এই দায়িত্বহীন সিদ্ধান্তের জন্য দায়ী কারা

৪ এপ্রিল থেকে কারখানা খুলছে- এমনটা জেনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার পোশাক কর্মী গত শনিবার কর্মস্থল অভিমুখে রওনা হন। করোনাভাইরাসের কারণে দেশজুড়ে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে এবং গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে পথের ভোগান্তি সহ্য করেই অসংখ্য শ্রমিক কর্মস্থলে পৌঁছান। এরপর শনিবার রাতে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। সেই ঘোষণা দেয়ার আগে বিকেএমইএর সভাপতি সংবাদকে বলেছিলেন, ছুটি পেয়ে যেসব কর্মী নিজের ইচ্ছায় বাড়ি গেছেন তাদের কর্মস্থলে ফিরতে সমস্যা হলে তাদের কিছু করার নেই। তিনি বলেন, কর্মীদের বেতন দেয়ার জন্য কারখানা খোলা হয়েছে। রোববার থেকে কারখানা খোলা রাখার কথাও তখন তিনি বলেছিলেন।

বিকেএমইএর সভাপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়। কাজে যোগদানের প্রশ্নে শ্রমিকরা কোন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা সেটা দেখার দায় কারখানা মালিকরা এড়াতে পারেন না। মালিকদের এটা অজানা নেই যে, ছুটির পর লাখো কর্মী বাড়ি চলে গেছেন। আগামী ১১ এপ্রিলের আগে গণপরিবহন চালু হবে না সেটাও সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। কোন কারণে গণপরিবহন যদি চালুও থাকত তাহলেও করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যেত। ভুলে গেলে চলবে না যে, কোভিড-১৯ শুধু বিশেষ কোন শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেনি, দেশের সব মানুষই এ কারণে ঝুঁকির সম্মুখীন। শ্রমিকদের কর্মস্থলে যোগ দেয়ার জন্য যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার ফলে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীই স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ল। আমরা জানি, কয়েকশ’ ব্যক্তির তাবলিগ জামাতের একটি দল প্রতিবেশী ভারতে কী স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে। আর বাংলাদেশে হাজার হাজার শ্রমিককে পথে নামানো হয়েছে। পথে নামানোর পর কারখানা বন্ধ করা হয়েছে, রাস্তাঘাটও বন্ধ করা হয়েছে।

পোশাক কারখানা মালিকদের অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপের কারণে শুধু পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়নি গোটা দেশই করোনাভাইরাসের বিস্তৃতির ঝুঁকিতে পড়ল। নিজ কারখানার শ্রমিকদের বা দেশকে বিপদে ফেলা পোশাক মালিকদের জন্য নতুন কোন কাজ নয়। পোশাক মালিকদের নেতা বলেছেন, শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য কারখানা খোলা হয়েছে। পোশাক মালিকদের এ মায়াকান্না মানুষ বোঝে। গত দু’দিন যেসব মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকি উৎপাদন করে কারখানামুখী হয়েছিলেন তাদের একজনও বলেনি যে বেতন নেয়ার জন্য যাচ্ছি। সবাই বলেছে, চাকরি বাঁচাতে যাচ্ছি। চাকরির জন্য তারা স্বাস্থ্যের নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করতে বাধ্য হয়েছেন।

সরকার বলেছে, প্রয়োজনে কারখানা খোলা রাখা যেতে পারে। অভিযোগ উঠেছে, একশ্রেণীর পোশাক মালিকের চাপে এমনটা বলা হয়েছে। সরকার একদিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ঘরে থাকতে বলছে, অন্যদিকে কারখানা খোলা রাখার সুযোগ দিচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, পোশাক কারখানা চলতে বাধা নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, কেউ যেন ঢাকায় ঢুকতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শ্রমিকদের সঙ্গে এ তামাশার মানে কী! সামাজিক দূরত্ব রাখার সরকারি নির্দেশের সঙ্গে এ ধরনের তামাশা কেন করা হলো আমরা এর জবাব চাই। করোনাভাইরাসকে কী পোশাক মালিকরা এবং সরকারের কোন কোন নীতিনির্ধারক খেলা মনে করেছেন। গার্মেন্ট মালিকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে তাদের কার্যাদেশ কমে গেছে। অথচ সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পরও বহু কারখানা দিব্যি কাজ চালিয়েছে। আবার সরকার সাধারণ ছুটি বাড়ানো সত্ত্বেও বহু কারখানা কাজ শুরু করার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠেছে। কার্যাদেশ কমে যাওয়ার সঙ্গে তাদের কাজের এত চাপের রহস্য আমাদের বোধগম্য নয়। এ রহস্য উদ্ঘাটন করা হলে শ্রমিকদের কোন কল্যাণ যে হবে না সেটা বুঝতে পারি। আমরা শুধু বলতে চাই, শ্রমিক তথা দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য যে ঝুঁকি পোশাক কারখানা মালিকরা তৈরি করলেন তার দায় অবশ্যই তাদের নিতে হবে।

বিজিএমইএ সংবাদকে বলেছে, ‘গত শুক্রবার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, আগামীকাল (রোববার) থেকে সব কারখানা খোলা থাকবে।’ আমাদের বোধগম্য নয়, যেখানে সরকারি সিদ্ধান্ত হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বহাল রাখতে হবে, সেখানে সরকারি এ অধিদপ্তরটি ‘সব কারখানা খোলা থাকার’ সার্কুলার দিলো কোন বিবেচনায়। কারো কারো অভিযোগ হচ্ছে সরকারি নীতির বরখেলাপ করে এটা করা হয়েছে গার্মেন্টস মালিকদের চাপে। ৫ হাজার কোটি টাকার সরকারি প্রণোদনা ছিল যাদের টার্গেট। গার্মেন্টসের মালিকদের লোভের কোন সীমা নেই- এই ঘটনাটি তার আরেকটি দৃষ্টান্ত। আমরা বলতে চাই, পুরো ঘটনাটির তদন্ত করা হোক এবং যুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।

সোমবার, ০৬ এপ্রিল ২০২০ , ২৩ চৈত্র ১৪২৬, ১১ শাবান ১৪৪১

পোশাক কারখানা মালিকদের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডে দেশে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হলো

এই দায়িত্বহীন সিদ্ধান্তের জন্য দায়ী কারা

৪ এপ্রিল থেকে কারখানা খুলছে- এমনটা জেনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার পোশাক কর্মী গত শনিবার কর্মস্থল অভিমুখে রওনা হন। করোনাভাইরাসের কারণে দেশজুড়ে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে এবং গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে পথের ভোগান্তি সহ্য করেই অসংখ্য শ্রমিক কর্মস্থলে পৌঁছান। এরপর শনিবার রাতে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। সেই ঘোষণা দেয়ার আগে বিকেএমইএর সভাপতি সংবাদকে বলেছিলেন, ছুটি পেয়ে যেসব কর্মী নিজের ইচ্ছায় বাড়ি গেছেন তাদের কর্মস্থলে ফিরতে সমস্যা হলে তাদের কিছু করার নেই। তিনি বলেন, কর্মীদের বেতন দেয়ার জন্য কারখানা খোলা হয়েছে। রোববার থেকে কারখানা খোলা রাখার কথাও তখন তিনি বলেছিলেন।

বিকেএমইএর সভাপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়। কাজে যোগদানের প্রশ্নে শ্রমিকরা কোন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা সেটা দেখার দায় কারখানা মালিকরা এড়াতে পারেন না। মালিকদের এটা অজানা নেই যে, ছুটির পর লাখো কর্মী বাড়ি চলে গেছেন। আগামী ১১ এপ্রিলের আগে গণপরিবহন চালু হবে না সেটাও সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। কোন কারণে গণপরিবহন যদি চালুও থাকত তাহলেও করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যেত। ভুলে গেলে চলবে না যে, কোভিড-১৯ শুধু বিশেষ কোন শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেনি, দেশের সব মানুষই এ কারণে ঝুঁকির সম্মুখীন। শ্রমিকদের কর্মস্থলে যোগ দেয়ার জন্য যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার ফলে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীই স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ল। আমরা জানি, কয়েকশ’ ব্যক্তির তাবলিগ জামাতের একটি দল প্রতিবেশী ভারতে কী স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে। আর বাংলাদেশে হাজার হাজার শ্রমিককে পথে নামানো হয়েছে। পথে নামানোর পর কারখানা বন্ধ করা হয়েছে, রাস্তাঘাটও বন্ধ করা হয়েছে।

পোশাক কারখানা মালিকদের অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপের কারণে শুধু পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়নি গোটা দেশই করোনাভাইরাসের বিস্তৃতির ঝুঁকিতে পড়ল। নিজ কারখানার শ্রমিকদের বা দেশকে বিপদে ফেলা পোশাক মালিকদের জন্য নতুন কোন কাজ নয়। পোশাক মালিকদের নেতা বলেছেন, শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য কারখানা খোলা হয়েছে। পোশাক মালিকদের এ মায়াকান্না মানুষ বোঝে। গত দু’দিন যেসব মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকি উৎপাদন করে কারখানামুখী হয়েছিলেন তাদের একজনও বলেনি যে বেতন নেয়ার জন্য যাচ্ছি। সবাই বলেছে, চাকরি বাঁচাতে যাচ্ছি। চাকরির জন্য তারা স্বাস্থ্যের নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করতে বাধ্য হয়েছেন।

সরকার বলেছে, প্রয়োজনে কারখানা খোলা রাখা যেতে পারে। অভিযোগ উঠেছে, একশ্রেণীর পোশাক মালিকের চাপে এমনটা বলা হয়েছে। সরকার একদিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ঘরে থাকতে বলছে, অন্যদিকে কারখানা খোলা রাখার সুযোগ দিচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, পোশাক কারখানা চলতে বাধা নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, কেউ যেন ঢাকায় ঢুকতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শ্রমিকদের সঙ্গে এ তামাশার মানে কী! সামাজিক দূরত্ব রাখার সরকারি নির্দেশের সঙ্গে এ ধরনের তামাশা কেন করা হলো আমরা এর জবাব চাই। করোনাভাইরাসকে কী পোশাক মালিকরা এবং সরকারের কোন কোন নীতিনির্ধারক খেলা মনে করেছেন। গার্মেন্ট মালিকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে তাদের কার্যাদেশ কমে গেছে। অথচ সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পরও বহু কারখানা দিব্যি কাজ চালিয়েছে। আবার সরকার সাধারণ ছুটি বাড়ানো সত্ত্বেও বহু কারখানা কাজ শুরু করার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠেছে। কার্যাদেশ কমে যাওয়ার সঙ্গে তাদের কাজের এত চাপের রহস্য আমাদের বোধগম্য নয়। এ রহস্য উদ্ঘাটন করা হলে শ্রমিকদের কোন কল্যাণ যে হবে না সেটা বুঝতে পারি। আমরা শুধু বলতে চাই, শ্রমিক তথা দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য যে ঝুঁকি পোশাক কারখানা মালিকরা তৈরি করলেন তার দায় অবশ্যই তাদের নিতে হবে।

বিজিএমইএ সংবাদকে বলেছে, ‘গত শুক্রবার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, আগামীকাল (রোববার) থেকে সব কারখানা খোলা থাকবে।’ আমাদের বোধগম্য নয়, যেখানে সরকারি সিদ্ধান্ত হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বহাল রাখতে হবে, সেখানে সরকারি এ অধিদপ্তরটি ‘সব কারখানা খোলা থাকার’ সার্কুলার দিলো কোন বিবেচনায়। কারো কারো অভিযোগ হচ্ছে সরকারি নীতির বরখেলাপ করে এটা করা হয়েছে গার্মেন্টস মালিকদের চাপে। ৫ হাজার কোটি টাকার সরকারি প্রণোদনা ছিল যাদের টার্গেট। গার্মেন্টসের মালিকদের লোভের কোন সীমা নেই- এই ঘটনাটি তার আরেকটি দৃষ্টান্ত। আমরা বলতে চাই, পুরো ঘটনাটির তদন্ত করা হোক এবং যুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।