করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায়, সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের অতিদরিদ্র মানুষ। কাজ না থাকায়, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের এখন কষ্টের শেষ নেই। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনধারণ করাই এখন চ্যালেঞ্জিং বিষয়। করোনার কারণে রংপুর নগরীর কর্মহীন শত শত বস্তিবাসী খাদ্যের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। শুধু রংপুর নয়, দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই প্রান্তিক মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে। খাবারের অভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।
হতদরিদ্র এবং প্রান্তিক মানুষের খাদ্য সংকটের চিত্রটি পীড়াদায়ক। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তবে সে সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞ মহল থেকে বারবার বলা হচ্ছে, মানুষকে মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। আর তার জন্য বড় উপায় হচ্ছে ঘরে থাকা। ত্রাণ নেয়াসহ বিভিন্ন জরুরি কাজে বাইরে গেলেও সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। করোনোভাইরাস বাতাসে ছড়ায় এবং মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াচ্ছে। বাতাসে অপ্রয়োজনে থাকা এবং কীভাবে মানুষের মাধ্যমে মানুষে ছড়ানো ঠেকানো যায়, সেদিকেই বেশি নজর দিতে হবে। একজনের কাছ থেকে আরেকজন নিরাপদ দূরত্বে থাকবে, সেটা নিশ্চিত যত বেশি করা যাবে- ততই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ত্রাণ বিতরণের মানচিত্র বা একটি সুষ্ঠু রূপরেখা তৈরি করতে হবে; যাতে ভুক্তভোগী সবাইকে নিয়মের মধ্যে রেখে যথাযথভাবে ত্রাণ সুবিধা দেয়া হয় এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই অতিদরিদ্র এবং কর্মহীন মানুষের জন্য ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়।
ত্রাণ সহায়তা দিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগকে একবৃন্তে নিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার কাঠামোকে কার্যকর করতে হবে। গ্রামাঞ্চলে প্রতিটি ইউনিয়নে ইউপি মেম্বারদের দিয়ে সেই এলাকার অতিদরিদ্র এবং প্রান্তিক মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা উচিত। শহরাঞ্চলে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দিয়ে একইভাবে বস্তিবাসী ও কর্মহীন মানুষদের তালিকা করা সম্ভব। সেই তালিকা ধরে ধরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে পারে ইউপি মেম্বার এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলারদের সহায়তায়। প্রয়োজনে পুলিশ এবং সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করে সব ধরনের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে শৃঙ্খলা আনা যায়।
বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে যারা সহায়তার জন্য প্রস্তুত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য সরকারি উদ্যোগে একটি কমিটি গঠন করা উচিত। সেই কমিটির দায়িত্ব থাকবে যেসব ব্যক্তি ও সংগঠন ত্রাণ দিতে চায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করা এবং তা দ্রুততম সময়ে এই প্রক্রিয়ায় অতিদরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া।
এই লক্ষ্যে নগর, জেলা, উপজেলায় সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে ত্রাণ কমিটি গ্রহণ করে তাদের মধ্যে ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ করা যেতে পারে। তাহলে ত্রাণ বিতরণ যেমন সুষ্ঠু হবে তেমনি নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোও নিশ্চিত করা যাবে। এইভাবে প্রান্তিক মানুষদের খাদ্যের খোঁজে বাইরে আসারও প্রয়োজন পড়বে না, নিশ্চিত করা সম্ভব হবে সামাজিক দূরত্ব। যেটা এই সময়ে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।
রবিবার, ০৫ এপ্রিল ২০২০ , ২২ চৈত্র ১৪২৬, ১০ শাবান ১৪৪১
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায়, সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের অতিদরিদ্র মানুষ। কাজ না থাকায়, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের এখন কষ্টের শেষ নেই। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনধারণ করাই এখন চ্যালেঞ্জিং বিষয়। করোনার কারণে রংপুর নগরীর কর্মহীন শত শত বস্তিবাসী খাদ্যের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। শুধু রংপুর নয়, দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই প্রান্তিক মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে। খাবারের অভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।
হতদরিদ্র এবং প্রান্তিক মানুষের খাদ্য সংকটের চিত্রটি পীড়াদায়ক। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তবে সে সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞ মহল থেকে বারবার বলা হচ্ছে, মানুষকে মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। আর তার জন্য বড় উপায় হচ্ছে ঘরে থাকা। ত্রাণ নেয়াসহ বিভিন্ন জরুরি কাজে বাইরে গেলেও সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। করোনোভাইরাস বাতাসে ছড়ায় এবং মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াচ্ছে। বাতাসে অপ্রয়োজনে থাকা এবং কীভাবে মানুষের মাধ্যমে মানুষে ছড়ানো ঠেকানো যায়, সেদিকেই বেশি নজর দিতে হবে। একজনের কাছ থেকে আরেকজন নিরাপদ দূরত্বে থাকবে, সেটা নিশ্চিত যত বেশি করা যাবে- ততই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ত্রাণ বিতরণের মানচিত্র বা একটি সুষ্ঠু রূপরেখা তৈরি করতে হবে; যাতে ভুক্তভোগী সবাইকে নিয়মের মধ্যে রেখে যথাযথভাবে ত্রাণ সুবিধা দেয়া হয় এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই অতিদরিদ্র এবং কর্মহীন মানুষের জন্য ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়।
ত্রাণ সহায়তা দিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগকে একবৃন্তে নিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার কাঠামোকে কার্যকর করতে হবে। গ্রামাঞ্চলে প্রতিটি ইউনিয়নে ইউপি মেম্বারদের দিয়ে সেই এলাকার অতিদরিদ্র এবং প্রান্তিক মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা উচিত। শহরাঞ্চলে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দিয়ে একইভাবে বস্তিবাসী ও কর্মহীন মানুষদের তালিকা করা সম্ভব। সেই তালিকা ধরে ধরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে পারে ইউপি মেম্বার এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলারদের সহায়তায়। প্রয়োজনে পুলিশ এবং সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করে সব ধরনের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে শৃঙ্খলা আনা যায়।
বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে যারা সহায়তার জন্য প্রস্তুত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য সরকারি উদ্যোগে একটি কমিটি গঠন করা উচিত। সেই কমিটির দায়িত্ব থাকবে যেসব ব্যক্তি ও সংগঠন ত্রাণ দিতে চায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করা এবং তা দ্রুততম সময়ে এই প্রক্রিয়ায় অতিদরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া।
এই লক্ষ্যে নগর, জেলা, উপজেলায় সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে ত্রাণ কমিটি গ্রহণ করে তাদের মধ্যে ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ করা যেতে পারে। তাহলে ত্রাণ বিতরণ যেমন সুষ্ঠু হবে তেমনি নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোও নিশ্চিত করা যাবে। এইভাবে প্রান্তিক মানুষদের খাদ্যের খোঁজে বাইরে আসারও প্রয়োজন পড়বে না, নিশ্চিত করা সম্ভব হবে সামাজিক দূরত্ব। যেটা এই সময়ে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।