পৃথিবীর ২০১টি দেশে এ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৮০ হাজার ৪৬০ জন। এর মধ্যে ৩১ হাজার ৯১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। চীন দেশে এ ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এরপর ইরান, সৌদি আরব, জর্দান, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশসহ আরও অনেক দেশ। ভারতে মারা গেছে ২৫ জন, আক্রান্ত ৯৮৭ জন এবং বাংলাদেশে মারা যায় ৫ জন, আক্রান্ত ৪৮ জন। ১৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

উপাসনালয়গুলো স্বীয় ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে সবচেয়ে আস্থা ও ভরসাস্থল। সেখানে যেতেও মানুষ নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারছেন না। পৃথিবীজুড়ে মানবকুলের এমন অসহায় অবস্থা এ জীবনে দেখব, তা কোনদিন কল্পনাতেও ভাবতে পারিনি। তা পারা যায়ও না।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে যখন স্তব্ধ সারা দেশের সংস্কৃতি অঙ্গন তখন ঢাকায় আর্তমানবতার সেবায় নেমেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ‘মানুষের লাগি ঢেলে দিয়ে যাব মানুষের দেয়া প্রাণ’ এ স্লোগানকে বুকে ধারণ করে নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী মানুষকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছে সংগঠনটি। জরুরি পরিস্থিতিতে গৃহবন্দি হওয়া খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে এ ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের শিল্পী-কর্মীরা।

এই মার্চ মাসে আজ হতে ৪৯ বছর আগে বঙ্গবন্ধু যেমন দেশবাসীকে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে বিতাড়িত করার লক্ষ্যে দেশের মানুষকে যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ৪৯ বছর পর তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীকে টালমাটাল করে দেয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন ২৫ মার্চ ২০২০ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণের মধ্য দিয়ে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণের প্রধান কারিগর শেখ হাসিনা। তিনি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস হতে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে, সুস্থ রাখতে মানুষজনকে ঘরে ঘরে অবস্থান করে ঘরকেই দুর্গ হিসেবে গড়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেকে, পরিবারকে, সমাজকে, দেশকে বাঁচাতে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। ঘোষিত স্বাস্থ্য বিধি-নিষেধ এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও পরামর্শ পালন করি তবেই ৫০ বর্ষে পদার্পণ আমাদের প্রিয় স্বাধীনতার মাস মার্চ মাসের তাৎপর্যের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা জানানো হবে। পাশাপাশি পৃথিবীব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস হতে হয়তো আমরা দেশবাসীকে রক্ষা করতে পারি। আর তা যদি সম্ভব হয় তবে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে ‘রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে। চিকিৎসাসেবার সঙ্গে যারা জড়িত আছেন, তারা আর্তমানবতার সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। জাতি তাদের যথাযথভাবে সম্মান দেখাবেন নিশ্চয়ই। অতীতে ইতিহাস রয়েছে। তারা পেতে পারেন “জাতীয় বীর”-এর মর্যাদা।

মার্চ মাস আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাস। ঐতিহাসিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ এ মাস। এ মাসেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। আবার স্বাধীনতার ঘোষণাও দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৭ কোটি বাঙালি অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যান পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পরে পড়ে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নিয়ে। শুরু হয় নৃশংস গণহত্যা।

পাকিস্তানিদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে ২৬ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। বঙ্গবন্ধুর ইতিপূর্বে দেয়া নির্দেশ অনুযায়ী ঘরে ঘরে গড়ে উঠা দুর্গ হতে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে হানাদার সশস্ত্র পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি নির্দেশ বাঙালিরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। একটানা দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ করে প্রিয় মাতৃভূমিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্ত করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। পাশাপাশি বীর বাঙালির হাতে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আটক হয়।

৩০ লাখ শহীদ ও প্রায় পৌনে ৩ লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পেলাম আমরা স্বাধীনতা। অনেক মূল্য দিয়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে হানাদার বাহিনী মুক্ত করতে পেরেছি।

“We Can” বা ‘আমরাই পারি’ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে রুখে দিতে। ঘরে থাকব, প্রতিরোধ গড়ব। সব স্বাস্থ্য বিধি-নিষেধ ঠিকঠাকভাবে মেনে চলব, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মানব, খুবই অল্প সময়ে দেশ হতে করোনাভাইরাস বিতাড়িত করব। জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু।

[লেখক : গণমাধ্যমকর্মী]

chittaghosh2010@gmail.com

মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ ২০২০ , ১৭ চৈত্র ১৪২৬, ৫ শাবান ১৪৪১

করোনাভাইরাস : ফিরে দেখা উত্তাল মার্চ

চিত্ত ঘোষ

স্বাধীনতার ৪৯তম বার্ষিকী পালন করলাম আমরা একেবারে অনাড়ম্বর পরিবেশের মধ্য দিয়ে। বাঙালি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে (৫০তম বর্ষ) পদার্পণ করল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জন করা যেমন কষ্টের, স্বাধীনতা রক্ষা করা আরও কষ্টের” আমাদের এই স্বাধীনতার মসেই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস গোটা পৃথিবীকে উলোট পালোট করে দিয়েছে। পৃথিবীর ২০১টি দেশে এ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৮০ হাজার ৪৬০ জন। এর মধ্যে ৩১ হাজার ৯১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। চীন দেশে এ ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এরপর ইরান, সৌদি আরব, জর্দান, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশসহ আরও অনেক দেশ। ভারতে মারা গেছে ২৫ জন, আক্রান্ত ৯৮৭ জন এবং বাংলাদেশে মারা যায় ৫ জন, আক্রান্ত ৪৮ জন। ১৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

উপাসনালয়গুলো স্বীয় ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে সবচেয়ে আস্থা ও ভরসাস্থল। সেখানে যেতেও মানুষ নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারছেন না। পৃথিবীজুড়ে মানবকুলের এমন অসহায় অবস্থা এ জীবনে দেখব, তা কোনদিন কল্পনাতেও ভাবতে পারিনি। তা পারা যায়ও না।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে যখন স্তব্ধ সারা দেশের সংস্কৃতি অঙ্গন তখন ঢাকায় আর্তমানবতার সেবায় নেমেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ‘মানুষের লাগি ঢেলে দিয়ে যাব মানুষের দেয়া প্রাণ’ এ স্লোগানকে বুকে ধারণ করে নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী মানুষকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছে সংগঠনটি। জরুরি পরিস্থিতিতে গৃহবন্দি হওয়া খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে এ ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের শিল্পী-কর্মীরা।

এই মার্চ মাসে আজ হতে ৪৯ বছর আগে বঙ্গবন্ধু যেমন দেশবাসীকে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে বিতাড়িত করার লক্ষ্যে দেশের মানুষকে যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ৪৯ বছর পর তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীকে টালমাটাল করে দেয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন ২৫ মার্চ ২০২০ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণের মধ্য দিয়ে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণের প্রধান কারিগর শেখ হাসিনা। তিনি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস হতে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে, সুস্থ রাখতে মানুষজনকে ঘরে ঘরে অবস্থান করে ঘরকেই দুর্গ হিসেবে গড়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেকে, পরিবারকে, সমাজকে, দেশকে বাঁচাতে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। ঘোষিত স্বাস্থ্য বিধি-নিষেধ এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও পরামর্শ পালন করি তবেই ৫০ বর্ষে পদার্পণ আমাদের প্রিয় স্বাধীনতার মাস মার্চ মাসের তাৎপর্যের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা জানানো হবে। পাশাপাশি পৃথিবীব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস হতে হয়তো আমরা দেশবাসীকে রক্ষা করতে পারি। আর তা যদি সম্ভব হয় তবে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে ‘রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে। চিকিৎসাসেবার সঙ্গে যারা জড়িত আছেন, তারা আর্তমানবতার সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। জাতি তাদের যথাযথভাবে সম্মান দেখাবেন নিশ্চয়ই। অতীতে ইতিহাস রয়েছে। তারা পেতে পারেন “জাতীয় বীর”-এর মর্যাদা।

মার্চ মাস আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাস। ঐতিহাসিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ এ মাস। এ মাসেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। আবার স্বাধীনতার ঘোষণাও দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৭ কোটি বাঙালি অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যান পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পরে পড়ে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নিয়ে। শুরু হয় নৃশংস গণহত্যা।

পাকিস্তানিদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে ২৬ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। বঙ্গবন্ধুর ইতিপূর্বে দেয়া নির্দেশ অনুযায়ী ঘরে ঘরে গড়ে উঠা দুর্গ হতে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে হানাদার সশস্ত্র পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি নির্দেশ বাঙালিরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। একটানা দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ করে প্রিয় মাতৃভূমিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্ত করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। পাশাপাশি বীর বাঙালির হাতে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আটক হয়।

৩০ লাখ শহীদ ও প্রায় পৌনে ৩ লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পেলাম আমরা স্বাধীনতা। অনেক মূল্য দিয়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে হানাদার বাহিনী মুক্ত করতে পেরেছি।

“We Can” বা ‘আমরাই পারি’ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে রুখে দিতে। ঘরে থাকব, প্রতিরোধ গড়ব। সব স্বাস্থ্য বিধি-নিষেধ ঠিকঠাকভাবে মেনে চলব, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মানব, খুবই অল্প সময়ে দেশ হতে করোনাভাইরাস বিতাড়িত করব। জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু।

[লেখক : গণমাধ্যমকর্মী]

chittaghosh2010@gmail.com