কৃষকদের প্রণোদনা যেন সঠিক বিতরণ হয়

ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করেছে সরকার। গত রোববার গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের সময় এই ঘোষণা দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি আগামী বাজেটে সারে ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার কথা বলেন। ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা পাবেন মাঝারি ও ক্ষুদ্র কৃষকরা। এজন্য তাদের ৫ শতাংশ সুদ গুনতে হবে। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দেশ যেন খাদ্য সংকটে না পরে সেজন্য এই প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে।

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে লকডাউনসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ কারণে বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ার করে বলেছেন যে, আগামীতে খাদ্য উৎপাদনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশ খাদ্যে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, কোন দেশই শুধু অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়ে তার চাহিদার পুরোটুকু মেটাতে পারে না। বাংলাদেশ যেমন অনেক কৃষিপণ্য রপ্তানি করে, তেমন আমদানিও করে। নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে আর সব আমদানি-রপ্তানির মতো কৃষিপণ্য আমদানি-রপ্তানিও ব্যাহত হবে। এই অবস্থায় কৃষি খাতে প্রণোদনা দেয়া জরুরি ছিল। কৃষিপণ্য কম উৎপাদিত হলে যেমন সংকট দেখা দেবে, তেমন উৎপাদিত পণ্যের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি থাকলেও সংকট তৈরি হবে। হাওরে বোরো ধান হয়েছে কিন্তু ধান কাটা থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে সমস্যা দেখা দিয়েছে। মৌসুমি অনেক ফল বা ফসল উৎপাদনস্থলেই নষ্ট হচ্ছে বলে জানা গেছে।

কৃষকদের যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে সেটা মূলত ঋণ। এই অর্থ কৃষককে ফেরত দিতে হবে। সঙ্গে গুনতে হবে সুদ। সমস্যা হচ্ছে, দেশের কৃষকরা ভালো ফসল উৎপাদন করেও প্রায়ই লোকসান গুনেন। তাদের উৎপাদন খরচও ওঠে না। এজন্য দায়ী করা হয় মধ্যস্বত্বভোগীদের। মধ্যস্বত্বভোগীদের চক্রকে ভাঙা না গেলে এই ঋণের অর্থ কৃষকের গলার কাঁটায় পরিণত হতে পারে। অনেকে ঋণের টাকাকে প্রণোদনা বলতে নারাজ। কৃষকের ঋণের টাকায় ৫ শতাংশ হারে সুদ নেয়া কতটা যৌক্তিক সেই প্রশ্নও উঠেছে। তবে সরকার যদি ঘোষণা অনুযায়ী যথাসময়ে ধান-চাল কেনে তাহলে কৃষক ঋণের টাকা খাটিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারেন। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করার ওপর বেশি জোর দিতে হবে।

ঋণ বিতরণের পদ্ধতিগত যথাযথ হওয়া জরুরি। প্রকৃত মাঝারি ও ক্ষুদ্র কৃষকরা যেন ঋণ পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এটা কোন কঠিন কাজ নয়। এখন কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। এনআইডি আর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলে প্রকৃত কৃষকের হাতে টাকা পৌঁছানো কঠিন হবে না। জরুরি হচ্ছে এক্ষেত্রে যে কোন অনিয়ম-দুর্নীতি কঠোরভাবে দমন করা। ঋণের অর্থ আদায়ে সরকারকে নমনীয় থাকতে হবে। কৃষি ঋণে কোন গ্রেস-পিরিয়ড আছে কি না- সেটা জানা যায়নি। বিষয়টি পরবর্তীতে স্পষ্ট করা হবে বলে আশা করি।

সোমবার, ১৩ এপ্রিল ২০২০ , ৩০ চৈত্র ১৪২৬, ১৮শাবান ১৪৪১

কৃষকদের প্রণোদনা যেন সঠিক বিতরণ হয়

ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করেছে সরকার। গত রোববার গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের সময় এই ঘোষণা দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি আগামী বাজেটে সারে ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার কথা বলেন। ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা পাবেন মাঝারি ও ক্ষুদ্র কৃষকরা। এজন্য তাদের ৫ শতাংশ সুদ গুনতে হবে। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দেশ যেন খাদ্য সংকটে না পরে সেজন্য এই প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে।

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে লকডাউনসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ কারণে বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ার করে বলেছেন যে, আগামীতে খাদ্য উৎপাদনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশ খাদ্যে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, কোন দেশই শুধু অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়ে তার চাহিদার পুরোটুকু মেটাতে পারে না। বাংলাদেশ যেমন অনেক কৃষিপণ্য রপ্তানি করে, তেমন আমদানিও করে। নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে আর সব আমদানি-রপ্তানির মতো কৃষিপণ্য আমদানি-রপ্তানিও ব্যাহত হবে। এই অবস্থায় কৃষি খাতে প্রণোদনা দেয়া জরুরি ছিল। কৃষিপণ্য কম উৎপাদিত হলে যেমন সংকট দেখা দেবে, তেমন উৎপাদিত পণ্যের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি থাকলেও সংকট তৈরি হবে। হাওরে বোরো ধান হয়েছে কিন্তু ধান কাটা থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে সমস্যা দেখা দিয়েছে। মৌসুমি অনেক ফল বা ফসল উৎপাদনস্থলেই নষ্ট হচ্ছে বলে জানা গেছে।

কৃষকদের যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে সেটা মূলত ঋণ। এই অর্থ কৃষককে ফেরত দিতে হবে। সঙ্গে গুনতে হবে সুদ। সমস্যা হচ্ছে, দেশের কৃষকরা ভালো ফসল উৎপাদন করেও প্রায়ই লোকসান গুনেন। তাদের উৎপাদন খরচও ওঠে না। এজন্য দায়ী করা হয় মধ্যস্বত্বভোগীদের। মধ্যস্বত্বভোগীদের চক্রকে ভাঙা না গেলে এই ঋণের অর্থ কৃষকের গলার কাঁটায় পরিণত হতে পারে। অনেকে ঋণের টাকাকে প্রণোদনা বলতে নারাজ। কৃষকের ঋণের টাকায় ৫ শতাংশ হারে সুদ নেয়া কতটা যৌক্তিক সেই প্রশ্নও উঠেছে। তবে সরকার যদি ঘোষণা অনুযায়ী যথাসময়ে ধান-চাল কেনে তাহলে কৃষক ঋণের টাকা খাটিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারেন। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করার ওপর বেশি জোর দিতে হবে।

ঋণ বিতরণের পদ্ধতিগত যথাযথ হওয়া জরুরি। প্রকৃত মাঝারি ও ক্ষুদ্র কৃষকরা যেন ঋণ পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এটা কোন কঠিন কাজ নয়। এখন কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। এনআইডি আর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলে প্রকৃত কৃষকের হাতে টাকা পৌঁছানো কঠিন হবে না। জরুরি হচ্ছে এক্ষেত্রে যে কোন অনিয়ম-দুর্নীতি কঠোরভাবে দমন করা। ঋণের অর্থ আদায়ে সরকারকে নমনীয় থাকতে হবে। কৃষি ঋণে কোন গ্রেস-পিরিয়ড আছে কি না- সেটা জানা যায়নি। বিষয়টি পরবর্তীতে স্পষ্ট করা হবে বলে আশা করি।