ইতোমধ্যে দেশে করোনা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ১৮২ জন, মৃত্যু ৫

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৮২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এতে দেশে করোনায় শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০৩ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও তিনজন। ফলে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা হয়েছে ৪২ জন। গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপনকালে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। নিজের বাসা থেকে এতে যুক্ত হয়ে কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে দেশে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে।

অধ্যাপক ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১ হাজার ৫৭০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১৮২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮০৩। যারা আগে থেকে আক্রান্ত ছিলেন তাদের মধ্যে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। মোট মৃতের সংখ্যা হয়েছে ৩৯। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন আরও তিনজন। এ নিয়ে মোট ৪২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ আগের দিনের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি এবং ১৭ শতাংশ বেশি পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন আরও ৫ হাজার ৬৮৪ জন। এখন পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৮৫ হাজার ৪৯৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮৪ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১৮৯ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন মুক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৫ জন এবং এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন মুক্ত হয়েছেন ৬৩ হাজার ২৭৬ জন। আর আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৮৪ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২৯৯ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ১৭ জন। বুলেটিন উপস্থাপনকালে করোনার বিস্তার রোধে সবাইকে বাড়িতে থাকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়।

এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে ছিল। তিনি বলেন, আমি গতকাল দেশের সব মেডিকেল কলেজের ডিরেক্টরদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। প্রায় সব জায়গায় দেখা গেছে, জেলা পর্যায়ে যারা সংক্রমিত হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে আক্রান্ত ব্যক্তিদের (নিজ নিজ এলাকায় গেলে) মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। এ বিষয়ে আরও বেশি কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। লকডাউন জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার। এ সময় তিনি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও এ কাজে নিয়োজিত অন্যদের লকডাউন আরও বেশি কার্যকর করার আহ্বান জানান। জাহিদ মালেক বলেন, লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এখনও লকডাউনটা মানুষ পুরোপুরি মেনে চলছে না। আমরা দেখি বাজারে জটলা পাকিয়ে আছে। অনেক লোক ঘোরাফেরা করছে। বাইরেও লোক অযথা ঘোরাফেরা করছে। এটি পরিহার করতে হবে। কারণ যেখানে বাইরে ঘোরাফেরা করবেন, সেখানেই সংক্রমিত হবেন। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে আমাদের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে। এটা যেন না বাড়ে সেদিকে খেয়াল করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা হাসপাতাল ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা মজবুত করছি। আমাদের বুঝতে হবে, হাসপাতালে লাখ লাখ লোকের চিকিৎসা কোন দেশই দিতে পারে না। আমাদের সেদিকেই লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে আমাদের করোনা মোকাবিলার যে মূল অস্ত্র তা হলো ঘরে থাকা এবং পরীক্ষা করা। তবে আনন্দের সঙ্গে বলছি, আমরা আরও কিছু ভ্যান্টিলেটর ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করছি। পৃথিবীতে এখন এ জিনিসগুলো খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরও আপ্রাণ চেষ্টা করছি, আমরা অন্তত ৪-৫শ’ নতুন ভ্যান্টিলেটর ও ৪-৫শ’ অক্সিজেনের সিলিন্ডার আনার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও জানান, ইউরোপ-আমেরিকায় প্রতিদিন যেভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে আর সংক্রমিত হচ্ছে সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে। আমরা এই ভালোটা ধরে রাখতে চাই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে লকডাউন মানুষ পুরোপুরি মানছে না। বাজারে অনেকে একত্রিত হচ্ছে, বাইরেও অনেক লোক অযথা ঘোরাফেরা করছে। এই জিনিসটি পরিহার করতে হবে। বাইরে যেখানে ঘোরাফেরা করবে সেখানেই সংক্রমিত হবে। আমাদের ইতোমধ্যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে। এটা যেন না বাড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের হাসপাতাল ব্যবস্থা আরও মজবুত করতে হবে। কিন্তু বুঝতে হবে যে হাসপাতালে লাখ লাখ রোগীর চিকিৎসা কোন দেশই দিতে পারে না। এজন্য আমাদের মূল লক্ষ্য ঘরে থাকা এবং টেস্ট করা।

সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা নতুন তিনটি কোয়ারেন্টিন সেন্টার বা ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করছি। একটি বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি পুরনো মার্কেট এবং উত্তরার দিয়াবাড়িতে চারটি ভবন। এসব হাসপাতালের কাজ এগিয়ে চলছে। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে আমরা এগুলো প্রস্তুত করতে পারবো। এছাড়াও আমরা বেশ কয়েকটি হাসপাতাল প্রস্তুত করার ব্যবস্থা নিয়েছি। এর মধ্যে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালের পুরনো অংশটুকু এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের পুরনো বার্ন ইউনিট রয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের একটি ভবন আমরা তৈরি করতে বলেছি।

তিনি আরও বলেন, বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে আমরা প্রথমেই শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫০০ বেড এবং আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৭০০ বেড নেবো। এগুলো ভালো হাসপাতাল এবং সেখানে আইসিউ রয়েছে। প্রত্যেকটি জেলায় যেসব বেসরকারি হাসপাতাল এগিয়ে আসছে তাদেরও আমরা তালিকাভুক্ত করে নিচ্ছি। নারায়ণগঞ্জ, বাসাবোসহ বেশ কয়েকটি এলাকা বেশি সংক্রমিত হয়েছে। আমি গত রোববার সারাদেশের হাসপাতালের পরিচালকদের কথা বলেছি। যেসব এলাকা সংক্রমিত হয়েছে তাদের বেশিরভাগই ঢাকা থেকে কিংবা নারায়ণগঞ্জ থেকে সেখানে গিয়েছে। এই বিষয়ে আমাদেরকে আরও বেশি কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। লকডাউন জোরদার করতে হবে।

গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে বৈশ্বিক মহামারীতে পরিণত করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছেন ১ লাখ ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। তবে সোয়া চার লাখের মতো রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও গত ক’দিনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। সর্বশেষ হিসাবে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮০৩। মারা গেছেন ৩৯ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪২ জন। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। যার মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মানুষকে ঘরে রাখতে রাজপথের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ।

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল ২০২০ , ১ বৈশাখ ১৪২৭, ১৯ শাবান ১৪৪১

ইতোমধ্যে দেশে করোনা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ১৮২ জন, মৃত্যু ৫

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৮২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এতে দেশে করোনায় শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০৩ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও তিনজন। ফলে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা হয়েছে ৪২ জন। গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপনকালে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। নিজের বাসা থেকে এতে যুক্ত হয়ে কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে দেশে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে।

অধ্যাপক ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১ হাজার ৫৭০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১৮২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮০৩। যারা আগে থেকে আক্রান্ত ছিলেন তাদের মধ্যে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। মোট মৃতের সংখ্যা হয়েছে ৩৯। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন আরও তিনজন। এ নিয়ে মোট ৪২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ আগের দিনের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি এবং ১৭ শতাংশ বেশি পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন আরও ৫ হাজার ৬৮৪ জন। এখন পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৮৫ হাজার ৪৯৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮৪ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১৮৯ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন মুক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৫ জন এবং এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন মুক্ত হয়েছেন ৬৩ হাজার ২৭৬ জন। আর আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৮৪ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২৯৯ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ১৭ জন। বুলেটিন উপস্থাপনকালে করোনার বিস্তার রোধে সবাইকে বাড়িতে থাকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়।

এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে ছিল। তিনি বলেন, আমি গতকাল দেশের সব মেডিকেল কলেজের ডিরেক্টরদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। প্রায় সব জায়গায় দেখা গেছে, জেলা পর্যায়ে যারা সংক্রমিত হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে আক্রান্ত ব্যক্তিদের (নিজ নিজ এলাকায় গেলে) মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। এ বিষয়ে আরও বেশি কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। লকডাউন জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার। এ সময় তিনি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও এ কাজে নিয়োজিত অন্যদের লকডাউন আরও বেশি কার্যকর করার আহ্বান জানান। জাহিদ মালেক বলেন, লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এখনও লকডাউনটা মানুষ পুরোপুরি মেনে চলছে না। আমরা দেখি বাজারে জটলা পাকিয়ে আছে। অনেক লোক ঘোরাফেরা করছে। বাইরেও লোক অযথা ঘোরাফেরা করছে। এটি পরিহার করতে হবে। কারণ যেখানে বাইরে ঘোরাফেরা করবেন, সেখানেই সংক্রমিত হবেন। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে আমাদের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে। এটা যেন না বাড়ে সেদিকে খেয়াল করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা হাসপাতাল ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা মজবুত করছি। আমাদের বুঝতে হবে, হাসপাতালে লাখ লাখ লোকের চিকিৎসা কোন দেশই দিতে পারে না। আমাদের সেদিকেই লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে আমাদের করোনা মোকাবিলার যে মূল অস্ত্র তা হলো ঘরে থাকা এবং পরীক্ষা করা। তবে আনন্দের সঙ্গে বলছি, আমরা আরও কিছু ভ্যান্টিলেটর ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করছি। পৃথিবীতে এখন এ জিনিসগুলো খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরও আপ্রাণ চেষ্টা করছি, আমরা অন্তত ৪-৫শ’ নতুন ভ্যান্টিলেটর ও ৪-৫শ’ অক্সিজেনের সিলিন্ডার আনার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও জানান, ইউরোপ-আমেরিকায় প্রতিদিন যেভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে আর সংক্রমিত হচ্ছে সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে। আমরা এই ভালোটা ধরে রাখতে চাই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে লকডাউন মানুষ পুরোপুরি মানছে না। বাজারে অনেকে একত্রিত হচ্ছে, বাইরেও অনেক লোক অযথা ঘোরাফেরা করছে। এই জিনিসটি পরিহার করতে হবে। বাইরে যেখানে ঘোরাফেরা করবে সেখানেই সংক্রমিত হবে। আমাদের ইতোমধ্যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে। এটা যেন না বাড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের হাসপাতাল ব্যবস্থা আরও মজবুত করতে হবে। কিন্তু বুঝতে হবে যে হাসপাতালে লাখ লাখ রোগীর চিকিৎসা কোন দেশই দিতে পারে না। এজন্য আমাদের মূল লক্ষ্য ঘরে থাকা এবং টেস্ট করা।

সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা নতুন তিনটি কোয়ারেন্টিন সেন্টার বা ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করছি। একটি বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি পুরনো মার্কেট এবং উত্তরার দিয়াবাড়িতে চারটি ভবন। এসব হাসপাতালের কাজ এগিয়ে চলছে। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে আমরা এগুলো প্রস্তুত করতে পারবো। এছাড়াও আমরা বেশ কয়েকটি হাসপাতাল প্রস্তুত করার ব্যবস্থা নিয়েছি। এর মধ্যে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালের পুরনো অংশটুকু এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের পুরনো বার্ন ইউনিট রয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের একটি ভবন আমরা তৈরি করতে বলেছি।

তিনি আরও বলেন, বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে আমরা প্রথমেই শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫০০ বেড এবং আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৭০০ বেড নেবো। এগুলো ভালো হাসপাতাল এবং সেখানে আইসিউ রয়েছে। প্রত্যেকটি জেলায় যেসব বেসরকারি হাসপাতাল এগিয়ে আসছে তাদেরও আমরা তালিকাভুক্ত করে নিচ্ছি। নারায়ণগঞ্জ, বাসাবোসহ বেশ কয়েকটি এলাকা বেশি সংক্রমিত হয়েছে। আমি গত রোববার সারাদেশের হাসপাতালের পরিচালকদের কথা বলেছি। যেসব এলাকা সংক্রমিত হয়েছে তাদের বেশিরভাগই ঢাকা থেকে কিংবা নারায়ণগঞ্জ থেকে সেখানে গিয়েছে। এই বিষয়ে আমাদেরকে আরও বেশি কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। লকডাউন জোরদার করতে হবে।

গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে বৈশ্বিক মহামারীতে পরিণত করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছেন ১ লাখ ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। তবে সোয়া চার লাখের মতো রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও গত ক’দিনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। সর্বশেষ হিসাবে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮০৩। মারা গেছেন ৩৯ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪২ জন। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। যার মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মানুষকে ঘরে রাখতে রাজপথের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ।