‘তিনি ছিলেন বিনয়ী ও গরিবের চিকিৎসক’

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে মঈন উদ্দিন নামক একজন চিকিৎসকের প্রাণ। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এই সহকারী অধ্যাপক এই চিকিৎসক বেসরকারি একটি হাসপাতালের চেম্বারেও নিয়মিত রোগী দেখতেন। এমনই একজন রোগী রেহেনা বেগম জানালেন, মঈন উদ্দিন ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও সদালাপী। তিনি চেম্বারে আগত রোগীদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করতেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে এমন অসংখ্য রোগী ছাড়াও গোটা সিলেটে।

সিলেট নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকার বাসিন্দা মঈন উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার নাদামপুর গ্রামে। তিনি নতুন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে বিসিএস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ছাতক হাসপাতালে যোগদান করেন। পরে পদোন্নতি নিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি মেডিসিন বিষয়ে এফসিপিএস, কার্ডিওলজি বিষয়ে এমডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুছুর রহমান বলেন, ‘মঈন উদ্দিন যেহেতু মেডিসিনের চিকিৎসক ছিলেন তাই নিজেরে করোনাভাইরাসের আক্রমণের বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই নিজ থেকেই কোয়ারেন্টিনে চলে যান। এরপর আমরা তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করি। তবে তিনি ঢাকায় যান একান্তই পারিবারিক ইচ্ছায়। সরকারের সব বিভাগই তার প্রতি সহানুভুতি ছিল।’

মঈন উদ্দিনের পিতা মুনসী আহমদ উদ্দিন ছিলেন একজন পল্লী চিকিৎসক। তার একমাত্র ছেলে সন্তান ছিলেন ডা. মঈন। তিন বোনও রয়েছে তার। স্ত্রী নিজেও একজন চিকিৎসক ও এই দম্পত্তির দুই সন্তানও রয়েছে। চিকিৎসা পেশায় যোগদানের পর তিনি এলাকার মানুষদের ভোলেননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাবার কথা রেখেছেন ডা. মঈন উদ্দিন। প্রতি শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে সিলেট থেকে গ্রামে ছুটে গিয়ে বিনামূল্যে গরিব অসহায়দের ব্যবস্থাপত্র দিতেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পও করেছেন তিনি।

নাদামপুর এলাকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক আছকির মিয়া বলেন, ‘এলাকার অসহায় হিন্দু-মুসলিম সবাই ডা. মইনুদ্দিনের কাছ থেকে বিনামূল্যে সেবা পেয়েছেন। বিনা ফিতে দেখা দরিদ্র রোগীদের কোম্পানি প্রদত্ত ওষুধও বিলিয়ে দিতেন।’ ফলে এলাকায় তিনি গরীবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

একই গ্রামের গিরিধর দাস বলেন, ‘ডা. মঈন উদ্দিন ছিলেন অসাম্প্রদায়িক একজন মানুষ। গরিব মানুষকে তিনি বিনামূল্যে সেবা দিয়ে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।’

সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ ম-ল বলেন, ‘মঈন উদ্দিন ছিলেন মেধাবী একজন চিকিৎসক। তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করতেন। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।’

বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০ , ৩ বৈশাখ ১৪২৭, ২১ শাবান ১৪৪১

‘তিনি ছিলেন বিনয়ী ও গরিবের চিকিৎসক’

আকাশ চৌধুরী

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে মঈন উদ্দিন নামক একজন চিকিৎসকের প্রাণ। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এই সহকারী অধ্যাপক এই চিকিৎসক বেসরকারি একটি হাসপাতালের চেম্বারেও নিয়মিত রোগী দেখতেন। এমনই একজন রোগী রেহেনা বেগম জানালেন, মঈন উদ্দিন ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও সদালাপী। তিনি চেম্বারে আগত রোগীদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করতেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে এমন অসংখ্য রোগী ছাড়াও গোটা সিলেটে।

সিলেট নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকার বাসিন্দা মঈন উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার নাদামপুর গ্রামে। তিনি নতুন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে বিসিএস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ছাতক হাসপাতালে যোগদান করেন। পরে পদোন্নতি নিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি মেডিসিন বিষয়ে এফসিপিএস, কার্ডিওলজি বিষয়ে এমডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুছুর রহমান বলেন, ‘মঈন উদ্দিন যেহেতু মেডিসিনের চিকিৎসক ছিলেন তাই নিজেরে করোনাভাইরাসের আক্রমণের বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই নিজ থেকেই কোয়ারেন্টিনে চলে যান। এরপর আমরা তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করি। তবে তিনি ঢাকায় যান একান্তই পারিবারিক ইচ্ছায়। সরকারের সব বিভাগই তার প্রতি সহানুভুতি ছিল।’

মঈন উদ্দিনের পিতা মুনসী আহমদ উদ্দিন ছিলেন একজন পল্লী চিকিৎসক। তার একমাত্র ছেলে সন্তান ছিলেন ডা. মঈন। তিন বোনও রয়েছে তার। স্ত্রী নিজেও একজন চিকিৎসক ও এই দম্পত্তির দুই সন্তানও রয়েছে। চিকিৎসা পেশায় যোগদানের পর তিনি এলাকার মানুষদের ভোলেননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাবার কথা রেখেছেন ডা. মঈন উদ্দিন। প্রতি শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে সিলেট থেকে গ্রামে ছুটে গিয়ে বিনামূল্যে গরিব অসহায়দের ব্যবস্থাপত্র দিতেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পও করেছেন তিনি।

নাদামপুর এলাকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক আছকির মিয়া বলেন, ‘এলাকার অসহায় হিন্দু-মুসলিম সবাই ডা. মইনুদ্দিনের কাছ থেকে বিনামূল্যে সেবা পেয়েছেন। বিনা ফিতে দেখা দরিদ্র রোগীদের কোম্পানি প্রদত্ত ওষুধও বিলিয়ে দিতেন।’ ফলে এলাকায় তিনি গরীবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

একই গ্রামের গিরিধর দাস বলেন, ‘ডা. মঈন উদ্দিন ছিলেন অসাম্প্রদায়িক একজন মানুষ। গরিব মানুষকে তিনি বিনামূল্যে সেবা দিয়ে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।’

সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ ম-ল বলেন, ‘মঈন উদ্দিন ছিলেন মেধাবী একজন চিকিৎসক। তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করতেন। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।’