ঘরোয়া ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপন

রমনার বটমূল, ছায়ানট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর, শাহবাগ কিংবা দেশের কোথাও কোন অনুষ্ঠান ছাড়াই প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম কোন অনুষ্ঠান ছাড়াই পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হলো। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর বিস্তার রোধে জনসমাগম পরিহারের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে সারাদেশে এবার বাংলা নববর্ষ ১৪২৭-এভাবেই পালন করা হয়। অবশ্য ঘরোয়া পরিবেশেও উদযাপিত হয়েছে পহেলা বৈশাখ।

এ উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘এসো হে বৈশাখ’ শীর্ষক একটি বর্ষবরণ অনুষ্ঠান নির্মাণ করে। যা বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্য বেসরকারি চ্যানেলে একযোগে সম্প্রচারিত হয়।

অনুষ্ঠানে বাংলা নববর্ষ ১৪২৭-এর আগমন উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। এর আগে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ শীর্ষক দেশাত্মবোধক গানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে রজনীকান্ত সেনের ‘তুমি নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’ এবং ইয়াসমিন মুশতারী নজরুলসংগীত ‘মৃত্যু নাই- নাই দুঃখ, আছে শুধু প্রাণ’ পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা ‘আমার পরিচয়’ আবৃত্তি করেন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ‘আগুন জ্বালো আগুন জ্বালো’ শীর্ষক রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সাদী মোহাম্মদের কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে শোনো শোনো পিতা’ পরিবেশনের পর সামিনা চৌধুরী গেয়ে শোনান দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘আজি নূতন রতনে ভূষণে যতনে প্রকৃতি সতীরে সাজিয়ে দাও’।

সবশেষে বাউলশিল্পী শফি ম-ল পরিবেশন করেন জনপ্রিয় গান ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’। আগের বছরগুলোর উৎসবমুখর বৈশাখ উদযাপনের ফুটেজ প্রচারের মধ্য দিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার এ অনুষ্ঠান শেষ হয়। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও ডা. নুজহাত চৌধুরী অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা বৈশাখে উদযাপিত না হলেও, পারিবারিক আবহে ঘরে বসেই মানুষ নববর্ষকে স্বাগত জনান। মঙ্গলবার বাংলাবর্ষ ১৪২৭-এর প্রথম দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই কোন শাড়ি, কোন টিপ আর কোন চুড়ি পরবেন তা নিয়ে ভাবছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সানিয়া হাসান। মা-বাবা-ভাই-বোন নিয়ে পরিবার। এবারের বর্ষবরণে যেহেতু বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই, তাই ঘরে বসে পরিবারের সঙ্গেই নববর্ষ উদযাপনের পরিকল্পনা তার।

গত মাসের ২১ তারিখ থেকে ঘরবন্দী রাজধানীর আফতাবনগরের বাসিন্দা নিরা। এ অবস্থায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না হোক বের হওয়া। আমরা সবাই মিলে বাসায়ই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করব। সকালে পান্তা-ইলিশসহ হরেক রকম বাঙালি খাবার তৈরি করেছি। আগামী দিনগুলো কেমন হবে জানি না। ফলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এ আয়োজন।

রাজধানীর নিকেতনের বাসিন্দা জিএম হারুন-অর রশিদ। স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এবার সাদামাটাভাবে বৈশাখ উদযাপন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবার পহেলা বৈশাখে সবাইকে নিয়ে পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে ঘুরে বেড়াতাম, কিন্তু এবার করোনার কারণে বাইরে যাওয়া হচ্ছে না। বাসাতেই ভিন্ন রকম আয়োজন করেছি। সারাদিন টিভিতে বৈশাখী অনুষ্ঠান দেখে পার করবো। বেঁচে থাকলে আবারও পুরোনা রূপে বৈশাখ উদযাপন করব।

উত্তরার বাসিন্দা এম সোহেল রানা বলেন, আমরা যে বেঁচে আছি, সেটাই বড় কথা। বেঁচে থাকলে আবারও উদযাপন করব বৈশাখ। এবার না হয় সাদামাটা ঘরোয়া নববর্ষ উদযাপন করলাম।

বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০ , ৩ বৈশাখ ১৪২৭, ২১ শাবান ১৪৪১

ঘরোয়া ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

রমনার বটমূল, ছায়ানট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর, শাহবাগ কিংবা দেশের কোথাও কোন অনুষ্ঠান ছাড়াই প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম কোন অনুষ্ঠান ছাড়াই পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হলো। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর বিস্তার রোধে জনসমাগম পরিহারের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে সারাদেশে এবার বাংলা নববর্ষ ১৪২৭-এভাবেই পালন করা হয়। অবশ্য ঘরোয়া পরিবেশেও উদযাপিত হয়েছে পহেলা বৈশাখ।

এ উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘এসো হে বৈশাখ’ শীর্ষক একটি বর্ষবরণ অনুষ্ঠান নির্মাণ করে। যা বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্য বেসরকারি চ্যানেলে একযোগে সম্প্রচারিত হয়।

অনুষ্ঠানে বাংলা নববর্ষ ১৪২৭-এর আগমন উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। এর আগে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ শীর্ষক দেশাত্মবোধক গানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে রজনীকান্ত সেনের ‘তুমি নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’ এবং ইয়াসমিন মুশতারী নজরুলসংগীত ‘মৃত্যু নাই- নাই দুঃখ, আছে শুধু প্রাণ’ পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা ‘আমার পরিচয়’ আবৃত্তি করেন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ‘আগুন জ্বালো আগুন জ্বালো’ শীর্ষক রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সাদী মোহাম্মদের কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে শোনো শোনো পিতা’ পরিবেশনের পর সামিনা চৌধুরী গেয়ে শোনান দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘আজি নূতন রতনে ভূষণে যতনে প্রকৃতি সতীরে সাজিয়ে দাও’।

সবশেষে বাউলশিল্পী শফি ম-ল পরিবেশন করেন জনপ্রিয় গান ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’। আগের বছরগুলোর উৎসবমুখর বৈশাখ উদযাপনের ফুটেজ প্রচারের মধ্য দিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার এ অনুষ্ঠান শেষ হয়। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও ডা. নুজহাত চৌধুরী অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা বৈশাখে উদযাপিত না হলেও, পারিবারিক আবহে ঘরে বসেই মানুষ নববর্ষকে স্বাগত জনান। মঙ্গলবার বাংলাবর্ষ ১৪২৭-এর প্রথম দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই কোন শাড়ি, কোন টিপ আর কোন চুড়ি পরবেন তা নিয়ে ভাবছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সানিয়া হাসান। মা-বাবা-ভাই-বোন নিয়ে পরিবার। এবারের বর্ষবরণে যেহেতু বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই, তাই ঘরে বসে পরিবারের সঙ্গেই নববর্ষ উদযাপনের পরিকল্পনা তার।

গত মাসের ২১ তারিখ থেকে ঘরবন্দী রাজধানীর আফতাবনগরের বাসিন্দা নিরা। এ অবস্থায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না হোক বের হওয়া। আমরা সবাই মিলে বাসায়ই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করব। সকালে পান্তা-ইলিশসহ হরেক রকম বাঙালি খাবার তৈরি করেছি। আগামী দিনগুলো কেমন হবে জানি না। ফলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এ আয়োজন।

রাজধানীর নিকেতনের বাসিন্দা জিএম হারুন-অর রশিদ। স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এবার সাদামাটাভাবে বৈশাখ উদযাপন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবার পহেলা বৈশাখে সবাইকে নিয়ে পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে ঘুরে বেড়াতাম, কিন্তু এবার করোনার কারণে বাইরে যাওয়া হচ্ছে না। বাসাতেই ভিন্ন রকম আয়োজন করেছি। সারাদিন টিভিতে বৈশাখী অনুষ্ঠান দেখে পার করবো। বেঁচে থাকলে আবারও পুরোনা রূপে বৈশাখ উদযাপন করব।

উত্তরার বাসিন্দা এম সোহেল রানা বলেন, আমরা যে বেঁচে আছি, সেটাই বড় কথা। বেঁচে থাকলে আবারও উদযাপন করব বৈশাখ। এবার না হয় সাদামাটা ঘরোয়া নববর্ষ উদযাপন করলাম।