এই সংকটে চিকিৎসক সংগঠনগুলো কেন ভূমিকাহীন?

আলাউদ্দিন আহমেদ

বিশ্বজুড়ে চলমান ভয়াবহ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ বিভিন্নভাবে তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছে। এরমধ্যেও সারা বিশ্বে এ রোগে মারা গেছে ৯৭ হাজারের বেশি মানুষ, এটা এখনও চলছে। চীনের উহান শহরে গত ডিসেম্বরের শেষ থেকে এই ভাইরাসের আক্রমণ শুরু হয়ে এখনও বিভিন্ন দেশে অব্যাহত গতিতে চলছে। আমাদের দেশও এখন আক্রান্ত। আগামী ১৫ দিন আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, এই আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের।

বিপজ্জনক এ ভাইরাস থেকে বাঁচতে প্রধান যে কাজটি করা উচিত বলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা আগে থেকেই বলে আসছে; সেটি হচ্ছে, বাড়িতেই অবস্থান করা অর্থাৎ মানুষের মধ্যে না যাওয়া। এটাকে বলা হচ্ছে, ‘সামাজিক দুরত্ব’ বজায় রাখা। কিন্তু আমাদের দেশে এই আহ্বান উপেক্ষা করেই বহু মানুষ প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হচ্ছে, এক সঙ্গে জড়ো হচ্ছে, ব্যাংকে গিয়ে গাদাগাদি করে টাকা তুলছে, বাজার করতে গিয়েও নিয়ম মানছে না। এই চিত্র ৯ এপ্রিলেও দেখা যাচ্ছে। মানুষের এই অদক্ষতা ও খামখেয়ালিপনা নিবৃতের জন্য এবং তাদের নিজের জীবন, পরিবারের জীবন ও অন্য মানুষের জীবন বাঁচাতে মাঠে কাজ করছে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তারা মানুষকে বারবার আহ্বান জানাচ্ছে যেন আমরা ঘরে থাকি। কিন্তু আমরা এতটাই নির্বোধ যে নিজের ভালোটাও বুঝতে চাচ্ছি না! কীভাবে সম্ভব পরিস্থিতি মোকাবিলা করা? এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, সে সঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও।

চলমান জরুরি অবস্থায় আইসোলেশন না মানা মানুষজন এবং আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে। আমাদের দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। চীনে ভয়াবহ রূপ নেয়ার দুই মাসেরও বেশি সময় পর। আমরা সময় পেয়েছি যথেষ্ট। কিন্তু বাস্তবে এই সময়টা কোন কাজে লাগাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো। সাংবাদিকরা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়কে প্রশ্ন করেছিলেন গত মাসে, তিনি বললেন- ‘আমাদের আগেই প্রস্তুতি নেয়া আছে’। অথচ এপ্রিল মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত, পর্যাপ্ত পরীক্ষা ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। কেউ বললেন, আমরা ৭ দিনে চীনের মতো হাসপাতাল তৈরি করব। এসব ঘোষিত হাসপাতালে শুধু বেড সাজানো হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য যে যন্ত্রপাতি দরকার, যেমন; ভেন্টিলেটর, কিট ইত্যাদি এখনও নেই। এই হচ্ছে চীনের মতো হাসপাতালের অবস্থা! আমরা যে যেমন পারি গত দু’মাস শুধু বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছি। দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজগুলোতে যেসব ভেন্টিলেটর আছে সেগুলো অনেকদিন ব্যবহার না করায় অধিকাংশ নষ্ট হয়ে আছে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের ভেন্টিলেটারগুলো চেক করতে গিয়ে ৯ এপ্রিল ধরা পড়ে সবগুলোই অকেজো। কীভাবে এগুলো অকেজো হয়ে এতদিন পড়ে থাকলো তা রহস্যজনক। এর সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের শাস্তি না দিলে এ ধরনের ঘটনা চলতেই থাকবে।

সাম্প্রতিক এই বিপদের সময় আরেকটি জরুরি সেবা বিভাগ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে। সেটা হচ্ছে চিকিৎসকদের ভূমিকা, পিপিই সরবরাহ ইত্যাদি। করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রায় সবগুলো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক হয় বন্ধ, না হয় চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত অনেক খবর পত্রপত্রিকা, মিডিয়ায় প্রতিদিনই মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে, এখনও করছে। ডাক্তার-নার্সরা পিপিই (পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুপমেন্ট) সরবরাহের দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্নগোচরে আনার চেষ্টা করেছেন। কি পূর্ব প্রস্তুতি ছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়ের তা বোধগম্য নয়।

এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয় চীনে আক্রান্তের পর যখন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, এই ভাইরাস অনেক দেশেই ছড়িয়ে পড়বে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বেশি বিপজ্জনক, প্রস্তুতি রাখা দরকার। তখন আমাদের দেশের চিকিৎসক সংগঠনগুলোর কি কোনই দায়িত্ব-কর্তব্য ছিল না-? বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) প্রভৃতি সংগঠনের কাজটা কি শুধু নিজেদের সুবিধাগুলো আদায়ের জন্য কাজ করা? মানুষের চিকিৎসাসেবা কতটুকু নিরাপদ আছে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে কি কি অসুবিধা আছে সেগুলো নিয়ে কি তাদের কাজ করার কোন প্রয়োজন নেই? আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে তাদের কাছ থেকে এটুকু প্রত্যাশা কি করতে পারি না?।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হুঁশিয়ারির পরই তো চিকিৎসক সংগঠনগুলোর উচিত ছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা, সচেতন করা এবং চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতদের নিরাপত্তা, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা। এসব না করে প্রয়োজনের সময় পিপিই নেই, মাস্ক নেই, সুতরাং চিকিৎসা বন্ধ এ ধরনের উদ্ভট কাজ-কারবার কতটুকু উচিত হয়েছে তা নিয়ে জনমনে স্বাস্থ্য বিভাগ ও চিকিৎসকদের সংগঠন সম্পর্কে জনমনে অনাস্থাই তৈরি করেছে। এ সময় অনেক সাধারণ রোগীও চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যু ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ছাত্রের আবেদন ছিল, ‘আমি করোনার রোগী না, আমার হার্টে সমস্যা, আমি আগে থেকেই এই অসুখের চিকিৎসা করি’। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ওই ছাত্রের মৃত্যু ঘটেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টিসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের ব্যাপারে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

আমাদের দেশে গার্মেন্ট শিল্পের অভাব নেই। চিকিৎসক সংগঠনগুলোর প্রয়োজনীয় ভূমিকা থাকলে তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে আগেই পিপিই, মাস্ক তৈরির জন্য সরকারের কাছে লিখিত আকারে পরামর্শ দিতে পারতেন। কিন্তু এসবের কোনকিছুই দৃশ্যমান হয়নি। অর্থাৎ মনে হচ্ছে, চিকিৎসা দিয়ে মানুষ বাঁচানোর কোন দায়বদ্ধতা চিকিৎসক সংগঠনগুলোর নেই। তারা আছেন শুধুই নিজের সুবিধাগুলো আদায়ে কাজ করার জন্য। ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক, বদলি বাণিজ্য, ভুল চিকিৎসায় অভিযুক্ত ডাক্তারের পক্ষে দাঁড়ানো ইত্যাদি ব্যাপারগুলোতেই চিকিৎসক সংগঠনগুলো সীমাবদ্ধ। তাদের সঙ্গে যে দেশের বিপুল রোগী-সমাজের বাঁচা-মরার ব্যাপার জড়িত সেটা যেন তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে না-! বড়ই অভাগা আমরা সাধারণ মানুষরা। চিকিৎসা পাওয়া আমাদের সাংবিধানিক অধিকার হলেও জরুরি সময়ে হাসপাতাল, ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যায়, চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায় মানুষ।

চলমান করোনাভাইরাসে কত মানুষের জীবনহানি ঘটবে তা বলা মুশকিল। কিন্তু অবস্থা এক সময় শান্ত হবে। এরপরও কি আমাদের চেতনা ফিরবে? আমরা কি যারযার দায়িত্ব তা সঠিকভাবে পালন করব? সেই শিক্ষা কি আমরা পাবো করোনাভাইরাস থেকে?

[লেখক : সাংবাদিক]

রবিবার, ১২ এপ্রিল ২০২০ , ২৯ চৈত্র ১৪২৬, ১৭ শাবান ১৪৪১

এই সংকটে চিকিৎসক সংগঠনগুলো কেন ভূমিকাহীন?

আলাউদ্দিন আহমেদ

বিশ্বজুড়ে চলমান ভয়াবহ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ বিভিন্নভাবে তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছে। এরমধ্যেও সারা বিশ্বে এ রোগে মারা গেছে ৯৭ হাজারের বেশি মানুষ, এটা এখনও চলছে। চীনের উহান শহরে গত ডিসেম্বরের শেষ থেকে এই ভাইরাসের আক্রমণ শুরু হয়ে এখনও বিভিন্ন দেশে অব্যাহত গতিতে চলছে। আমাদের দেশও এখন আক্রান্ত। আগামী ১৫ দিন আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, এই আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের।

বিপজ্জনক এ ভাইরাস থেকে বাঁচতে প্রধান যে কাজটি করা উচিত বলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা আগে থেকেই বলে আসছে; সেটি হচ্ছে, বাড়িতেই অবস্থান করা অর্থাৎ মানুষের মধ্যে না যাওয়া। এটাকে বলা হচ্ছে, ‘সামাজিক দুরত্ব’ বজায় রাখা। কিন্তু আমাদের দেশে এই আহ্বান উপেক্ষা করেই বহু মানুষ প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হচ্ছে, এক সঙ্গে জড়ো হচ্ছে, ব্যাংকে গিয়ে গাদাগাদি করে টাকা তুলছে, বাজার করতে গিয়েও নিয়ম মানছে না। এই চিত্র ৯ এপ্রিলেও দেখা যাচ্ছে। মানুষের এই অদক্ষতা ও খামখেয়ালিপনা নিবৃতের জন্য এবং তাদের নিজের জীবন, পরিবারের জীবন ও অন্য মানুষের জীবন বাঁচাতে মাঠে কাজ করছে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তারা মানুষকে বারবার আহ্বান জানাচ্ছে যেন আমরা ঘরে থাকি। কিন্তু আমরা এতটাই নির্বোধ যে নিজের ভালোটাও বুঝতে চাচ্ছি না! কীভাবে সম্ভব পরিস্থিতি মোকাবিলা করা? এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, সে সঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও।

চলমান জরুরি অবস্থায় আইসোলেশন না মানা মানুষজন এবং আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে। আমাদের দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। চীনে ভয়াবহ রূপ নেয়ার দুই মাসেরও বেশি সময় পর। আমরা সময় পেয়েছি যথেষ্ট। কিন্তু বাস্তবে এই সময়টা কোন কাজে লাগাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো। সাংবাদিকরা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়কে প্রশ্ন করেছিলেন গত মাসে, তিনি বললেন- ‘আমাদের আগেই প্রস্তুতি নেয়া আছে’। অথচ এপ্রিল মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত, পর্যাপ্ত পরীক্ষা ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। কেউ বললেন, আমরা ৭ দিনে চীনের মতো হাসপাতাল তৈরি করব। এসব ঘোষিত হাসপাতালে শুধু বেড সাজানো হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য যে যন্ত্রপাতি দরকার, যেমন; ভেন্টিলেটর, কিট ইত্যাদি এখনও নেই। এই হচ্ছে চীনের মতো হাসপাতালের অবস্থা! আমরা যে যেমন পারি গত দু’মাস শুধু বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছি। দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজগুলোতে যেসব ভেন্টিলেটর আছে সেগুলো অনেকদিন ব্যবহার না করায় অধিকাংশ নষ্ট হয়ে আছে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের ভেন্টিলেটারগুলো চেক করতে গিয়ে ৯ এপ্রিল ধরা পড়ে সবগুলোই অকেজো। কীভাবে এগুলো অকেজো হয়ে এতদিন পড়ে থাকলো তা রহস্যজনক। এর সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের শাস্তি না দিলে এ ধরনের ঘটনা চলতেই থাকবে।

সাম্প্রতিক এই বিপদের সময় আরেকটি জরুরি সেবা বিভাগ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে। সেটা হচ্ছে চিকিৎসকদের ভূমিকা, পিপিই সরবরাহ ইত্যাদি। করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রায় সবগুলো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক হয় বন্ধ, না হয় চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত অনেক খবর পত্রপত্রিকা, মিডিয়ায় প্রতিদিনই মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে, এখনও করছে। ডাক্তার-নার্সরা পিপিই (পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুপমেন্ট) সরবরাহের দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্নগোচরে আনার চেষ্টা করেছেন। কি পূর্ব প্রস্তুতি ছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়ের তা বোধগম্য নয়।

এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয় চীনে আক্রান্তের পর যখন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, এই ভাইরাস অনেক দেশেই ছড়িয়ে পড়বে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বেশি বিপজ্জনক, প্রস্তুতি রাখা দরকার। তখন আমাদের দেশের চিকিৎসক সংগঠনগুলোর কি কোনই দায়িত্ব-কর্তব্য ছিল না-? বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) প্রভৃতি সংগঠনের কাজটা কি শুধু নিজেদের সুবিধাগুলো আদায়ের জন্য কাজ করা? মানুষের চিকিৎসাসেবা কতটুকু নিরাপদ আছে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে কি কি অসুবিধা আছে সেগুলো নিয়ে কি তাদের কাজ করার কোন প্রয়োজন নেই? আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে তাদের কাছ থেকে এটুকু প্রত্যাশা কি করতে পারি না?।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হুঁশিয়ারির পরই তো চিকিৎসক সংগঠনগুলোর উচিত ছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা, সচেতন করা এবং চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতদের নিরাপত্তা, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা। এসব না করে প্রয়োজনের সময় পিপিই নেই, মাস্ক নেই, সুতরাং চিকিৎসা বন্ধ এ ধরনের উদ্ভট কাজ-কারবার কতটুকু উচিত হয়েছে তা নিয়ে জনমনে স্বাস্থ্য বিভাগ ও চিকিৎসকদের সংগঠন সম্পর্কে জনমনে অনাস্থাই তৈরি করেছে। এ সময় অনেক সাধারণ রোগীও চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যু ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ছাত্রের আবেদন ছিল, ‘আমি করোনার রোগী না, আমার হার্টে সমস্যা, আমি আগে থেকেই এই অসুখের চিকিৎসা করি’। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ওই ছাত্রের মৃত্যু ঘটেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টিসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের ব্যাপারে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

আমাদের দেশে গার্মেন্ট শিল্পের অভাব নেই। চিকিৎসক সংগঠনগুলোর প্রয়োজনীয় ভূমিকা থাকলে তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে আগেই পিপিই, মাস্ক তৈরির জন্য সরকারের কাছে লিখিত আকারে পরামর্শ দিতে পারতেন। কিন্তু এসবের কোনকিছুই দৃশ্যমান হয়নি। অর্থাৎ মনে হচ্ছে, চিকিৎসা দিয়ে মানুষ বাঁচানোর কোন দায়বদ্ধতা চিকিৎসক সংগঠনগুলোর নেই। তারা আছেন শুধুই নিজের সুবিধাগুলো আদায়ে কাজ করার জন্য। ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক, বদলি বাণিজ্য, ভুল চিকিৎসায় অভিযুক্ত ডাক্তারের পক্ষে দাঁড়ানো ইত্যাদি ব্যাপারগুলোতেই চিকিৎসক সংগঠনগুলো সীমাবদ্ধ। তাদের সঙ্গে যে দেশের বিপুল রোগী-সমাজের বাঁচা-মরার ব্যাপার জড়িত সেটা যেন তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে না-! বড়ই অভাগা আমরা সাধারণ মানুষরা। চিকিৎসা পাওয়া আমাদের সাংবিধানিক অধিকার হলেও জরুরি সময়ে হাসপাতাল, ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যায়, চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায় মানুষ।

চলমান করোনাভাইরাসে কত মানুষের জীবনহানি ঘটবে তা বলা মুশকিল। কিন্তু অবস্থা এক সময় শান্ত হবে। এরপরও কি আমাদের চেতনা ফিরবে? আমরা কি যারযার দায়িত্ব তা সঠিকভাবে পালন করব? সেই শিক্ষা কি আমরা পাবো করোনাভাইরাস থেকে?

[লেখক : সাংবাদিক]