ঘরে থাকার দিনগুলোতে শিশুর প্রতি মনোযোগ দিন

অলোক আচার্য

আমাদের এই পৃথিবী নানা কারণে সংকটময়। তা যেমন আমাদের বড়দের জন্য এবং তা শিশুদের জন্যও। আমাদের কারণেই পৃথিবী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে হুমকি হয়ে উঠছে। কখনও তা মানুষের জন্য আবার কখনও তা প্রকৃতিগত কারণে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী অনিরাপদ হয়ে উঠছে। মারাত্মক সব মারণাস্ত্র আবিষ্কার করে বহু আগে থেকেই পৃথিবীকে হুমকির মুখে দাঁড় করিয়েছি। তারপর আবার খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প বা প্লেগ, সার্স বা হালের কোভিড-১৯ এর মতো মারাত্মক সব ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বকে সংকটের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে। তবে সবকিছু শেষে একবিন্দুতে এসে মিলিত হয়েছে। আমাদের সামনে একটাই যুদ্ধ, একটাই বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্য। তা হলো করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে নিজেকে এবং বিশ্বকে রক্ষা করার চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা এখন নিজেদের ঘরবন্দী করে রাখছি। এখন স্কুল কলেজ সব কিছু বন্ধ রয়েছে। যে সময়টা আপনার আমার সন্তান স্কুলে হেসেখেলে পার করত সেই সময়টাই এখন তারা পার করছে বাড়িতে বসে। নিজেদের কথার পাশাপাশি এ সময়টা তারা কিভাবে পার করছে, তাদের ভেতর আতঙ্ক আছে কিনা তা কি আমরা খোঁজ নিয়েছি। না তার কোনো প্রয়োজন বোধ করিনি। নিজেদের সময় কাটছে টেলিভিশন আর মোবাইলের স্ক্রিনে ইন্টারনেট ঘেঁটে। অনেকে আবার পছন্দের বই নিয়ে দিব্বি সময় পার করে দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের সন্তানদের সময় কিভাবে কাটছে। শহর থেকে শুরু করে পল্লী অঞ্চল পর্যন্ত শিশুরা ঘরের ভেতর সময় কাটাচ্ছে। তারা বিষয়টা বুঝতে পারছে না এমন নয় তবে আমরা যেভাবে যতটা বুঝতে পারছি ততটা কি তারা বুঝতে পারছে। তাদের এই সময়টা একটু আনন্দময় করতে আমাদের কি কিছুই করণীয় নেই। বড় হিসেবে আমাদের সেই দায়িত্ব রয়েছে।

প্রথমত, আমরা তাদের সময় কম দেই। অন্য সময় হয়তো আমাদের ব্যস্ততার নানা কারণে সারা দিনে তাদের কাছে যাওয়ার সময়ই বের করতে পারি না। সারা দিন নিজেদের অফিস আর অন্য কাজের ব্যস্ততায় ছুটে বেড়াই। অন্যদিকে দেখা যায় আপনার সন্তানটিও সারা দিন স্কুল, প্রাইভেট পড়ে কোচিং করে ক্লান্ত থাকে। ফলে আমাদের সাহচর্য বলতে শুধু ছুটির দিনের ওপর নির্ভর করতে হয়। সেই ছুটির দিনেও আমরা অনেকে ব্যস্ত থাকি। অর্থাৎ অনেকেই ছুটির দিনে নানা ব্যস্ততা জমিয়ে রাখি। ফলে আমাদের কাছ থেকে আমাদের সন্তানদের একধরনের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। সেই দূরত্ব ঘোচানোর সময় এখনই। বেশ কয়েকদিন ঘরে থাকার সময় এসেছে। ঘরে থাকলেই যদি আমরা নিরাপদে থাকতে পারি তাহলে অসুবিধা কিছু হওয়ার কথা না। আপনার সন্তান আপনার কাছে যেতে চাইলে তাকে বকাঝকা না করে বা কাজের অজুহাতে দূরে না সরিয়ে রেখে কাছে টেনে নিন। তাকে সময় দিন। তার সঙ্গে গল্প করুন। তাকে নতুন কিছু শেখান। তার মনমানসিকতার সঙ্গে নিজেকে তৈরি করুন। দেখবেন আপনার সময়টাও বেশ কেটে যাচ্ছে। আর আমার আপনার সন্তানও বেশ আনন্দ পাচ্ছে। একঘেয়েমি কাটাতে শুধু সিরিয়াল নির্ভর হলে তা একসময় আরও একঘেয়েমি হয়ে যাবে আপনার জন্য। তাই সন্তানের সঙ্গে সময় পার করতে থাকুন দেখবেন আপনার সময় কখন পেরিয়ে গেছে তা আপনি নিজেও বুঝতে পারেননি। অতএব তাকে সময় দিতে হবে।

বড় ছোট সবাইকে ঘরে সময় কাটাতে হবে। ফলে আপনার সন্তানের বাইরের যে জগৎ তৈরি হয়েছে তা হয়তো কয়েকদিনের জন্য একটু বদলে যাবে। তার মনের ওপর এটি প্রভাব ফেলতে পারে। আপনি চাইলে তার এ অবস্থা দূর করতে পারেন। শিশু বাইরের সময়টায় মাঠে বা অন্য কোন মুক্ত স্থানে খেলাধুলায় মেতে থাকত। তার সঙ্গে থাকত তার বন্ধুরা। কিন্তু এখন তা সম্ভব না। আপনিই হতে পারেন তার খেলাধুলার সাথী। সেই গুরু দায়িত্বটুকু আপনাকেই নিতে হবে। আপনার সন্তানের একাকীত্ব আপনাকেই দূর করতে হবে। বাইরের যে খেলাগুলো তারা খেলত তা তো আর ঘরে খেলা সম্ভব নয়। আবার খেলাধুলাও করার প্রয়োজন। বাড়িতে ঘরে বসে খেলা যায় এমন অনেক খেলাধুলার উপকরণ পাওয়া যায় বাজারে। সেগুলো সংগ্রহ করুন। আপনার সন্তান যা খেলতে ভালোবাসে তা খেলতে উৎসাহ দিন। আপনি হয়ে যান তার খেলার সাথী। এতে সে আনন্দও পাবে। তার একঘেয়েমি জীবন আনন্দময় হয়ে উঠবে। আপনিও সময় কাটানোর জন্য একটি উপলক্ষ পাবেন। মোট কথা খেলাধুলা করার যে পরিবেশ তা তাকে বাড়িতেই তৈরি করে দিতে হবে। যাতে সে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয় সেসব খেলায়। অবশ্যই তা সবই করতে হবে তাকে উৎসাহ দেয়ার মাধ্যমে। তার মনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে নয়। এতে তার সময় ভালো কাটবে আবার আপনার আমারও। সবচেয়ে বড় কথা পিতা-মাতার সান্নিধ্য ও সাহচার্য শিশুর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দৃঢ় লড়াকু মনোভাব সৃষ্টি করবে। মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করবে। আনন্দ বৃদ্ধি করবে।

শিক্ষার্থীদের একটি বড় সময় থাকে লেখাপড়া করে দিনের সময় পার করা। কিন্তু ঘরে বসে থেকে সবসময় সেই কাজটিও করে যাওয়া সম্ভব হবে না। লেখাপড়া একটানা কার ভালো লাগে! তবে পড়তে তো হবেই। একটি সুন্দর পড়ার রুটিন তৈরি করে সেখানে আপনার সন্তানকে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করাতে পারেন। এমনভাবে তা করতে হবে যেন তা তার মনের ওপর কোনোভাবেই চাপ তৈরি না করে। তাকে বোঝাতে হবে এ সময়ে আমাদের ঘরে থেকে সব কাজ করাটাই নিরাপদ। আপনি হয়তো কোনোদিন আপনার সন্তানের লেখাপড়ার খোঁজ নিতে পারেননি ব্যস্ততার কারণে। তবে এটাই উপযুক্ত সময়। তার লেখাপড়ার অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিন। দেখবেন প্রথমে সংকোচ থাকলে পরে সে বিষয়টিকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। তাকে লেখাপড়ার নতুন নতুন কৌশল সম্পর্কে শেখাতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় লেখাপড়াটাকে চাপ না মনে করে তাকে উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে তাতে অভ্যস্থ করা যায় কি না তার চেষ্টা করতে হবে।

মোটকথা আমাদের প্রত্যেকের ঘরেই সন্তান রয়েছে। তাদের চিন্তা করাটাও আমাদেরই দায়িত্ব। তাদের ঘরে থেকে যেনো সময়টা বৃথা মনখারাপ করে নষ্ট না হয় বা অযথাই না কাটে তার দিকে লক্ষ্য রাখার দায়িত্বই আমাদের। সেই লক্ষ্যই আমাদের রাখতে হবে। তাদের ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। তারা যেন ক্লান্ত না হয়, তারা যেন বিরক্ত না হয়, তারা যেন বুঝতে পারে এই সময়টা ঘরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ তার দায়িত্ব আমাদেরই। যে কোনোভাবেই হোক আমাদের করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করতে হবে। এতে কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা মেনে চলতে হবে ও অন্যকে মেনে চলতে উৎসাহ দিতে হবে। পৃথিবীব্যপী যে মহামারী হয়ে এই রোগ দেখা দিয়েছে তা যেন আর ক্ষয়ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য কয়েকটা দিন আমাদের খুব ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। আমরা যারা বড় তারা খুব সহজেই বিষয়টি বুঝতে পারি বা মেনে চলতেও পারি। কিন্তু আমাদের ভাবনা ভাবতে হবে শিশুদের জন্য। যাদের মন অত্যন্ত কোমল। সুতরাং তাদের কথা বিবেচনা করেই আমাদের কিছু পদক্ষেপ বাড়িতে নিতেই হবে।

[লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট ]sopnil.roy@gmail.com

বৃহস্পতিবার, ০২ এপ্রিল ২০২০ , ১৯ চৈত্র ১৪২৬, ৭ শাবান ১৪৪১

ঘরে থাকার দিনগুলোতে শিশুর প্রতি মনোযোগ দিন

অলোক আচার্য

আমাদের এই পৃথিবী নানা কারণে সংকটময়। তা যেমন আমাদের বড়দের জন্য এবং তা শিশুদের জন্যও। আমাদের কারণেই পৃথিবী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে হুমকি হয়ে উঠছে। কখনও তা মানুষের জন্য আবার কখনও তা প্রকৃতিগত কারণে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী অনিরাপদ হয়ে উঠছে। মারাত্মক সব মারণাস্ত্র আবিষ্কার করে বহু আগে থেকেই পৃথিবীকে হুমকির মুখে দাঁড় করিয়েছি। তারপর আবার খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প বা প্লেগ, সার্স বা হালের কোভিড-১৯ এর মতো মারাত্মক সব ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বকে সংকটের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে। তবে সবকিছু শেষে একবিন্দুতে এসে মিলিত হয়েছে। আমাদের সামনে একটাই যুদ্ধ, একটাই বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্য। তা হলো করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে নিজেকে এবং বিশ্বকে রক্ষা করার চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা এখন নিজেদের ঘরবন্দী করে রাখছি। এখন স্কুল কলেজ সব কিছু বন্ধ রয়েছে। যে সময়টা আপনার আমার সন্তান স্কুলে হেসেখেলে পার করত সেই সময়টাই এখন তারা পার করছে বাড়িতে বসে। নিজেদের কথার পাশাপাশি এ সময়টা তারা কিভাবে পার করছে, তাদের ভেতর আতঙ্ক আছে কিনা তা কি আমরা খোঁজ নিয়েছি। না তার কোনো প্রয়োজন বোধ করিনি। নিজেদের সময় কাটছে টেলিভিশন আর মোবাইলের স্ক্রিনে ইন্টারনেট ঘেঁটে। অনেকে আবার পছন্দের বই নিয়ে দিব্বি সময় পার করে দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের সন্তানদের সময় কিভাবে কাটছে। শহর থেকে শুরু করে পল্লী অঞ্চল পর্যন্ত শিশুরা ঘরের ভেতর সময় কাটাচ্ছে। তারা বিষয়টা বুঝতে পারছে না এমন নয় তবে আমরা যেভাবে যতটা বুঝতে পারছি ততটা কি তারা বুঝতে পারছে। তাদের এই সময়টা একটু আনন্দময় করতে আমাদের কি কিছুই করণীয় নেই। বড় হিসেবে আমাদের সেই দায়িত্ব রয়েছে।

প্রথমত, আমরা তাদের সময় কম দেই। অন্য সময় হয়তো আমাদের ব্যস্ততার নানা কারণে সারা দিনে তাদের কাছে যাওয়ার সময়ই বের করতে পারি না। সারা দিন নিজেদের অফিস আর অন্য কাজের ব্যস্ততায় ছুটে বেড়াই। অন্যদিকে দেখা যায় আপনার সন্তানটিও সারা দিন স্কুল, প্রাইভেট পড়ে কোচিং করে ক্লান্ত থাকে। ফলে আমাদের সাহচর্য বলতে শুধু ছুটির দিনের ওপর নির্ভর করতে হয়। সেই ছুটির দিনেও আমরা অনেকে ব্যস্ত থাকি। অর্থাৎ অনেকেই ছুটির দিনে নানা ব্যস্ততা জমিয়ে রাখি। ফলে আমাদের কাছ থেকে আমাদের সন্তানদের একধরনের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। সেই দূরত্ব ঘোচানোর সময় এখনই। বেশ কয়েকদিন ঘরে থাকার সময় এসেছে। ঘরে থাকলেই যদি আমরা নিরাপদে থাকতে পারি তাহলে অসুবিধা কিছু হওয়ার কথা না। আপনার সন্তান আপনার কাছে যেতে চাইলে তাকে বকাঝকা না করে বা কাজের অজুহাতে দূরে না সরিয়ে রেখে কাছে টেনে নিন। তাকে সময় দিন। তার সঙ্গে গল্প করুন। তাকে নতুন কিছু শেখান। তার মনমানসিকতার সঙ্গে নিজেকে তৈরি করুন। দেখবেন আপনার সময়টাও বেশ কেটে যাচ্ছে। আর আমার আপনার সন্তানও বেশ আনন্দ পাচ্ছে। একঘেয়েমি কাটাতে শুধু সিরিয়াল নির্ভর হলে তা একসময় আরও একঘেয়েমি হয়ে যাবে আপনার জন্য। তাই সন্তানের সঙ্গে সময় পার করতে থাকুন দেখবেন আপনার সময় কখন পেরিয়ে গেছে তা আপনি নিজেও বুঝতে পারেননি। অতএব তাকে সময় দিতে হবে।

বড় ছোট সবাইকে ঘরে সময় কাটাতে হবে। ফলে আপনার সন্তানের বাইরের যে জগৎ তৈরি হয়েছে তা হয়তো কয়েকদিনের জন্য একটু বদলে যাবে। তার মনের ওপর এটি প্রভাব ফেলতে পারে। আপনি চাইলে তার এ অবস্থা দূর করতে পারেন। শিশু বাইরের সময়টায় মাঠে বা অন্য কোন মুক্ত স্থানে খেলাধুলায় মেতে থাকত। তার সঙ্গে থাকত তার বন্ধুরা। কিন্তু এখন তা সম্ভব না। আপনিই হতে পারেন তার খেলাধুলার সাথী। সেই গুরু দায়িত্বটুকু আপনাকেই নিতে হবে। আপনার সন্তানের একাকীত্ব আপনাকেই দূর করতে হবে। বাইরের যে খেলাগুলো তারা খেলত তা তো আর ঘরে খেলা সম্ভব নয়। আবার খেলাধুলাও করার প্রয়োজন। বাড়িতে ঘরে বসে খেলা যায় এমন অনেক খেলাধুলার উপকরণ পাওয়া যায় বাজারে। সেগুলো সংগ্রহ করুন। আপনার সন্তান যা খেলতে ভালোবাসে তা খেলতে উৎসাহ দিন। আপনি হয়ে যান তার খেলার সাথী। এতে সে আনন্দও পাবে। তার একঘেয়েমি জীবন আনন্দময় হয়ে উঠবে। আপনিও সময় কাটানোর জন্য একটি উপলক্ষ পাবেন। মোট কথা খেলাধুলা করার যে পরিবেশ তা তাকে বাড়িতেই তৈরি করে দিতে হবে। যাতে সে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয় সেসব খেলায়। অবশ্যই তা সবই করতে হবে তাকে উৎসাহ দেয়ার মাধ্যমে। তার মনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে নয়। এতে তার সময় ভালো কাটবে আবার আপনার আমারও। সবচেয়ে বড় কথা পিতা-মাতার সান্নিধ্য ও সাহচার্য শিশুর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দৃঢ় লড়াকু মনোভাব সৃষ্টি করবে। মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করবে। আনন্দ বৃদ্ধি করবে।

শিক্ষার্থীদের একটি বড় সময় থাকে লেখাপড়া করে দিনের সময় পার করা। কিন্তু ঘরে বসে থেকে সবসময় সেই কাজটিও করে যাওয়া সম্ভব হবে না। লেখাপড়া একটানা কার ভালো লাগে! তবে পড়তে তো হবেই। একটি সুন্দর পড়ার রুটিন তৈরি করে সেখানে আপনার সন্তানকে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করাতে পারেন। এমনভাবে তা করতে হবে যেন তা তার মনের ওপর কোনোভাবেই চাপ তৈরি না করে। তাকে বোঝাতে হবে এ সময়ে আমাদের ঘরে থেকে সব কাজ করাটাই নিরাপদ। আপনি হয়তো কোনোদিন আপনার সন্তানের লেখাপড়ার খোঁজ নিতে পারেননি ব্যস্ততার কারণে। তবে এটাই উপযুক্ত সময়। তার লেখাপড়ার অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিন। দেখবেন প্রথমে সংকোচ থাকলে পরে সে বিষয়টিকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। তাকে লেখাপড়ার নতুন নতুন কৌশল সম্পর্কে শেখাতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় লেখাপড়াটাকে চাপ না মনে করে তাকে উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে তাতে অভ্যস্থ করা যায় কি না তার চেষ্টা করতে হবে।

মোটকথা আমাদের প্রত্যেকের ঘরেই সন্তান রয়েছে। তাদের চিন্তা করাটাও আমাদেরই দায়িত্ব। তাদের ঘরে থেকে যেনো সময়টা বৃথা মনখারাপ করে নষ্ট না হয় বা অযথাই না কাটে তার দিকে লক্ষ্য রাখার দায়িত্বই আমাদের। সেই লক্ষ্যই আমাদের রাখতে হবে। তাদের ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। তারা যেন ক্লান্ত না হয়, তারা যেন বিরক্ত না হয়, তারা যেন বুঝতে পারে এই সময়টা ঘরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ তার দায়িত্ব আমাদেরই। যে কোনোভাবেই হোক আমাদের করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করতে হবে। এতে কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা মেনে চলতে হবে ও অন্যকে মেনে চলতে উৎসাহ দিতে হবে। পৃথিবীব্যপী যে মহামারী হয়ে এই রোগ দেখা দিয়েছে তা যেন আর ক্ষয়ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য কয়েকটা দিন আমাদের খুব ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। আমরা যারা বড় তারা খুব সহজেই বিষয়টি বুঝতে পারি বা মেনে চলতেও পারি। কিন্তু আমাদের ভাবনা ভাবতে হবে শিশুদের জন্য। যাদের মন অত্যন্ত কোমল। সুতরাং তাদের কথা বিবেচনা করেই আমাদের কিছু পদক্ষেপ বাড়িতে নিতেই হবে।

[লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট ]sopnil.roy@gmail.com