নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালের সুপারসহ ১৭ জনের করোনা শনাক্ত

করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার), মেডিসিন ও গাইনি বিভাগের দুই চিকিৎসকসহ ১৭ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এতে হাসপাতালটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। পুরো হাসপাতালটির কার্যক্রম শাটডাউন করে দেয়ার চিন্তা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক প্রথম করোনা আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন। পরে ওই হাসপাতালের গাইনি বিভাগের আরও এক চিকিৎসক, হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের সহকারী (পিএ) ও একজন ওয়ার্ডবয় আক্রান্ত শনাক্ত হন। হাসপাতালের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও স্টাফকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে ২১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত নমুনায় নতুন করে আরও ১৩ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক, নার্স, অফিস সহকারী, স্টোর কিপার, ওয়ার্ডবয় রয়েছেন। হাসপাতালটিতে ৩৮ জন চিকিৎসক, ১৫০ জন নার্স, ২২ জন ক্লিনার এবং ৩২ ওয়ার্ডবয় রয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে আরও কয়েকজনের নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের সুপার ডা. গৌতম রায় বলেন, ‘হাসপাতালের স্টাফসহ নতুন করে ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে চারজন আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। আমিও পজেটিভ, বর্তমানে আইসোলেশনে আছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা আক্রান্ত, স্টাফ আক্রান্ত। এভাবে তো আর চিকিৎসা দেয়া যাবে না। এতে অন্যরাও আক্রান্ত হবেন। স্বাস্থ্য বিভাগে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ শুরু থেকেই ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিয়ে আশঙ্কায় ছিলেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীরও (পিপিই) সংকট ছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভও ছিল। এবার বিষয়টি আরও প্রকট রূপ ধারণ করেছে। এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসকসহ ২৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শুরুর দিকেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি নজর দেয়া হয়নি। যার ফলাফল সবার সামনে। এভাবে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হতে থাকলে জেলায় স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার মতো লোক পাওয়া যাবে না।’

হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সামসুদ্দোহা সঞ্চয় বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত পিপিই নেই এটা বারবার বলা হয়েছে। যে পিপিই দেয়া হয়েছে তাও মেডিকেল গ্রেডের ছিল না। করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল এটি কিন্তু এখন পর্যন্ত মেডিকেল গ্রেডের এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করা হয়নি। যে গাউন দেয়া হয়েছে তাও মেডিকেল গ্রেডের না। এসব যে মেডিকেল গ্রেডের ছিল না তার প্রমাণ এই যে হাসপাতালের ১৭ জন করোনা আক্রান্ত। এই সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২১৪ জন। মারা গেছেন ১৫ জন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন মাত্র ৩ জন।

বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০ , ৩ বৈশাখ ১৪২৭, ২১ শাবান ১৪৪১

নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালের সুপারসহ ১৭ জনের করোনা শনাক্ত

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার), মেডিসিন ও গাইনি বিভাগের দুই চিকিৎসকসহ ১৭ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এতে হাসপাতালটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। পুরো হাসপাতালটির কার্যক্রম শাটডাউন করে দেয়ার চিন্তা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক প্রথম করোনা আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন। পরে ওই হাসপাতালের গাইনি বিভাগের আরও এক চিকিৎসক, হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের সহকারী (পিএ) ও একজন ওয়ার্ডবয় আক্রান্ত শনাক্ত হন। হাসপাতালের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও স্টাফকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে ২১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত নমুনায় নতুন করে আরও ১৩ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক, নার্স, অফিস সহকারী, স্টোর কিপার, ওয়ার্ডবয় রয়েছেন। হাসপাতালটিতে ৩৮ জন চিকিৎসক, ১৫০ জন নার্স, ২২ জন ক্লিনার এবং ৩২ ওয়ার্ডবয় রয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে আরও কয়েকজনের নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের সুপার ডা. গৌতম রায় বলেন, ‘হাসপাতালের স্টাফসহ নতুন করে ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে চারজন আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। আমিও পজেটিভ, বর্তমানে আইসোলেশনে আছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা আক্রান্ত, স্টাফ আক্রান্ত। এভাবে তো আর চিকিৎসা দেয়া যাবে না। এতে অন্যরাও আক্রান্ত হবেন। স্বাস্থ্য বিভাগে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ শুরু থেকেই ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিয়ে আশঙ্কায় ছিলেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীরও (পিপিই) সংকট ছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভও ছিল। এবার বিষয়টি আরও প্রকট রূপ ধারণ করেছে। এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসকসহ ২৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শুরুর দিকেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি নজর দেয়া হয়নি। যার ফলাফল সবার সামনে। এভাবে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হতে থাকলে জেলায় স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার মতো লোক পাওয়া যাবে না।’

হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সামসুদ্দোহা সঞ্চয় বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত পিপিই নেই এটা বারবার বলা হয়েছে। যে পিপিই দেয়া হয়েছে তাও মেডিকেল গ্রেডের ছিল না। করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল এটি কিন্তু এখন পর্যন্ত মেডিকেল গ্রেডের এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করা হয়নি। যে গাউন দেয়া হয়েছে তাও মেডিকেল গ্রেডের না। এসব যে মেডিকেল গ্রেডের ছিল না তার প্রমাণ এই যে হাসপাতালের ১৭ জন করোনা আক্রান্ত। এই সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২১৪ জন। মারা গেছেন ১৫ জন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন মাত্র ৩ জন।