পাবনায় ইউপি চেয়ারম্যানকে ত্রাণের চালসহ আটকে তোলপাড়

পাবনার বেড়া উপজেলার একদা চরমপন্থী অধ্যুষিত ঢালারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি কোরবান আলী সর্দার দলীয় বিরোধে ও আইনের মারপ্যাঁচে ত্রাণের চাল আত্মসাতের দায়ে ফেঁসে গেছেন। গত সোমবার রাতে র‌্যাব তার গোডাউন থেকে ২২৯ বস্তা চালসহ তাকে আটক করে। এদিকে ত্রাণের চাল নিয়ে কোরবান আলী চেয়ারম্যান আটকের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র আবদুল বাতেনকে কোরবান আলী চেয়ারম্যানকে ছেড়ে দিতে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সোমবার বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ সব পদ থেকে অব্যহতি দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগ কোরবান আলীকে বহিষ্কার করেছে। যদিও ঢালারচর ইউনিয়নবাসী ত্রাণের চাল আত্মসাতের দায়ে চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের ঘটনা কিছুতেই মানতে পারছে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোরবান আলী সর্বহারাদের টার্গেটের কারণে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ঢালারচর ইউনিয়ন পরিষদে যান না। তিনি দীর্ঘকাল ধরে পাশের ইউনিয়ন রূপপুরের বাঁধের হাটে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। সোমবার ২২৯ বস্তা ত্রাণের চাল তার বাঁধেরহাটের কার্যালয়ের নিজস্ব গোডাউনে রাখেন। বুধবার সে চাল বিতরণের তারিখ ছিল। এদিকে তার প্রতিপক্ষ র‌্যাবকে খবর দিলে ওই রাতে তার গোডাউন থেকে এ চালসহ তাকে আটক করে আমিনপুর থানায় সোপর্দ করে। তিনি ঢালারচর ইউনিয়নে চাল না নিয়ে কেন পাশের ইউনিয়নের নিজ গোডাউনে রাখলেন এ কারণে তাকে আটক করা হয়। যদিও তার ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।তারা দলীয় বিরোধের কারণে কোরবান চেয়ারম্যানকে ষড়যন্ত্রমূলক আটক করা হয়েছে বলে মনে করছেন। জানা গেছে, সর্বহারার হুমকিতে ৩ যুগ ধরে কোন চেয়ারম্যানই ঢালার চরে ইউনিয়ন কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেন না। বিএনপি আমলে টিপু চেয়ারম্যান বেড়া পৌর এলাকায় কার্যালয় স্থাপন করে কাজ চালাতেন। ৯৬ সালে কোরবান আলী চেয়ারম্যানকে সর্বহারারা ঢালারচরে তার জমিজমা আবাদ না করাসহ তাকে এলাকায় ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপর থেকে তিনি পাশের ইউনিয়ন রূপপুরের বাঁধেরহাটে অস্থায়ী কার্যালয় করে আজ পর্যন্ত কাজ চালাচ্ছেন। যেটা স্থানীয় প্রশাসনসহ সবাই তা জানেন বলে জানা গেছে।

এদিকে সাবেক এমপি আজিজুর রহমান আরজুর সঙ্গে তার বিরোধের জেরে গত ইউপি নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নাছির ব্যাপারীকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী করা হয়। কোরবান চেয়ারম্যানকে সায়েস্তা করতে দীর্ঘ ১৫ বছর অন্তরীণ চরমপন্থি নেতা জুলহাসকে ঢালারচরে প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হয়। গত বছর ক্রসফায়ারে জুলহাস নিহত হয়। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী কোরবান আলীর নির্বাচনী ক্যাম্পে গুলি বোমা হামলা করে ৭টি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়াসহ একজনকে হত্যা করা হয়। তিনি বিপুল ভোটে জিতলে ও বাঁধের হাট অফিস থেকেই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি ত্রাণের চাল এ কার্যালয়ে রাখার লিখিত অনুমতি না নেয়ার সুযোগে প্রতিপক্ষরা র‌্যাবকে খবর দিলে তাকে আটক করা হয় আটককৃত কোরবান চেয়ারম্যানকে মঙ্গলবার পাবনা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে জামিন না দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয় এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমিনপুর থানাকে এ ব্যাপারে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।

এদিন পাবনা- ২ আসনের এমপি আহম্মদ ফিরোজ কবির ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কোরবান আলীকে আটকের দাবি করে তিনি ও আদালতে তার জামিনের জন্য আসেন। এলাকার সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছেন।

গতকাল বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল কাদের এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আনাম সিদ্দিকী যৌথ স্বাক্ষরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখেছেন, ‘মো. কোরবান আলী এই মেয়াদ দিয়ে মোট চারবার ঢালারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ইতোপূর্বে সর্বহারা ও নকশালের অত্যাচারে তিনি ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য ঢলারচর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ভবনের পরিবর্তে বাঁধেরহাটে অস্থায়ী কার্যালয় পরিচালনা করে আসছেন।’

ঢালারচর ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় পাশ্ববর্তী গুদাম থেকেই র‌্যাব ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ২২৯ বস্তা চাউল আটক করে। র‌্যাব যখন এই অভিযান পরিচালনা করে তখন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন না। উল্লেখ্য বেড়া খাদ্য গুদাম থেকে উক্ত পরিমাণ চাউল ওই দিনই বিকেলে উক্ত গুদামে নেয়া হয়েছিল।

জনগণের দাবি ঘটনাটির সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক।

বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০ , ৩ বৈশাখ ১৪২৭, ২১ শাবান ১৪৪১

পাবনায় ইউপি চেয়ারম্যানকে ত্রাণের চালসহ আটকে তোলপাড়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, পাবনা

পাবনার বেড়া উপজেলার একদা চরমপন্থী অধ্যুষিত ঢালারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি কোরবান আলী সর্দার দলীয় বিরোধে ও আইনের মারপ্যাঁচে ত্রাণের চাল আত্মসাতের দায়ে ফেঁসে গেছেন। গত সোমবার রাতে র‌্যাব তার গোডাউন থেকে ২২৯ বস্তা চালসহ তাকে আটক করে। এদিকে ত্রাণের চাল নিয়ে কোরবান আলী চেয়ারম্যান আটকের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র আবদুল বাতেনকে কোরবান আলী চেয়ারম্যানকে ছেড়ে দিতে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সোমবার বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ সব পদ থেকে অব্যহতি দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগ কোরবান আলীকে বহিষ্কার করেছে। যদিও ঢালারচর ইউনিয়নবাসী ত্রাণের চাল আত্মসাতের দায়ে চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের ঘটনা কিছুতেই মানতে পারছে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোরবান আলী সর্বহারাদের টার্গেটের কারণে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ঢালারচর ইউনিয়ন পরিষদে যান না। তিনি দীর্ঘকাল ধরে পাশের ইউনিয়ন রূপপুরের বাঁধের হাটে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। সোমবার ২২৯ বস্তা ত্রাণের চাল তার বাঁধেরহাটের কার্যালয়ের নিজস্ব গোডাউনে রাখেন। বুধবার সে চাল বিতরণের তারিখ ছিল। এদিকে তার প্রতিপক্ষ র‌্যাবকে খবর দিলে ওই রাতে তার গোডাউন থেকে এ চালসহ তাকে আটক করে আমিনপুর থানায় সোপর্দ করে। তিনি ঢালারচর ইউনিয়নে চাল না নিয়ে কেন পাশের ইউনিয়নের নিজ গোডাউনে রাখলেন এ কারণে তাকে আটক করা হয়। যদিও তার ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।তারা দলীয় বিরোধের কারণে কোরবান চেয়ারম্যানকে ষড়যন্ত্রমূলক আটক করা হয়েছে বলে মনে করছেন। জানা গেছে, সর্বহারার হুমকিতে ৩ যুগ ধরে কোন চেয়ারম্যানই ঢালার চরে ইউনিয়ন কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেন না। বিএনপি আমলে টিপু চেয়ারম্যান বেড়া পৌর এলাকায় কার্যালয় স্থাপন করে কাজ চালাতেন। ৯৬ সালে কোরবান আলী চেয়ারম্যানকে সর্বহারারা ঢালারচরে তার জমিজমা আবাদ না করাসহ তাকে এলাকায় ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপর থেকে তিনি পাশের ইউনিয়ন রূপপুরের বাঁধেরহাটে অস্থায়ী কার্যালয় করে আজ পর্যন্ত কাজ চালাচ্ছেন। যেটা স্থানীয় প্রশাসনসহ সবাই তা জানেন বলে জানা গেছে।

এদিকে সাবেক এমপি আজিজুর রহমান আরজুর সঙ্গে তার বিরোধের জেরে গত ইউপি নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নাছির ব্যাপারীকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী করা হয়। কোরবান চেয়ারম্যানকে সায়েস্তা করতে দীর্ঘ ১৫ বছর অন্তরীণ চরমপন্থি নেতা জুলহাসকে ঢালারচরে প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হয়। গত বছর ক্রসফায়ারে জুলহাস নিহত হয়। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী কোরবান আলীর নির্বাচনী ক্যাম্পে গুলি বোমা হামলা করে ৭টি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়াসহ একজনকে হত্যা করা হয়। তিনি বিপুল ভোটে জিতলে ও বাঁধের হাট অফিস থেকেই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি ত্রাণের চাল এ কার্যালয়ে রাখার লিখিত অনুমতি না নেয়ার সুযোগে প্রতিপক্ষরা র‌্যাবকে খবর দিলে তাকে আটক করা হয় আটককৃত কোরবান চেয়ারম্যানকে মঙ্গলবার পাবনা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে জামিন না দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয় এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমিনপুর থানাকে এ ব্যাপারে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।

এদিন পাবনা- ২ আসনের এমপি আহম্মদ ফিরোজ কবির ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কোরবান আলীকে আটকের দাবি করে তিনি ও আদালতে তার জামিনের জন্য আসেন। এলাকার সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছেন।

গতকাল বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল কাদের এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আনাম সিদ্দিকী যৌথ স্বাক্ষরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখেছেন, ‘মো. কোরবান আলী এই মেয়াদ দিয়ে মোট চারবার ঢালারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ইতোপূর্বে সর্বহারা ও নকশালের অত্যাচারে তিনি ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য ঢলারচর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ভবনের পরিবর্তে বাঁধেরহাটে অস্থায়ী কার্যালয় পরিচালনা করে আসছেন।’

ঢালারচর ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় পাশ্ববর্তী গুদাম থেকেই র‌্যাব ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ২২৯ বস্তা চাউল আটক করে। র‌্যাব যখন এই অভিযান পরিচালনা করে তখন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন না। উল্লেখ্য বেড়া খাদ্য গুদাম থেকে উক্ত পরিমাণ চাউল ওই দিনই বিকেলে উক্ত গুদামে নেয়া হয়েছিল।

জনগণের দাবি ঘটনাটির সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক।