প্রণোদনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ নেই সিপিডি

করোনাভাইরাসে সরকারের প্রণোদনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্ট কোন বরাদ্দ নেই দাবি করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, প্রতি পরিবারকে মাসে ৮ হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেয়ার প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যখাতের জন্য ২৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, এটাকে আরও বাড়াতে হবে।

গতকাল এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এমন দাবি করেন। সরকারের পদক্ষেপ সমূহের কার্যকারিতা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও আয় নিরাপত্তা : সিপিডি’র প্রাথমিক বিশ্লেষণ ও প্রস্তাব’ শীর্ষক ওই ব্রিফিংয়ে কথা বলেন সিপিডির

সিপিডির প্রস্তাব, প্রণোদনা হিসেবে দেশের এক কোটি ৭০ লাখ থেকে এক কোটি ৯০ লাখ পরিবারকে ২ মাস ৮ হাজার টাকা করে দেয়া যেতে পারে। মাসভিত্তিক নয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে প্রত্যেক পরিবারকে ২ হাজার টাকা করে দেয়া উচিত। এভাবে প্রণোদনা দিলে ৬ কোটি ৮৪ লাখ থেকে ৭ কোটি ৫৭ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা যাবে। এতে সব মিলিয়ে ২৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা থেকে ২৯ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা লাগতে পারে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। সিপিডি মনে করে, দিনে এনে দিনে খাওয়া এসব লোকদের আর্থিক প্রণোদনা দিলে শুধু দরিদ্র মানুষই উপকৃত হবে না, চাহিদা বেড়ে অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে। সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, সরাসরি আর্থিক সহায়তা দিলে মূল্যস্ফীতিতে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। কারণ, এটি সাময়িক সময়ের জন্য প্রণোদনা দেয়ার সুপারিশ।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২৫ মার্চ রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য সরকার ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষাণা করেছে। যার সুদের হার ২ শতাংশ। যেটা এ খাতের প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারবে। ৫ এপ্রিল সরকার আরও ৪টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। যার পরিমাণ ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার। সর্বশেষ কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ৫ শতাংশ সুদের হারে। যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে এর বেশিরভাগই ব্যাংক নির্ভর। বলা হয়েছে ব্যাংক ও গ্রাহকদের সম্পর্কের ভিত্তিতে এ প্রণোদনা দেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বলার অপেক্ষা রাখে না এই প্রণোদনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কোন সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ নেই। যদিও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ঘোষণায় বলেছেন, যে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হবে। ভিজিএফ, ভিজিডির মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ করা হবে, খোলা বাজারে চাল বিক্রি করা হবে। বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে এবং যারা অনানুষ্ঠানিক খাতে আছে, দিনমজুর রিকশাচালক ইত্যাদি তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সহায়তা এবং অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। যে প্রণোদান ঘোষাণা করা হয়েছে এটার সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। যাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা, ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো এ প্রণোদনা পায়।

জরুরি সময়ে টাকা ছাপানো যেতে পারে এমন অভিমত দিলেও তিনি এই মুহূর্তে টাকার সরবরাহের জন্য বিকল্প পথগুলো ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমাদের এখন অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে রাজস্ব প্রণোদনা এবং মুদ্রানীতির মাধ্যমে অর্থ সরবরাহের ব্যবস্থা করার। এখনও সরকারের হাতে বিভিন্ন উপকরণ আছে। আমরা দেখেছি ১ শতাংশ সিআরআর কমানো হলে ১২ হাজার কোটি টাকার মতো তারল্য বাড়ে। এ ধরনের উপাদান এখনও সরকারের হাতে আছে।

স্বাস্থ্যখাতের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতের সংকট যত ঘণীভূত হবে, আর্থিক খাতের সংকট ততো ঘণীভূত হবে। সুতরাং স্বাস্থ্যখাতকে এখন অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যখাতের জন্য ২৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, এটাকে আরও বাড়াতে হবে। আমি মনে করি ২৫০ কোটি টাকার যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা অপ্রতুল।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের মনে হয় টাকা ছাপানোর এখনও সময় আসেনি। আমরা এমন একটা অবস্থায় পড়েছি সরবরাহের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশন রয়েছে, মানুষের চাহিদা নেই। এখন মানুষের হাতে টাকা দিলে, বাজারে যদি জিনিসপত্র না থাকে তাহলে মূল্যস্ফীতি হবে। টাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পলিসি সাপোর্ট দিচ্ছে।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইসলামিক ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা করছে। আমরা তাদের কাছ থেকে সাহায্য আনতে পারি। সুতরাং টাকা ছাপানোর আগে অনেক চিন্তাভাবনা করতে হবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির সম্মানিত ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখনও পর্যন্ত সরকার বিভিন্নভাবে তারল্য বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে কিন্তু নতুন টাকা ছাপানোর দিকে যেতে হতে পারে। আমরা জানি সাধারণ সময়ে এটা মূল্যস্ফীতির জন্ম দেয়। কিন্তু এখন যেহেতু আমারা জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করছি, সেটার জন্য প্রয়োজন হলে সীমাবদ্ধ সময়ের জন্য নতুন টাকা ছাপানোর ক্ষেত্রে যেতে হবে। আমরা যদি অর্থনীতির সরবরাহ ঠিক রাখতে পারি তাহলে টাকা ছাপানো সে ধরনের বড় মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি করার কথা না।

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল ২০২০ , ১ বৈশাখ ১৪২৭, ১৯ শাবান ১৪৪১

প্রণোদনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ নেই সিপিডি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

করোনাভাইরাসে সরকারের প্রণোদনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্ট কোন বরাদ্দ নেই দাবি করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, প্রতি পরিবারকে মাসে ৮ হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেয়ার প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যখাতের জন্য ২৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, এটাকে আরও বাড়াতে হবে।

গতকাল এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এমন দাবি করেন। সরকারের পদক্ষেপ সমূহের কার্যকারিতা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও আয় নিরাপত্তা : সিপিডি’র প্রাথমিক বিশ্লেষণ ও প্রস্তাব’ শীর্ষক ওই ব্রিফিংয়ে কথা বলেন সিপিডির

সিপিডির প্রস্তাব, প্রণোদনা হিসেবে দেশের এক কোটি ৭০ লাখ থেকে এক কোটি ৯০ লাখ পরিবারকে ২ মাস ৮ হাজার টাকা করে দেয়া যেতে পারে। মাসভিত্তিক নয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে প্রত্যেক পরিবারকে ২ হাজার টাকা করে দেয়া উচিত। এভাবে প্রণোদনা দিলে ৬ কোটি ৮৪ লাখ থেকে ৭ কোটি ৫৭ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা যাবে। এতে সব মিলিয়ে ২৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা থেকে ২৯ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা লাগতে পারে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। সিপিডি মনে করে, দিনে এনে দিনে খাওয়া এসব লোকদের আর্থিক প্রণোদনা দিলে শুধু দরিদ্র মানুষই উপকৃত হবে না, চাহিদা বেড়ে অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে। সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, সরাসরি আর্থিক সহায়তা দিলে মূল্যস্ফীতিতে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। কারণ, এটি সাময়িক সময়ের জন্য প্রণোদনা দেয়ার সুপারিশ।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২৫ মার্চ রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য সরকার ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষাণা করেছে। যার সুদের হার ২ শতাংশ। যেটা এ খাতের প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারবে। ৫ এপ্রিল সরকার আরও ৪টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। যার পরিমাণ ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার। সর্বশেষ কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ৫ শতাংশ সুদের হারে। যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে এর বেশিরভাগই ব্যাংক নির্ভর। বলা হয়েছে ব্যাংক ও গ্রাহকদের সম্পর্কের ভিত্তিতে এ প্রণোদনা দেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বলার অপেক্ষা রাখে না এই প্রণোদনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কোন সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ নেই। যদিও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ঘোষণায় বলেছেন, যে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হবে। ভিজিএফ, ভিজিডির মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ করা হবে, খোলা বাজারে চাল বিক্রি করা হবে। বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে এবং যারা অনানুষ্ঠানিক খাতে আছে, দিনমজুর রিকশাচালক ইত্যাদি তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সহায়তা এবং অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। যে প্রণোদান ঘোষাণা করা হয়েছে এটার সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। যাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা, ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো এ প্রণোদনা পায়।

জরুরি সময়ে টাকা ছাপানো যেতে পারে এমন অভিমত দিলেও তিনি এই মুহূর্তে টাকার সরবরাহের জন্য বিকল্প পথগুলো ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমাদের এখন অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে রাজস্ব প্রণোদনা এবং মুদ্রানীতির মাধ্যমে অর্থ সরবরাহের ব্যবস্থা করার। এখনও সরকারের হাতে বিভিন্ন উপকরণ আছে। আমরা দেখেছি ১ শতাংশ সিআরআর কমানো হলে ১২ হাজার কোটি টাকার মতো তারল্য বাড়ে। এ ধরনের উপাদান এখনও সরকারের হাতে আছে।

স্বাস্থ্যখাতের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতের সংকট যত ঘণীভূত হবে, আর্থিক খাতের সংকট ততো ঘণীভূত হবে। সুতরাং স্বাস্থ্যখাতকে এখন অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যখাতের জন্য ২৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, এটাকে আরও বাড়াতে হবে। আমি মনে করি ২৫০ কোটি টাকার যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা অপ্রতুল।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের মনে হয় টাকা ছাপানোর এখনও সময় আসেনি। আমরা এমন একটা অবস্থায় পড়েছি সরবরাহের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশন রয়েছে, মানুষের চাহিদা নেই। এখন মানুষের হাতে টাকা দিলে, বাজারে যদি জিনিসপত্র না থাকে তাহলে মূল্যস্ফীতি হবে। টাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পলিসি সাপোর্ট দিচ্ছে।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইসলামিক ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা করছে। আমরা তাদের কাছ থেকে সাহায্য আনতে পারি। সুতরাং টাকা ছাপানোর আগে অনেক চিন্তাভাবনা করতে হবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির সম্মানিত ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখনও পর্যন্ত সরকার বিভিন্নভাবে তারল্য বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে কিন্তু নতুন টাকা ছাপানোর দিকে যেতে হতে পারে। আমরা জানি সাধারণ সময়ে এটা মূল্যস্ফীতির জন্ম দেয়। কিন্তু এখন যেহেতু আমারা জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করছি, সেটার জন্য প্রয়োজন হলে সীমাবদ্ধ সময়ের জন্য নতুন টাকা ছাপানোর ক্ষেত্রে যেতে হবে। আমরা যদি অর্থনীতির সরবরাহ ঠিক রাখতে পারি তাহলে টাকা ছাপানো সে ধরনের বড় মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি করার কথা না।