তাৎপর্যময় পবিত্র শবেবরাতের আমল ও ফজিলত

ইসমাইল মাহমুদ

মুসলমানদের জন্য পবিত্র শবেবরাতের রজনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ তাৎপর্যময়। পবিত্র শবেবরাতের আরবি নাম ‘লাইলাতুল বারাআত’। ‘শব’ হলো ফারসি শব্দ। এর আরবি হলো ‘লাইলাতুল’। ‘শব’ ও ‘লাইলাতুল’ শব্দের বাংলা অর্থ রজনী বা রাত। আর আরবি ‘বারাআত’ শব্দের অর্থ হলো মুক্তি, নাজাত বা নিষ্কৃতি। ‘লাইলাতুল বারাআত’ মানে মুক্তির রজনী বা নিষ্কৃতির রজনী। এ রজনীতে বা রাতে মুসলমানরা রাতব্যাপী ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মধ্য দিয়ে মার্জনা লাভ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। তাই এ রাতকে ‘লাইলাতুল বারাআত’ বা ‘শবেবরাত’ বলা হয়। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিস্ফ মিন শাবান’ নামে বর্ণনা করেছেন। এর অর্থ হলো অর্ধ শাবানের রাত।

বিশ্বের মুসলমানদের কাছে প্রতি বছর আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাত বা রজনী অত্যন্ত বরকতময় এবং মহিমান্বিত হিসেবে বিবেচিত। এ রাতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীন মানবজাতির জন্য তার অসীম রহমতের দরজা উন্মুক্ত করে দেন। লাইলাতুল বরাতের পবিত্র রাতে মুমিন ও ঈমানদার বান্দারা মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করে থাকেন। এ রাতে মানুষের সব আমল এবং ভালো-মন্দ কর্মের হিসাব মহান আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়।

পবিত্র লাইলাতুল বরাতের রাতে মহান আল্লাহর খাঁটি ও ঈমানদার বান্দারা পরম করুণাময়ের দরবারে নিজের সারা জীবনের পাপ ও অন্যায় এবং দোষ-ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন। মহান রাব্বুল আল-আমীন বান্দাদের সব জীবনের পাপ ও অন্যায় ও দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দেন। প্রতি বছর এ রাতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’আলা তার প্রতিটি বান্দার জন্য পরবর্তী বছরের রিজিক নির্ধারণ করেন এবং সবার ভাগ্য নির্ধারণ করেন। পবিত্র এ রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী বছরের যাবতীয় ফয়সালা হায়াত, মউত, রিজিক, দৌলত, আমল ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আদেশ-নিষেধগুলো ওই রাতে লওহে মাহফুজ থেকে উদ্ধৃত করে কার্যনির্বাহক ফেরেশতাদের কাছে সোপর্দ করা হয়।’

পবিত্র শবেবরাত বা লাইলাতুল বরাতের রাতে যারা মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাদের মহান আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেন। এ রাতে মহান আল্লাহ বিপদগ্রস্ত মানুষদের বিপদ থেকে উত্তরণের পথ দেখান। মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণকারী এ রাতটি তাই সব মুসলমানদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ রাতটি সম্পর্কে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘শাবানের ১৪ তারিখের রাতে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষী ব্যক্তি ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (বায়হাকি)। পাপী লোকেরা যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিজ নিজ পাপকাজ পরিত্যাগ করে তওবা করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত শবেবরাতেও তাদের জন্য ক্ষমার দ্বার উন্মুক্ত হবে না। এ রাতে কেউ যদি খাঁটি দিলে অতীত অন্যায়ের জন্য অনুতাপ তথা তওবা করেন এবং ভবিষ্যতে অন্যায় বা পাপ কাজ না করার সংকল্প গ্রহণ করে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করেন তবে মহান আল্লাহ তা’আলা অবশ্য তাকে মাফ করতে পারেন। তাই মুক্তির রজনী হিসেবে লাইলাতুল বরাতের আগমন পাপী-তাপী বান্দাদের জন্য এক অনবদ্য নিয়ামতের ভাণ্ডার।’ নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন মধ্য শাবানের রজনী উপস্থিত হয়, তখন সেই রাত্রি জাগরণ করে তোমরা সালাতে নিমগ্ন হবে এবং পরদিন রোজা রাখবে। কারণ আল্লাহ তা’আলা এ রাতে সূর্যাস্তের পর পৃথিবীর আসমানে অবতরণ করেন এবং তার বান্দাদের ডেকে ঘোষণা দিতে থাকেন আছে কোন ক্ষমাপ্রার্থী? যাকে আমি ক্ষমা করব, আছে কোন রিজিকপ্রার্থী? যাকে আমি রিজিক দেব? আছে কোন বিপদাপন্ন? যার বিপদ আমি দূর করে দেব? আছে কোন তওবাকারী? যার তওবা আমি কবুল করব। এভাবে নানা শ্রেণীর বান্দাকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত মহান আল্লাহ তা’আলা আহ্বান করতে থাকেন।’ (ইবনে মাজা, মিশকাত)

নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি শাবান মাসের ১৫ তারিখে রোজা রাখবে, দোজখের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না।’ (আবু দাউদ)।

পবিত্র শবেবরাতের রাত মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করলে পরম করুনাময় আল্লাহ তা’আলা সবাইকে ক্ষমা করে দেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, এগারোটি কবিরা গুনাহ থেকে খাঁটি দিলে তওবা করা উচিত। নতুবা পবিত্র শবেবরাতের রাতে সারা রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত বন্দেগি করলেও কোন লাভ হবে না। শবেবরাতের পূর্ণ ফজিলত ও শবেবরাতের রাতে দোয়া কবুল হওয়ার জন্য নিন্মে উল্লিখিত কবিরা গুনাহগুলো থেকে খাঁটি দিলে তওবা করা উচিত।

১. যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সঙ্গে যে কোন প্রকারের শিরকে লিপ্ত হয়

২. যে ব্যক্তি কারও প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেছেন

৩. যে ব্যক্তি আত্মহত্যার ইচ্ছা পোষণ করেছেন

৪. যে ব্যক্তি অপরের ভালো দেখতে পারে না। এক কথায় পরশ্রীকাতরতায় লিপ্ত

৫. যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে

৬. যে ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়

৭. যে ব্যক্তি মদপানকারী অর্থাৎ নেশাকারী

৮. যে ব্যক্তি ভবিষ্যৎ জানার জন্য গণক বা জ্যোতিষির কাছে গমন করে বা গণকগিরি করে

৯. যে ব্যক্তি জুয়া খেলে

১০. যে ব্যক্তি নিজ মাতাপিতার অবাধ্য হয়

১১. যে পুরুষ টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করে

এসব এগারোটি কবিরা গুনাহ যারা জীবনে একবার হলেও করেছেন তারা পবিত্র শবেবরাতের রাতেও আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হবেন যতক্ষণ পর্যন্ত তওবা না করেন।

পবিত্র শবেবরাতের রাত হলো ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকার রাত। এ রাতে তওবা-ইস্তেগফার করা, আল্লাহর কাছে অতীতের সব পাপাচারের ক্ষমা প্রার্থনা ও ভবিষ্যতের জন্য আকুতি জানানো এবং জীবিত ও মৃতদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার রজনী হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র এ রাতে নামাজ আদায়, কোরআন তিলাওয়াত করা, কবর জিয়ারত করা ও পরদিন নফল রোজা রাখার নির্দেশ রয়েছে। আর এসব কাজের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব। মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এ রাতে কবর জিয়ারত করতেন এবং ইবাদতে নিমগ্ন হতেন। শবেবরাতের আমল বা করণীয় হলো-

১. কবর জিয়ারত। তবে তা অবশ্যই দলবদ্ধ ও আড়ম্বরপূর্ণ না হয়ে একাকী হওয়া উচিত

২. নামাজ-দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, দরুদ শরিফ ইত্যাদিতে লিপ্ত থাকা

৩. দীর্ঘ সিজদায় রত হওয়া উচিত

৪. শবেবরাতের পরের দিন অর্থাৎ ১৫ শাবান রোজা রাখা।

কিন্তু বর্তমানে দেখা যায় অনেকাংশে পবিত্র এ রাতে বিভিন্ন স্থানে ভবনে আলোকসজ্জা করা, আতশবাজি ও পটকা ফোটানো, তারাবাতি জ্বালানো, হালুয়া-রুটি তৈরি ইত্যাদি শরিয়তগর্হিত কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন কবরস্থানে বা মসজিদে আলোকসজ্জা করার প্রচলন বিদ্যমান। এটি একটি বিদআত ও অপসংস্কৃতির এক প্রকৃষ্ট নমুনা। আর এসব কারণে পবিত্র এ রাতে ইবাদতে বিঘ্ন ঘটে। এসব ইসলাম কোনভাবেই সমর্থন করে না। তাই এসব অবশ্যই বর্জন করতে হবে। অনেকে সারা রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি না করে মসজিদে-মসজিদে ঘোরাঘুরি করে নামাজ আদায় করেন। এছাড়া রাস্তায়-রাস্তায় গল্প-গুজবে মশগুল থাকেন। এসব কাজ পবিত্র এ রাতের মর্যদার পরিপন্থী। পবিত্র এ রাত্রিতে মসজিদে নামাজ আদায় করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় নিজ-নিজ বাড়িতে একা-একা ইবাদত করা। সব নফল ইবাদত বাড়িতে পালন করাই উত্তম। কারও জীবনে যদি ওয়াক্তের নামাজ কাজা হয়ে থাকে তবে নফল নামাজ না পড়ে কাজা নামাজ আদায় করা আবশ্যক।

ismail.press2019@gmail.com

বৃহস্পতিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২০ , ২৬ চৈত্র ১৪২৬, ১৪ শাবান ১৪৪১

তাৎপর্যময় পবিত্র শবেবরাতের আমল ও ফজিলত

ইসমাইল মাহমুদ

মুসলমানদের জন্য পবিত্র শবেবরাতের রজনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ তাৎপর্যময়। পবিত্র শবেবরাতের আরবি নাম ‘লাইলাতুল বারাআত’। ‘শব’ হলো ফারসি শব্দ। এর আরবি হলো ‘লাইলাতুল’। ‘শব’ ও ‘লাইলাতুল’ শব্দের বাংলা অর্থ রজনী বা রাত। আর আরবি ‘বারাআত’ শব্দের অর্থ হলো মুক্তি, নাজাত বা নিষ্কৃতি। ‘লাইলাতুল বারাআত’ মানে মুক্তির রজনী বা নিষ্কৃতির রজনী। এ রজনীতে বা রাতে মুসলমানরা রাতব্যাপী ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মধ্য দিয়ে মার্জনা লাভ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। তাই এ রাতকে ‘লাইলাতুল বারাআত’ বা ‘শবেবরাত’ বলা হয়। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিস্ফ মিন শাবান’ নামে বর্ণনা করেছেন। এর অর্থ হলো অর্ধ শাবানের রাত।

বিশ্বের মুসলমানদের কাছে প্রতি বছর আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাত বা রজনী অত্যন্ত বরকতময় এবং মহিমান্বিত হিসেবে বিবেচিত। এ রাতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীন মানবজাতির জন্য তার অসীম রহমতের দরজা উন্মুক্ত করে দেন। লাইলাতুল বরাতের পবিত্র রাতে মুমিন ও ঈমানদার বান্দারা মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করে থাকেন। এ রাতে মানুষের সব আমল এবং ভালো-মন্দ কর্মের হিসাব মহান আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়।

পবিত্র লাইলাতুল বরাতের রাতে মহান আল্লাহর খাঁটি ও ঈমানদার বান্দারা পরম করুণাময়ের দরবারে নিজের সারা জীবনের পাপ ও অন্যায় এবং দোষ-ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন। মহান রাব্বুল আল-আমীন বান্দাদের সব জীবনের পাপ ও অন্যায় ও দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দেন। প্রতি বছর এ রাতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’আলা তার প্রতিটি বান্দার জন্য পরবর্তী বছরের রিজিক নির্ধারণ করেন এবং সবার ভাগ্য নির্ধারণ করেন। পবিত্র এ রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী বছরের যাবতীয় ফয়সালা হায়াত, মউত, রিজিক, দৌলত, আমল ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আদেশ-নিষেধগুলো ওই রাতে লওহে মাহফুজ থেকে উদ্ধৃত করে কার্যনির্বাহক ফেরেশতাদের কাছে সোপর্দ করা হয়।’

পবিত্র শবেবরাত বা লাইলাতুল বরাতের রাতে যারা মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাদের মহান আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেন। এ রাতে মহান আল্লাহ বিপদগ্রস্ত মানুষদের বিপদ থেকে উত্তরণের পথ দেখান। মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণকারী এ রাতটি তাই সব মুসলমানদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ রাতটি সম্পর্কে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘শাবানের ১৪ তারিখের রাতে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষী ব্যক্তি ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (বায়হাকি)। পাপী লোকেরা যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিজ নিজ পাপকাজ পরিত্যাগ করে তওবা করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত শবেবরাতেও তাদের জন্য ক্ষমার দ্বার উন্মুক্ত হবে না। এ রাতে কেউ যদি খাঁটি দিলে অতীত অন্যায়ের জন্য অনুতাপ তথা তওবা করেন এবং ভবিষ্যতে অন্যায় বা পাপ কাজ না করার সংকল্প গ্রহণ করে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করেন তবে মহান আল্লাহ তা’আলা অবশ্য তাকে মাফ করতে পারেন। তাই মুক্তির রজনী হিসেবে লাইলাতুল বরাতের আগমন পাপী-তাপী বান্দাদের জন্য এক অনবদ্য নিয়ামতের ভাণ্ডার।’ নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন মধ্য শাবানের রজনী উপস্থিত হয়, তখন সেই রাত্রি জাগরণ করে তোমরা সালাতে নিমগ্ন হবে এবং পরদিন রোজা রাখবে। কারণ আল্লাহ তা’আলা এ রাতে সূর্যাস্তের পর পৃথিবীর আসমানে অবতরণ করেন এবং তার বান্দাদের ডেকে ঘোষণা দিতে থাকেন আছে কোন ক্ষমাপ্রার্থী? যাকে আমি ক্ষমা করব, আছে কোন রিজিকপ্রার্থী? যাকে আমি রিজিক দেব? আছে কোন বিপদাপন্ন? যার বিপদ আমি দূর করে দেব? আছে কোন তওবাকারী? যার তওবা আমি কবুল করব। এভাবে নানা শ্রেণীর বান্দাকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত মহান আল্লাহ তা’আলা আহ্বান করতে থাকেন।’ (ইবনে মাজা, মিশকাত)

নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি শাবান মাসের ১৫ তারিখে রোজা রাখবে, দোজখের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না।’ (আবু দাউদ)।

পবিত্র শবেবরাতের রাত মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করলে পরম করুনাময় আল্লাহ তা’আলা সবাইকে ক্ষমা করে দেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, এগারোটি কবিরা গুনাহ থেকে খাঁটি দিলে তওবা করা উচিত। নতুবা পবিত্র শবেবরাতের রাতে সারা রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত বন্দেগি করলেও কোন লাভ হবে না। শবেবরাতের পূর্ণ ফজিলত ও শবেবরাতের রাতে দোয়া কবুল হওয়ার জন্য নিন্মে উল্লিখিত কবিরা গুনাহগুলো থেকে খাঁটি দিলে তওবা করা উচিত।

১. যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সঙ্গে যে কোন প্রকারের শিরকে লিপ্ত হয়

২. যে ব্যক্তি কারও প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেছেন

৩. যে ব্যক্তি আত্মহত্যার ইচ্ছা পোষণ করেছেন

৪. যে ব্যক্তি অপরের ভালো দেখতে পারে না। এক কথায় পরশ্রীকাতরতায় লিপ্ত

৫. যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে

৬. যে ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়

৭. যে ব্যক্তি মদপানকারী অর্থাৎ নেশাকারী

৮. যে ব্যক্তি ভবিষ্যৎ জানার জন্য গণক বা জ্যোতিষির কাছে গমন করে বা গণকগিরি করে

৯. যে ব্যক্তি জুয়া খেলে

১০. যে ব্যক্তি নিজ মাতাপিতার অবাধ্য হয়

১১. যে পুরুষ টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করে

এসব এগারোটি কবিরা গুনাহ যারা জীবনে একবার হলেও করেছেন তারা পবিত্র শবেবরাতের রাতেও আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হবেন যতক্ষণ পর্যন্ত তওবা না করেন।

পবিত্র শবেবরাতের রাত হলো ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকার রাত। এ রাতে তওবা-ইস্তেগফার করা, আল্লাহর কাছে অতীতের সব পাপাচারের ক্ষমা প্রার্থনা ও ভবিষ্যতের জন্য আকুতি জানানো এবং জীবিত ও মৃতদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার রজনী হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র এ রাতে নামাজ আদায়, কোরআন তিলাওয়াত করা, কবর জিয়ারত করা ও পরদিন নফল রোজা রাখার নির্দেশ রয়েছে। আর এসব কাজের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব। মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এ রাতে কবর জিয়ারত করতেন এবং ইবাদতে নিমগ্ন হতেন। শবেবরাতের আমল বা করণীয় হলো-

১. কবর জিয়ারত। তবে তা অবশ্যই দলবদ্ধ ও আড়ম্বরপূর্ণ না হয়ে একাকী হওয়া উচিত

২. নামাজ-দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, দরুদ শরিফ ইত্যাদিতে লিপ্ত থাকা

৩. দীর্ঘ সিজদায় রত হওয়া উচিত

৪. শবেবরাতের পরের দিন অর্থাৎ ১৫ শাবান রোজা রাখা।

কিন্তু বর্তমানে দেখা যায় অনেকাংশে পবিত্র এ রাতে বিভিন্ন স্থানে ভবনে আলোকসজ্জা করা, আতশবাজি ও পটকা ফোটানো, তারাবাতি জ্বালানো, হালুয়া-রুটি তৈরি ইত্যাদি শরিয়তগর্হিত কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন কবরস্থানে বা মসজিদে আলোকসজ্জা করার প্রচলন বিদ্যমান। এটি একটি বিদআত ও অপসংস্কৃতির এক প্রকৃষ্ট নমুনা। আর এসব কারণে পবিত্র এ রাতে ইবাদতে বিঘ্ন ঘটে। এসব ইসলাম কোনভাবেই সমর্থন করে না। তাই এসব অবশ্যই বর্জন করতে হবে। অনেকে সারা রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি না করে মসজিদে-মসজিদে ঘোরাঘুরি করে নামাজ আদায় করেন। এছাড়া রাস্তায়-রাস্তায় গল্প-গুজবে মশগুল থাকেন। এসব কাজ পবিত্র এ রাতের মর্যদার পরিপন্থী। পবিত্র এ রাত্রিতে মসজিদে নামাজ আদায় করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় নিজ-নিজ বাড়িতে একা-একা ইবাদত করা। সব নফল ইবাদত বাড়িতে পালন করাই উত্তম। কারও জীবনে যদি ওয়াক্তের নামাজ কাজা হয়ে থাকে তবে নফল নামাজ না পড়ে কাজা নামাজ আদায় করা আবশ্যক।

ismail.press2019@gmail.com