পবিত্র শবেবরাত

আজ পবিত্র শবেবরাত। মুসলিম জাহানের পরম প্রতীক্ষিত, অশেষ মহিমান্বিত ও ফজিলতময় রাত। প্রতি বছর শাবানের চাঁদের ১৪ তারিখ রাতে পবিত্র ‘শবেবরাত’ হিসেবে পালিত হয়। রাসুলে করিম (সা.) বলেন, এ পবিত্র রাতে সমগ্র দুনিয়াবাসীর জন্য আল্লাহপাকের করুণা বর্ষিত হয়। এ রাত ভাগ্য ও রহমত বণ্টনের রাত।

পবিত্র কোরআন মজিদে শবেবরাতকে বলা হয়েছে ‘লাইলাতুল মুবারাকাতুন’ অর্থাৎ শুভ রজনী বা মঙ্গলময় রাত। সুখ-দুঃখ, অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে একটি বছর পার হয়ে আমাদের মাঝে আবার ফিরে এসেছে শবেবরাতের এ পুণ্যময় রাত। অনেকের মতে এ রাতেই জগৎস্রষ্টা ও বিশ্বের প্রতিপালক পরম করুণাময় আল্লাহ তা’আলা সমগ্র মানবজাতি, সব মানুষের জন্য পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। এ রাতে আল্লাহপাক তার বান্দাদের ফরিয়াদ ও তওবা কবুল করেন, তাদের গোনাহ মাফ করে দেন।

এ পবিত্র রাতের ফজিলত বর্ণনা করে হজরত রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, এ রাতে যে বান্দা সাফ দিল নিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে সব মনপ্রাণ সমর্পণ করবেন, কৃতকর্মে যদি কোন গোনাহ হয়ে থাকে তার জন্য মাফ চাইবেন, রাতভর নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া-দরুদ পাঠের মাধ্যমে বিনিদ্র রজনী যাপন করবেন, আল্লাহপাক তার প্রার্থনা কবুল করবেন এবং আশা-আকাক্সক্ষা পূর্ণ করে দেবেন।

হজরত রাসুলে করিম (সা.) এ রাতের মহিমা বর্ণনা করে আরও বলেছেন, লাইলাতুল বরাতের এ রাতের প্রথম ভাগে স্বয়ং আল্লাহপাক প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হয়ে বলেন- কে আছ আমার প্রিয় বান্দা, যারা কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী, বিপদগ্রস্ত ও সুখশান্তির প্রত্যাশী, ধনদৌলত ও সৌভাগ্য অর্জনে আশাবাদী এবং আখেরাতের মঙ্গল কামনাকারী? তোমরা এ পুণ্যময় রাতে আমার কাছে ফরিয়াদ কর। আমি নিঃসন্দেহে তোমাদের ফরিয়াদ কবুল করে নেব।

হাদিস শরিফে শবেবরাতের ফজিলত ও মরতবা সম্পর্কে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। এ পবিত্র রাতে নফল নামাজ আদায় ও পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ছাড়াও জিকির-আজকার, মিলাদ-মাহফিল, মোনাজাত এবং গরিব-মিসকিনদের মধ্যে দান-খয়রাত ইত্যাদিতে রয়েছে অশেষ সওয়াব ও বরকত।

প্রতিটি মুসলমানের কাছে এ পবিত্র রাতের গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে একান্ত সমর্পিত চিত্তে এবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এ মহিমান্বিত রাতটি পালন করা কর্তব্য। নিছক আনুষ্ঠানিকতার কোন মূল্য নেই। লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতার কোন জৌলুস আল্লাহপাকের দরবারে পৌঁছায় না। আল্লাহপাকের দরবারে পৌঁছায় শুধু তার বান্দার অন্তরের আকুলতা, উদ্দেশ্যের সততা ও আন্তরিকতা, চিত্তের শুদ্ধি এবং সংকল্পের দৃঢ়তা ও পবিত্রতা। সারা বছর স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে অন্যায়-অবিচার ও পাপাচারে লিপ্ত থেকে শুধু পবিত্র শবেবরাতের রাতে এবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহপাকের রহমত পাওয়ার চেষ্টা বৃথা। তাই সারা বছর কল্যাণকর্মে ব্রতী হওয়ার জন্য ইসলাম ধর্ম নির্দেশ দান করে। নামাজ-রোজা, এবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি আল্লাহ তা’আলার সেরা সৃষ্টি মানুষের প্রতি মানুষের যে মানবিক কর্তব্য, সে কর্তব্য পালনের জন্যও ইসলামের নির্দেশ রয়েছে। এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন না করলে আল্লাহর দরবারে স্থান পাওয়া যায় না।

দুঃখজনক যে, প্রতিবছর এ শবেবরাত পালন উপলক্ষে আমাদের মধ্যে বাহ্যিক আড়ম্বরের ব্যাপারটাই যেন প্রধান হয়ে ওঠে। পবিত্র এ রাতের সব পবিত্রতা ও গাম্ভীর্য ভূলুণ্ঠিত করে আতশবাজির হিড়িক পড়ে যায়। অহেতুক আলোকসজ্জার প্রতিযোগিতা চলে। এসবই সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষত। ভাবগম্ভীর পরিবেশে, সৎ ও পবিত্র মন নিয়ে এবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এ রাতটি পালন করাই শ্রেয়। এভাবেই শুধু পবিত্র শবেবরাত হয়ে উঠতে পারে পরিপূর্ণ, সার্থক ও মহান তাৎপর্যে উদ্ভাসিত।

বৃহস্পতিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২০ , ২৬ চৈত্র ১৪২৬, ১৪ শাবান ১৪৪১

পবিত্র শবেবরাত

আজ পবিত্র শবেবরাত। মুসলিম জাহানের পরম প্রতীক্ষিত, অশেষ মহিমান্বিত ও ফজিলতময় রাত। প্রতি বছর শাবানের চাঁদের ১৪ তারিখ রাতে পবিত্র ‘শবেবরাত’ হিসেবে পালিত হয়। রাসুলে করিম (সা.) বলেন, এ পবিত্র রাতে সমগ্র দুনিয়াবাসীর জন্য আল্লাহপাকের করুণা বর্ষিত হয়। এ রাত ভাগ্য ও রহমত বণ্টনের রাত।

পবিত্র কোরআন মজিদে শবেবরাতকে বলা হয়েছে ‘লাইলাতুল মুবারাকাতুন’ অর্থাৎ শুভ রজনী বা মঙ্গলময় রাত। সুখ-দুঃখ, অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে একটি বছর পার হয়ে আমাদের মাঝে আবার ফিরে এসেছে শবেবরাতের এ পুণ্যময় রাত। অনেকের মতে এ রাতেই জগৎস্রষ্টা ও বিশ্বের প্রতিপালক পরম করুণাময় আল্লাহ তা’আলা সমগ্র মানবজাতি, সব মানুষের জন্য পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। এ রাতে আল্লাহপাক তার বান্দাদের ফরিয়াদ ও তওবা কবুল করেন, তাদের গোনাহ মাফ করে দেন।

এ পবিত্র রাতের ফজিলত বর্ণনা করে হজরত রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, এ রাতে যে বান্দা সাফ দিল নিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে সব মনপ্রাণ সমর্পণ করবেন, কৃতকর্মে যদি কোন গোনাহ হয়ে থাকে তার জন্য মাফ চাইবেন, রাতভর নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া-দরুদ পাঠের মাধ্যমে বিনিদ্র রজনী যাপন করবেন, আল্লাহপাক তার প্রার্থনা কবুল করবেন এবং আশা-আকাক্সক্ষা পূর্ণ করে দেবেন।

হজরত রাসুলে করিম (সা.) এ রাতের মহিমা বর্ণনা করে আরও বলেছেন, লাইলাতুল বরাতের এ রাতের প্রথম ভাগে স্বয়ং আল্লাহপাক প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হয়ে বলেন- কে আছ আমার প্রিয় বান্দা, যারা কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী, বিপদগ্রস্ত ও সুখশান্তির প্রত্যাশী, ধনদৌলত ও সৌভাগ্য অর্জনে আশাবাদী এবং আখেরাতের মঙ্গল কামনাকারী? তোমরা এ পুণ্যময় রাতে আমার কাছে ফরিয়াদ কর। আমি নিঃসন্দেহে তোমাদের ফরিয়াদ কবুল করে নেব।

হাদিস শরিফে শবেবরাতের ফজিলত ও মরতবা সম্পর্কে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। এ পবিত্র রাতে নফল নামাজ আদায় ও পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ছাড়াও জিকির-আজকার, মিলাদ-মাহফিল, মোনাজাত এবং গরিব-মিসকিনদের মধ্যে দান-খয়রাত ইত্যাদিতে রয়েছে অশেষ সওয়াব ও বরকত।

প্রতিটি মুসলমানের কাছে এ পবিত্র রাতের গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে একান্ত সমর্পিত চিত্তে এবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এ মহিমান্বিত রাতটি পালন করা কর্তব্য। নিছক আনুষ্ঠানিকতার কোন মূল্য নেই। লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতার কোন জৌলুস আল্লাহপাকের দরবারে পৌঁছায় না। আল্লাহপাকের দরবারে পৌঁছায় শুধু তার বান্দার অন্তরের আকুলতা, উদ্দেশ্যের সততা ও আন্তরিকতা, চিত্তের শুদ্ধি এবং সংকল্পের দৃঢ়তা ও পবিত্রতা। সারা বছর স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে অন্যায়-অবিচার ও পাপাচারে লিপ্ত থেকে শুধু পবিত্র শবেবরাতের রাতে এবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহপাকের রহমত পাওয়ার চেষ্টা বৃথা। তাই সারা বছর কল্যাণকর্মে ব্রতী হওয়ার জন্য ইসলাম ধর্ম নির্দেশ দান করে। নামাজ-রোজা, এবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি আল্লাহ তা’আলার সেরা সৃষ্টি মানুষের প্রতি মানুষের যে মানবিক কর্তব্য, সে কর্তব্য পালনের জন্যও ইসলামের নির্দেশ রয়েছে। এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন না করলে আল্লাহর দরবারে স্থান পাওয়া যায় না।

দুঃখজনক যে, প্রতিবছর এ শবেবরাত পালন উপলক্ষে আমাদের মধ্যে বাহ্যিক আড়ম্বরের ব্যাপারটাই যেন প্রধান হয়ে ওঠে। পবিত্র এ রাতের সব পবিত্রতা ও গাম্ভীর্য ভূলুণ্ঠিত করে আতশবাজির হিড়িক পড়ে যায়। অহেতুক আলোকসজ্জার প্রতিযোগিতা চলে। এসবই সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষত। ভাবগম্ভীর পরিবেশে, সৎ ও পবিত্র মন নিয়ে এবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এ রাতটি পালন করাই শ্রেয়। এভাবেই শুধু পবিত্র শবেবরাত হয়ে উঠতে পারে পরিপূর্ণ, সার্থক ও মহান তাৎপর্যে উদ্ভাসিত।