করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত তিন লাখ দুগ্ধ খামারি

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়ার পাশাপাশি বিক্রি কমে যাওয়ায় গভীর সংকটে পড়েছে দেশের দুগ্ধ শিল্প। এই অবস্থায় দেশের প্রায় সাড়ে তিন লাখ দুগ্ধ খামারি সংকটে রয়েছেন।

সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এই খামারিদের বাঁচিয়ে রাখতে এখনই জরুরিভিত্তিতে নগদ প্রণোদনা দেয়ার পাশাপাশি প্রকিয়াজাতকরণ কোম্পানিগুলোকে দিয়ে দুধ সংগ্রহ করে তা বাষ্পায়িত করে যতো বেশি সম্ভব গুঁড়ো দুধ বানানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে বিপণনের পথ সঙ্কুচিত হওয়ায় পাস্তুরিত দুধ উৎপাদনকারী অনেক বড় কোম্পানিও বিপাকে পড়েছে বলে তাদের ভাষ্য। জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টির অন্যতম যোগান হিসেবে বিবেচিত দুগ্ধপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ ডেইরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিওএ) সভাপতি শাহ ইমরান বলেন, দেশে ডেইরির সার্বিক অবস্থা এখন খুবই খারাপ।

খারাপ অবস্থা সেই ধারণা পাওয়া যায় ফরিদপুরের বোয়ালমারীর খামারি কাশেম আলীর কথায়। তার মার্শ অ্যাগ্রো নামের খামারে রয়েছে ২০টি গাভী, সঙ্গে কয়েকটি বাছুর ও চারটি ষাঁড়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে খামারের গরুগুলোকে এখন তিনি স্বাভাবিকের তুলনায় অর্ধেক খাবার দিতে পারছেন। তিনি বলেন, আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হচ্ছে। বেশিরভাগ দুধ মিষ্টির দোকানে দিতাম। সেসব দোকান অধিকাংশই বন্ধ। শহরে নিয়ে কিছু দুধ বিক্রি করছি। কিন্তু দাম একদমই কমে গেছে। আগের থেকে তিনভাগের এক ভাগ দামে দুধ বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এর ওপর আছে দানাদার খাবারের সংকট। লকডাউনের মধ্যে পশু চিকিৎসক পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান ওই খামারি। দুধ যা বিক্রি হচ্ছে না, তা ক্রিম করে রাখছি, পরে ঘি করব। ক্রিম করে ২ মাস পরে বিক্রি করব। কিন্তু আমার টাকা লাগবে এখন। গাভীকে খাওয়াতে হবে। মাঝে কিছু দিন মিল্কভিটা দুধ নিত না, এখন নিচ্ছে। কিন্তু আগে যেখানে ২০০০ লিটার নিত, এখন নিচ্ছে ৫০০ লিটার। খামার যেন বন্ধ করে দিতে না হয়, সেজন্য এখনই সরকারের সহায়তা চান কাশেম আলী।

বিডিওএ সভাপতি ইমরান বলেন, লকডাউনের পর সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা মিষ্টির দোকান বন্ধ না করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই সব ডিসির কাছে দোকানপাট বন্ধের চিঠি পৌঁছে গিয়েছিল। পরে আমাদের বার্তাটা ডিসিদের সঠিকভাবে দেয়া হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়নি। মফস্বলে অনেক দোকান প্রশাসন খুলতে দেয়নি। সেসব জায়গার খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে দেশের এই পরিস্থিতিতে মিষ্টিই বা কে খাবে? ক্রেতাইতো নেই। বেচতে না পেরে অনেক দুধ ফেলে দিতে হচ্ছে খামারিদের। কেউবা ১০-১৫ টাকায় হাতে পায়ে ধরে মানুষকে দিচ্ছে। পশুগুলোকেও খাওয়াতে পারছে না। লোকসানের বোঝা প্রতিদিন বাড়ছে।

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল ২০২০ , ১ বৈশাখ ১৪২৭, ১৯ শাবান ১৪৪১

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত তিন লাখ দুগ্ধ খামারি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়ার পাশাপাশি বিক্রি কমে যাওয়ায় গভীর সংকটে পড়েছে দেশের দুগ্ধ শিল্প। এই অবস্থায় দেশের প্রায় সাড়ে তিন লাখ দুগ্ধ খামারি সংকটে রয়েছেন।

সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এই খামারিদের বাঁচিয়ে রাখতে এখনই জরুরিভিত্তিতে নগদ প্রণোদনা দেয়ার পাশাপাশি প্রকিয়াজাতকরণ কোম্পানিগুলোকে দিয়ে দুধ সংগ্রহ করে তা বাষ্পায়িত করে যতো বেশি সম্ভব গুঁড়ো দুধ বানানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে বিপণনের পথ সঙ্কুচিত হওয়ায় পাস্তুরিত দুধ উৎপাদনকারী অনেক বড় কোম্পানিও বিপাকে পড়েছে বলে তাদের ভাষ্য। জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টির অন্যতম যোগান হিসেবে বিবেচিত দুগ্ধপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ ডেইরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিওএ) সভাপতি শাহ ইমরান বলেন, দেশে ডেইরির সার্বিক অবস্থা এখন খুবই খারাপ।

খারাপ অবস্থা সেই ধারণা পাওয়া যায় ফরিদপুরের বোয়ালমারীর খামারি কাশেম আলীর কথায়। তার মার্শ অ্যাগ্রো নামের খামারে রয়েছে ২০টি গাভী, সঙ্গে কয়েকটি বাছুর ও চারটি ষাঁড়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে খামারের গরুগুলোকে এখন তিনি স্বাভাবিকের তুলনায় অর্ধেক খাবার দিতে পারছেন। তিনি বলেন, আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হচ্ছে। বেশিরভাগ দুধ মিষ্টির দোকানে দিতাম। সেসব দোকান অধিকাংশই বন্ধ। শহরে নিয়ে কিছু দুধ বিক্রি করছি। কিন্তু দাম একদমই কমে গেছে। আগের থেকে তিনভাগের এক ভাগ দামে দুধ বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এর ওপর আছে দানাদার খাবারের সংকট। লকডাউনের মধ্যে পশু চিকিৎসক পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান ওই খামারি। দুধ যা বিক্রি হচ্ছে না, তা ক্রিম করে রাখছি, পরে ঘি করব। ক্রিম করে ২ মাস পরে বিক্রি করব। কিন্তু আমার টাকা লাগবে এখন। গাভীকে খাওয়াতে হবে। মাঝে কিছু দিন মিল্কভিটা দুধ নিত না, এখন নিচ্ছে। কিন্তু আগে যেখানে ২০০০ লিটার নিত, এখন নিচ্ছে ৫০০ লিটার। খামার যেন বন্ধ করে দিতে না হয়, সেজন্য এখনই সরকারের সহায়তা চান কাশেম আলী।

বিডিওএ সভাপতি ইমরান বলেন, লকডাউনের পর সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা মিষ্টির দোকান বন্ধ না করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই সব ডিসির কাছে দোকানপাট বন্ধের চিঠি পৌঁছে গিয়েছিল। পরে আমাদের বার্তাটা ডিসিদের সঠিকভাবে দেয়া হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়নি। মফস্বলে অনেক দোকান প্রশাসন খুলতে দেয়নি। সেসব জায়গার খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে দেশের এই পরিস্থিতিতে মিষ্টিই বা কে খাবে? ক্রেতাইতো নেই। বেচতে না পেরে অনেক দুধ ফেলে দিতে হচ্ছে খামারিদের। কেউবা ১০-১৫ টাকায় হাতে পায়ে ধরে মানুষকে দিচ্ছে। পশুগুলোকেও খাওয়াতে পারছে না। লোকসানের বোঝা প্রতিদিন বাড়ছে।